সম্প্রতি দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, সংসদ সদস্যদের ৯৭ শতাংশই বিভিন্ন ‘নেতিবাচক কার্যক্রমে’ জড়িত। সংস্থাটি আরো বলেছে, “সংসদ সদস্য পদকে একটি লাভজনক আয়ের উৎস হিসেবে গণ্য করায় সাংসদরা মূল দায়িত্বের বাইরে উন্নয়নকাজে এ ধরনের নেতিবাচক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছেন।“
সাধারণত রাজনীতিকদের মূল কাজ হিসাবে গণ্য করা হয় জনসেবা করা। কিন্তু আপনি যদি কোন উচ্চতর সত্ত্বা
র কাছে একসময় জবাবদিহিতার অনূভুতি না রাখেন তথা সেক্যুলার মতাদর্শে অথবা নাস্তিকতায় বিশ্বাসী হন তাহলে আপনার জনসেবা করার পিছনে কি যুক্তি থাকতে পারে? হয়ত বলবেন যে মানুষ আমার প্রশংসা করবে, আমার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি হবে অথবা আমার মৃত্যুর পর যুগ যুগ ধরে আমার গুণগান করা হবে এবং আমাকে স্মরণ করবে এই তো। যারা সেক্যুলার বা নাস্তিকতায় বিশ্বাসী তারা তো সবকিছু যুক্তি দিয়ে বিচার করেন, অন্তত সেই দাবী করেন। তাহলে আপনিই বলুন যুক্তির মানদন্ডে জনসেবা করার পেছনের এসব কারণ কতটা উত্তীর্ণ। আমার পেটে যদি ভাত না থাকে তাহলে আমি কি জনপ্রিয়তা বা প্রশংসা দিয়ে পেট ভরাব? মৃত্যুর পরে স্মরণ করার বিষয়টিতো তাদের চোখে আরও অযৌক্তিক হওয়ার কথা, কেননা তাদের কাছে মৃত্যু অর্থ মাটিতে মিশে যাওয়া তথা অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়া। যার অস্তিত্বেরই কোন প্রশ্ন আসে না তার কাছে প্রসংসার বা স্মরণের মূল্য অর্থহীন। যেহেতু আমাকে আমার জীবনের থেকেই সবটুকু উপযোগীতা নিতে হবে সেহেতু অবশ্যই আমাকে যেভাবে সম্ভব অথ ও ক্ষমতা অজন করে আমার কামনা বাসনাকে চরিতার্থ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অন্তত বুদ্ধি বিবেকে তাই বলে।
রাজনীতির মাধ্যমে জনসেবা করার পেছনে আরেকটি যুক্তি দাঁড় করানো হয়, আর তা হলো দেশপ্রেম। কিন্তু এই দেশপ্রেমেরও যে বিষময় ফল আছে তা কি অস্বীকার করা যায়। দেশপ্রেম নিঃস্বন্দেহে একটি মহৎ গুণ, কিন্তু প্রশ্ন হল এই দেশপ্রেমের সীমা কতদূর? আপনি কি যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল প্রভৃতি দেশের রাষ্ট্রনায়কদের বিশ্বব্যাপী আগ্রাসী তৎপরতাকে সমর্থন করেন? সম্ভবত আপনার উত্তর না-ই হবে। কিন্তু তাদের দেমপ্রেমকে তো অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তারা তাদের দেশকে ভালবেসে দেশের স্বার্থেই এসব করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার কিন্তু নিজের দেশ ও জাতিকে ভালবেসেই ষাট লক্ষ ইহুদী মেরেছিল। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের দিকে তাকান, তারা আমাদের পদ্ধা, তিস্তায় ন্যায্য পানি দিচ্ছেনা। কেন দেবে? তাদেরকেতো আগে তাদের দেশের মানুষের পানির সমস্যা মিটাতে হবে। আমাদের দেশ মরূভূমি হচ্ছে না পানিতে ভেসে যাচ্ছে তা নিয়ে ভাবতে তাদের বয়েই গেল! আমাদের মানুষদের সীমান্তে গুলি করে মারলে যদি তাদের দেশে চোরাচালান কমে, তাহলে তারা মারবে না কেন? এসব কাজ যে শুধু শক্তিশালী দেশ গুলো করছে এবং অন্যরা ধোয়া তুলসিপাতা বিষয়টা এরকম নয়। যখন ব্রিটিশরা ছিল সুপারপাওয়ার তখন তারা বিশ্ব শোষণ করেছে, পরবর্তীতে একই কাজ করেছে সোভিয়েত, আর এখন তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। আমাদের বাংলাদেশ যদি এই পযায়ে কখনো পৌঁছে তারাও ঠিক একই কাজই করবে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি যে ”আমার অন্যয় করার ক্ষমতা নেই বলেই আমি নীতবান” বাংলাদেশের অবস্থা এটাই। এর প্রমাণ কিন্তু টিআইবি র প্রতিবেদনটিই বহন করে। আমাদের রাজনীতিকদের ক্ষমতা আছে জনগণকে শোষণ করার তাই তারা সেটাই করছে, কখনো বিশ্বকে শোষণ করার শক্তি অর্জন করলে তারা বিশ্বকেও শোষণই করবে।
সুতরাং দেশপ্রেমও দূনীতি ও অবৈধ লাভের পথ বন্ধ করার সর্বোত্তম পথ নয়। আপনি মানুন আর নাই মানুন যদি আপনার সর্বশক্তিমান কোন সত্ত্বার সামনে জবাবদিহিতার অনুভুতি না থাকে তবে আপনি কখনই পরিপূর্ণ ভাবে বতমানে ছড়িয়ে পড়া সবব্যাপী দূর্নীতিকে দূর করতে পারবেন না। আইনের ভয়ে কখনো মানুষ হয়তো ভাল সেজে থাকে, কিন্তু যেখানে আইনের ভয় নেই সেখানে তার আসল চেহারা উন্মোচিত হয়ে যায়। সভ্য দেশ (?) আমেরিকায় হারিকেন ক্যাটরিনার পর তাদের সুপার শপ গুলোর লুটপাট দেখলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা।
”তুমি আসলে তাই, অন্ধকারে তুমি যা”