somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেম পাগলামি- মানসিক অসুস্থতারই আরেক নাম।

১২ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তরুণ বয়সে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি জৈবিক আকর্ষণ স্বাভাবিক। কিন্তু এ আসক্তিকে সংযত করতে না পারলে জীবনের সম্ভাবনা বিকাশের পক্ষে তা প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দিতে পারে। তথাকথিত প্রেম নামের জৈবিক আসক্তির কবলে পড়ে কত তরুণ-তরুণী যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জীবনের সম্ভাবনাকে নষ্ট করেছে, নিজের এবং পরিবারের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে তার ইয়ত্তা নেই।
প্রেম পাগলামি বা প্রেমরোগ আসলে মানসিক অসুস্থতারই অন্য নাম। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সংখ্যায় ‘লাভ দা কেমিকেল রি-একশন’ শিরোনামের এক বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ইতালির পিসা ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা ডোনাটেলা মারাজিতি তার সহকর্মীদের নিয়ে ২৪ জন নারী-পুরুষের ওপর এক জরিপ চালান। এদের সবাই গত ৬ মাসের মধ্যে প্রেমে পড়েছে এবং প্রতিদিন অন্তত ৪ ঘণ্টা সময় এরা বাস্তবে প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে কাটায়- নয়তো মনে মনে চিন্তা করে। এদের সাথে তুলনা করার জন্যে মারাজিতি বেছে নেন আরো দুটো গ্রুপ। একটি গ্রুপ অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) নামে এক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত। আরেকটি গ্রুপ এ দুটো থেকেই মুক্ত, অর্থাৎ তারা প্রেমেও পড়ে নি এবং মানসিকভাবেও অসুস্থ নয়।

পরীক্ষায় দেখা গেল, প্রেমে পড়া আর মানসিকভাবে অসুস্থ দুই গ্রুপের মানুষের মস্তিষ্কেই সেরেটনিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ৪০ ভাগ কম। সেরেটনিন হলো মস্তিষ্কের এমন এক নিউরোট্রান্সমিটার যার পরিমাণ কমে গেলেই বিষণ্নতা, অবসাদ, খিটখিটে মেজাজ এবং ওসিডির মতো মানসিক রোগ দেখা দেয়। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, প্রেমে পড়লেও একই অবস্থা হয়। কাজেই যৌক্তিকভাবেই বলা যায়, প্রেমে পড়লে মানুষ আর মানসিকভাবে সুস্থ থাকে না। তার বিচারবুদ্ধি লোপ পায় এবং সে অন্ধ আবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ আবেগের স্থায়িত্ব আবার খুবই কম। আজকে যাকে না পেলে বাঁচবো না বলে মনে হচ্ছে, বছর না ঘুরতেই মনে হতে পারে যে, তাকে না ছাড়লে বাঁচবো না। ৬ মাস আগেও যে চেহারাটা একনজর দেখার জন্যে অস্থির হতো মন, এখন সে চেহারাটাই হতে পারে সবচেয়ে অসহ্য দৃশ্য।

এর কারণ কী? বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এর পেছনে আছে ডোপামাইন নামে এক নিউরোট্রান্সমিটারের ভূমিকা। প্রেমিক বা প্রেমিকাকে দেখলে মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ এই ডোপামাইন দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়। এর প্রভাবে শরীর-মনে তখন সৃষ্টি হতে পারে বাঁধভাঙা আনন্দ, অসাধারণ প্রাণশক্তি, গভীর মনোযাগ ও সীমাহীন অনুপ্রেরণা। এজন্যেই হয়তো যারা সদ্য প্রেমে পড়ে, হঠাৎ করেই তাদের মধ্যে এক ধরনের বেয়াড়া, একগুঁয়ে, দুঃসাহসী চরিত্র ফুটে ওঠে। ঘর ছাড়বে, সিংহাসন ছাড়বে, জীবন দেবে; তবু প্রেম ছাড়বে না- এমনই এক বেয়াড়াপনা দেখা যায় তাদের মধ্যে। বিজ্ঞানীরা বলেন, মাদকাসক্তির সাথে এ অবস্থাটার খুব মিল রয়েছে।

মাদকাসক্তদের কিন্তু মাদক গ্রহণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলে। কারণ মাদকের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন ব্রেন তাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে পরিমাণ না বাড়ালে তার নেশা হয় না। প্রেমের ক্ষেত্রেও তা-ই। তীব্র আবেগের আতিশয্য খুব বেশি সময় ধরে থাকে না যদি না নতুন নতুন উত্তেজনা দেয়া না যায়। কিন্তু বাস্তব জীবনে তো আর তা সম্ভব নয়। ফলে অল্পতেই ঘোলাটে হয়ে যায় আবেগের রঙিন চশমা।

আসলে স্বর্গীয়, পবিত্র ইত্যাদি নানারকম বিশেষণ যুক্ত করে যে প্রেমকে মহান বানানোর চেষ্টা চলে তা যে স্রেফ বংশধারা রক্ষার জন্যে নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদারই নামান্তর তা বিজ্ঞানীদের কথায় স্পষ্ট হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পারস্পরিক আকর্ষণের ক্ষেত্রে একজন পুরুষ বা একজন নারী অবচেতনভাবেই এমন সঙ্গীকে পছন্দ করে, যে তাকে সুস্থ-সবল একটি সন্তান উপহার দিতে পারবে। এক জরিপে দেখা গেছে, মহিলাদের কোমর ও হিপের বিশেষ গড়ন এবং পুরুষদের লম্বা-চওড়া শক্ত গড়ন যা তাদের টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হওয়াকে নির্দেশ করে, তার ওপর নির্ভর করে কে কতটা আকর্ষণীয় হবে। আর নারী ও পুরুষের এ দুটো বৈশিষ্ট্যই তাদের সন্তান জন্মদানের সামর্থ্যকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

তাই বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, প্রেমের পাগলামিকে আবেগের হাওয়া না দিয়ে ব্রেনের জৈব রাসায়নিক কার্যকারণ হিসেবেই দেখুন। তাহলেও অন্তত আপনি এ দুর্দশা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে পারবেন
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×