somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউনিভার্সিটি(পলিমেথ বনাম অপসিমেথ)

১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউনিভার্সিটি নামটা শুনলে মনে হয় “একটা বিশাল বড় মাপের জ্ঞানের রাজ্য” যেখানে গেলে মন খুলে সব শিখতে পারবো বলা যেতে পারে নিজেকে “polymath (a person of wide knowledge or learning.)” হিসেবে দাবি করতে পারি। কিন্তু ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর অনেকের অবস্থা হয়ে যায় “opsimath(a person who begins to learn or study only late in life.)” এর মতই।

ছোট বেলায় একটি গল্প পড়ে ছিলাম “The Peacock and The Crow” এবং এই গল্পটি ঢাকা বোর্ড ২০১৪ সালের এইচ.এস.এসি পরীক্ষাতেও এসেছিল। গল্পটার মূল কথা ছিলো এমন “We should accept us the way we are and learn to improve ourselves positively.” কিন্তু ভার্সিটি পাশ করার পর অনেকে আছেন যারা পরবর্তীতে শিক্ষক হয়, তারা নিজেদের মানুষিক পরিবর্তন কতটুকু পজিটিভ করতে পারে তা সবসময় বিতর্কিত থেকে যায় আমার কাছে। খাঁটি বাংলায় বললে “কাক, কাকই থেকে যায়।”

ভাই বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি বিশ্ব রেংকে আসেনা এই নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা না, মাথা ব্যাথা হলো শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। মায়ের কোলে শিশু যেমন নিরাপদ একজন ছাত্রের কাছে তার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মায়ের মত হওয়ার উচিৎ। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের পরে বুঝা যায় সৎ মা আসলে কি করে লালন পালন করে। একটা কথা আছে “পাঠ্যপস্তুক যাহা শিক্ষা দেই পরিবেশ তার চেয়ে ভালো কিছু শিক্ষা দেই”। আমাদের ভার্সিটিগুলোর পরিবেশ আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে প্রথমে। একটা ভার্সিটির পরিবেশের মধ্যে অনেক উপাদান অন্তর্নিহিত থাকে এই উপাদানগুলো যত নিখুঁত হবে ভার্সিটি ও তত ভালো ছাত্রের ভালো মা হতে পারবে।

বাংলা ভাষায় সকল বই পড়ানো হোক। বেশিরভাগ চাইনিজরা ইংরেজী বলতে পারেনা তা বলে কী তাদের ইউনিভার্সিটি রেংকিং আমাদের দেশের চেয়েও খারাপ? তাদের মেডিকেল, ভার্সিটির প্রায় বেশিরভাগ পড়ালেখা করানো হয় স্বদেশী ভাষায়। এই রকম অনেক দেশ আছে যাদের সকল পড়ালেখার ভাষা স্বদেশী ভাষায় রচিত। অথচ আমাদের দেশে ভার্সিটি গুলোতে ইংরেজীতে আমরা অন্যদের অনুকরণ করতে গিয়ে সময় নষ্ট করি এবং অনেক সময় স্যার ক্লাসে লেকচার দিলে তা বিশদ ভাবে বাসায় পড়তে গেলে প্রথমে অক্সফোর্ড ডিকশনারি নিয়ে বসতে হয়, এতে করে একটা নতুন কিছু পড়ার আগ্রহ কমে যায় শুধুমাত্র পাশ করার জন্যে পড়তে হয় নতুবা মখুস্থ করে পরীক্ষার হলে খাতায় লিখে আসতে হয়। শুধু এমন না দেখা যায় ইংরেজীতে গুছিয়ে লিখার না কারণে অনেক ছাত্র/ছাত্রী মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে।

ফাউন্ডেশন কোর্স উঠিয়ে দেয়া হোক। ফাউন্ডেশন কোর্স নেই এমন ভার্সিটি অনেক কম আছে। কেন উঠিয়ে দিবো তার জন্যে কিছু উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়। আমি যদি কোনো বাংলা ভার্সনে পড়ে এসেছে এমন স্টুডেন্টস কে জিজ্ঞাসা করি “ Write the corollary(অনুসিদ্ধান্ত) of (a+b)2”। সে হইতো জেনে না জেনে সুত্র বা অনুসিদ্ধান্ত লিখবে কিন্তু সে কি আসলেই বুঝে লিখেছে কিনা এটা হলো কথা। যদি সে এই ইংরেজী অর্থটা জানে তাহলে ভালো আর না জানলে অভিধান থেকে খুঁজে বের করে হইতো মনে মনে বলবে “আমি তো জানি কিন্তু ইংরেজী বলাতে বুঝিনি।” ইন্টার পাশের পর আগের পড়াগুলো ইংরেজীতে একবছর এর মত পড়ানো হয় যা নতুন করে শিখার কিছুই নেই। তফাৎ হলো আগে বাংলায় শিখেছে এখন একই পড়া ইংরেজীতে শিখেছে। আর ফাউন্ডেশন কোর্স হলো আগের পড়া গুলো ইংরেজীতে পড়ানো আর ক্রেডিট বাড়িয়ে টাকা লুট করার জন্যে।

কিছু বিষয়(যেমনঃ উচ্চতর গণিত) সব বিভাগের স্টুডেন্ট এর জন্যে থাকা উচিৎ। অনেক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে দেখা যায় বেসিক আলজেবরা, ইন্টারমেডিয়েট ম্যাথম্যাটিকস এই ধরনের কিছু বিষয় গুলো পড়ানো হয়( আরো অনেক বিষয় আছে)। সে হোক মানবিক/বানিজ্য/বিজ্ঞান এর স্টুডেন্ট পড়তে হবে। আমার কথা হচ্ছে আগে পরে যে সব বিষয় গুলো একজন স্টুডেন্ট এর জন্যে লাগবে তা কেন মেট্রিক আর ইন্টারে বিজ্ঞান ব্যাতীত অন্য দুই বিভাগের স্টুডেন্টের জন্যে পড়ানো হয়না? যে কমার্সের স্টুডেন্ট জীবনে অন্তরীকরণ আর যোগজীকরণ করেনি সেও ভার্সিটিতে উঠলে এগুলো তাকে শিখতে হয়। আর ভার্সিটিও এই লামছাম কোর্সের জন্যে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

শিক্ষকদের মনোভাবের পরিবর্তন দরকার। আমি প্রায় দেখেছি ভার্সিটি/মেডিকেল স্টুডেন্ট দের পেন্ডিং হয়ে থাকতে। আরে বাবা ছেলে মেয়ে ভূল করলে মা শুধরিয়ে দিবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু মা যদি জিদ ধরে বসে থাকে তাতেই নিজের সন্তানেরই ক্ষতি। দেখা যাচ্ছে একটা স্টুডেন্ট একটা ভূলের জন্যে ১০ বছরেও ভার্সিটি/মেডিকেল শেষ করতে পারছেনা। আর শিক্ষকরা হবে বন্ধু সুলভ আচারণের। কিন্তু কিছু আছে যারা নিজেদের আলাদা জাতি মনে করে আলাদা হয়ে থাকতে চায়। তাদের সাথে মিতালি করুন দেখবেন আপনার সন্তান সবচেয়ে ভালো মানুষ হবে।

যুগের সাথে তাল মিলাতে শিখা দরকার। আপনি ৩০ বছর আগে কী করে পড়াশুনা করেছেন তা বলুন কিন্তু সে নিয়মে পড়তে হবে চলতে হবে এইটা বাধ্যবাদকতা করে ফেললে একটু সমস্যাতো হবে। মেডিকেলে আসলে ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়া যাবেনা, দেখা যাচ্ছে তার বান্ধবী নর্থসাউথে যাচ্ছে লিপস্টিক লাগিয়ে। আপনি শালীনতা নিয়ে বলতে পারেন কিন্তু এর মানে এই না যে নামায পড়তে হলে জায়নামাজ না হলে পড়া যাবেনা, বা পানি না থাকলে যে ওযু করা যাবেনা এমন কোথাও লিখা নেই। সব শিক্ষকদের কাছে সব স্টুডেন্ট সমান। কালসিক্যাল পদার্থ আর মডার্ন পদার্থ দুটোই পদার্থ নিয়ে আলোচনা করে কিন্তু কাউকে নিচু দেখিয়ে নয়। বৈষম্য বাদ দিতে শিখুন। সব বইয়ের মত মুখস্থ না বললে আইটেমে পাশ করবেনা, পরীক্ষায় পাশ করাবেন না, নম্বর কম দিবেন এগুলা কী হয়না নাকি সব ছাত্রদের দোষ?

প্রাইভেট ভার্সিটির কিছু নিয়ম শিথিল করা দরকার। ধরে নিলাম একজন লোক নামায পড়া শিখবে। আর আমি তাকে বললাম দেখো নামাজ অনেক ধরণের আছে। ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল। এতে করে সে শুরুতে তার একটু বুঝতে সমস্যা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তাকে আমাকে বুঝাতে হবে ফরয নামাযের তাৎপর্য তারপর ধীরে ধীরে অন্যান্যগুলো। ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হলে আপনারা এতো নিয়ম কয় থেকে বানান? একটা ছেলে মেয়ে ১২ বছরের শিক্ষাজীবনে যে অভ্যাস গড়েছে আপনাদের একদিনের শিক্ষায় তারা পরিবর্তন হবেনা, এতে তাদের পড়ালেখায় ক্ষতি হয়। সাহস করে কিছু করার প্রত্যয় নিতে পারেনা।
এইরকম অনেক দিক আছে যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে শেষ করে দিচ্ছে। ভূলত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন এবং যেকোনো মতামত গ্রহণ যোগ্যতা পাবে। আমি তাই লিখেছি যা আমি আমার আশেপাশে দেখেছি এবং আমিও অনুভব করেছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ৩:০৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×