ক'দিন হলো ব্লগবাগান বেশ সরগরম। স্বাধীনতার পক্ষের ব্লগারদের ব্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছিলেন বেশীরভাগ ব্লগার। তারা ফিরে এসেছেন। সুবাদেই তুলে নেওয়া হয়েছে কি-বোর্ড বিরতি (অনেকে কলম বিরতি বলছেন)। ফিরে আসা যোদ্ধাদের আগেই স্বাগত জানিয়েছি। সেটা আবারও জানাই। সেইসঙ্গে যারা তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে গ্রুপভিত্তিক কিংবা একক প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন সবাইকে আবারও অভিনন্দন। বছরটা শুরু হয়েছিল রাজাকারমুক্ত/স্বাধীনতা চেতনার বিরোধীতা মুক্ত সামহোয়ার ইন ব্লগের দাবিতে। তারপর এই ঘটনা। তখনই আন্দোলনরত ব্লগাররা জোরেশোরে কর্তৃপক্ষকে আহবান জানিয়েছেন নীতিমালায় স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী পোস্ট দেওয়া যাবে না এমন একটি ধারা যোগের। যদ্দূর মনে পড়ে আনব্যানের পর আরিল একটি পোস্টে মন্তব্য করেছেন এ ব্যাপারটায় তিনি আলোচনায় আগ্রহী। সে ব্যাপারেই এই প্রয়াস। আলোচনাভিত্তিক অবশ্যই। তার আগে কিছু পেছনের কথা না বললেই নয়।
একজন চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী ব্লগার (নিপু পাওয়ারফুল) একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেটা সরাতে সে রাতে স্বাধীনতার পক্ষের কিছু ব্লগার ফ্লাডিং করেছিলেন। পরিণামে তাদের অনেকেই ব্যান হয়েছেন। তার দাবিতেই সকাল থেকে শুরু হয় প্রতিবাদ। এ সময়টাতেই বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। মাহবুব মোরশেদ নামে একজন ব্লগার কর্তৃপক্ষের মন রাখা কিছু পোস্ট ছেড়েছেন। সে পোস্ট কর্তৃপক্ষ মনিটরের ওপরের বাকোণে ঠাই দিয়েছেন তাদের পছন্দের কথামালা থাকায়। লেখক একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা ও বিপক্ষকে রক্ষার প্রয়াস নিয়েছেন। নিতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেছেন। চিহ্নিত হয়েছেন দালাল হিসেবে। তিনি সেই আন্দোলনকে গালিবাজ মুক্ত ব্লগে (ভার্চুয়াল গুন্ডাগিরির থেকে মুক্তি) প্রবাহ করার ডাক দিয়েছেন। আরেকটি বিশেষ ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি সেই পোস্টে। এবং আমারই একটি পোস্টের নাম ধার করে লেখা কাল্পনিক গল্পে (যেতে পারি কিন্তু কেনো যাব)। তার ইঙ্গিত ছিলো সামহোয়ার ছেড়ে সচলায়তন নামে একটি ক্লোজড গ্রুপ রাইটার্স ফোরামের দিকে। তারাই এখানে অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে চাইছে বলে দাবি তুলেছেন তিনি।
অথচ এ সময়টায় আমরা দেখেছি ব্লগে উপস্থিতি স্বাভাবিক বোঝাতে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে চিহ্নিত বলে ব্লগাররা তাদের সবকটি নিক নিয়ে লগ ইন করেছে। এক ফজলে এলাহী তিনটি নিকে লগ ইন করেছেন যার স্ক্রিন শট অনেকেই দিয়েছেন। একই ঘটনা ঘটিয়েছেন বাকিরাও। মাহবুব মোরশেদের একবারও মনে হয়নি এইসব ব্লগার উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে তাদের প্রিয় নেতারা ব্যান হওয়ার পর ত্রিভুজ ডট কম নামের একটি ব্লগে লিখেছেন। তাদেরই বানানো নিক যখন ব্লগে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে এবং তার প্রতিবাদ হয়। তখন প্রতিবাদীদের মাঝে মাহবুব মোরশেদ সচলায়তনের ভুত দেখেন। যাহোক, সম্প্রতি এক পোস্টে এস্কিমোর মা নিয়ে সুশীল মন্তব্য করে মাহবুব মোরশেদ বুঝিয়ে দিয়েছেন, র স্ল্যাং ব্যবহার না করেও গালি দেওয়া যায় (ইকুয়েশনটা এভাবে দেওয়া যায়- তোমার মা তোমারে ফ্রি জন্ম দিছে মানে তোমার বাবার থেকে পয়সা নেয় নাই কিংবা তোমার মা কারো কাছ থেকে পয়সা নিয়া তোমারে জন্ম দিছে)। এখন গালিবাজীর সূচনা নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়।
স্বাধীনতা বিরোধী কোনো পোস্ট যখন দেওয়া হয়, তার সেই পোস্টে গিয়ে তার লেখাটা যে ভিত্তিহীন- এই সুশীল প্রয়াস শুরুতে অনেকবার নেওয়া হইছে। এই ব্লগের অন্যতম কুখ্যাত গালিবাজ হিসেবে আমাকে অনেকেই চেনেন, এই আমার ব্লগের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৯০% লেখাই মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক। তাদের অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার জন্য লিখা। বিতর্ক করবেন ঠিক আছে, তার তো একটা সিদ্ধান্ত হতে হবে। সে সিদ্ধান্তে যাওয়ার উপায় তো রাখা হয় নাই। সবচেয়ে বড় কথা এইসব নতুন করে শুরু হয় নাই। শুরু থেকে চলছে, এখনও চলছে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বড় প্রমাণ সম্প্রতি ত্রিভুজ নামে এই ব্লগের সবচেয়ে চিহ্নিত বিতর্কিত ব্লগারটি আবার রবীন্দ্রনাথ, জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিতর্ক তুলেছে। তার সঙ্গীরা লিখছে জাতীয় পতাকা নিয়ে। কোনো বিতর্ক তোলার জন্য যুক্তি লাগবে, তাদের যুক্তির সীমাবদ্ধতা দেখে নিজের জ্ঞানকে অপমান করতে ইচ্ছে করে না। পার্টি লাইন থেকে লেখা। এখন মুক্তিযুদ্ধের ছবি যদি ফটোশপে এডিটেড বলে কেউ মন্তব্য করে তাকে কি করবেন। ঠাণ্ডা মাথায় বোঝাবেন? জাতীয় সঙ্গীত কেন বদলানো উচিত কেউ লিখলো- তাকে কি বলবেন? ভাইয়া ঠিক লিখোনি, বা এমন লেখা ঠিক না। আপনাদের অবগতির জন্য জানাই, সেই সুশীল পথ শুরুতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্জনের ছলের অভাব হয়নি কোনোদিন। তারা সেসব তথ্যপ্রমাণের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যেই দৈনিক সংগ্রামের কপি পেস্ট দিয়ে তাদের নেতাদের স্বাধীনতাবিরোধীতার প্রমাণ দেওয়া হয়, সেটার অস্তিত্বই তারা অস্বীকার করে। সবচেয়ে অবাক লেগেছে সারওয়ার চৌধুরী নামে একজন ব্লগার যখন জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের ব্যাপারে আলোচনার অবকাশ আছে বলে মত দেন। তিনিও গালিবাজীর বিরুদ্ধে, কিন্তু কাউন্টার নিকগুলোয় সাবাশি দিয়ে আসতে ভুলেন না।
আমার কথা একটাই, স্বাধীনতাবিরোধী লেখা বন্ধ হলেই গালিবাজী বন্ধ হবে। কে সাধ কে সাধ করে গালিবাজ হতে চায়। আমি তো এখানে নিজের নামে লিখি। আমার গোটা ক্যারিয়ার এই নামেই লেখালেখি। এই নামেই গালি দিই। সে গালি কাদের দিই? ব্লগাররা খুজলেই পাবেন।
স্বাধীনতা বিরোধী লেখা কোনগুলো। মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে এমন যে কোনো লেখাই স্বাধীনতার বিরোধী লেখা। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, যুদ্ধকালীন আমাদের জাতীয় নেতারা, আমাদের জাতীয় পতাকা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, ধর্ষিত বীরাঙ্গনার সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত পোস্টগুলোই স্বাধীনতা বিরোধী লেখা। কর্তৃপক্ষ সবদিক ঠিক রাখার জন্য দেখলাম চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীদের একটি গ্রুপ খোলার অনুমতি দিয়েছেন। তারা সেখানে লেখালেখি করবেন। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী লেখা প্রথম পেজে আসুক না আসুক গোপন কক্ষে আলোচিত হবে- সেটাও আমরা চাই না। বাক স্বাধীনতার চর্চার নামে যা-তা বলার অধিকার কারো নেই।
আমরা চাই সুস্পষ্ট ঘোষণা আসুক যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত কোনো পোস্ট সামহোয়ারে নিষিদ্ধ করা হলো। এ ধরণের পোস্ট যিনি লিখবেন, তাকে নিকসহ নিষিদ্ধ করা হবে।
এ ব্যাপারে অন্য ব্লগাররা কি ভাবছেন তা জানা দরকার। আপাতত এটুকুই।
নীতিমালার অংশ বিশেষ
১ক.
বাক স্বাধীনতা প্রসঙ্গ:
সামহোয়্যার ইন ব্লগের যাত্রা শুরু হয়েছিলো সাধারণ মানুষের কথা বলার একটি স্বাধীন মঞ্চ হিসাবে, যেখানে সবাই তাদের চিন্তা, মতামত, সৃজনশীলতা বিনিময় করতে পারবে। চিন্তাধারা যতই চরম-পন্থী(radical) কিংবা রক্ষণশীল(conservative) হোক না কেন, তার স্বাধীন মত প্রকাশকে আমরা সমর্থন করি, যতক্ষণ না তা রাষ্টীয় আইন বা অন্যের ব্যাক্তি স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে।
২চ.
কোন এক শ্রেণীর অনুভূতিকে আঘাত করে, এমন কোন ঘৃণাত্মক পোস্ট অথবা মন্তব্যপূর্ণ পোস্ট আমরা প্রথম পাতায় থেকে সরিয়ে দিতে পারি ।
৩ক.
যে কোন ধরণের পোস্ট যা দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে বা দেশের ক্ষতি করতে পারে এমন কোন তথ্য প্রদান করে। দেশের আইনের সাথে পোস্ট কিংবা ছবির কন্টেন্ট সঙ্গতিপূর্ণ না হলে।
৩ছ.
যদি কোন পোস্টে সন্নিবেশিত তথ্য কিংবা বিষয় অথবা নির্দেশনা সমাজ এবং ব্লগ কমিউনিটির জন্য হুমকি স্বরূপ হয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


