somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কাল্পনিক প্রেমের গল্প পর্ব ২

২৩ শে অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভেবেছিলাম ত্বন্নীকে দেখতে যাবো না । কিছুতেই যাবো না । কিন্তু না গিয়ে পারলামও না ।
ত্বন্নীর ভাই এসেছিল । এমন ভাবে অনুরোধ করতে লাগলো । আমি না করতে পারলাম না কিছুতেই । আর না যাওয়াটা অমানবিক হত ।
ওর অবস্থা নাকি খুব ক্রিটিক্যাল । দুএক বার নাকি চেতনা এসেছিল । বার বার নাকি আমার নাম নিয়েছে !
গাড়ি চলছে হাসপাতালের দিকে আর আমি ভাবছি ত্বন্নীর কথা ।
সেদিন সুমনের কাছ থেকে সব শোনার পর আমার সব কিছু যেন ওলটপালট হয়ে গেছিল । আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন আমি আর এই পৃথিবীতে নাই । একজন মানুষ আর একজনের সাথে এমনটা কেমন করে করতে পারে ? আমার মনটা কি একটা বাজির সমান ? এতোই ক্ষদ্র আমি ?
তবুও ভার্সিটিতে গেলাম । ত্বন্নী যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল ।
ওর সামনে যখন দাড়ালাম তখনও আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না যে এত সুন্দর একজন মানুষ আমার সাথে এমন একটা ঘৃন্য খেলা খেলতে পারে ।
ত্বন্নী আমাকে বলল “এতো দেরী হল কেন ? আমি কতক্ষন ধরে তোমার জন্য ওয়েট করছি ।"
তারপর হেসে বলল "তুমি যেন কি আমাকে বলবে আজ ?”
আমি কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলাম না । তারপর বললাম “কত টাকা বাজি ধরেছো ?”
“ সরি”
ত্বন্নীকে একটু চমকাতে দেখলাম । ও মনে হয় আমার কাছ থেকে এটা আশা করে নি ।
“সরি আমি বুঝতে পারলাম না তুমি কি বললে ?”
আমি বললাম “তুমি তোমার বান্ধবীদের সাথে কত টাকা বাজি ধরেছো ?”
“ বাজি ?”
“ হ্যা । বাজি । আমাকে প্রেমে ফেলানোর বাজি । আমাকে নিয়ে খেলা করার বাজি ।“
কিছুক্ষন ত্বন্নী কোন কথা বলতে পারলো না ।
“শোন অপু তুমি যেমন টা ভাবছো তেমন না । আই ক্যান এক্সপ্লেইন ।“
“ আমি কোন ব্যাখ্যা শুনতে চাইছি না । আমি শুধু জানতে চাই তুমি বেট ধরেছিলে কি না?”
ত্বন্নী কিছুক্ষন কোন কথা বলল না । তারপর মাথা ঝাকালো ।
কি জানি হয়ে গেল আমার ! মাথা যেন আগুন ধরে গেল । কষে এক চড় মেড়ে বসলাম ।
“আমি কখনও ভাবিও নি তুমি এমন টা করবে ! এতো সুন্দর চেহারা তোমার । মনটা এতো কুৎসিত কেন ?? আমার নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে যে তোমাকে আমি ভালবেসেছি ।“
কথা গুলো ওকে কিভাবে বলেছিলাম কে জানে । তারপর চলে আসি ওখান থেকে ।
পরের এক সপ্তাহ বলতে গেলে একেবারে বিচ্ছন্নই ছিলাম সবার কাছ থেকে । কারো সাথে কোন যোগাযোগ করি নি । একাই নিজের মন বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম । তারপর যখন ক্লাসে গেলাম সবাই যেন আমাকে একটু অন্য চোখে দেখতে লাগল ।
ত্বন্নীর মত মেয়েকে যে আমি চড় মেড়ে বসব এই কথা হয়তো কেউ ভাবে নি । সবার কথা বলছি কেন আমি নিজেই তো ভাবি নি । নিজের ক্লাস রুমটাকে কেমন জানি অচেনা লাগছিল । কদিন আগেও জীবন টা কত সহজ ছিল । আর এখন জীবন টা কত জটিল হয়ে গেলো । ত্বন্নী আসলো তারও কিছুক্ষন পরে ।আগের মত হাসি খুশি না । আজ আর চেহারায় সেই আত্মবিশ্বাসের হাসি দেখতে পেলাম না । তারপর এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল ।
সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু আগের সহজ সরল জীবনের সুর কেটে গিয়েছিল । আস্তে আস্তে এটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠল ।
তারপর একদিন । সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল । কেউই বলতে গেলে আসে নি । একটা ফরম জমা দিতে হবে বলে আমি এসেছিলাম । না হলে আমিও আসতাম না । হেডফোনে গান শুনছিলাম আর বৃষ্টি দেখছিলাম ।
এমন সময় দেখি ত্বন্নী আমার দিকে আসছে । প্রথম ওকে ইগনোর করা চেষ্টা করি । কিন্তু লাভ হয় না । ও আমার সামনে এসেই বসে । ইশারায় হেড ফোন খুলতে বলে । একসময় ছিল ওর সাথে কথা বলার জন্য মন টা সবসময় অপেক্ষা করে থাকতো । কিন্তু আজ প্রেক্ষাপট ভিন্ন ।
আমি উঠে চলে যেতে চাইলাম । ও আমার পথ আটকালো । বললাম “সমস্যা কি ?”
“ তোমার সমস্যা কি ? আমাকে কিছু বলার সুযোগ তো দিবে নাকি ! অন্তত ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ তো দিবে ?”
“ ক্ষমা চেয়ে কি করবা তুমি ? কোন দরকার আছে ?”
“ আছে ।‘
“ কোন দরকার নাই । কোন লাভ নাই । কারন আমি কোন দিন তোমাকে ক্ষমা করবো না । কোন দিনও না ।তোমার মত মেয়ের সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণ্ণা হচ্ছে । পথ ছাড়ো । যেতে দাও ।“
ত্বন্নী কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেল ।এতো কঠিন কথা শুনে ওর অভ্যাস নেই । দেখলাম ওর চোখে দেখলাম পানি জমতে শুরু করেছে ।
জল ভরা চোখ নিয়ে ও বলতে লাগল “একথা সত্যি যে তোমার সাথে আমি মিশতে শুরু করেছিলাম বেট ধরেই । কিন্তু বিশ্বাস কর তোমার সাথে মিশার সময় আমার মন আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করেছিল । আমি সত্যি সত্যি আমাদের রিলেশন টা স্থায়ী করতে চেয়ে ছিলাম । আমি তোমার উপর সত্যি সত্যি ফল করতে শুরু করেছিলাম ।ইনফ্যাক্ট আই হ্যাভ অলরেডি ফলেন ইন লাভ উইথ ইউ । আর এই কয়দিনে তুমি আমি আরো বেশি বেশি তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি । অপু প্লিজ আমার কথা টা বিশ্বাস কর ।“
খুব ইচ্ছা করছিল ত্বন্নীর কথা গুলা বিশ্বাস করি ! কিন্তু বেলতলায় একবার যাওয়াই ভালো ।
“কথা শেষ হয়েছে তোমার?”
ও কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো আহত চোখে ।
“তুমি বিশ্বাস করছ না আমার কথা ?”
“করার কোন কারন নেই । আর শোন তোমার কেবল মনে হচ্ছে যে তুমি আমার প্রেমে পড়েছ । আসলে তা কিন্তু না । সারা জীবনে তুমি কখনও কারো কাছ থেকে রিজেক্টেড হও নি তো তাই তোমার এমন মনে হচ্ছে । আমি করেছি । তোমার আগে পিছে সব সময় তুমি ছেলেদের ঘোরাফেরা করতে দেখেছ ! আমি করছি না তাই আমার প্রতি তোমার আকর্ষন জন্মেছে । আর এটাকে আর যাই বলুক ভালবাসা বলে না!”
“অপু ….... “
ত্বন্নী আরো কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু আমি ওকে সুযোগ দিলাম না ।

গাড়ি থেমে গেছে । মনেহয় চলে এসেছি । হাসপাতালে.....।


(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×