somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে ..

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে .....

অপুকে প্রায় সাত বছর পরে দেখলাম । বলতে গেলে আমিই দেখলাম ওকে ।
প্রায় সাত বছর । ও হলে বলত সাত বছর, দুইমাস, এগার দিন তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সতের মিনিট । আমি বলতাম “এতো হিসাব রাখার কি দরকার” ?
অপু বলত “দরকার আছে টিয়াপাখি, ঠিক যথন তুমি আমার কাছ থেকে দুরে চলে যাও প্রতিটা মুহুর্ত আমি তোমাকে মিস করি । একটা মিনিট পার হলে মন বলে ইস একটা মিনিট তোমাকে দেখিনি, একটা মিনিট ছুয়ে দেখতে পারি নি, একটা মিনিট আমি প্রাণহীন থেকেছি, একটা মিনিট আমি ঠিক মত নিঃশ্বাস নিতে পারি নি । ঘড়ির ঐ প্রতিটা কাটা আমাকে প্রতি মুহুর্ত তোমার শুন্যতার কথা বলে যায় । হিসাব তো থাকতেই” ।
আমি হাসতাম । লক্ষ্য করতাম আমার চোখে পানি চলে এসেছে । তাড়াতাড়ি পানি লুকাতে চাইতাম । অপু আমার সব কথা চুপচাপ মেনে নিত কিন্তু আমার চোখে পানি দেখলে খুব রাগারাগি করত । বলত সব জাহান্নামে যাক তোমার চোখে যেন আমি পানি না দেখি ! আমার সামনে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদলে কিন্তু আমি তোমাকে রেখে চলে যাবো !
আমি মনে মনে ভাবতাম এতো ভালবাসা একজন আর একজনকে কেমন করে বাসে !
অপু দেখতে একদম আগের মতই আছে । রোগাপাতলা । চোখে কালো ফ্রেমের একটা চশমা আর এলো মেলো চুল । এতো দিনে একটু স্ব্যাস্থ ও হল না । আগের মতই আছে ।
প্রতি বার যখন দেখা হত বলতাম “একটু মোটা হতে পারো না” ?
ও হেসে বলত “জি না টিয়াপাখি পারি নি । বিয়ে না করলে আমি মোটা হতে পারবো না । আমাদের পরিবারের সবাই বিয়ের পরই মোটা হয়েছে” ।
“তা করো । বিয়ে করতে তোমাকে কে মানা করেছে” !
“আচ্ছা তাহলে কবুল বল । এখুনি তোমাকে বিয়ে করছি” ।
“ইস । আমার বয়েই গেল তোমার সাথে বিয়ে করতে” । এই ভাবেই আমাদের কথা চলত অবিরাম ।
অপুকে আমি প্রথম দেখি এক কোচিং সেন্টারে । আমার থেকে এক ক্লাশ উপরে পড়ত ও । তবু কেন জানি আমাদের সাথেই পড়ত । ইংরেজি ছিলতো তাই অসুবিধা হত না । পরে ও বলেছিল কেবল নাকি আমাকে দেখার জন্যই ও জুনিয়ার ব্যাচের সাথে পড়তে গিয়েছিল । দেখতাম চুপচাপ একটা ছেলে । পড়তে আসত মাথা নিচ করে বের হত মাথা নিচ করে । ছেলেটার শান্তশিষ্ঠ স্বভাবের জন্য কেন জানি ছেলেটাকে ভাল লেগে যায় । কিন্তু বলার কোন উপায় ছিল না । ঐ কোচিংয়ে থাকার সময় অপু কোনদিন আমার সাথে কথা বলে নি । কেবল মাঝে মাঝে চোখাচোখি হয়ে যেত । তখন ও চশমা নেই নি । ওর চোখ দুটো সরাসরি দেখা যেত । কি গভীর চোখ ছিল । কেন জানি ওর চোখে চোখ পড়লে আমার বুকটা একটা অজানা ভাললাগায় কেঁপে উঠত । পুরো শরীরে যেন একটা শিহরন বয়ে যেত । কিন্তু তা মাত্র কয়েক মুহুর্তের জন্য । অপু চোখে চোখ পড়ার সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিত ।
অপুর সাথে আমার আবার যোগাযোগ হয় যখন আমি ইন্টার পড়ি । তখন ওয এক বন্ধু আমাকে এসে বলল যে অপু নাকি আমাকে পছন্দ করে । কি যে আনন্দ হয়েছিল সেদিন । ওর বন্ধুর কাছ থেকে মোবাইল নাম্বর নেই ।
আমার মনে আছে প্রথম প্রথম আমার সাথে কথা বলতে খুব লজ্জা পেত । কথা বলত না । আমি কেবল বকবক করে যেতাম । ও শুধু বলত তোমার কথা শুনতে ভাল লাগে । ভাল লাগাটা তো আগেই ছিল । কথা বলতে বলতে কবে যে ওর প্রেমে পড়ে গেলাম টেরই পেলাম । বাবামার কড়া নজরদাড়িও আমাকে আটকাতে পারল না । কি করবো মন কি আর এসব কথা শোনে ।
প্রথম যেদিন ওর সাথে দেখা করি সে দিন কি লজ্জা না ওর ! আমার দিকে তাকাতেই পারে না । বড় আপা বার বার আসছিল আর খোচা দিয়ে চলে যাচ্ছিল । বড় আপার সাথে তো ঠিক কথা বলছিল আমার সাথে কথা বলতে গেলেই এতো লজ্জা । ইশারায় আপুকে আসতে মানা করলাম ।
বললাম “কি ব্যাপার নিচের দিকে তাকিয়ে কি দেখছো ? ফোনে এতোবার দেখা করতে চাইলে আর এখন আমার দিকে তাকাচ্ছই না । নতুন জামাইরাও তো এতো লজ্জা পায় না” । আমার কথায় বেচারা আরো লজ্জা পেল । বেশ মজাই লাগছিল ।
চলে যাবার সময় ও যে কতবার পেছন ঘুরে তাকাল । ওকে যতক্ষন দেখা যায় ততক্ষন তাকিয়ে ছিলাম । তার থেকেও বড় বিশ্ময় আমার জন্য অপেক্ষা করছিল ।
আমি যখন আপার বাড়ি থেকে বের হলাম একটু দুরে দেখি ও দাড়িয়ে আছে । আমি এতো অবাক হলাম ।
কাছে গিয়ে বললাম “এখানে কি করছো” ?
ও কাচুমুচু করে বলল “তোমাকে আর একবার দেখতে ইচ্ছা হল” ।
কথা টা শুনে এতো ভাল লাগল । আশেপাশে লোক জন না থাকলে ওকে জড়িযে ধরতাম । কিন্তু সেটা আর করা গেল না । তারপর থেকে ওর সাথে প্রায়ই দেখা করতাম । আমাকে দেখে ও কি এমন শান্তি পেত কে জানে । প্রতিবার আমাকে দেখার পর ওর চোখমুখে একটা আনন্দের আভা দেখতে পেতাম । এটা আমাকে অনেক আনন্দ দিত ।
বেশি দেখা করতাম বলেই হয়তো অনেকের চোখে পড়ে গেলাম । বাসায় এ খবর পৌছাতে সময় লাগল না । বাবা অনেক চিল্লা চিল্লি করলেন । কয়েক দিনের মধ্যেই আমার বিয়ে দিয়ে দেন ।
আমার বিয়ে ঠিক দুই দিন আগে অপু আমার সাথে দেখা করতে এল । আপার বাসায় আমি ওর জন্য ওয়েট করেছিলাম । সেদিন বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল । রিক্সা করে ও যখন নামল মোটামুটি ভিজে গেছে । তোয়ালে দিয়ে ওর মাথা মুছে দিচ্ছিলাম তখন দেখছিলাম ও আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে । আমি কোন কথা বলতে পারলাম না । মাথা মুছে দিয়ে যখন একটু ঘুরেছি ও তখন আমার জড়িয়ে ধরল ।
দরজা খোলা ছিল আপা চলে আসতে পারতো , মনে হল আসুক । আই ডোন্ট কেয়ার ।
কতক্ষন এভাবে ছিলাম জানি না কিন্তু যখন ও আমাকে বাহু বন্ধন থেকে মুক্ত করল দেখলাম ওর চোখে পানি ।
চোখ ভরা জল নিয়ে অপু বলল “আমাকে ছেড়ে তুমি চলে যাবে ? তুমি চলে গেলে আমি কিভাবে থাকবো ? কি নিয়ে থাকবো ? আমি জানি না । তুমি চল আমার সাথে । তুমি আমাকে বিয়ে করবে । তোমাকে নিয়ে আমি সমুদ্র দেখতে যাবো । তোমার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজবো । তুমি চল আমার সাথে । চল” ।
আমি কোন জবাব দিতে পারলাম না । কেবল কয়েক ফোটা পানি ঝরে পড়ল ।
“এই নিপা ? আর কতক্ষন দাড়িয়ে থাকবে । এই বৃষ্টি মনে হয় থামবে না । ক্যাব নিয়ে এসেছি । চল । বাবু বাসায় । বুয়া ওকে কতক্ষন সামলাতে পারবে কে জানে । চল” ।
জাহিদের কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম । জাহিদের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় সাত বছর । মানুষ হিসাবে ও অনেক ভাল । আমাকে অনেক সুখি রেখেছে । আর বাবু আমাদের চার বছরের আদরের ছেলে ।
আর একবার অপুর দিকে তাকালাম । ও এখনও বৃষ্টি দেখছে । বৃষ্টি ওর অনেক পছন্দ ছিল । ও সব সময় আমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার ওর অনেক সখ । আমাকে বলত বিয়ে পর যেদিন যেদিন বৃষ্টি হবে সেদিন সেদিন আমরা বৃষ্টিতে ভিজবো ।
আচ্ছা ও কি এখনও বৃষ্টিতে ভেজে ? না বোধহয় ! এতো সময় কোথায় ওর ? ওর খবর মাঝে মাঝে পেতাম । শুনেছিলাম খুব ভাল একটা ব্যাংকে নাকি ওর জব হয়েছে । অনেক বড় পোষ্টে । আমি দোয়া করি তুমি আরো বড় হও ।
জাহিদ ক্যাব নিয়ে এসেছে আমি তাড়াহুড়া করে ক্যাবে উঠে বসলাম । আর একবার অপুর দিকে তাকালাম । কিন্তু ওকে কোথাও দেখলাম না । মনের মধ্যে কেন জানি একটা চিনচিন ব্যাথা করে উঠল । ঐ দিন বৃষ্টিতে অপুকে রেখে আমি চলে গিয়েছিলাম । আজও আমি ওকে রেখে চলে যাচ্ছি ।
পিপ পিপ । আমার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসল । আননোন নাম্বর থেকে ।
“”টিয়াপাখি, আমাদের আর একসাথে বৃষ্টি ভেজা হল না””
বুকের ভেতর সেই চিন চিন ব্যাথা যেন আরো প্রবল হয়ে এল ।

গল্পটা আমি পৃথিলা আপুর জন্য । ওর লেখাটা পড়েই আমার এই গল্পটা লিখতে উত্সাহী হয়েছি । অপুর মত এতো সুন্দর অবশ্য হয় নি । উনার গল্পটার নাম আর প্রথম লাইনটা আমি এখানে ব্যবহার করেছি ওনার অনুমুতি ছাড়াই । আপু যদি রাগ করেন তাহলে প্লিজ ক্ষমা করে দিবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:১৬
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের ট্যাক্স এর টাকা খরচ করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তারা কি আমাদের সেবা দিতে পারছে?

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৭:৩৬



আমার আব্বুর চাকরির সুবাধে বিভিন্ন জেলায় ঘুরা লাগে। তাই কমলাপুর ট্রেন স্টেশনও বহুবার গিয়েছি। আমরা গুলিস্থান থেকে ঢাকা টু দাউদকান্দি বাসে চরে ভবেরচর যাই। এখন কথা হচ্ছে কমলাপুর এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই জঞ্জাল স্বাধীনতার পর থেকেই, শুধু এক যুগের নয়....

লিখেছেন আমি সাজিদ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

এক, মানুষের মেন্টালিটি পরিবর্তন না হলে কোনও সরকার কিছু করে দিতে পারবে না।
দুই, কোন কারনে উপরের এক নাম্বার মন্তব্যটি করলাম?
স্বৈরাচার পতনের পর কি কি পরিবর্তন হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু হিন্দু অখন্ড ভারত চায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৮




মুসলিম অখন্ড ভারত শাসন করেছে তখন তারা ছিলো সংখ্যা লঘু। খ্রিস্টান অখন্ড ভারত শাসন করেছে, তারা তখন সংখ্যা লঘু মুসলিম থেকেও সংখ্যা লঘু ছিলো। তারপর মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। টাইম ম্যাগাজিনের আগামীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশের নাহিদ ইসলাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:১২




নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়

লিখেছেন জাহিদ শাওন, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৫০


এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×