somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার ছোট্ট গল্প : ভাগ্যিস তখন কারেন্ট চলে গিয়েছিল

২২ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে নীলুর হলের সামনে দাড়িয়ে আছি । অনেক করে বলার পর ওর রাগ পড়েছে । কিন্তু দেখা হবার পর ও যা যা শর্ত দিয়েছে তা কি করা হবে ?
করতে পারবো তো ?
না হলে তো ও আবার রাগ করবে । যেমন টা কাল করেছিল ।
অবশ্য রাগ করাটা ওর ঠিকই আছে । দোষটা আমারই ছিল । কাল যখন ওকে হলের সামনে নামিয়ে দেই মুখ দেখে বুঝতে ছিলাম ও রাগ করেছে । আর রাগ হলেই ও আমার ফোন রিসিভ করে না । সকাল বেলা এতো বার ফোন দিলাম । ধরলই না । আমারও রাগ হল খানিকটা । মোবাইলটা ছুরে ফেলে দিলাম । অবশ্যই বিছানার উপর ।
আচ্ছা বুঝলাম আমার ভুল হয়েছে ।

মানুষের ভুল হতে পারে না ?
রাগ করতে পারো ।
তাই বলে এতো !
আমার কলটা কি রিসিভ করা যায় না ? অন্তত আমার দিকটা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দিতে হতে । তাই না ?
আর ভুল শোধরানোর সুযোগও দেওয়া উচিত্ । তা না , কোন যোগাযোগ নাই । কোন সুযোগও নাই ।
যাক আমার কি ?
আমার কি এতো ঠ্যাকা ?
আমিও আর ফোন করবো না ?
কিন্তু পারি না বেশিক্ষন থাকতে ।
আবার ফোনটা হতে নিই । নীলু বান্ধবীকে ফোন দিই । নীলুর রুমেই থাকে ও ।
“অপু ভাই । নীলু সাথে ঝগড়া হয়েছে ।“
“ কেন আমি তোমাকে এমনি ফোন দিতে পারি না ? আমি তোমার বান্ধবীকে আর ফোন দিবো না ।“
“ দেখেন যা পারবেন না তা বলবেন না ।“
কথা সত্যি । ওকে ফোন না দিয়ে আমি থাকতে পারবো না । খানিক্ষন চুপ থেকে বললাম “কোথায় সে ?”
“ শুয়ে আছে । ওর শরীর খারাপ ।“
“ কি হয়েছে ?”
“ কাল রাত থেকে নীলুর জ্বর ।“
“ এখন কি অবস্থা ? ডাক্তার দেখিয়ছো ?”
“ না । ও কিছু করতে দিচ্ছে না । বলছে আমি কষ্ট পেলে কার কি ? আমাকে কেউ ভালবাসে না । আমার কথা কেউ শোনে না ! আমি কথা কেউ শুনবো কেন ? আমি অনেক জোড়াজুড়ি করলাম । শোনেনি ।“
আমি কি বলবো ? আমার উপর ও রাগ করে এমনটা করছে । এমনটা করার কোন মানে আছে !
“ আচ্ছা ভাইয়া কাল আপনি ওর হাত ধরেন নি কেন ? নীলু খুব রাগ করেছে । এতো করে বলার পরও কেন ধরলেন না ?”
“ আসলে ….”
“ দাড়ান দাড়ান আমার কাছে ব্যাখ্যা দিয়ে লাভ নাই । যাকে দেওয়ার দরকার তাকে দিবেন ।“
“ কিন্তু তোমার বান্ধবী তো ফোনই ধরছে না । প্লিজ ওর কাছে একটু ফোনটা নিয়ে যাও না !”
“ আচ্ছা ধরেন । দেখছি !”
একটু পর নীলুর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম । ও ওর বান্ধবী কে বলছে
‘কে ? অপু ?’
‘ হ্যা ।‘
‘ ওকে বল আমি ওর সাথে কথা বলব না ।‘
‘ আমি পারবো না । তুই বল । আমি ফোন রেখে গেলাম যা বলার তুই বল ।‘
তার ২/৩ মিনিট কোন সাড়া শব্দ নাই । একটু পর বললাম “নীলু ?? আছো ?”
কোন সাড়া নাই । আরো মিনিট খানেক পরে মহারানীর সাড়া পাওয়া গেল ।
“হু বল ।“
“ ডাক্তারের কাছে যাচ্ছ না কেন ?”
“ শোন তোমার কাছে কৈফত্ দেবো না । তুমি যখন আমার কোন কথা শুনো না আমি তোমার কথা শুনবো কেন ?”
“ আচ্ছ বাবা আমি খুব সরি । ঐ দিন আমার ভার্সিটির এক ছোট ভাই ছিল পাশে । ওর সামনে কিভাবে তোমার হাত ধরি বল ?”
কিছু সময় নিরবতা ।
“ আমি সরি । সত্যি আমি খুব সরি ।“
নীলু খানিকটা অভিমান আর অভিযোগের সুরে বলল “তুমি সব সময় এমন টা কর । কখনও নিজ থেকে আমার হাত ধরো না । আমি ধরতে চাইলেও না হু না হু করো । কেন কর এমন ?”
আমি বলার কিছু খুজে পেলাম না ।
“আচ্ছা সত্যি তুমি আমাকে ভালবাসো করো তো ?”
“ হ্যা । বাসবো না কেন বল ! তুমি জানো না তোমাকে কত ভালবাসি ?”
“ তাহলে এতো অস্বস্তি কেন ?”
“ আচ্ছা আর হবে না এমনটা । বিশ্বাস কর । আর কখনও হবে না ।“
“ না আমি বিশ্বাস করি না ।“
“ প্লিজ বিশ্বাস কর । আর কোন দিন আমি এমন টা করবো না । তুমি এবার যখন আমার হাত ধরতে বলবে আমি তখনই তোমার হাত ধরবো ।“
“ তবুও আমাকেই বলতে হবে । নিজ থেকে ধরা যায় না ?”
“ ওকে! তুমি যা বলবে তাই হবে । এখন প্লিজ ডাক্তারের কাছে চল ।“
“ না যাবো না ।“
“ কেন যাবে না ? আমি তো সব কিছু মেনে নিলাম । এখনও যাবে না ?”
ও কিছু সময় চুপ করে থাকলো । “আচ্ছা যেতে পারি তবে আমার তিনটা শর্ত মানতে হবে তোমাকে ।“
কি আর করা । মহারানীকে শান্ত করার জন্য মানতে তো হবে । “
“ওকে । তুমি যা বরবে তাই হবে । কি করতে হবে বল?”
“ শর্ত নাম্বার এক হল বিকালবেলা আমাকে তুমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবা ।“
“ আচ্ছা ।“
“ শর্ত নাম্বর দুই হল যতক্ষন রিক্সায় থাকবো আর যতক্ষন পাশাপাশি হাটবো সব সময় আমার হাত ধরে থাকতে হবে ।“
“ সবসময় ?”
“ হ্যা , সবসময় !”
“ আচ্চা ঠিক আছে । তিন নম্বরটা কি ?”
“ তিন নম্বর শর্ত হল যখন তুমি আমাকে হলে নামিয়ে দিবে তখন আমাকে কিস করতে হবে ?”
“ কি বললে তুমি ?”
বলে কি এই মেয়ে ? মাথা ঠিক আছে তো ? আমি আবার বললাম “তুমি কি বললে ?”
“ কি বলেছি শুনেছো তুমি । আমি দ্বিতীয় বার বলব না । যদি রাজি থাকো তাহলে বিকেল বেলা এসো । আর কোন কথা হবে না । বাই ।“
“নীলু শোন নীলু ………….”
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না । কি আর করা ! আসতে হলো । আমাকে যে আসতেই হয় ।
একটু পরেই নীলু বেড়িয়ে এল ।
“ রিক্সা নেব ?
“ হু ।“
সারা রাস্তা আমি ওর হাত ধরে থাকলাম । অস্বস্তি তো লাগছিল কিন্তু ভালও লাগছিল খুব । আর সব থেকে বড় কথা হল ওকে খুব হ্যাপি লাগছিল । ওর মুখে একটা আনন্দের ঝিলিক ছিল । ওটা আমার ভাল লাগছিল খুব ।
ডাক্তারের কাছ থেকে আসার পর অনেকক্ষন ঘুরলাম । পুরোটা সময় ও একবার আমার হাত ছাড়ে নি । সবই ঠিক ছিল ঝামেলা বাধলো সন্ধ্যার সময় ওকে হলে নামিয়ে দেওয়ার সময় ।
ও আমার সামনে দাড়িয়ে । বলল ”তিন নম্বর শর্ত । মনে আছে তো ?”
“ নীলু !! চারিদিকে এতো মানুষ জন রয়েছে !!”
“ আমি কোন কথা শুনবো না । যদি তুমি এখন চলে যাও আমি সারা রাত এখানে দাড়িয়ে থাকবো । মনে রেখো ।“
আমার ভয় হল । ও সত্যি এমনটা করবে । আমি জানি ও এমনটাই করবে ।
এখন আমি কি করি ?
কি করি !!
আমি কি করবো ভাবছি কিভাবে কিস করবো ভাবছি , ঠিক এমন সময় করেন্ট চলে গেল । চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার ছেয়ে গেল মুহুর্তের মধ্যে ।
ঠিক তখনই নীলু আমাকে জড়িয়ে ধরে কিস করল । সেই অনুভূতি লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয় । কতক্ষন ঐ রকম ভাবে ছিলাম জানি না ।
ও যখন আমাকে ছেড়ে গেল তখন আলো জলতে শুরু করেছে । গেটের কাছে গিয়ে ও আবার ফিরে চাইলো । আমি তখনও দাড়িয়ে । বিশ্ময় ভাবটা তখনও কাটে নি । নীলু হাসলো । তারপর গেট দিয়ে ভিতর চলে গেল ।
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুপ থাকা কিংবা না থাকার কল্যান আর অকল্যান

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১১ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৯


[অসুস্থতা হেতু দীর্ঘদিন নিরব থাকায় সামুতে ফিরলাম অনুভুতিতে আসা নিরবতা নিয়েই কিছু কথামালায় ]

চুপ থাকার মাঝে লুকায়িত আছে প্রশান্তির সুর,
আল্লাহ প্রদত্ত বাকশক্তি, এক মহা মুল্যবান নূর।
সব কথা হচ্ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু শয্যায় ব্লগার 'কান্ডারী অর্থব' - তাঁকে সুস্থ করতে আপনাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ১১ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:২৩

প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা,

আমাদের সবার প্রিয় ব্লগার কান্ডারী অর্থব, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজের লেখনী ও মানবিক কাজের মাধ্যমে সকলের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন, তিনি বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। কিছুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মূরতি তৈরিতে ব্যয় ৪ হাজার কোটি টাকা!!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১১ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭



শুধু মাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নয়, ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে তাঁর স্বজনদেরও এমনকি তাঁর বইয়েরও। সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পারে অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বইয়ের ভাস্কর্য নির্মাণ করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবশেষে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কালো থাবা থেকে মুক্তি....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩

আলহামদুলিল্লাহ।
এক এক করে আইনী প্রক্রিয়ায় সবগুলো মামলা থেকে মুক্ত।
আগেই তিনটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলা থেকে খালাস পেয়েছিলাম। অবশিষ্ট একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলা/ সাইবার ক্রাইম এ্যাক্ট মামলা থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিপ্লবের স্পিরিটের মুখে চপেটাঘাত

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১১ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৩









থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, ব্যচেলর টাইপ তৃ্তীয় শ্রেনীর মুভি নির্মাতা এবং সবচেয়ে বড় কথা যে লীগের সুবিধাভোগী এই ব্যক্তি কিভাবে অন্তর্বর্তী সরকারে জায়গা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×