somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Constipation; পেটের ভিতর মন

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পেটের গণ্ডগোলে কোন অভিনেতাকে সর্বশেষ ভুগতে হয়েছে? অথবা কবে কোন নায়িকা প্যানপ্যানে প্রেমিকা বা হট আইটেম না হয়ে টিপকপালে সাধারণ মেয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্রকে অসাধারণ রূপ দানে সমর্থ হয়েছেন? সে নিয়ে একটা বিতর্ক হয়ে যেতেই পারে। তবে মধ্যবিত্ত বাঙালির টানাপোড়েন সমৃদ্ধ গল্প যে কতদিন পর Bolly audience’র সামনে সুজিত সরকার হাজির করলেন তা ভাববার বিষয়। যেন পুরনো নিকনো উঠোন ভিটেবাড়িতে নতুনভাবে ফেরানোর চেষ্টা আজকের জমানার পপকর্ন দর্শদের।



এককালের হৃশিকেষ মুখার্জি, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়দের ছবিতে যে সাধারণ ছাঁপোষা মানুষদের ছাপ থাকতো ঘরদুয়ারের ভাষা থাকতো তা যেন মিলিয়েই গ্যাছে। আজকের সিনেমা Larger then life হতে হতে তেপান্তরের মাঠও আর বাকি নেই। নাহলে কি আর নায়কের ঘুষিতে ডজনখানেক তস্কর ছিটকে পড়ে। সিনেমার অভিনেতাদের যেন বাজারে যেতে নেই, বাথরুমে যেতে নেই বা বাড়িতে ঝগড়া করতে নেই।



সুজিত সরকার এই চলতে থাকা আরোপিত যাপনের ছবির খোলস ছাড়িয়ে দূরে ফেলে দিলেন তাঁর Piku ছবিতে৷ সংলাপ নির্ভর এ ছবির বাবা তাই পায়খানা সমস্যায় জেরবার। একবাক্স পথ্য নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এক খুঁতখোঁজা খিটখিটে বৃদ্ধ। যার সবশেষ কথা ‘I’m a critical man. আমি তো নিন্দে করবোই।’

এ ছবির ‘মেয়ে’ তাই যতই মুখরা হোক, বাবাকে ছেড়ে অন্য অ্যাপার্টমেন্টে উঠে যায় না৷ শেষাবধি হলেও যে মেয়ে তার পছন্দে পুরুষকে বলে দেয়, “এক নির্দিষ্ট সময়ের পর বাবা-মায়েরা বেঁচে থাকেন না। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হয়।” আশপাশের অবস্থা আর পৌঢ়ত্বের ছাঁচে পড়া অভিভাবকদের সাথে কতশত মিল যেন থাকে।




সব অপছন্দের ভিতর বিদ্বেষ মেশানো থাকে না এ ছবির মাসি নিজেও সেটা জানেন৷ তাই জামাইবাবুকে অর্থাৎ পিকুর বাবাকে একগাল বকে নিয়েও ঠিকই কলকাতায় চলে আসেন দেখতে। একটা হট্টগোল, তর্ক, ঝগড়া কিচিরমিচির করা আত্মীয়। এ যেন হররোজ শিস দিয়ে ওঠা প্রেসার কুকার। তবুও বিরক্তি যেন বিদ্বেষে রূপ নেয় না কিছুতেই।

বাঙালি বরাবরই সেন্টু জাতি। ভিটেবাড়ির মান রাখতে জানা পরিবার। একবেলা খেলেও বাড়ির সম্মান আর স্মৃতি ধরে রাখতে বিসর্জন দিতে পারে সবই। নস্টাল বাঙালির ‘জিয়া’র ক্রিয়া বোঝা সেজন্যই বড্ড কঠিন। আর তারই রেশ ধরে কলকাতা পোছেই পিকুর বাবা বাড়ি বিক্রীতে আপত্তি করে বসেন।

রানা চৌধুরীকে পিকুর কাকা ‘মি. চৌধুরী’ বলে সম্বোধনটাও বাঙালি পরিবার থেকেই আসা। ইরফান খান রাগী যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তিনিই রানা চৌধুরী যিনি ঘটনাচক্রে বাবা-মেয়েকে হাইওয়ে দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে এসেছেন কলকাতায়।


ইরফান আর দিপীকার রসায়নও মন্দ হয়নি এ ছবিতে। হালটা ঠাট্টা, হাসির অভিমান আর চোখের ইশারাও যেন বুঝিয়ে দেয় মুরব্বিদের সামনে বাঙালি তারুণ্য বরাবরই মুখচোরা। এও তো এক বৈশিষ্ট্যই তুলে ধরা।

ইরফান খানের মুখে যখন পরিচালক বলেন, ‘সব কিছুতে বাঙালির কপিরাইট নেই’ তখন যেন বাঙালির ‘জলসাঘর’ টি আবিষ্কৃত হয়েছে, এককালে আভিজাত্যে ভরা ধূলোর আস্তরণে। তবু শিরায় সেই শোনিতের স্রোতটি আজও টের পাওয়ার বাসনা রয়ে গেছে৷ এই তো বাঙালিয়ানা৷ আর সেইসাথে সেতারের background music... শীতল অনুভূতি উষ্ণ করতে আর কিই বা লাগে।



অমিতাভ তথা ভাস্করবাবুর হোমিপ্যাথির ছোট্ট কাঠের বাক্সটি তো প্রায় পরবারেই থাকতো এখন অবশ্য দখল নিয়েছে প্ল্যাস্টিক অথবা আইসক্রিমের ডিব্বা। পিকুর জানালা গরাদ ধরে শৈশব রোমন্থন। টানা বারান্দা, হলদে দেয়াল, উঁচু সিলিং, সবুজ খিলান, বিশার সদর দরজা আর লাল দালানের কোর্ট ইয়ার্ড বাড়ি। দেখেই মনে হল যেন, আহ নস্টাল ! বাহ নস্টাল!

সুজিত সরকারের এ ছবি দেখে বেদনাও জেগেছে খানিক। সব শহরেরই কিছু মুকুট থাকে। পুরনো দালান, যোগাযোগ, আচার প্রভৃতি আরকি। নায়িকার সাথে এক আলাপে যখন রানারূপী ইরফানও বললেন, “তোমাদের বাড়িও তো ভেঙে ফেলছো। তখন ওখানেও হাল আমলের দালান দেখবে।



একলহমায় গল্প: Constipation Obsessed এক বৃদ্ধের ভূমিকায় অমিতাভ বচচন। ভাস্কর ব্যানার্জি, যিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। কন্যা তথা নামভূমিকায়, লাস্যময়ী দীপিকা পাড়ুকোন। Taxi service-এর মালিক ইরফান খান। মাসির চরিত্রে অনবদ্য মৌসুমী ব্যানার্জী। বাবার কোষ্ঠকাঠিন্যে নাজেহাল মেয়ে। একসময় বাবা মেয়ে আর ট্যাক্সি সার্ভিসের মালিক ইরফান খান পাড়ি দেন লম্বা রাস্তা, ঘটনাচক্রে। জমে ওঠে Peculiar Piku…

একটা পরামর্শ minimum 720p প্রিন্টের মুভি দেখুন। তাহলে সিনেমাটোগ্রাফি দেখে ভালো লাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×