somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কাল্পনিক প্রেমের গল্প পর্ব ১

২২ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোবাইল টা সাইলেন্ট করা ছিল । রাতে শোবার আগে যখন ফোনটা হাতে নিলাম দেখি ৮৭ টা মিস কল ।
একটা নম্বর থেকে না অনেক গুলো নম্বর থেকে । পরিচিত অপরিচিত ।
কি এমন দরকার হল আমাকে কে জানে ? আগে কাকে ফোন করবো তাই ভাবছি এমন সময় সুমন এসে ঢুকল ঘরে ।
“ফোন ধরিস না ক্যান ?”
“ আরে সাইলেন্ট ছিল । বুঝতে পারি নি । কি হয়েছে । এতো বার ফোন দিছিস ক্যান ?”
“ ত্বন্নী সুইসাইড করেছে ।“
“ মানে ?” বুকের মধ্যে কেউ যেন কেউ আস্তো একটা ছোড়া ঢুকিয়ে দিল ।
“ মানে করার ট্রাই করেছে । হাসপাতালে আছে । তোকে বার বার দেখতে চাইছে ।“
“মানে এখনও মরে নি ।“
“ অপু এমন ভাবে বলিস না প্লিজ ।“
“ কেন বলব না ? আর তুই আমার কাছে কেন এসেছিস ? ও আমার কে ? ও বাঁচল কি মরল তাতে আমার কি যায় আছে ?”
“ অপু প্লিজ এতো জেদ ধরিস না । তুই কি ওকে ভালবাসতিস না ?”
“ হ্যা । বাসতাম । আর বাসতাম বলেই আজ ওকে ঘৃনা করি । তুই তো জানিস ও আমার সাথে কি করেছে ।“
সুমন কিছু বলল না । মোবাইল বের করে কি যেন করল । তারপর আমার দিকে মোবাইলটা দিয়ে বলল “এটা দেখ ।“
“ কি এটা ?”
“ ত্বন্নীর শেষ ফেসবুক স্টাটাস ।“
আমি নিলাম । ওটাতে লেখা “আই এম সরি অপু আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও ।“
আমি মোবাইলটা ওকে ফিরিয়ে দিলাম । আমার কোন ভাবান্তর হতে না দেখে সুমন বলল “তুই কি বেচারীকে এখনও ক্ষমা করবি না ।“
“ কোন দিনও না । আর তুইতো আমাকে ওর আসল চেহারার কথা বলেছিলি ।“
“ বলেছিলাম । কিন্তু ও বদলেছে ।“
“ ও বদলেছে কিন্তু আমি বদলাই নি ।“
“ ও যদি আজ মরে যায় ?”
“ মরবে না । ওমন মেয়েরা এতো সহজে মরে না । আর আগেই বলেছি ও বাঁচল বা মরলো আমার তাতে কিছু যায় আসে না । তুই এখন যা । তোর সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না ।“
অনিচ্ছা সত্তেও সুমন চলে গেল ।
আমি লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম । কিন্তু শুয়ে পড়লেই কি আর ঘুম আসে ? আমার মনের ভিতর তোলপাড় চলছে । ত্বন্নীকে নিযে তোলপাড় । যতই মুখে আমি জেদ দেখাই মনের ভিতর ওকে নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব চলছেই । কি করব আমি ? ও আমার সাথে যাই করুক না কেন ভাল তো বাসি ওকে ।
ত্বন্নী । ফারহাধা জাবিন ত্বন্নী । আমাদের ক্লাসের সব থেকে স্মার্ট মেয়ে । সব থেকে সুন্দর মেয়ে । আর সব থেকে অহংকারী মেয়ে । ওরিয়েনটেশনের প্রথম দিন ত্বন্নী নিজের উপস্থিতি আর গুরুত্ব খুব ভাল করে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে ছিল । উপরের ক্লাসের ভাইয়ারা তো ছিলোই আমাদের ক্লাসের মোটামুটি সবাই ত্বন্নীর উপর ফিদা ছিল । এবং সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজেও ছিলাম । ও যখন ক্লাসে আসতো যেন এক ঝড়ো বাতাস মনের মধ্য বয়ে যাচ্ছে । যথন ওর সাথে দেখা হত মনের ঘরে যেন হাজারো বেহালা বেজে চলত । কিন্তু ওকে পাবার স্বপ্ন ওর সাথে বন্ধুত্ব করা এমন কি ওর সাথে কথা বলার কথাও ভাবতাম না কোন দিন ।
কিভাবে ভাবতাম ? ও হল একটা পারফেক্ট মেয়ে । সবার মনের রানী আর আমি ক্ষুদ্র প্রজা । গ্রাম থেকে আসা ক্ষ্যাত মার্কা একটা ছেলে । ওর ধারে কাছে যাবার প্রশ্নই আসে না । আমি যেতামও না । এভাবেই চলে যাচ্ছিল জীবন ।
কিন্তু একদিনের কথা । আমি ক্লাস শেষে হলের দিকে যাচ্ছি ।
এমন সময় পেছন থেকে ডাক “অপু একটু দাড়াবে ?”
কণ্ঠ শুনে মনে হল দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো ।
ত্বন্নীর মুখে নিজের নাম কখন যে শুনবো এটা আমি কোন দিন আশাই করি নি । আমি দাড়ালাম ।
“ হাই ।“
এতো টাই নার্ভাস হয়ে পড়লাম যে হ্যালো টাও বলতে পারলাম না । কোন রকম একটু হাসার চেষ্টা করলাম । ত্বন্নী খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে বলল “ তোমার সাথে কিছু কথা বলতে পারি ?”
“ বল ।“
“ একচুয়ালী কথা না, অভিযোগ । তোমার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ আছে ।“
“ অভিযোগ ?” আমি অবাক হই ।
“তুমি আমাকে এড়িয়ে চল কেন ?”
কিছুই বলতে পারলাম না । বোকার মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া । তাছাড়া আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে ত্বন্নী আমার সাথে কথা বলেছে ।
সেইদিন রাতে ঘুম তো আর আসেই না । কত কিছুই না মনের জানালায় উকি মারে । মন ছুয়ে যায় কত অজানা রঙে । তারপর আসতে আসতে ত্বন্নীর সাথে যোগাযোগ বেড়ে যায় । মোবাইলে কথা হতে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ।
পড়ব পড়ব না করেও আমি ওর প্রেমে পড়ে যাই । জীবন যেন এক নতুন পথে চলতে থাকে । যে পথে কেবল ত্বন্নী ছাড়া আর কিছুই নেই ।
আমি ভাসতে থাকি নতুন স্বপ্নে । কিন্তু স্বপ্ন ভাঙ্গতে সময় লাগে না । আমার ও লাগলো না ।
যে দিন আমি ঠিক করেছি যে ওকে বলব সেদিন সব যেন কেমন অন্যরকম হয়ে যায় । সকালবেলা ফুরফুরে মেজাজ নিয়েই নাস্তা খাচ্ছি এমন সময় সুমন কে আসতে দেখলাম । ওর মুখ থমথমে ।
আমি বললাম “ কি হয়েছে ?”
“ তোর সাথে কথা আছে ।“
“ বল ।“
‘ এখানে না । আয় আমার সাথে ।“
বলে এক প্রকার জোর করেই আমাকে নিয়ে গেল ওর রুমে । নাস্তাও ঠিক মত শেষ করতে দিল না । আমরা মুখো মুখি বসলাম ।
“ তোকে একটা কথা জিঞ্জেস করবো সরাসরি উত্তর দিবি ।“
আমি বললাম “আচ্ছা দিবো । কি হল এমন ?”
“ তুই কি আজকে ত্বন্নী কে প্রোপোস করার কথা ভাবছিস ?”
আমি খানিকটা চমকালাম । ইতস্তর করে বললাম “তুই কিভাবে জানিস ?”
“ শুধু আমি না পুরা ভার্সিটির সবাই জানে এটা । তুই কি বুঝতে পারছিস না ত্বন্নী তোকে নিয়ে খেলা করছে । তোর কি মনে হয় ও সাথে মিশছে কেন ? তোর কোন আইডিয়া আছে ?”
আমি কোন কথা বলতে পারি না । সত্যি তো আমার তো কিছুই নেই যে ও আমার সাথে মিশবে ।
সুমন বলল “ত্বন্নী ওর বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরেছে যে তোকে ওর প্রেমে ফেলবে । তারপর সবার সামনে তোকে হেয় করবে । আজ সবাই রেডি হয়ে আছে মজা দেখার জন্য ।“
আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । মানুষ এমনটা কেমন করে করে ? কারো ইমোশন নিয়ে কিভাবে খেলে ?

(চলবে)
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×