ভাই প্রথমেই বইলা নেই যে যদি বলিউডের নায়ক সালামান খানের কথা লিখতেছি মনে কইরা এই লেখাটা পড়তে আসেন তাইলে আমি অতিশয় দুঃখিত যে আপ্নারে খুশি করতে পারলাম না
কি দেইখা থ হইলাম সেটা পরে বলি আগে এই নায়ক সালমান খানের কথা কিছু বইলা নেয়। এই ভদ্রলোকের জন্ম আমেরিকার লুসিয়ানা অঙ্গরাজ়্যের নিউ অরলিনসে। উনি লেখাপড়া করেছেন পৃথিবীর সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটি(MIT)’তে।তার স্নাতকের বিষয় ছিলো তিনটি(আমেরিকাতে একই সাথে একাধিক বিষয়ের উপর স্নাতক করা যায়)-গণিত,ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্সে;স্নাতোকোত্তরের বিষয় ছিলো ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্স এবং তার একটি এমবিএ ডিগ্রী আছে এবং সেটি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে সম্পন্ন করা। এইটুকু পড়ে যদি মনে করেন যে আমি এই ব্যাটার লেখাপড়ার ইতিহাস নিয়া সামনে বিশাল কাহিনী শুরু করতে যাচ্ছি তাইলে আপনার লাইগা একখান খুশির খবর আছে,সেইটা হইলো উনার লেহাপড়ার কাহিনী এইখানেই শেষ,এরপর আর বেশি(!!!!) পড়েন নাই তিনি
তো লেখাপড়া শেষ কইরা এই ভদ্রলোক যথারীরতি বড় চাকরি করতে গেলেন। সেই সময় তার এক খালাতো বোনের অঙ্ক নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছিলো তাই তার খালা তাকে অনুরোধ করলেন অঙ্ক দেখিয়ে দেবার জন্য। এই পর্যন্ত পইড়া যদি কাহিনী বুইজা ফেলান তাইলে বাকিটুকু কষ্ট কইরা পড়েন কারণ কাহিনী আরো জটিল হইবো সামনে।
আমেরিকার সালমান ভাইজান যে প্রদেশে থাকতেন তার বোন সেই প্রদেশে থাকতেন না তাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে তিনি Yahooএর Doodle Notepadএর সাহয্যে বোনকে পড়ানো শুরু করলেন এবং তার গাধা টাইপের বোন তার কাছে পড়ে পরীক্ষায় ফাটাই ফেললো(নাটক সিনেমার কাহিনীতে যেমন হয় আর কি,শালার নিজের কপালেই কিছু জুটলো না খালি
এই ঘটনার পরে আমরা হইলে যা করতাম সেটা হইলো মাইয়ার মন পাওয়ার টেরাই করতাম এবং পাইয়াও যাইতাম যেহেতু মাইয়া আমাগো হেল্প নিয়াই কোপাইছে পরীক্ষাতে। তো আমাগো সালমান ভাই সেই লাইনে গেলেন না,উনি চিন্তা করলেন যে এইভাবে যদি তার ছোট ছোট মাস্টারিগুলারে অনলাইনে দিয়ে দেয়া যাই তাইলে হয়তো আরো অনেকেরই উপকার হবে। এই চিন্তা থেকে তিনি নিজেই কিছু খুব ছোট ছোট ভিডিও বানায়ে ইউটিউবে আপলোড করলেন। কাহিনি হইলো কিছুদিন পর থেকে। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গেলো যে,ভিডিওগুলাতে হিটের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি এবং এর একটা বড় অংশ হলো আমেরিকার স্কুলপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী আর সারা পৃথিবী থেকে তো আছেই। এই ঘটনা দেইখা নায়ক সাহেব একটা দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নিয়া ফেললেন,সেটা হলো তিনি তার চাকরি ছেড়ে দিলেন এবং ফুল টাইম কাজ করা শুরু করলেন এইসব ছোট ছোট ভিডিও নির্মাণের।
এইবার কিছু কাহিনী বলি ভিডিওগুলার। ভিডিওগুলা তেমন আহামরি কিছু না,একজন মানুষ একটা জিনিস নিয়ে কথা বলছেন এবং স্ক্রিনে একটা বোর্ডের মতো আছে সেখানে দরকার হলে প্রয়োজনীয় আকিবুকি করা হচ্ছে। যে এই জিনিসগুলা নিয়ে কথা বলছেন তাকে স্ক্রিনে কখনো দেখা যায়না খালি তার কন্ঠ শোনা যায়। এখন কথা হইলো যে এই অতি সাধারণ ভিডিওগুলার তাইলে বিশেষত্ব কি!!! বিশেষত্ব হইলো যে এই জিনিসগুলা হইতো আপনার আমার মতো বয়সের মানুষের জন্য তেমন দরকারি না কিন্তু যে ছেলে/মেয়েটি জীবনে প্রথম ক্যালকুলাস করতেছে এখন সে যদি একটা ভিডিও দেখেই বুঝতে পারে যে আসলে d/dx(ln x) = 1/x(আমি জানি আপনি হয়তো বলবেন এইগুলাতো বইয়েও করে দেয়া থাকে!!আসলে বইয়েতো করে দেয়া থাকে,কেউতো বুঝায় দেয়না
এই ভিডিওগুলার ব্যাপক জনপ্রিয়তার জন্য এখন সালমান ভাই এখন নিজেই একটা সাইট খুলে সেখানে ভিডিও আপলোড করে যাচ্ছেন এবং এখন পর্যন্ত তার সাইটে প্রায় ১৯০০ ভিডিও আছে গণিত,বিজ্ঞান,সমাজবিজ্ঞান এবং বিভিন্ন পরীক্ষার প্রিপারেশনের নানা বিষয়ের উপর। এই সাইটের নাম খান একাডেমী । এই সাইটটি মাইক্রোসফটের এডুকেশন এওয়ার্ড পেয়েছে বেশ আগেই। সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হলো গুগল ২০০৮ সালে প্রোজেক্ট চালু করে ১০ টুদিপাওয়ার ১০০ নামে যেটিতে বদলে দিতে পারে এমন আইডিয়া চাওয়া হয় । সেখানে প্রায় ১৫,০০০ আইডিয়া জমা পড়ে সারা পৃথিবী থেকে। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে ১৬ টি পরিকল্পনা ঠিক করা হয়, সেখান থেকে ভোটাভুটির মাধ্যমে ৫ টি ভিন্ন ভিন্ন খাতের আইডিয়াকে গুগলের পক্ষ থেকে ২ মিলিয়ন ডলার করে দেয়া হয়। শিক্ষা খাতে পৃথিবীর সেরা প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হয় এই খান একাডেমী। খান একাডেমী কিভাবে এই অর্থ ব্যায় করবে তারও একটা আইডিয়া দিয়ে দেয়া হয় গুগল থেকে,সেটি হলো এই অর্থ দেয়া হবে আরো অনেক বেশী ভিডিও আরো বেশী ভাষায় যেন অনুবাদ করা যায় সেই জন্য। মজার ব্যাপার আছে আরো একটা,সেটা হলো বিল গেটস এই সাইটের ফ্যান হিসাবে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতে গর্ববোধ করেন
এই প্রকল্প যখন থেকে তুঙ্গস্পর্সী জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে তখন অনেকেই এটিকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহারের কথা বলেছিলেন এবং অনেক বড় বড় প্রস্তাবও সালমান খানকে দেয়া হয়েছিলো যেগুলোর যে কোন একটা গ্রহণ করলেই তিনি আজ বিলিয়নার হতে পারতেন কিন্তু তিনি সেগুলোর কোনোটাই গ্রহণ করেননি বরং এই মহান শিক্ষক ভিডিওগুলোকে “ওপেন সোর্স লাইসেন্সের” আওতায় সাইটে ছেড়েছেন তাই এটি একেবারে বিনামূল্যে দেখা এবং ডাউনলোড করা যায়।
সবচেয়ে বড়ো কাহিনী এখনো শেষ হয়নাই। সেটা হলো এই ভদ্রলোকের ব্যাপারে একটু খোজ-খবর নিতে গেছিলাম। ভদ্রলোকের নাম শুনে অবশ্য আগেই পাকিস্তানি মনে হয়েছিলো তো উইকিতে খোজ নিয়ে যেয়ে যা দেখলাম তাতে মাথা তো পুরাই আওলায় গেলো আমার। এই নায়ক ভাইয়ের জন্ম যদিও আমেরিকায়,নায়ক বাবাজীর আসল বাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে,এইটা দেইখা সত্যিই চোখে পানি চলে আসছিলো। আরো একবার মনে হলো যে এতো সমস্যা থাকা সত্যেও বাংলাদেশের এমন কিছু মানুষ এখনো আছেন যারা আমাদের জন্য সত্যিই মাঝে মাঝে অনেক অনেক বড় আনন্দের এবং গর্বের উপলক্ষ এনে দেন।
ভিডিওগুলো এখন বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা শুরু হয়েছে,যদি বাংলায় অনুবাদ করা যেতো তাহলে আমার মনে হয় সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞান পড়ার প্রতি নতুন শিক্ষার্থীদের যে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে তা কিছুটা হলেও হইতো কমতো।
জয়তু সালমান ভাই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




