somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেজাজি প্রেম আর রেওয়াজি ষড়যন্ত্র

০৬ ই মে, ২০১৫ রাত ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাজ হোক বা শিক্ষা আর ধান্ধা হোক বা দীক্ষা... সব ক্ষেত্রেই জোড়ের একটা প্রভাব থাকে। অনেকটা রত্ন ধারণের মতন। মানিকজোড়ের এমনসব বহু উদাহরণের তো কমতি নেই আমাদের জীবনে। সে হোক বাস্তব, সাহিত্য, সেলুলয়েড অথবা সিরিয়াল।

বলিউডি দুনিয়াতেও তাই, আশিক দিলওয়ালে খালুজান আর বাব্বানের Wild charm character দু’য়ে মিলে জব্বর রেসিপি হয়েছে বলিউডে। সেকারণেই বুঝি ইশকিয়ার পর তাক লাগানো সিক্যুয়েল হল। ভিন্ন স্থান, কাল আর অভিন্ন পাত্রদ্বয়ের ইঁদুর দৌড়, ষড়যন্ত্রের হাতখালি ডুবুরি আর হাস্যরসের রসায়নেই অনন্য হলো দেড় ইশকিয়া।


খেয়ালি নামের জন্য নয়। সাধারণ ভারতীয় মারদাঙ্গা থেকে যথেষ্ট আলাদা বলেই সবার নজরে আসে এ ছবিটি। বিশেষত পরিচালক অভিষেক চৌবে দ্বিতীয় কাজ এটা। চৌবে হলেন সেই নির্মাতাদের মধ্যে একজন, যারা হিন্দি সিনেমাকে বাণিজ্যের পাশাপাশি শিল্পের কাতারে এনেছেন।

আড়াল কাহিনীর বেড়াজাল
বিধবা বেগম পারা (মাধুরী দীক্ষিত) বাস করেন তার বিশাল মহলে, যেখানে নিঃসঙ্গতাই নিত্যসঙ্গী। সুন্দরী বেগম পারা খুঁজে বেড়াচ্ছেন এমন কাউকে, যাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন। প্রয়াত স্বামীকে দেওয়া এই প্রতিজ্ঞা রাখতে বেগম সিদ্ধান্ত নেন, যে পুরুষ শায়ের (উর্দু কবিতা) শুনিয়ের ভোলাতে পারবে তার মন, তিনিই হবেন বেগমের স্বামী। আর মাজিদাবাদের নওয়াব।



সংগীত এবং কবিতার অনুরাগী বেগম পারা একদিন তার মহলে আয়োজন করেন এক উৎসবের। সেই উৎসবে হাজির হন বিখ্যাত জুটি খালুজান (নাসিরুদ্দিন শাহ) এবং বাব্বান (আরশাদ ওয়ার্সি)। নিঃসঙ্গ সুন্দরী বেগম পারার মন আর তার অঢেল সম্পত্তি যখন খালুজানের হাতের মুঠোয় প্রায় চলেই আসে, তখনই বাঁধে বিপত্তি।



উর্দু কবিতা, গজল আর বেগম পারার সৌন্দর্য, এর সঙ্গে বাড়তি পাওয়া হল মজার এক কাহিনি। ‘ইশকিয়া’র ভক্তদের জন্য উপভোগ করার মতো উপাদানের কোনো অভাব নেই এই সিনেমায়।

বেগম পারার সার্বক্ষণিক সাথী মুনিরা (হুমা কুরেশি) নামের একটি মেয়ে, যার প্রেমে পড়ে বাব্বান। অনেকেই বলছেন, সিনেমায় নাসিরের চাইতে হুমার সঙ্গে মাধুরীর পর্দা রসায়ন ছিল দেখার মতো কিছু।



পর্দার আয়ন রসায়ন
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামন্ততান্ত্রিক সমাজ, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, রূপকথার মত নওয়াবি গল্প, মেহফিলের সুবাস, হলদে বিষন্ন দেয়ালের মরিচীকা হয়ে থাকা নওয়াব বেগম, খাদেমি চাল আর শায়েরির গমগমে আওয়াজ । সব মিলিয়ে যেন হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানির সাথে লক্ষ্ণৌর গিলোটি কাবাবের আয়েশি মিশ্রণ। প্রজন্মের ব্যবধানে সুদিন বঞ্চিত বদনসিব নওয়াবদের চাল বলে দেয়, হাতি মরলেও লাখ টাকা।



ইশকের সাথে একপর্যায়ে যুদ্ধ হয় বারুদের। বন্দুক, ক্ষমতা আর টাকার ইশারায় হারেন ‘বেগম পারা’। নাকি নওয়াব হয়ে ঢুকে চোর হয়ে বেরনো খালু মিঞার ‘উড়তা হুয়ে দিল’র আমন্ত্রণে ‘বেগম পারা’র ঘুঙুর বেজেছিলো সে কেইই বা বলতে পারে। পুরনো হাভেলির মতই রহস্যময় সেখানকার প্রাসাদীয় বাস্তবতার সমীকরণ।


শুধু বলা যায়, নওয়াব সবাই হতে পারেন না। নওয়াবি attitude এর সাথে সহবতের মিশেলের অভাব এক বড় খামতি হয়ে দেখা দেয় বেগমের আরেক প্রাণীপ্রার্থী জান মোহাম্মদের। অপহরণ, নকল শায়েরি, লক্ষ্যভেদ, ক্ষমতার ব্যবহার। কি বাকি রেখেছিল সে !! তবু বেগমের মন ঘুঙুর যেন খালুর শায়েরির তালেই নেচে যাচ্ছিল।

খালুর সাথে বাব্বনের পুরনো হিসেব ফের জিন্দা হলো। দু’জন মিলে আঁটলো পরিকল্পনা। সে ছকে পানি ঢাললো বেগমের দমকা সিদ্ধান্ত। মাজিদাবাদের নওয়াব হিসেবে ঘোষিত হলেন স্থানীয় এমএলএ জান মোহাম্মদ।

এক পুকুর লোনা জল নিয়ে ফেরা খালু মিঞা আত্মহত্যা করতে গিয়েই আবিষ্কার করে বসেন আরেক ষড়যন্ত্রের। যেখানে শিকারই ভক্ষক... আর ভক্ষকই পরিকল্পক।

সিনেমা সমীকরণ
ব্ল্যাক কমেডির এমন খাসা চিত্রনাট্যে বলাইবাহুল্য যে বিশাল ভরদ্বাজের হাত রয়েছে। সেইসাথে উত্তর প্রদেশীয় কথার টান আর মোলায়েম সংলাপ মগজ ধোলাইয়ে যথেষ্ট। সেইসাথে উর্দু শায়েরি যেন কড়া পাকের সন্দেশ। আর রয়েছে হলদে মহল আর বালুময় আউটডোরের চমৎকার সব সিনেমাটোগ্রাফি। শুটিং হয়েছে বেশিরভাগই

Costume কথন
দু’বার ফিরে দেখবার মত ছবি বলি পাড়ায় কমই হয়। কিন্তু এ অভিযোগকে মিথ্যে করেছে ‘দেড় ইশকিয়া’। বিশেষত কস্টিউম... ‘ওয়াহ কেয়া বাৎ’।

নাসিরুদ্দীন শাহ আর মাধুরী দিক্ষীতের নওয়াবি পোশাক আর চাল। সেইসাথে হিউমারের চর্চা পুরনো আতরের মতই ধাক্কা দেয় স্নায়ুতে। নাসিরুদ্দীন শাহের শেরওয়ানি আর Qaraqul (জিন্নাহ টুপি) অন্যমাত্রা এনেছে ফ্রেমে। কালো শেরওয়ানির পকেটে লাল গোলাপের বাহারি ফ্যাশনের কথা আজকাল আর কেই বা জানে।

সেইসাথে নাসিরুদ্দিনের শ্বেত শশ্রুমণ্ডিত নওয়াবি লুকে গরম ঘি ঢেলেছে জামাওয়ার, কালামকারি আর কাশ্মীরি এমব্রয়ডারের শাল।



মাধুরীকেও বেগম রাণী করতে প্রায় হারিয়ে যাওয়া লক্ষ্ণৌয়ী চিকনকারি(Lucknowi Chikankari) শাড়িতে সাজানো হয়েছে।

মাধুরী নেচেছেন ক্ল্যাসিক পেশওয়াজ পরে। সেই পুরনো সময়ের কাটিং। সোনালি কাপড়ে ঝলমলে সুতোর কাজ। ‘দেড় ইশকিয়া’তে মাধুরীর জমকালো রূপ তার বয়সকে যেমন হার মানিয়েছে, তেমনই মধ্যবয়সী একজন অভিনেত্রীর সৃজন অবয়বে মন্থিত হয়েছে।

‘দিল’ এর গতি বাতাসকে হার মানায়। লোভ, শঠতা আর বন্দুকের দুনিয়া প্রেম দ্বিগুণ না হয়ে যে ‘দেড়’ হয়। তা আশেকানদের Ded Ishqiya দেখলেই অনুমেয়। এই জুটির আরেক কাহিনী ভাল লাগবে এখানে
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৫ রাত ১:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×