যারা ছায়াবাজি দেখছেন তারা ধরতে পারবেন ব্যাপারটা। বুড়া আঙুল আর মধ্যমা মিলিত, বাকি আঙুলগুলা খাড়া- য্যান দুইটা খরগোস মুখামুখি। একটু সামনে ঠেলা দিয়া দশ আঙুল ছাইড়া দিলাম। মুখ দিযা বাইর হইয়া আসলো- ট্যা ট্যা ট্যা, ট্যাট্যাট্যা... পাশে বসা রাজকন্যার মা অবাক হইয়া কয় তোমার কি হইছে? ভয় লাগতেই পারে, মাইয়ারে ফুল চেকাপ কইরা খুশী মনে ফেরার পথে স্বামীর মাথাখারাপি লক্ষণ দেইখা ভয় পাবেই যেকোন বউ। এমনভাবে লজ্জা লাগলো ভীষণ। আসলে একটা এনিমেশন বানাইতেছিলাম মনে মনে। এ-টিম নিয়া। সেইটার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে অরিজিনাল সাউন্ডট্র্যাক রাইখা শুরুটা ভাবতেছিলাম। হোসেইনের সেই বিখ্যাত লাইনরে বহুবচনে নিয়া- আমরা শুয়োরের সাথে সহবাসের ফতোয়া অস্বীকার করি। একলাইনের লেখাটা ম্যাগনিফাই হইয়া পুরা স্ক্রিন বাজনা সহকারে। এমন সময়ই ব্যাঘাত।
আসলেই আউলা আছি। মেলায় গতকাল একটা ব্লগার সমাবেশ হইছে- অচেনা বাঙালীর পোস্ট পইড়া ইতিমধ্যে জানছেন সবাই। যেইটা জানেন না তা হইলো একটা এ-টিম সমাবেশও হইয়া গ্যাছে ফাকে দিয়া। অনেকে টেরই পান নাই। তাতে সমস্যা নাই। বিভিন্ন ট্রেঞ্চে থাকা একই যুদ্ধের যোদ্ধারা যদি সামাজিক সমাবেশেও মিলিত হয়, তাতে সমাজ এবং পরিবেশ অদৃশ্য হইয়া যায়। থাকে শুধু সেইসব যোদ্ধা, যুদ্ধের স্মৃতি, পরবর্তী পরিকল্পনা। বিপ্লবীরা এই কারণেই সমাজত্যাগী আবার বিপ্লব শেষে সমাজও তাদের গ্রহন করে না। যদিও সমাজই তাদের বিপ্লবের সরাসরি সুবিধাভোগী। কিন্তু বিপ্লব শেষে কে তা মনে রাখে!
এ টিমের নানা কিসিমের ব্যাখ্যা দিছে লুকজন। চটকানা খাওয়া নাপতালরা (পড়েন সুশীল) ছাগুরামগো লগে গলা মিলাইয়া কয় এইটা আসলে আওয়ামী টিম। মাইন্ড খাওয়ার কিছু নাই। মুক্তিযুদ্ধে যদি আওয়ামী লিগ নিয়তির লীলাখেলায় নেতৃত্ব দিয়া থাকে, ভার্চুয়াল জগতে এ-টিমের মাঝে তাদের ছায়া দেইখা আতকে উঠায় তো দোষ দেখি না। অসহ্য গুহ্যবেদনা নিয়া আবাল টিম, এতিম, ভার্চুয়াল গুন্ডাসহ নানা প্রতিক্রিয়া আসছে। সেসব আমরা টোকা দিয়া ধুলা ঝাড়ার মতো ঝাইড়া ফালাইছি। আমরা সুনামের আশায় লড়ি না, বদনামেও ডরি না।
যাক ভূমিকায় চইল্যা গেলো সব। মেলায় ঢুকার পর সবার আগে আমার লগে দেখা রোকনের লগে। ছোটখাটো পোলা, বুয়েটে পড়ে- তারে দেইখ্যা বুঝার উপায় নাই পুংটামির মাস্টার হইয়া বইসা আছে। বিনয়ের সবটুকু ঢাইলা দিয়াই জানাইলো তিনটায় সমাবেশ শুইনা সে আসছিলো। এই দেড়ঘন্টা অপেক্ষার পর আমারেই সে প্রথম দেখলো। জাগৃতির সামনে কয়েকদফা চক্কর দেওয়ার পরও জেবতিক আরিফ বা অমিতরে সে পায় নাই। বই কিনছে, অটোগ্রাফ নিবে। কিন্তু ওর সময় নাই, চলে যেতে হবে। আমি কইলাম এতক্ষণ ছিলা, আরেকটু থাকো। সবাই আসবে দেখা সাক্ষাত করো। সে লাজুক ভঙ্গিতে জানাইলো তার টিউশনীতে যেতে হবে, ছাত্রীর পরীক্ষা। ছাত্রীটা এমনভাবে শরীর মুচরাইয়া বললো যে তারে বাধা দিতে কইলজায় কামড় দিলো।
একই পোড়ানিতে পুড়াইলো অলৌকিক। বেচারা সদ্য বিবাহ করছে। হানিমুনে যাবে ঘুড়ি উৎসবে, তার আগে এই সব মেলা-ফ্যালা, মানুষ জন, এটিম সব তার অসহ্য লাগার কথা। কিন্তু ক্যামরেডরি শব্দটাই এমন যে, মানুষ আর স্বাভাবিক থাকে না। সাধারণ থাইক্যা উত্তীর্ণ হয়। জেবতিক ব্যস্ত মানুষ। এই দশজনরে অটোগ্রাফ দিয়া (এই জন্য সে ভাবী থেকে একটা কলম চুরি করে আনছে) দৌড়ায় টিভিতে সাক্ষাতকার দিতে, তারপর কোন পত্রিকা অফিসে গোল টেবিল- সফল লেখকদের সব ভাব তার মধ্যে টস টস করতেছে। অলৌকিক তার ইডেনের ক্যাডার বউয়ের ভয় অগ্রাহ্য ক্ইরা আমার লগে বিড়ি ফুকে। আসেন অচেনা বাঙালী, বিনয়ে রোকনের ডুপ্লিকেট কিন্তু এলএমজিতে ডাবল এক্সপার্ট মেন্টাল। পিচকি টাইপের মনিটররে দেইখ্যা আমার মনে পড়ল তার নাম করনের স্বার্থকতা। কম্পিউটারের মনিটরের তিনটা বাক্স একটার উপর একটা রাখলে হাইট কাভার করবো, হাফপ্যান্ট পড়লে পাবলিক বিশ্বাস করবো স্কুলে পড়ে- কিন্তু চোখ দুইটা মনিটরের থাইক্যা জ্বলজ্বলে। আছেন কেমিকেল আলী- আরেক পিস! (এই শব্দগুলিতেই আসলে সব বলা হয়)। আইলো অপু।
চোখের কথায় মনে হইলো আরেকজনের কথা। ভ্যাবলাকান্ত সাইজা উনি আসলেন। সিগারেট খাওয়ার মধ্যে একটা চোর চোর ভাব, যেন আশেপাশেই মুরুব্বি আছে এখনই ডাক দিবে ঘরে যাইতে। উনি বিশেষ কথা বলেন না কারো সঙ্গে। ড্যাশিং হাসান মোরশেদের এক পাশে গিয়া খাড়াইয়া থাকলেন পুরাটা সময়। পরে খিয়াল পড়লো উনারে দীর্ঘদেহী একজন সারাক্ষণ আগলাইয়া রাখছেন বডিগার্ড হইয়া। এটিম সদস্যদেরও নিরাপদ মনে হয় নাই মনে হয়। কিংবা অধিক ব্লগারের উপস্থিতিতে অতিরিক্ত সচেতন। আমরা একটু দূরে গিয়া গপসপ করি। মাঝে মাঝে কেউ কেউ আসে। কেউ নিজের সত্যি নাম বলে না।
আমরা গতকালের আগেও কেউ কাউরে চিনতাম না। সামনাসামনি দেখা হয় নাই কয়েকজন বাদে। যদিও এধরণের ছোটখাটো সমাবেশ গোপনে আগেও হইছে কয়েক মাথায়, এত ব্যাপক না। তাতে সমস্যায় পড়ে নাই কেউ। এটিম মানেই লম্বায় ছয়ফুট হইতে হইবো, বুকের ছাতি বিযাল্লিশ, বাহু লগ্না থাকবো লাক্স সুন্দরী- এই ফ্যান্টাসিতে বিভোর হইয়া সুখ পাইতে পারেন যে কেউ। কিন্তু বাস্তবটা একদমই ভিন্ন। এই লোকগুলা একদম সাধারণ মানুষের কাতার থিকা উইঠা আসা। বেশভুষা, চেহারাসুরতেও তেমন নায়কোচিত কিছু নাই। কিন্তু এদের কাছে আছে হৃদয় নামের এক মারণাস্ত্র। সেইটারে ধারালো কইরা তুলছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সামহোয়ারে স্বাধীনতার বিরুদ্ধবাদিতার বিরুদ্ধে সরব ও সশস্ত্র প্রতিবাদে বিশ্বাসী এসব যোদ্ধা। অনেকের সঙ্গে পার্সোনাল ক্যাচালে গোটা টিমের উপর ঝাল ঝাড়েন অনেকে। এইটা কিন্তু ঠিক না। রাজাকারিতা ছাড়া এটিম আর কোনো ইস্যুতে একাট্টা না। আর কারো পার্সোনাল ক্যাচালেও টিম ইনভলভড হয় না। তবে শৃংখলা রক্ষায় মাঝেমাঝে আগাছা নিধন চলে, চড় থাপড় পরে অনেকের গালে- সেইটা বৃহত্তর স্বার্থে মাইনা নিলেই ভালো।
হোসেইন দিয়া শুরু করছিলাম, আইজুদ্দিন দিয়া শেষ করি। এইটাও ধরতে পারেন এ-টিমের উদ্দেশ্য্ এবং মেনিফেস্টো :
আমি গুন্ডা, আমি রবিনহুড। আমাকে ব্যান করা হয়েছে দেড় শত বার, ব্যান হবো হাজার বার, তবু আমি গুন্ডামি করবো। যেমন কুকুর তেমন মুগুর হওয়া উচিত। আপনার সুশীল থাকেন, ব্লগের একই পাতায় শুকুরের বিষ্টার সাথে আপনাদের জ্ঞান গর্ভ আলোচনা, সাহিত্য, আমি সেই বিষ্টা পরিষ্কার করব। আপনি আমাকে ইরিটেটিং গুন্ডা বলুন কোন আপত্তি নেই, আমি বরং জানব যে শুকুরের বিষ্টার সাথে মানুষের খাদ্যের পার্থক্য আপনি ভুলে গেছেন, আর আপনাকে মনে করিয়ে দিয়ে আমি উপকার করছি। আপনার কৃতজ্ঞতা আমার দরকার নেই, বরং আপনাকে যে আমি শুকুরের বিষ্ঠা থেকে পরিষ্কার করেছি সেই আমার আত্মপ্রসাদ।
এ-তে আমরা, যারা শুয়োরের সাথে সহবাসের ফতোয়া অস্বীকার করি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন