somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনেক দিনের অভিমান .।.।.।.।.।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে ভাবে বয়ে চলা ...............

আচ্ছা রিয়াদ, কেমন মেয়ে তোর পছন্দ! আমি মুখ তুলে কনকের দিকে তাকিয়ে বললাম,হুট করে এই প্রশ্ন? কনক, আমার হাঁটুতে হাত চাপড়ে দিয়ে বলল, তোর কল্পনা আর রুচি পরীক্ষা করছি!
কনক আর আমি রাত তিনটার দিকে ডাকসুর সিঁড়িতে বসে আছি,২০০৮ এর দিকের কথা। আমি খেয়াল করে দেখেছি কনক অন্যদের মতো না, ও আলাদা। জীবন দর্শন হয়তো অনেক গভীর ছিলো।
আমাদের দুজনেরই রাত জাগার অসুখ আছে ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আঙিনায় আমাদের অনেক স্বপ্নের গল্প আছে,তখন কার চিঠির যুগে,চিঠি কাড়াকাড়ি ঝগড়া আছে। সাতার না জানার কারনে,দুজনের একসাথে ডুবে যাবারও গল্প আছে ।আসলে যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ ।
আমি কনকের দিকে তাকিয়ে বললাম, কেমন মেয়ে আবার! এই আমাকে বুঝবে !
আমাকে চিমটি দিয়ে বলল, দোস্ত,তুই যে টাইপের মেয়ে চাস,তা অর্ডার দিয়ে বানাতে হবে।
জানতে চাইলাম,কেন?!
বলল, আমরা কেউ কাউকে,ঠিক মতো বোঝার চেষ্টা করিনা,একটু বুঝে গেলেই, বাদবাকিটুকু ভান করে চালিয়ে দেই। ভান করতে করতে এক সময় বিশ্বাস করতে শুরু করি,আমি তাকে সত্যিই বুঝি। সব গদগদ টাইপের সম্পর্কের শুরুতে অনেক মোহ থাকে, যেটাকে ভালোবাসা মনে হয় ।
আমি বললাম,তাহলে সমস্যা কি?
বলল,সমস্যা হল, যখন তুই ধরে ফেলবি, যে সত্যিকারের অনুভূতিতে ঘাটতি আছে , তখন সম্পর্কে আর মনযোগী হবি না !
আমি সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললাম,তুই বুঝলি কি করে?তুই তো প্রেম করিস না, এতো অভিজ্ঞতা পেলি কোথায়?
এটুকু ভাবতে সক্রেটিস হতে হয় না , অভিজ্ঞতাও সব ক্ষেত্রে জরুরি না, মুচকি হেসে বলল। ,
জানতে চাইলাম,তোর কেমন মেয়ে পছন্দ? কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,

আমার একটা মাঝরাতে গল্প করার তুমি চাই,
সকাল বেলা বাসি মুখের একটা আলসে তুমি চাই,
যাকে পেলে রুপার গল্প আর খুঁজতে হবেনা, উপন্যাসে,
সেই তুমিটার,হাতের তালুতে থাকবে,মায়া মেশানো ঘাম,
বুকের খাঁজে থাকবে,কষ্ট আড়াল করে,আমাকে ভালবাসার গন্ধ,
যার অভাবে মনে হবে,কি যেন নেই! কি যেন নেই!!!
এমন একটা তুমি চাই !!!

আমি খুব খেয়াল করে শুনছিলাম,আর ভাবছিলাম, কাম সারছে!আমার পছন্দ যদি অর্ডার দিয়ে বানাতে হয়, তাহলে কনকের পছন্দ,মঙ্গল গ্রহে এল সি খুলে আমদানি করতে হবে!!! আমি গলা ফাটিয়ে হেসে দিয়ে বললাম, কাউকে বলেছিস এই কথা?কোন ছেলেকে বলিস না, তোকে নির্ঘাত ক্যাবলা,ভাবুক, পাগল ভাববে,।
আর কিছু কাব্যিক বা দলছুট বোকা টাইপের মেয়েরা হয়তো তোর কথায় পটে যাবে,তবে সম্পর্ক না টেঁকার সম্ভবনাই বেশি। কারন তোর অভজারভেশন ভালো যার ফলে,বড় দোষগুলো উদার ভাবে মেনে নেয়ার ভান করবি। আর নাক সিটকানো মেয়েগুলো, বরাবরই প্রেমিক হিসেবে উদাসীন ছেলে পছন্দ করে আর চূড়ান্ত সঙ্গি হিসেবে, ভাববে অয়নের ভাইয়ের মতো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া ছেলেদের কে!
কনক ফোঁড়ন কেটে বললে, আরি বাব্বাহ, বন্ধু, তুই তো মাস্টার্স পাশ করার আগেই, নারী অধ্যয়নে মাস্টার্স করে ফেলেছিস!আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম, নিচু স্বরে বললাম, জানিসই তো, ডিপার্টমেন্টের সব কটা মেয়ের সাথে আমার খুব খাতির !
এরকম রাতের আড্ডায়,হাসি, তামাশা, কাম, প্রেম বন্ধুত্ব,গান,কি না ছিলো আমাদের !
কনক কে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে, দেখেছি ইকোনমিক্সের মিফতার চোখে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার অসংখ্য ছেলে মানুষী হাস্যকর কর্মকাণ্ড করতে। আমাদের অনেক বন্ধু বান্ধব জিগ্যেস করতো, তুই এতো মেয়ে থাকতে এই চাকমার পিছনে লেগে আছিস কেন?কনক বলতো, আমার এই ঘাড় ত্যাড়া মেয়েটাকেই লাগবে!খুব করুন মুখে অসহায়ের মতো এই কথাটা বলতো ।
অনেক দিনের দীর্ঘ সংগ্রামের পর, মিফতার সাথে আমি কনকের শুরুটা দেখেছিলাম। আর শেষটা উড়ো কথায় টের পেয়েছিলাম।
মাস্টার্সে এসে আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছেঁড়ে দিলাম হঠাৎ করে , অথবা ইচ্ছে করে ।
আমার ভালোবাসাও তীব্র, অভিমানও তীব্র।স্বেচ্ছায় অভিমানে ডুব দিয়ে তাজা গল্পগুলো ফিকে স্মৃতি হয়ে গেলো । আর হঠাৎ কিছু উদাসীনতা আপন হয়ে গেলো।
শুনেছি কনক মাস্টার্সের পরই দেশ ছেড়েছে, ব্যাস আর কিছু জানি না ।আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর,অনেক বার চেষ্টা করেছে আমার সাথে যোগাযোগ করতে কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত কারো সাথে যোগাযোগ করিনি। হঠাৎ এই মাসের তিন তারিখ, একটা মেইল এলো,লেখা ছিলো-
বুঝদান(বুঝদার+নাদান),
তোর কবর কবিতা মনে আছে!
যখন যাহারে জড়ায়ে ধরেছি,
সেই চলে গেলো ছাড়ি............ !তুই স্বার্থপর, মিফতা স্বার্থপর, তোরা স্বার্থপর।
একটা গণতান্ত্রিক দেশে, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একটা মেয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে, একটা ২০ বছরের পুরোনো আট নম্বর বাসের নিচে, নিজের ঘিলু বিলিয়ে আসলো, এটা আমি যেমন আমি মানতে পারি না ,
তেমনি কোন ছেলের, মেয়েদের মতো এমন অবাধ্য ফ্যাচফ্যাচে অভিমান থাকবে, এটাও আমি মানতে পারি না ।
আমি তোদের মতো না এটা ভাবতে ভাবতে তোদের মতো হয়ে গেছি।সেদিন ক্যাথিরিন কে বলছিলাম, তোর কথা । ও বলেছিলো তোমার বন্ধুটি খুব পাষাণ ।ক্যাথি কে, আন্দাজ করতো?যখন মনে হলো কি যেন নেই, কি যেন নেই, দম বন্ধ হয়ে আসছে, তখন ফ্রেডরিক বারের, ওয়েটার ক্যাথিকে দেখতাম, আমার মধ্যে একটা তুমি খোঁজার চেষ্টা করতো,এক সন্ধ্যায় না এলে, অন্য দিন কৈফিয়তের দৃষ্টিতে তাকাতো ।একদিন আমার ভাঙা গ্যারেজে হাজির হয়ে বলল, তুমি কি আফ্রিকান!জানিস, অনেক বছর পর প্রান খুলে হাসলাম। তখন মনে পড়লো, তুই বলতি,ভালবেসে আঁশ মেটে না,এমন তুমি কবে হবে!............
ক্যাথিও হয়তো এমনটাই ভেবেছিলো ,হয়তো নিজের ভণ্ডামি ঢাকতে অজুহাত দাড় করাচ্ছি, এমনটা ভাবতে পারিস । কিন্তু এটাই জীবন ।
নিজের মতো বেচে থাকা মানে, প্রিয় মানুষদের অস্তিত্ব অস্বীকার করা না।অস্বীকার করে হৃদয়হীনরা, আর আমাকে তোর চেনার কথা ।
আমি ভালো আছি !ভালো থাকিস ...........................

মোকাদ্দেসুর রহমান ।
ওহো ! আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, কনকের নাম!রাতের নিস্তব্ধতায় টের পাই, অনেক কিছুই ভুলে গেছি, প্রচণ্ড ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা নিয়ে আমি জীবন যাপন করছি, আমিও ভালো আছি, স্বার্থপররা ভালো থাকে,কিন্তু স্মৃতিকাতর স্বার্থপরেরা ,ধূসর পাণ্ডুলিপিতে ভালো থাকার গল্প লেখে, কনকের মতো সান্তনা দেয় নিজেকে, এই বেশ ভালো আছি ।অথবা অভ্যাস বসেই ভালো থাকে । কারন ভালোবাসা নাকি অন্য কোথাও ,চায়ের কাপে ......... !!!বুক ভরা বদ্ধ নিকোটিনের উন্মাদনায়,শেষ বিকেলে হয়তো ক্লান্ত লাগে।সন্ধ্যা এলে, কর্ণফুলীর তীরে বসে, নতুন ব্রীজের ফাঁক গলে, যে সূর্যটা প্রতিদিন ডুবে যায়, তার সাথে আমার অনেক দিনের সখ্যতা,
অনেক দিনের অভিমান ..............................
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×