somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুদাই কথা ২ ঃ থাবা বাবা, গানম্যান, আর আমাদের ক্ষুদ্রতার গল্প

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিক্রিয়া একটি চমৎকার ব্যাপার। কেউ যখন প্রতিক্রিয়া দেখায়, এর মানে লোকটা বেঁচে আছে। যে কোন কিছুই তার সাথে করে পার পাওয়া যাবে না। আর একটা সমগ্র জাতি যখন প্রতিক্রিয়াশিল হয়ে ওঠে, এর মানে পুরো জাতিই ভীষণ ভাবে জেগে আছে, সব কিছুতেই তাদের একটি দৃঢ় “হ্যাঁ” এবং দৃঢ় “না” আছে।

সাম্প্রতিক যে ঘটনা আর তার প্রতিক্রিয়া ঘর বাহির, অন্তরজাল সব ছরিয়ে রেখেছে তা হচ্ছে একজন থাবা বাবার মৃত্যু, তার লেখা,তার জানাজা ইত্যাদি ইত্যাদি। তার সাথে ছোট একটা প্রতিক্রিয়া, বিশেষ কিছু ব্লগার কে কেন নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে আলাদা করে।

থাবা বাবা সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়ায় আমার কিছু কথা আছে। আচ্ছা? মুক্তিযোদ্ধা যারা ছিলেন, তারা সবাই কি নিষ্পাপ ছিলেন? জন্মগত ভাবে প্রবল বীর হয়ে এসেছিলেন?
নিশ্চয়ই না। ওরাও ছিলেন আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষ। কেউ হয়তো বউ পেটাতেন, কেউ রেগে গেলে খুব খারাপ ভাষায় গালাগালি করতেন, কেউ হয়তো নাস্তিক ছিলেন। জ্বর এলেই মায়ের কাছে ঘেঁসে থাকা যে ছেলেটি বন্ধুমহলে হয়তো বাবু বলে পরিচিত ছিল, সেই ছেলেটির কি শত্রুর বন্দুকের সামনে একবারও বুক কাপেনি? একবারও মনে হয়নি ‘চুলোয় যাক সব যুদ্ধ, আমি মায়ের কাছে যাব?” নিশ্চয়ই হয়েছে। এই সবকিছুর বাইরে তাদের মহান হওয়াটা তবে কোথায়?

তারা মহান এইজন্যে, যে তারা আমার আপনার মতো সাধারণ, ভীতু, আরাম প্রিয় মানুষ হয়েও অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। আমার জন্যে, আপনার জন্যে, দেশের জন্যে। আমি আপনি মিলিয়েই তো দেশ, তাই না?

প্রজন্ম চত্বর এর পক্ষে বিপক্ষে যত কথা কয়েকদিন ধরে দেখছি, তার ব্যাপারেও আমার একই কথা। আমরা কেন বার বার ভুলে যাচ্ছি, যে সেখানে আমরাই আছি! আমি, আপনি, আমার বন্ধু কিংবা আপনার বন্ধু। আমরা সবাই ব্যাক্তিগত জীবনে ভালমন্দ মিলিয়ে মানুষ!
আমি প্রায়ই ব্ল্যাকে টিকেট কেটে ঢাকা চট্টগ্রাম ট্রেন এ যাতায়াত করি, তাই বলে কি আমার দেশপ্রেম নেই?
আপনি উইক এন্ডে মদ খান, কিংবা মুভি দেখেন অথবা তাবলীগ জামাতে দ্বীন এর প্রচারে যান, তার সাথে কি আদৌ প্রজন্ম চত্তরের কোন সম্পর্ক আছে? এখানে হাজার মত, হাজার চেহারা, হাজার মানসিকতার লোকের জমায়েত কিন্তু একটাই লক্ষ্যে, রাজাকারের ফাঁসি চাই। হ্যাঁ, সব রাজাকার এখনও বিচারের আওতায় আসেনি, কিন্তু আনতে তো হবে? বিচার হবেই তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কিন্তু সরকারের না, আমার আর আপনার।
গত একচল্লিশ বছর ধরে এই দালালের দল যাই কিছু করেছে, তার দায়ভার আওয়ামিলিগ, বি এন পি কিংবা এরশাদ, এদের সবার চেয়ে বেশি কিন্তু আমাদের বহন করতে হবে। আমরা তো মেনে নিয়েছিলাম, তাই না?
সেই দায়ভার মেটানোর উপায় হিসেবে আমরা যদি ক্রমাগত সন্দেহ, বিভক্তি ইত্যাদিতে চলে যাই তাহলে লাভ কি?
থাবা বাবা ব্যাক্তিগত জীবনে কি করেছেন না করেছেন তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। লোকজন উনার ব্লগ শেয়ার না দিলে আমি হয়তো কখনো জানতামও না যে এই নামে কেউ আছেন ব্লগে। তাহলে উনার আস্তিকতা নাস্তিকতা নিয়ে কেন আমরা শাহবাগে সূক্ষ্ম বিভক্তি নিয়ে আসছি? নাস্তিক থাবা বাবা, আস্তিক আপনি, প্লে বয় আকরাম, ভাল ছাত্র মশিউর, ধার্মিক আনোয়ার আর বক ধার্মিক আমি, আমরা খারাপ হতে পারি, কিন্তু যে দাবিতে আমরা এক হয়েছি সেই দাবিটা কিন্তু মহান।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম যা করতে পারেন নি, কখনো ভয়ে, কখনো লোভে, কখনো স্বার্থে বা কখনো স্রেফ টিকে থাকার জন্য, সেই দায়ভার এখন আমাদের কাঁধে কিন্তু। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে একের পর এক বেইমানি হয়েছে দেশের সাথে,আমার সাথে, আপনার সাথে। যারা যতবার জোট করে ওই ঘাতকের দলকে নিয়ে এসেছেন, তারা বেইমানি করেছেন। যারা ওই ব্যাপারটা মেনে নিয়েছিলেন, তারাও বেইমান। যারা ওই সময়ও সময়ের দাবিকে পাত্তা না দিয়ে “ তুই ভাল খেলনা পাইছিস, আমি পাইনাই, আমি খেলবনা” ধরনের মানসিকতা নিয়ে দেশটাকে ভাগ করে গেছেন বার বার, তারাও বেইমান।
প্রজন্মান্তরের বেইমানি আর কাপুরুষতার দায়ভার কাঁধ থেকে নামাবার একটা সুযোগ কিন্তু এইবার পেয়েছেন। এখন পিছিয়ে পরবেন?

একই সাথে কেউ বিশেষ নিরাপত্তা পেলেন কি পেলেন না, নিলেন কি নিলেন না সেটা নিয়ে উত্তেজিত হওয়ারও কিন্তু কিছু নেই। আপনার কোন সিদ্ধান্তে সমস্যা হচ্ছে? আপনি প্রশ্ন করুন,জবাব চান। আপনার অধিকার আছে। কিন্তু কেউ কেউ গান্ম্যান কেন পেল,সরকার ওদের কে নেতা বানিয়ে দিল কিনা এই নিয়ে টেনশনে থাকা হবে আমাদের ব্যাক্তিগত মানসিক ক্ষুদ্রতার পরিচয়।

আওয়ামীলীগ, বি এন পি জামাত কোনটাই আমার দল না, তাই সেখানে নেতা কে হবেন তা আমি ঠিক করিনা। তবে মনে রাখবেন, শাহবাগ আমার। শাহবাগ আপনার। এখানে কে নেতা হবেন বা হবেন না তা ঠিক করি আমি, আপনি। দলীয় লোকজন কথা বলতে এসে যেমন বোতলের বাড়ি খেয়েছেন, কেউ দলীয় মনোভাব দেখাতে গেলেও বোতলের বাড়ি দেব আমরা। কিন্তু “উনার তো গান্ম্যান আছে, উনি তো সরকারের কোলে উঠে গেলেন! অথচ আমি এত কিছু করলাম,আর আমার জন্য কেউ নাই?” এমন ভাবনা থেকে দয়া করে বের হয়ে আসুন।

সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি পারেন প্রজন্মন্তারের দায়ভার মাথায় নিয়ে চুপচাপ সরে যেতে। কিংবা এইবার একটা স্ট্যান্ড নিতে। অন্তত চেষ্টা করে দেখতে যেন আপনার পরবর্তী প্রজন্ম আপনাকে বেইমান বা কাপুরুষ বলতে না পারে।
প্রতিক্রিয়াশীল বাঙালি জেগে উঠুক সবখানে। সব মিথ্যা, সব ভণ্ডামির বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠুক লক্ষ কণ্ঠে।সাধারণ গণমানুষের জয় হোক। গণমানুষের হৃদয়ের জয় হোক। গণমানুষের স্বপ্নের জয় হোক।
২২টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×