somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হয়তো বা আমার লেখা ---

১৩ ই মে, ২০১১ রাত ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দাড়িয়ে থাকার শক্তি টুকুও পাচ্ছি না। পানির বাল্তির সামনে বসে আছি। অপেক্ষা করছি কখন পানি আসবে। আর তাকিয়ে দেখছি ধমণী থেকে অল্প অল্প করে রক্ত বের হচ্ছে এখনও। হাতটা সোজা করে রেখেছি। নাড়াচাড়া বন্ধ করে দিলাম। চিন্তায় পরে গেলাম। আসলেই কী আমার কোন সমস্যা আছে। এখনও রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না কেন !!! যাই হোক শেষ পর্যন্ত বন্ধ হল। পানি ও আসল। গোসল করে বেশ ভাল লাগল।
আজ সকাল এই ৮.৫২ বাজে। একটা সিগারেট ধরিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। সিগারেটটা শেষ হল। এবার রাস্তা পার হতে হবে। কিছুক্ষন পর বাস আসল। বাসে থাকা অবস্থাতেই ছেলেটা ফোন করল।
- ভাইয়া আমি রুদ্র
- হ্যা, রুদ্র বল। আমি বাসেই আছি।
- ভাইয়া তাহলে টি এস সি তে আসেন।
-ঠিক আছে।
বাস থেকে নেমে রুদ্র কে জিগেস করতেই পাওয়া গেল। ধানমন্ডি ৬ এর এ। কিডনি হসপিটালে রিকসায় চরে গেলাম।
- ভাইয়া একটু দেরী করতে হবে।
- ঠিক আছে। সমস্যা নাই।
মোবাইলটা বের করে একটা বই পড়ার চেষ্টা করছি। বেশ কিছুক্ষন পরে একটা লোক আসলো। বলল আসুন।
বাম হাতটার উপর একটা কিছু দিয়ে বাধল। একটা সিরিন্জ পুস করল। ব্যাপার টা আমি বহু বার ই দেখছি। তারপর ও অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি। এখনও ভয় লাগে। পা দুটো শক্ত করে ফেলি।
- কতক্ষন লাগবে?
- ৪০ মিনিট। হাতে অনেক কাজ। আপনার কাজ নাইতো?
- নাহ।
আবার অপেক্ষা। প্রাইভেট হাসপাতাল এর রোগী গুলাও দেখী সুন্দরী। কী ভাল একটা ব্যাপার। সময় কাটানো কোন ব্যাপার ই না। তবে বসুন্ধরা সিটি তে গেলে আরো তারা তারি সময় কাটতো । দুনিয়ার সব প্রাইভেট জিনিস ই দেখী ভাল। এখন তো মনে হয় আহা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পারতাম।
একটা মহিলা ওয়েটিং রুম এর দরজা দিয়ে ঢুকলো। মুখ টা বিশাল। চুল স্ট্রেইট করা । তবে ঘাড় পর্যন্ত। ICU তে ঢুকে গেল। একটু পর আবার বের হল। কার সাথে জানি ফোন এ কথা বলল। আবার ICU তে গেল। কিছুক্ষন পড় বের হয়ে ওয়েটিং রুম এ বসল। একটা ফোন বের করল চোখ মুছতে মুছতে। রুম থেকে বাইরে বের হয়ে কথা বলল
- ডাক্তার কাছাকাছি সবাইকে চলে আসতে বলেছে। আর বেশিক্ষন থাকবেনা।
ফোন রেখে ওয়েটিং রুম এ আসলো। একটা লোক তাকে জিগেস করল
- কে হয় আপনার?
- বাবা।
- কী হয়েছে।
- হার্ট বিট বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু কাপছে হার্টটা
রুদ্র কে বললাম ৪০ মিনিট তো হয়ে গেল। আবার দুইজন মিলে গেলাম।
- আরেকটু দেরী হবে। এখানে ওয়েট করেন।
- আচ্ছা।
- হুম এবার আসেন। আরে আপনিও আসেন উনি ভয় পেলে।
এবার আমি হেসে দিলাম। লোকটাও হাসল। রুদ্রও আসলো আমার সাথে। ১৫ মিনিট লাগলো । রক্ত নেয়া শেষ। ৫ মিনিট শুয়ে থাকলাম। একটু পড়ে বললাম
- উঠি?
- আপনি যদি মনে করেন উঠতে পারবেন তাহলে উঠেন।
- হাহাহা। উঠতে পারবনা কেন।
- না শরীরের ব্যাপার তো অবহেলা করতে নাই।
মনে মনে বললাম পানিই তো খাইনি। ব্লাড তো ঠিক ই দিলাম।
তুলাটা সরিয়ে স্টিচ লাগাতে গিয়ে আবার সেই পুরানো ব্যাপার। ধমনীতে চাপ পড়ার সাথে সাথেই আবার রক্ত পড়া শুরু হল। আরেকটা তুলা এনে দিল আমাকে। চাপদিয়ে ধরে থাকেন। কিছুক্ষন পর স্টিচ লাগিয়ে রুদ্রর থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। ১.৩০ এর মধ্যে পৌছাতে হবে। বেশি টাকাও নাই। না পারছি সিগারেট ধরাতে না পারছি রিকশা নিতে। ক্ষিধেও লাগছে। যাক একটা বাস পেলাম। নামলাম নিলক্ষেত। গুড। ভাল সময় আছে। হেটেই যাওয়া যাবে এখান থেকে। একটা সিগারেট তাহলে ধরানো যায়। সিগারেটায় প্রথমটান দেয়ার পরই বিরক্ত লাগলো। ক্ষিধে লেগেছে তার মধ্যে আবার। পানিও খাওয়া হল না রক্তদেয়ার পর। হালকা মাথা ধরেছে। সিগারেট খেলে এমন হয়ই। মাঝে মাঝে তো অনেক বেশীই মাথা ধরে। বাহ !!! একটা বাস দাড়িয়ে আছে দেখি রেজিস্টার বিল্ডিং এর সামনে। এটা করে যেতে পারলেই তো আমার বাসটায় টিএস সি থেকে ধরতে পারব। হায় হায় বাসটা তো ছেরে দিচ্ছে। দৌড়। গাধা ছেলেটা । সরে দাড়া ব্যাটা । উঠতে পারছি না। গেটের কাছে দাড়িয়ে আছে। মিস করলাম প্রথমবার। আবার দৌড়। এবার উঠতে পারলাম। স্টুপিড টা এখনও গেট থেকে সরে দাড়াচ্ছে না। প্রচন্ড খারাপ লাগছে। হঠাৎ প্রচুর ঘামতে লাগলাম। অন্ধকার লাগছে। অনেক কষ্টে গেট ধরে দাড়িয়ে আছি। কথা বলতে পারছি না। দুইবার বমি আসলো। কষ্টে সিষ্টে আটকালাম। কোন এক ব্যক্তির আমার উপড় চোখ পড়লো।
- এছেলে ভিতরে আস। দাড়াতে দাও ওনাকে।
ভিতরে আসলাম। উফ। লোকটাকে ধন্যবাদ দেয় উচিত। যাহ আমার তো টিএস সি তে নামার কথা । বাস তো পার হয়ে যাচে। চিৎকার করার শক্তিই নাই।
- মামা থামান।
- ভাই এনেক্স এ নামেন।
উফ দাড়িয়ে থাকতও কষ্ট হচ্ছে। হায় এখন আবার কে ফোন করল। আমার তো কথা বলার ই শক্তি নাই। ফোনটা বের করলাম। প্রত্যেকটা মুভমেন্ট স্লো মোশন এ হচ্ছে। যাক আন নোন নাম্বার। ধরব না। এনেক্স এ নামলাম। হাত পা কাপছে এখনও । বসলাম রাস্তায়। ফোনটা বের করে দেখি তিনটা মিসকল। টাকা নাই আমার ফোন এ । মিসকল দিলাম। সাথে সাথেই ফোন ব্যাক।
- হ্যালো
- হ্যালো আমি রাসু। তুমি কোথায় যাও। তোমাকে দেখলাম বাসে ঝুলে আছ।
- তুমি কই?
- টিএসসি তে । বাস এ।
আমার জন্যে একটা সিট রাখো পারলে। আমি এনেক্স থেকে উঠবো।
- আচ্ছা।
একটু পর বাসটা আসলো। যাক এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল লাগছে। ধুর এটা সিট ও নাই। রাসুর সামনে যেয়ে দাড়ালাম।
- কি খবর রাসু?
- আজকে পরীক্ষা নিসে। চারটার মধ্যে দুইটা পারছি।
- ভেরি গুড
- বাদাম খাও।
- না রাসু। খারাপ লাগতেছে।
- কোথায় গেছিলা।
- ব্লাড দিতে।
- তোমার অবস্থা তো খারাপ। নাও বস।
বসলাম। রাসুকে প্রোগ্রামিং শিখাতে যাওয়ার কথা আজকে। এত খারাপ লাগছে। ক্ষুধাও লাগছে। বাসায় যেয়েই ঘুম দিতে হবে।
বাসায় এসে গোসল করতে ঢুকলাম। স্টিচটা খুলতেই আবার রক্ত পরতে শুরু করল। যদিও খুব অল্প। এমন কেন হল??? এনিয়ে ৬ বার রক্ত দিলাম। একবার এমন ও হয়েছে সারা দিন ভাত খাইনি। অবশ্য সেবার কোয়ান্টাম এ দিয়েছিলাম। ওরা আবার অনেক স্পেরুলিনা খেতে দিয়েছিল। কিন্তু রক্ত পড়ছে কেন আবার। অনেকক্ষন তো হল। আগেও এমন একবার হয়েছে। রক্ত পড়া বন্ধ অনেক দেরিতে হয় । যাই হোক খেয়ে একটা ঘুম দিতে হবে। আজকে আর দুইটা টিউশনিতে না যেয়ে একটায় যাব। আর রাসুকে একটু প্রোগ্রামিং শিখাতে হবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×