somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের সমসাময়িক বিষয় গুলোর সাথে মিল রেখে কয়েকটি ঈশপের গল্প।।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঈশপের গল্প নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই! ছোট বেলা থেকে সে সব নীতি কথা গুরুজনদের কাছে শুনে এবং বইয়ের পাতাই পড়ে বড় হয়েছি সে গুলোর অধিকাংশই ঈশপের গল্প।। তবে গল্প গুলোর মর্ম অর্থ ছোট বেলায় খুব একটা বুঝতে না পারলেও বড় হওয়ার সাথে সাথে সামাজিক পরিবেশ দেখে গল্পের নীতি কথা গুলোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি।। এখানে বর্তমান দেশের সমসাময়িক বিষয় গুলোর সাথে মিল রেখে কয়েকটি গল্প দিলাম_____



1. বন্দী ভেঁপু__বাজিয়ে
এক ভেঁপু-বাজিয়ে বুক-চিতিয়ে_ জোরদার ভেঁপু বাজাতে বাজাতে সেনাদল নিয়ে যাওয়ার সময় শত্রুদের হাতে বন্দী হয়ে গেল। ভেঁপু-বাজিয়ে কেঁদে কেটে প্রাণভিক্ষা চাইলঃ আমাকে দয়া করে ছেড়ে দিন। আমাকে ছেড়ে না দেওয়ার কোন কারণ নেই আমি কাউকে আঘাত করিনি। আপনার সৈন্যদের কাউকে খুন করিনি আমি। আমার কাছে কোন অস্ত্র নেই। থাকবার মধ্যে আছে শুধু এই পিতলের ভেঁপুটা। ঠিক এই কারণেই তো তোকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া দরকার, বলল তারা “তুই নিজে যুদ্ধ না করলে কি হবে__ তোর ঐ প্রবল ভেঁপুর বাজনাই তোদের সৈন্যদের যুদ্ধের উৎসাহ দিয়ে গেছে।।

নীতিশিক্ষাঃ যে অশান্তি পাকায় আর যে অশান্তি পাকানোয় মদত দেয় দুজনেই সমান দোষী।।

2. কাঁকড়া আর তার মা
এক মা-কাঁকড়া এক দিন তার ছেলেকে বললঃ হ্যাঁ রে __ তুই সবসময় এই রকম পাশের দিকে সরে সরে হাঁটিস কেন? সোজা হাঁটলে কত সুবিধা পেতি জানিস? বাচ্চা কাঁকড়া বললঃ ঠিক বলেছ মা, তুমি যদি আমায় একবার দেখিয়ে দাও কি করে সোঁজা হাঁটতে হয় আমি কথা দিচ্ছি আমিও তার পর থেকে সোজা হেঁটে যাব। মা-কাঁকড়া অনেক রকম করে সোজা হাঁটার চেষ্টা করল, কোন লাভ হল না। ছেলের প্রতিবাদের পাল্টা জবাব দেবার আর সাধ্য হল না তার।

নীতিশিক্ষাঃ নির্দেশ দেওয়ার বদলে বরং উদাহরন দিয়ে দেখান উচিৎ।
[ নিজে খারাপ পথ না ছেড়ে অন্য কে ভালো পথে ডাকা সমীচীন নয়।। ]

3. কুকুরের গল্প
এক কুকুর লোকজন দেখলে চুপচাপ তাদের দিকে তেড়ে যেত তারপর তারা কিছু টের পাওয়ার আগেই তাদের গোড়ালিতে কামড় বসাত। কুকুরটার মালিক মাঝে মাঝে তার গলায় একটা ঘন্টা বেঁধে দিত যাতে সে কোথাও গেলে চারপাশের সবাইকে জানিয়ে দিতে বাধ্য হয় যে সে এসে গেছে। আবার মাঝে মাঝে তার গলায় একটা শিকল বেঁধে সেই শিকলে একটা ওজনদার ভার ঝুলিয়ে দিত যাতে সে লোকজনকে কামড়ানোর জন্য ছুট লাগাতে না পারে।
কুকুরটা দিনে দিনে তার এই ঘন্টা আর ভার-টা নিয়ে খুব অহঙ্কারী হয়ে উঠল। ওগুলো নিয়ে সেই বাজার এলাকার সব জায়গায় সে দেখিয়ে বেড়াত। তখন এক বুড়ো শিকারী কুকুর একদিন তাকে ডেকে বললঃএত নিজেকে দেখিয়ে বেড়ানোর কি হয়েছে তোর? যে ঘন্টা আর ভার-টা ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াস, সেগুলো কোন সম্মান-পদক নয়! বরং অপমানের চিহ্ন। সব্বাইকে জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা যে তুই একটা নচ্ছার স্বভাবের কুকুর।

নীতিশিক্ষাঃ কিছু মানুষ আছে তাকে নিয়ে কোন কথা হলেই সেটাকে সুখ্যাতি ভেবে ভুল করে বসে।।

4.ষাঁড় আর ছাগলের গল্প
এক বার এক ষাঁড় একটা সিংহের তাড়া খেয়ে পালাতে পালাতে একটা গুহায় গিয়ে ঢুকে পড়ল। ঐ গুহায় এর আগে একদল ছাগলচরিয়ে লোক থাকত। কয়েকদিন আগে তারা গুহা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় একটা ছাগল ঐ গুহায় রয়ে গিয়েছিল। ষাঁড়টাকে গুহার মধ্যে দেখে সেই ছাগলটা শিং বাগিয়ে তেড়ে এল। ষাঁড়-এর শিং-এ শিং আটকে ষাঁড়টাকে সে ঠেসে ধরল। বাইরে সিংহটা তখন-ও পায়চারী করছে। ফলে ঐ ষাঁড় তখনকার মত হার মেনে নিল। তারপর ছাগলটাকে বললঃ লড়ে নে যত পারিস। তা বলে ভাবিসনা যে তোকে আমি একটুও ভয় পেয়েছি। আমার ভয় ঐ সিংহটাকে। একবার ওটা এখান থেকে চলে যাক, দেখ তারপর কি দশা আমি করি তোর!! তখন বুঝবি তুই কার জোর কতটা।।

নীতিশিক্ষাঃ অন্যের দুর্দশার সুযোগ নেওয়া ঠিক নয়, এক মাঘে শীত যায় না।।

5. নেকড়ে ও ভেড়ার গল্প
ঘুরতে ঘুরতে এক নেকড়ে একটা দলছুট ভেড়াকে একলা পেয়ে গেল। নেকড়ের ইচ্ছে হল বেশ মহত্ব দেখায়। ভেড়াটার উপর কোন হামলা না চালিয়ে বরং কিছু যুক্তি-তক্ক দিয়ে সেটাকে বুঝিয়ে দেওয়া যাক যে ভেড়াটাকে খাওয়ার ব্যাপারটা নেকড়ের হক-এর মধ্যেই পড়ে। সে ভেড়াটাকে বললঃ
এই যে মশায় গেল সনে আপনি আমাকে বিস্তর অপমান করেছিলেন।
ভেড়াটা ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল এবং বললঃ আমার তো গত বছর জন্মই হয়নি!
নেকড়েটা তখন বলেঃ হতে পারে। কিন্তু আমার মাঠের ঘাস খাও তুমি!!
না হুজুর, ভেড়া উত্তর দ্যায়!! ঘাস খেতে কেমন তাই আমি জানি না এখনো।
নেকড়ে ছাড়ে না, তুই আমার কুয়ো থেকে জল খাস।
না!! না!!আর্তনাদ করে ওঠে ভেড়াটা__ আমি এখনো এক ফোঁটা জল ও মুখে দিইনি। আমি ত এখনো শুধু মা’র দুধ খাই!!
হুম! আমার সব অভিযোগ-এর তুই ভালই জবাব দিয়ে দিয়েছিস। কিন্তু, তা বললে তো আর আমার পেট চলবে না। এই বলতে বলতেই ভেড়াটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শয়তান নেকড়ে তাকে টুকরো টুকরো করে খেয়ে ফেলল।

নীতিশিক্ষাঃ অত্যাচারী সবসময়ই অত্যাচার করার জন্য কিছু না কিছু কারণ খুঁজে বার করে ফেলে। যারা কোন কথা শুনবে না ঠিক করেই রেখেছে__তাদের সাথে যুক্তি-তর্কে গিয়ে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।।

6.সিংহ আর শুয়োরের গল্প
এক গ্রীষ্মের দিন। ভয়ানক গরমের চোটে তেষ্টায় সবার অবস্থা কাহিল। এক সিংহ আর এক শুয়োর এক সাথে এসে হাজির ছোট এক কূয়োর ধারে। কে আগে জল খাবে এই নিয়ে দুজনের মধ্যে লেগে গেল তুমুল ঝগড়া। তারপর সেই ঝগড়া থেকে শুরু হল মারামারি, মরণপণ - প্রাণ থাকতে অন্যজনকে আগে জল খেতে দেবে না। লড়তে লড়তে একসময় দুজনেই একটু থেমেছে, দম নিয়ে নিতে - আরো ভয়ংকর হিংস্র লড়াই লড়ার জন্য। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে একটু তফাতে সার দিয়ে বসে আছে - শকুনেরা, ভূরিভোজের অপেক্ষায়। অচল হয়ে যেই একজন শুয়ে পড়বে, সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়বে তার উপরে। এই দেখে দুজনেই সঙ্গে সঙ্গে তাদের যুদ্ধ থামিয়ে দিল, বললঃ আমাদের বরং দোস্তি করে নেওয়াই ভাল। না হলে তো কাক শকুনের খাদ্য হতে হবে, স্রেফ আমাদের দম ফুরিয়ে পড়ে যাওয়ার অপেক্ষা।।

নীতিশিক্ষাঃ একদল যখন লড়াই করে আরেকদল তখন তাদের উপর নজর রাখে, লড়িয়েদের কেউ একজন হেরে গেলেই তার হার থেকে তারা তখন নিজেদের ফায়দা তুলবে।

7.বাচ্চার মা আর নেকড়ে
এক বাড়িতে এক মা তার বাচ্চার কান্না থামাতে চেষ্টা করছিল। এক নেকড়ে সেই সময় সেই এলাকায় খাবারের খোঁজে ঘোরাঘুরি করছিল। বাড়িটার পাশ দিয়ে যাবার সময় নেকড়ে শুনতে পেল__ বাচ্চার মা বলছেঃ চুপ করো! নইলে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেব আর নেকড়ে তোমায় ধরে খেয়ে ফেলবে। নেকড়ে সেই শুনে সারা দিন দরজার বাইরে বসে রইল। সন্ধ্যাবেলায় সে শোনে বাচ্চার মা বলছেঃ কেমন শান্ত হয়ে আছে আমার সোনা। এখন নেকড়ে এলে, আমরা সেটাকে মেরে ফেলব। নেকড়ে সেই শুনে ক্ষিধে আর শীতে হু-হু করে কাঁপতে কাঁপতে নিজের বাড়ি চলে গেল।

নীতিশিক্ষাঃ যুক্তি না ভেবে কেউ কিছু বললে সেটাকেই বিশ্বাস করে বসার কোন অর্থ হয় না।

8.লড়ুয়ে মোরগ আর বাতাই পাখীর গল্প
এক লোকের দুটো লড়ুয়ে-মোরগ ছিল। একদিন বাজারে একটা পোষা বাতাই পাখী বিক্রী হচ্ছিল। পাখীটা দেখে লোকটির এত ভাল লেগে গেল।সে ওটা কিনে বাড়ি নিয়ে এল। যেই মাত্র সে বাতাই-টাকে মোরগের খামারে ছেড়েছে__ মোরগ দুটো ঝাঁপিয়ে এসে পড়ল ওটার উপর। দুটোতে মিলে পাখীটাকে ভয়ানক দৌড় করালো। মনের দুঃখে মুষড়ে পড়ে পাখীটা ভাবতে লাগল যে, সে নুতন এসেছে বলেই তার এমন দুর্দশা ঘটল। খানিকক্ষন না কাটতেই বাতাইটা দেখে মোরগ দুটো নিজেরাই তুমুল লড়াই লাগিয়ে দিয়েছে। যতক্ষণ না একজন আরেকজনকে ভীষণ রকম পিটল, লড়াই চালিয়েই গেল তারা। সেই দেখে পাখীটা নিজের মনেই বললঃএই লড়ুয়ে-মোরগ দুটো যখন নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া না করে থাকতে পারে না, তখন আমার সাথে কেন তারা লেগে পড়ল সেই নিয়ে ভেবে ভেবে হয়রান হওয়ার কোন অর্থ হয় না।

নীতিশিক্ষাঃ যারা নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া করে, নুতন লোকেদের পক্ষে তাদের এড়িয়ে চলাই মঙ্গল।।
১৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×