বাংলা ভাষার ক্রিয়াপদ-প্রকরণ অন্য যেকোনো ভাষার চেয়ে বেশ জটিল। তথাপি আমাদের মাতৃভাষার মধুর হাজারো বোল,বাচনিক স্ফূর্তি ও প্রান্তিক লোকসমাজের শ্রুতি-নির্ভর আবহমান উপাদান মিশ্রিত ভাষ্য-বৈচিত্র্য এবং বাউল সুর ও ভাবের অতলস্পর্শ গভীরতায় রয়েছে বাঙালি সংস্কৃতির শেকড়―এসব লোকসঙ্গীত ও গীতিকবিদের রচনা, ভাষাকে দিয়েছে গতিময়তা এবং একইসাথে সহজিয়া রীতি। ভাষাকে চর্চা ছাড়া কেবল ওই গ্রন্থাগার আর যাদুঘরে সাজিয়ে রাখা যায়। তাতে করে শুধু দূরত্বই বাড়ে লোক-প্রিয়তার সাথে। গুরুসম, শ্রদ্ধেয় সে-সকল সঙ্গীতকার ও মুখের-লেখকদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা; তাঁদের গীত সাধনা ও কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গুটিকত চেষ্টার সাহস পাচ্ছি আমরাও। জানি এসব সৃষ্টি অতি সামান্য ও তুচ্ছ হ’তে পারে। পাঠকগণ, আমি কাগজ-কলমে লিখি, খসখসে শব্দটা আমার ছন্দ। কুয়োর বেঙের মত করে কোন কল্পনা বা কাহিনী আমার ভাবতে হয় না, অথবা পারিও নে। জগতের অসংখ্য সত্য ঘটনা ও গল্প দর্শক-মনোযোগে বাস করে। একান্নবর্তী এ পরিবারই দেহধারণ করে আছে সবটাতে। আমি তাঁদের উপস্থিতিতে মুখোমুখি হই। রবীন্দ্রনাথের কথাটি বলতে ইচ্ছে হয়, ‘যখন পথিক যে পথটাতে চলিতেছে বা পান্থশালায় বাস করিতেছে, তখন সে পথ বা সে পান্থশালা তাহার কাছে ছবি নহে; তখন তাহা অত্যন্ত বেশি প্রয়োজনীয় এবং অত্যন্ত অধিক প্রত্যক্ষ। যখন প্রয়োজন চুকিয়াছে, যখন পথিক তাহা পার হইয়া আসিয়াছে, তখনই তাহা ছবি হইয়া দেখা দেয়।’ আমি সে ছবি লিখি মাত্র ‘গান লিখি তাতে সুর বসিয়ে গান গাই, এইটুকুই আমার আশু দরকার। আমার আর কবিত্বের দিন নেই। পূর্বেই বলেছি ফুল চিরদিন ফোটে না, যদি ফুটত তো ফুটতই আমাদের কোন দরকার হতো না। এখন যা লিখি তা ভাল কি মন্দ সেকথা ভাববার সময়ও নেই। যদি বল তবে ছাপাই কেন, তার কারণ হচ্ছে ওটা আমার একান্তই অন্তরের কথা, অতএব কারো না কারো অন্তরের কোন প্রয়োজন ওতে মিটতে পারে। ও গান যার দরকার সে একদিন গেয়ে ফেলে দিলেও ক্ষতি নেই কেননা আমার যা দরকার তা হয়েছে। যিনি গোপনে অপূর্ণ প্রয়াসের পূর্ণতা সাধন করে দেন তারই পাদপীঠের তলায় এগুলো যদি বিছিয়ে দিতে পারি এ জন্মের মতো তাহলেই আমার বকশিশ মিলে গেল ...’
চোখখের মালায় না-দেখলাম যারে,
মন কেন রে তারে খুঁজে/ ব্যয়া যাওয়া দিনের চরে
গড়িছে যে মহামায়া/ তারে ভেবে গো রশিদ
এশক্ ভিড়াও ঘাটে ঘাটে ?
কে ডাকে আপন বড়/ কণ্ঠে তাহার নামটি লও
রশিদ বলে ভুলেছে মন/ কি নামে তার স্মরণ হয়
চক্ষুর দেখা দালান কত/ বানলো আইসা এ পারে
খেয়া পাড়ি দিতে ও- কী/ করছে সদাই মিছে ধন!
আসমানেতে খুলছে দুয়ার/ রইলে প’ড়ে অচেতন
রশিদ/ রইলে প’ড়ে অচেতন
সাধন করা বাঁধন এথায়/
দমে দমে/ তার সৃজন
বোঝো কিনা নেশায় ধরা/ আগুন তাপের
উপোষ হাড়ি/ রান্ধো বসে যে সারাখন
পরাণ কি পুড়ে না ওতে/ পুড়ে কালা/
কয়লা জনম, ভাব বিনে/
সে ছাইয়ের ক্ষয়/
এত যারে স্বাদ করিলা/ ফের থাকলে বুজে অখিল-মুখ
কভু তোমার জানিয়া ভক্তি/ কভু তোমার জানায় অ-সুখ
খেলিছে তোমারই ক্ষুধা/ যেমনি ফুটে রাত-বিরাতে
ভিটা হইতে পোয়াতি ফুল// রোগ তার গাছের লগে,
কেবা লয় সে সংসারের খোঁজ/ মন তাঁরে তালাশ করে
ভ্রমর ক’রে কামগন্ধে/ সে বিরহে গুঞ্জন―
‘চোখে না দেখলাম যারে/ মন তবু কেন রে খুঁজে
রশিদ বলে বেদন বুকে/ তার দেখা কী পাইবোনা!’
অবুঝ ওরে সন্ধান করিস/ তোর দৃষ্টি কি পায় দ্রষ্টারে ?
বাছ-বিচারে নামের কি দোষ/ কোন স্বাদে তোর প্রাণ বাঁচে!
ক্ষুধায় ছুটে আহার পানে/ বলতো, কে তারে শেখায়
জাগলে রবি ঘুমোয় নারে/ যারা এ পথের কা-ঙা-ল
দেখ না তুই হাটে-মাঠে/ কাকের বাসায় উঁকি-মারে
মা-পাখিটির শূন্য উদর/ কোন সে টানে লয় আদর
কৃষক-ঘামে ভিজে জমিন/নোনা কি নয় তাঁর ফসল!
সোনা নামে ডাকিস যখন/ সোনার দামে কিনিস কিরে ?
নোনা ফসল রতন হইয়াও/ অভাব কেনে বাহিক ঘরে
আস্তা আদম পচে গলে/ খনি হইলে আপন নীড়ে
কোন মনজিলে/ তাহার বলো হিসাব হয়!
নানান কহে চোখের পরেও/ আছে দেখার বহু চোখ গো
চেনা কোন জন/ স্মরণে কে’বা/ অচিন লক্ষ-কোটি লোকে
দেখার আছে/ লুকিয়ে দেখার/ হায়াত মউত কিছুই নয়
কর্ম যেবা করিছে জিকির/ সেই কিন্তু আসল জন
দৃশ্য ঘটুক অগোচরে/ বর্তমানই সব প্রহর
রশিদ তোমার/ বর্তমানই সব প্রহর
তাই মনের পরেও/ কর্মী হও গো
এশক্ করো/ তার বচন
০৫ মাঘ ১৪২২
অন্ধবিন্দু | সামহোয়্যার ইন...ব্লগ
স্বত্ব সংরক্ষিত
চিত্র: জিনয়ি ফ্রে
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:২২