somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপার্থিব রাঙ্গামাটি!

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেঘের বুক চিরে আলোক রশ্মি ধেয়ে এসে আলোকিত করছে ছায়া ঢাকা ছোট শহরটির কিছূ এলাকা। চারপাশে সবুজ পাহাড়, সূর্য মেঘের আড়ালে চলে গেলে পাহাড়গুলোর একাংশ কালো রং ধারণ করে, আরেক পাশে সবুজ। প্রথম দৃষ্টিতেই দেখে মনে হয় এই বুঝি হারনো রাজ্য আটলান্টিস

না। এটা আটলান্টিসের কোন কাল্পনিক দৃশ্য না। এটা রাঙ্গামাটি শহরের একাংশ, পেদা টিং টিং দ্বীপ বা দ্বীপের রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে ছবিটি নেয়া হয়েছে। গত ২৩ শে সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটির কর্ণফুলি লেক ভ্রমণের সময় তোলা। পাশাকে বললাম দেখতে Age of Mythology গেইমের মত মনে হচ্ছে।


সকালে ফিশারী ঘাটে নেমেই দেখলাম একটা ডাবলডেকার ইঞ্জিন নৌকা দাঁড়িয়ে আছে। এটার ক্যাপ্টেন(!) আজগর আলী প‌্যাসেঞ্জার খুঁজছে সকাল থেকেই, কিন্তু পাচ্ছে না। অনেক দরদাম করে আমাদের নিতে সে রাজি হল। এত কম দামে বিশাল একটা বোট পেয়ে নিজেদেরকে কেমন জানি হাসন রাজার মত মনে হচ্ছিল B-)




আমাদের পাঁচজনকে নিয়ে আস্তে আস্তে চলতে শুরু করে বোটটি। স্পীড খুব বেশী ছিল না। আমাদেরও তাড়া ছিল না। ধীর গতি হবার কারণে আশ পাশের অপার্থিব দৃশ্য উপভোগ করছিলাম পুরোদমে।





বোটে আমরা ক'জন:


নৌকায় উঠার সময় আমাদের পাইলটের সাবধান বাণী ছিল এরকম: "সবাই একপাশে থাকবেননা! তাহলে নৌকা হেলে পড়বে।" সারা জীবন দেখে আসছি ঘুড়ি উড়ানোর সময় কান্নি মারতে হয়, একপাশে হেলে পড়লে এই কান্নি মারলে ঠিকমত উড়ে, এখন দেখতেছি বোটেও কান্নি মারতে হবে, তাও আবার মানব কান্নি! একটু ঢোক গিললাম। টাইটানিক আইসবার্গের সাথে ধাক্কা লেগে ডুবে গেছিল। এখানে আইসবার্গ না থাকলেও কচুরীপানার ফেনা আছে অনেক.... :-/

সকালে আমি আর পরশ নাস্তা করে বের হয়েছিলাম। (ভোরে গরুর গোশ আর পরটা ফেলে কি ঘর থেকে বের হওয়া যায়?) শামীম, পাশা আর লালসালু খালি পেটেই বের হয়েছিল। বাসে যাবার সময় হালকা চিপস-পানি খেলেও রাঙ্গামাটি পৌঁছে সবারই পেট চোঁ চোঁ শুরু করল। বোটে উঠার সময় ছোলা মুড়ি আর কলা নিয়ে উঠেছিলাম। সেটা মাখিয়ে জটিল একটা নাস্তা হয়ে গেল! :)

দাঁড়িয়ে ছবি তোলার প্রচেষ্টা!



না, এটা পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ানসের কোন ছবি না। রাঙ্গামাটির একটি ছবি।


পাহাড়ের বাঁকে রাঙ্গামাটি শহর।






শুভলং ফলস্.....


আমরা স্বচ্ছন্দে হাটাচলা করলেও নৌকা খুব একটি দুলছিল না, কিন্তু লালসালু শুধুমাত্র উপর থেকে নিচে বসলেই তার ওজনে নৌকা দুলে উঠছিল বার বার...


আশপাশের নৌকার ছবি তোলার সময় পর্যটকদের কেউ কেউ হাত নেড়ে সম্ভাষণ আবার কেউ হৈহৈ করছিল। এরকম পাহাড়িদের এক বোটের ছবি তুলছিল পরশ, সমস্যা হচ্ছে ওটাতে বেশ কিছু মেয়ে ছিল, পরশকে ছবি তুলতে দেখে ঐ নৌকার পাহাড়ী ছেলেরা রীতিমত বাঁশ বের করে দেখিয়ে হুমকি দেয়া শুরু করে..... তা দেখেই পাহাড়ীদের ছবি তোলা বন্ধ করে দিই সবাই.....


শুভলং ফল্সের কাছাকাছি একটা ঝর্ণা পরে। ওটা পাশে পাহাড়ের চিপায় দেখি একটি বোট দাঁড়ানো। উপরে বোটের চালক শুয়ে বিড়ি টানতেছে। এরকম এত বড় পাহাড়ের নিচে বোট দাঁড়ানোর মাজেজা প্রথমে বুঝতে পারি নি। পাশা তত্ত্ব দিল যে ভিতরে মনে হয় কোন কুকাম(!) ;) চলতেছে। লালসালু অত্যন্ত উৎসাহের বশে সমত্তি প্রকাশ করল। কিন্তু কিছুক্ষণ তাকানোর পর আমার মনে হল আসলে ব্যাপার সেটা না। এরকম কিছু হলে তো ভাইব্রেশন তৈরী হত, বোট নড়ত। কিন্তু ঐটা তো প্ররা স্থির। কাজেই কিছুই হচ্ছে না। :|
শামীমের এই থিওরী পছন্দ হল, আসলেই, আমার কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু পাশা আবার এক ডিগ্রি বেশী সরেশ। সে বলে যে এখন আসলে ইন্টার্ভাল চলতেছে.... ;)



নৌকায় একটি টয়লেটও ছিল এটাচ্ড! ;) সবাই প্রয়োগনে ব্যবহার করতে পারলেও লালসালু বেচারা সাইজের কারণে ব্যবহার করতে পারে নি! :D

দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম শুভলং বাজারের সৌদিয়া হোটেলে। লেকের তাজা মাছের স্বাদ ছিল একেবারে লা'জবাব। হোটেলের পরিবেশ খুব একটা ভাল না হলেও (ফ্যামিলি নিয়ে আসতে চাইলে খুব একটা সুবিধার হবে না) খাবারের মান ছিল এক কথায় চমৎকার এবং একেবারে সস্তা। তবে চেখে দেখার আগে দরদাম করে নেয়াটাই শ্রেয়। কারণ সুযোগ পেলেই গলাটা কেটে দে'য়ার সম্ভাবিলিটি কম না।
ভাল পরিবেশে খাবারের জন্য ২ টা দ্বীপ/রেষ্টুরেন্ট আছে, একটাতে আবার উপজাতীয় পদ্ধতিতে খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা আছে।একটার নাম চাং পাং এবং আরেকটার নাম প‌্যাঁদা টিং টিং।

প‌্যাঁদা টিং টিং এ একটি দর্শনিয় ব্রীজ আছে।

যাবার পথে হঠাৎ শামসীরের সাথে দেখা, তারা অন্য একটি বোটে করে ফেরত আসছে। তার যাবার কথা ছিল খাগড়াছড়ি। দ্রুতই সেখান থেকে ব্যাক করে রাঙ্গামাটি ভ্রমণ করছে। তাদের ণোকাটা অবশ্য আমাদেরটার মত এত দর্শণীয় ছিল না.... B-)

শেষ বিকেলের আলোয় সম্পূর্ণ এলাকাটি এক অপার্থিব আলোয় ভরে উঠে। সারাদিনের রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ এবং শরতের মেঘ এক আলো-আধারির খেলা শেষে বিকাল নাগাদ ঝড়ের আবহ নিয়ে আসে। কালো মেঘে আকাশ ভারী হয়ে উঠে। সম্পূর্ণ ভ্রমণটির পরিপূর্ণতার জন্য এর চেয়ে ভাল আয়োজন আর কি হতে পারে?

সাড়ে ৬ ঘন্টার ভ্রমণ শেষে আমরা শহরে ভিড়লাম। আমাদের ক্যাপ্টেন আলী আসগরের নাম ফোন নম্বর নিয়ে (পরবর্তী কোন ভ্রমণে তার নৌকাই ব্যবহার করার জন্য!) নিয়ে বাস স্ট্যান্ড অভিমুখে হাঁটা শুরু করলাম। চট্গ্রামে যাওয়ার যে বাস সার্ভিসটি ভাল, সেটার টিকেট আগেই শেষ। পরে যেটা পেলাম সেটা হচ্ছে লোকাল-ডাইরেক্ট ক্যাটাগরির। মানে ডাইরেক্ট চট্টগ্রাম যাবে তবে লোকাল, অর্থাৎ পথ থেকে বাস দাঁড় করিয়ে লোক নিবে। পুরা পেইন করে ফেলছে রাস্তায়। জ্যাম থাকা স্বত্বেও দ্রুত ফিরে এলাম বাসায়, পরের দিন সকালেই সুবর্ণই ঢাকায় ফেরার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৪১
৩৩টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×