somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিন্টু রোডের বিষন্ন মেয়েটি ( শেষ পর্ব)

০৮ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিন্টু রোডের বিষন্ন মেয়েটি ( প্রথম পর্ব)


বারবার মনে হল মেয়েটায় মনে এতো কিসের কষ্ট ? তারপরের সারাটা রাত আমি কেবল এই ভেবে কেটে গেল যে মেয়েটার মনে এতো কিসের কষ্ট ?
পরদিন আমি আবার গেলাম ঐ বাড়িটার সামনে । কিন্তু মেয়েটা বের হল না । পরের দিনও না ।
কিন্তু পরদিন এক পুলিশ কনেস্টেবল বের হল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল “কি ভাই সাহেব এদিক ওদিক তাকান ক্যান” ?
“তা কিছু না । আপা মনি আমাকে বলছে আপনাকে চলে যেতে । আর যদি আপনাকে এখানে দেখি তাহলে ঘেডিঘুডি একদম ভাঙ্গাইয়া দিবো” ।
আমি ভয় পেলাম । বেশ ভয় পেলাম । পুলিশের ভয় সবাই পায় আর আমি তো গাও গ্রামের ছেলে । ভয়তো পাবোই । ওখান থেকে চলে এলাম । আর যাই নি ।
আর কাল মোবারক সাহেবের ঐ কাগজ আর আজ আমি এখানে ।
একটু একটু ভয় ভয় করছিল এখানে বসে থাকতে । চারিপাশে সব কেমন হাইফাই লোক জন । আর আমি এখানে কোন গ্রামের গ্যাল । নিজেকে কেমন জানি বেমানান লাগছে ।
পপকর্ন চিবাচ্ছি আর চারিপাশের মানুশ জন দেখছি এমন সময় মেয়েটা কাচের দরজা ঠেলে ভিতর ঢুকল । সরাসরি আমার দিকেই এগিয়ে এসে বসল আমার আমার সামনে । ওর সব কিছুই যেন চেনা ।
“কিছু অর্ডার দেন নি” ? আমি হাসলাম ।
“আপনার জন্য ওয়েট করছিলাম” । তারপর ও অর্ডার দিল । খেতে খেতেই আমরা কথা বলছিলাম । হালকা কিছু কথা বলার পর মেয়েটা খানিকক্ষন চুপ করলো । আমি বুঝলাম ও খানিকটা প্রস্তুতি নিচ্ছে ওর কথা বলার জন্য ।
"খুব অবাক হয়েছেন না" ?
আমি হাসলাম । সত্যি খুব অবাক হয়েছি ।
"আপনাকে আজ কেন ডেকেছি জানেন ! আমার কিছু কথা বলার জন্য । জানি না আপনাকে কেন বলছি । তবা আমার মনে হচ্ছে আপনাকে বল্লে হয়তো আপনি বুঝবেন ।
আমি কোন কথা বলি না । মেয়েটা আরো কিছুটা সময় নেয় ।
তারপর শুরু করে ।
“জানেন আমার বাবা আমার বাবা আমার মাকে খুব ভালবাসতেন । আমি যখন জন্মাই তখন আমার মার শরীরে অনেক কমপ্লিকেশন দেখা দেয় । আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে আমার মা মারা যান ...... । বাবা আম্মুকে অনেক ভালবাসতেন তো তাই মার মৃত্যটা তিনি সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেন নি । আমাকে জন্মদিতে গিয়ে আম্মু মারা গেছে তো তাই বাবা মনে করতেন আমি আম্মুর মৃত্যুর জন্য দায়ী” ।
“আরে এটা কেমন লজিক হল” ? আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম ।
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখের পানি টলমল করছে । আমি বললাম “জন্ম মৃত্যু তো আল্লাহর হাতে । এতে আপনার দোষ কোথায়” ?
“না বাবাকে দোষ দিই কিভাবে বলুন ? বেঁচে থাকার জন্য মানুষের ভালবাসার দরকার । আমাকে ঘৃনা করে উনি বেঁচে আছেন” । মেয়েটা কিছুক্ষন সময় নিলো ।
“আমি যখন ছোট ছিলাম তখন না আমি ঠিক বুঝতাম না । বাবা কেন আমার সাথে এমন আচরন করছে । আমার আরো এক ভাই এক বোন আছে । তাদের কে উনি কি আদরই না করতো । আমি বুঝতাম না কেন আমার সাথে বাবা এমন করে । একটু বড় হলে আমি একটু একটু বুঝতে শিখি । একদিন বাবার ডায়রি পড়ে সব কিছু জানি । কিন্তু বাবা আম্মুকে এতো ভালবাসেন এটা জেনে বাবার উপর আমার কোন রাগ নেই” । মেয়েটা আবার চুপ করল ।
আসলেই মেয়েটার মনে কত কষ্ট । কত অভাগা মেয়েটা । জন্ম হতেই মাকে হারিয়েছে । আর বাবার আদরও পাইনি । এটা সহ্য করা এক জনের জন্য কতটা কষ্টের হতে পারে !
“আপনাকে একটা কথা জিঞ্জেস করি” ?
আমি বললাম “বলেন” ।
“আপনি সেদিনের আগে কোন দিন আমাকে দেখেন নি । তাহলে আপনি কিভাবে বললেন আমার কথাটা” ?
“আমি জানি না । আপনি সে দিন যখন হাসলেন আপনার হাসিতে কেমন জানি একটা বিসন্নতা ছিল । আপনার চোখে কিসের যেন একটা কষ্ট ছিল” ।
মেয়েটা আবার হাসলো । “এতো দিনে এই জিনিসটা কেউ বুঝতে পারি নি । আমার কত শত পরিচিত বন্ধুবান্ধব । কেউ না । আপনি একজন অপরিচিত হয়ে কিভাবে বুঝলেন” ?
আমি কিছু বলতে পারলাম না । কেবল হাসলাম ।
“জানেন আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আপনার সাথে আর দেখা করবো না । যে মানুষের ভিতরটা চট করে ধরে ফেলে তার কাছ থেকে দুরে থাকাই ভাল । তাই সেদিন হামিদ কে পাঠিয়েছিলাম । আপনাকে চলে যেতে বলার জন্য” ।
আমি হাসলাম ।
“হামিদ কি বেশি কিছু বলেছে” ।
“না না বেশি কিছু বলেনি” ।
“কিন্তু তারপর মনে হল না আপনার সাথে শেয়ার করা যায় । তাই মোবারক সাহেবকে পাঠালাম । আপনি বলেছিলেন আপনি কাজীর গলিতে টিউশনীতে আসেন । তাই উনি ওখানে আপনার জন্য ওয়েট করতেন । তারপর আপনাকে পাওয়া গেল । আচ্ছা আপনার নামটা আমি এখনও জানি না” ।
আমি আমার নাম বললাম ।
“অপু” ! নামটা ও উচ্চারন করলো । বলল “সুন্দর নাম । আমি ঈশিতা” ।
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ঈশিতা বলল “অপু সাহেব মেইনলি আপনাকে এই কথা গুলো বলার জন্য আমি এখানে ডেকেছি । আমি সারাটা জীবন বড় একা একা ভালবাসা শুন্য একটা পৃথিবীতে বড় হয়েছি । বাবা যেমন আমাকে ঘৃণা করতো আমার বড় দুই ভাই বোনও ব্যাপারটা বুঝে গিয়েছিল । তাই তারাও আমাকে খানিকটা ইগনোর করতো । একটু বড় হয়ে অনেক ফ্রেন্ডস আমি পেয়েছি কিন্তু আমাকে বোঝার মত কাউকে পাইনি । নিজের কথা বলার মত কাউকে না । আপনি চট করে সেদিন আমাকে ধরে ফেললেন এমনটা কেউ পারে নি । আপনার কাছে বলতে পেরে ভাল লাগল । আমি আরো কথা বলতে চাই । আমি জানি আপনি বুঝবেন । আপনি কি শুনবেন আমার কথা গুলো” ?
মেয়ে্টার এই আবেদন টা আমার মন টা খারাপ করে দিল ।
আমি যখনই মিন্টু রোডের বাড়ি গুলোর দিকে তাকাতাম মনে হত আহা কত সুখেই না আছে যারা এই বাড়িগুলোতে থাকে ।
কিন্তু হায় । সুখ কি এতোই সহজ ! সব কিছুর পরিপুর্ণতা থাকা সত্তেও এই মেয়েটা কত অসুখী ! কত টা বিষন্ন ! কতটা ভালবাসা শুণ্য জীবন কাটাচ্ছে । ঈশিতার জন্য সত্যি আমার খুব খারাপ লাগতে লাগলো ।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১২ সকাল ১১:৪২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×