''শার্লি এবদো" স্যাটায়ার ম্যাগাজিনের নাম বিশ্ববাসী তো দূরের কথা খোদ ফ্রান্সের প্যারিসের অনেক মানুষই জানতো না। মাত্র শ’খানেক কপি বিক্রী করাটাও বেশ মুশকিল ছিল। পত্রিকাটির পেছন ইতিহাস থেকে এমন তথ্যই মিলে। সেই অখ্যাত ননপপুলার ''শার্লি এবদো" এখন বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত স্যাটায়ার ম্যাগাজিন!! আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রতি সপ্তাহে পত্রিকাটি ৬০,০০০ কপি ছাপিয়ে থাকে!
কেন?কিভাবে?এই রাপিড পপুলারিটির সিক্রেট কি??
শুধুমাত্র মুসলিম উম্মাহর কলিজার টুকরা,প্রাণাধিক প্রিয়মানুষ রাসূলে কারীম (সা) এর ব্যঙ্গত্মক কার্টুন প্রকাশই ওদের এনে দেয় এমন পপুলারিটি ও আলোচনার শীর্ষে!! নাস্তিকদের সেই পুরনো কৌশল। মুসলিমদের ক্ষেপাও। ওদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানো। ওদের আল্লাহ নবী রাসূলদের গালি দাও। তামাশা করো। ব্যস। পপুলার। হিট।
ফ্রান্সের এই ছোট্ট ম্যাগাজিনটি প্রচ্ছদে আবারও মহানবী(সা) এর কার্টুন পাবলিশ করতে যাছ্ছে। কেবল তাই নয় এবার তারা আগামী সংখ্যার মোট ৩০ লক্ষ কপি ছাপাচ্ছে!!
সোজাসাপ্টা যা দাঁড়ায় তা হলো:পুরো মুসলিমবিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন!পারলে ঠেকা।তোদের নবী নিয়া আরও বেশি তামাশা ঠাট্টা মশকারি বেইজ্জতি যা ইছ্ছে তাই করমু। কী করতে পারিস কর।
গরুখেকো,বংশগত,নামধারী, উৎসব ও দিবসকেন্দ্রিক মুসলিমরা,আশেকানে রাসূলরা সত্যিই ওদের কিছ্ছুই করতে পারবে না। সেই হেডেম বর্তমান মুসলিমদের নেই। আর যে বা যারা কিছু করবে রাসূলে কারীমের শানে বেয়াদবির পাল্টা জবাবে সেই তাদেরকেই এইসব মুসলিমরা ঠেংগাইবে। টেররিস্ট বলে গালি দিবে। ঘৃণা করবে। এড়িয়ে যাবে।
শার্লি এবদো নিয়ে পুরো ইউরোপে তোলপাড় ঘটনার এই এক সপ্তাহ পরেও থামেনি। আলোচনা সমালোচনা মিছিল মিটিং সমাবেশ চলছেই। ৩৭ লক্ষ মানুষ মিলে বৃহৎ এক শোডাউনও তারা দেখিয়ে দিল। ইউরোপ আমেরিকায় লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ অনেক বৃহৎ ব্যাপার।
অথচ পুরো মুসলিমবিশ্ব একদমই চুপচাপ। বারবার রাসূলকে নিয়ে এমন ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে নেই কোন মিছিল মিটিং সমাবেশ কিংবা প্রতিবাদ!! ঐ যে সেই হেডেমটাই যে নাই।
# jesuischarlie মানে কি? আপনি জানেন?
এই হ্যাশট্যাগের মানে হল আমিও শারলি, অর্থাৎ আমিও সে পত্রিকা যাতে নবী (স) এবং উম্মুল মু'মিনিনদের নিয়ে অশ্লীল কার্টুন ছাপানো হত, এবং আজকেও সেই পত্রিকায় প্রিয়নবীকে নিয়ে কার্টুন ছাপা হয়েছে। তার মানে আপনিও সেই পত্রিকা "চার্লি হেবডো" যেখানে আমাদের প্রানের প্রিয়নবীকে ব্যঙ্গ করা হয়, আপনিও ব্যঙ্গকারীর সমর্থক!
খ্রিষ্টানরা যিশুর কার্টুন অঙ্কন করে- হিন্দুরাও তাদের দেব-দেবীদের কার্টুন অঙ্কন করে। এমনকি অনেক ওয়েবসাইটে যিশুর নগ্ন কার্টুন/ফটোও দেখা যায়- কোন খ্রিস্টানই কিন্তু তাতে আপত্তি করে না। হিন্দুরা তো নিজেরাই তাদের দেব-দেবীদের নগ্ন প্রতিমূর্তি তৈরি করে। এতে যদি তাদের কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে তাহলে চুন থেকে পান খসলেই মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে এত আঘাত লাগে কেন? এর কারন হল মুসলমানরা সবার চেয়ে আলাদা। আর ইসলামও অন্য সকল ধর্মের চেয়ে আলাদা। এটা নামসর্বস্ব কোন ধর্ম নয়, আচারসর্বস্ব ধর্মও নয়। এটা একমাত্র সত্য ধর্ম, সৃষ্টিকর্তা মনোনীত ধর্ম। তাই মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিও অত্যন্ত সেনসিটিভ।
ফ্রান্সে মহানবী (সা) এর কার্টুন অঙ্কনকারী ১২ জনকে কতল করা হয়েছে- এতে আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। যদিও এর ফলে বহির্বিশ্বে মুসলমানদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্য হয়েছে। এটাও সত্য যে, এধরনের হামলা চালিয়ে ইসলাম অবমাননা বন্ধ করা যাবে না বরং এটা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। তবুও আমি মনে করি এই হামলাটা সঠিক ছিল। কারন এতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোটি কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কেউ বিনা বিচারে পার পেয়ে যাবে তা তো হয় না। এটা তো ন্যায়বিচার হল না।
ইমাম মালিককে খলিফা হারুন অর রশিদ প্রশ্ন করেছিলেন কি হবে যদি কেউ রাসূল সাঃ কে অপমান করে ইমাম মালিক বলেছিলেন “এরপরে কি আর কারো বেচে থাকার অধিকার থাকে?”
'মুসলিম টেররিস্ট' ফ্রিডম অফ স্পিচ' এইসব ফান্দে পড়ে মুসলিমরা পুরো ব্যাপারটাই এগনোর করছে। কনফিউজড। তলিয়ে দেখবার আগ্রহটুকুও নেই। অথচ পশ্চিমাদের বক্তব্যের পাল্টা জবাবে কতকিছুই না বলা যায়। দেখানো যায়। পুরো ইস্যুটাকে কত রকমভাবেই না ডিফেন্ড করা যায়। ওদের হিপোক্রেসির উদাহরণ কি ভূরি ভূরি নয়?
হায় মুসলিম শাসকবর্গ! হায় মুসলিম উম্মাহ!!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪৪