somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে গবেষণার হালচাল-২

১৬ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(গত পোস্ট)

গত পোস্টে লিখেছিলাম বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে গবেষণার হালচাল। আজ বিদেশী প্রোজেক্টে গবেষণার কাহিনী লিখব।

বাংলাদেশে বিদেশী গবেষণা প্রোজেক্ট চলে মূলত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে। প্রতিষ্ঠান বলতে আমি শুধু দুই একটার নাম জানি। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিদেশী প্রোজেক্ট গুলো সাধারণত শিক্ষকরা আনে। বিদেশীরা এদেশে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান টাকা ঢালেন। যেহেতু তাদের টাকা ঢালবার পেছনে উদ্দেশ্য থাকে, বিধায় তারা মনিটরিং করেন এবং এর ফলে ভাল গবেষণাও হয়ে থাকে। কিন্তু এসবের ফলাফল বংলাদেশ কি পায়? মূলত পায় না!

প্রশ্ন হচ্ছে বিদেশীরা এদেশে কেন গবেষণার জন্যে টাকা ঢালে? প্রথমত, বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ অঞ্চল। এখানকার জীব বৈচিত্র অসাধারণ। এজন্য আমাদের দেশ জীব বিজ্ঞানীদের জন্য স্বর্গ। কয়েক বছর আগে এক জাপানি বিজ্ঞানী এসেছিলেন এদেশে। তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের নদীতে একটি ব্যাক্টেরিয়া খোঁজা, যা জাপানে ফুড পয়জনিং করছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রোগ হচ্ছে জাপানে তুমি এখানে কেন ব্যাক্টেরিয়া খুজে বেড়াচ্ছ? তার উত্তর ছিল, এই দেশ ব্যাক্টেরিয়ার জন্য স্বর্গ, যা চাইব তাই পাওয়া যাবে তাই এসেছি”।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ পৃথিবীর একটা অংশ। যারা সারা পৃথিবীতে শাসক করে বা করতে চায় তারা এদেশকে জানতেও চায়। আমরা প্রায়ই শুনি বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ব্যাপারে যথা সময়ে ফোরকাস্টিং করবার জন্য চারটি স্থানে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ভূমিকম্প নিরূপন যন্ত্র স্থাপন জরুরি। কিন্তু অর্থের অভাবে বাংলাদেশ সরকার এগুলো স্থাপন করতে পারছে না। কিন্তু একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেছিলেন, বাংলাদেশে ঐ যন্ত্র চারটি নয় পাঁচটি আছে। চারটি যথাস্থানেই আছে, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সেখান থেকে ডাটা পায় না, কারন সেগুলো বিদেশী প্রোজেক্টের আওতায়। সেগুলো থেকে ডাটা সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিদেশে চলে যায়। বাংলাদেশে USGS (Unites states geological survey) অনেক জায়গায় কাজ করে। কিন্তু কেন? এরা কি আমাদেরকে আমাদের ডাটা দেবে? আমি জানি না!!

তৃতীয়ত, বাংলাদেশে দেশী বিদেশী কোন প্রকার কার্যক্রমের উপরই সরকারি নিয়ন্ত্রন নাই বললেই চলে। এদেশে যেমন গরীব মানুষের অভাব নেই, সেই সাথে নেই আইন-আদালত। যে কোন ঔষুধ মাগনা বিতরণের নামে খুব সহজেই এদেশে ট্রায়াল করা সম্ভব। আমরা প্রায়ই দেখি বিদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা কিছু এনজিও নানাস্থানে ফ্রি চিকিৎসা দিচ্ছে। তারা যে শুধু ফ্রি ঔষুধ দেয় তাই না, নিয়মিত সপ্তাহান্তে রোগীর খবরও রাখে। আমরা এগুলো দেখে কৃতজ্ঞতায় গদগদ হয়ে যাই! কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এরা মানুষকে এনিমেল মডেল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং নিয়মিত ডাটা কালেক্ট করছে। অথচ, আমরা এইসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের একুশে পদক দিতেও পিছপা হচ্ছি না!

কথা হচ্ছে এসব কাজে এদের সাহায্য করছে কারা? আমরা তো বিদেশীদের এইসব ক্ষেত্রে মাঠে কাজ করতে দেখি না। মূলত, এদের কর্মীরা হচ্ছেন বাংলাদেশেরই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা। এদের কেউ ডাক্তার, কেউ বায়োকেমিস্ট, কেউ মাইক্রোবায়োলজিস্ট অথবা কেউ পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? আমার মতে কারণ দুইটি। এক, এদেশে দক্ষ বিজ্ঞানের ছাত্রের জন্য যথাযথ কর্মসংস্থানের সত্যিই অভাব রয়েছে। দুই, দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে গবেষণার যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা না থাকবার কারনে ছাত্র ছাত্রীরা তাদের মাস্টার্স, এমফিল বা পিএইচডির গবেষণার জন্য এই সব প্রতিষ্ঠানে মাগনা কাজ করে থাকেন। তাছাড়া, লেখাপড়া শেষে চাকরির একটা টোপ ফেলাই থাকে।

এখন কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ কি এসব থেকে একেবারেই কিছু পাচ্ছে না? যতটুকু পাচ্ছে তা হল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। এতে তাদের দক্ষতা বাড়ছে নিশ্চিত ভাবেই। কিন্তু, এই দক্ষ জনশক্তি কোথায়? এদের কি দেশে পাওয়া যাবে? উত্তর হচ্ছে না। এই দক্ষ জনশক্তি কাজ করছে আমেরিকা, জাপান বা উন্নত বিশ্বের কোন দেশের বিখ্যাত কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিখ্যাত কোন গবেষকের ল্যাবরেটরিতে। সেখানে বাংলাদেশের সেই ছাত্রটি বিদেশীদের চাইতেও ভাল কাজ করছে এবং স্বস্থিতে স্বগর্বে প্রকাশ করছে যে বাংলাদেশীরা কারো চাইতে কম না। আমরাও পারি। কিন্তু, আমরা পারি কাদের জন্য? আমরা মূলত আমাদের জন্য পারি না, পারি ওদের জন্য। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এমনও বিভাগ রয়েছে যাদের পাশ করা প্রায় ৬০-৭০% ছাত্র-ছাত্রীরাই এখন বিদেশে গবেষনা কর্মকান্ডে নিয়োজিত।

বিদেশে অবস্থানরত আমাদের অনেক বিজ্ঞানীই গর্ব ভরে বলেন, তারা দেশে নিয়মিত রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন এবং দেশের প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করছেন। তারা এদেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েই বিজ্ঞানী হিসেবে আলাদা সম্মান দাবি করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কুয়েত দুবাই বা মধ্যপ্রাচের অন্যান্য দেশে কর্মরত অদক্ষ শ্রমিক যার কিনা শরীরের শক্তিই সম্বল তার সাথে সেই বিজ্ঞানীর পার্থক্য কি থাকল!! দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকা বা মানুষকে ফকির সাজিয়ে বিদেশ থেকে আনা ভিক্ষার টাকা ঐ সব বিজ্ঞানী গড়বার জন্য ঢেলে কি লাভ হল?

এই হল আমার দেখা ও শোনা বিদেশী অর্থায়নের চলা গবেষণার হালচাল। সত্যি কথা হচ্ছে আমি নিজেও ঐ একই সিস্টেমের অংশ যে কিনা বিদেশে উচ্চ শিক্ষার্থে যেতে আগ্রহি, সেখানে প্রতিষ্ঠিত হতে আগ্রহি। উচ্চ শিক্ষা শেষে দেশে ফিরে গবেষণার চিন্তা করলে সেও চারিদিকে অন্ধকার দেখে হয়তবা আজীবনই দেখবে। তবে, মনে হাজারো প্রশ্ন লাফিয়ে উঠছে। জীবনটা অস্থির তার একটা অর্থপূর্ণ ইতির খোঁজে।



পরবর্তি পোস্টের জন্য ক্লিক করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৮
১০টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×