somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আর রাশিনের গল্প

১২ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার পাশে একটা পরী থাকে । পাশে মানে আমার পাশের ফ্লাটে । পরীর মতই দেখতে মেয়েটা । আহা । প্রতিবার যখন মেয়েটাকে দেখি বুকের মাঝে কেমন যেন একটা হাহাকার তৈরি হয় । মনে হয় কাস ! কাস এই মেয়েটা আমার বউ হত । কিংবা গালফ্রেন্ড । কিন্তু আমার সে কপাল নাই । ঢাকার মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড কিংবা স্বামী হবার জন্য যা যা থাকা দরকার তার খুব কমই আমার মধ্যে বিদ্যমান । তাই কেবল দুর থেকেই দির্ঘ্য শ্বাস ফেলি । পরীটার নাম রাশিন । এই গল্প টা আমার আর রাশিনের ।
আমাদেয় বাড়ির গেটটা সব সময় বন্ধ থাকে । দারয়ান থাকলে তো কথা নাই । কিন্তু যখন দারয়ান থাকে না তখন বাড়ির লোকজন বেশ বিপদেই পরে । আমিও বিপদে পড়তাম । কিন্তু এখন আর পড়ি না ।
দুপুরের দিকে দারয়ান সাধারন থাকে না । সেদিনও ছিল না । ভাগ্যিস ছিল না । ছিল না বলেই আজ রাশিনের সাথে দেখা হল । রাশিন আমার পাশের ফ্লাটে থাকে । অল্প কথায় বলতে গেলে রাশিন দেখতে ভয়াভহ রকমের সুন্দর । আর সুন্দর বলেই সব সময় খুব মুডে থাকে । মুডে থাকে বলতে সবসময় মুখে একটা বিরক্তির ছাপ । যেন সব কিছুর উপর , সবার উপর সে বিরক্ত । আমি আজ পর্যন্ত রাশিন কে হাসতে দেখি নি । জানি না দেখবো কিনা ।
ক্যাম্পাস থেকে ফিরেছিলাম । বাড়ির সামনে এসে দেখি রাশিন দাড়িয়ে আছে গেটের সামনে । এজইউজাল বিরক্ত মুখে । পাশে এক রিক্সা ওয়ালা তার রিক্সা নিয়ে অপেক্ষা করছে । তবে রাশিন কে আজ অন্য দিনের থেকে যেন বেশি বিরক্ত লাগছে । বারবার কলিংবেল চাপছিল । আমি চুপচাপ দাড়িয়ে আছি একটু দুরে ।
“আফামনি আমার ভাড়াটা দিয়া দেন । চইলা যাই” ।
“আরে আশ্চর্য ভাড়া দেব কোথ্থেকে ? আপনাকে বলিনি আমার ব্যাগ ছিনতাই হয়ে গেছে । বাসা থেকে টাকা দিতে হবে” ।
“কিন্তুক গেট তো কেউ খুলে না । সারা দিন কি বইসা থাকবার পারি” ।
“বসে থাকেন । আপনার ভাড়া আপনি পেয়ে যাবেন” । রাশিন এবার আমার দিকে তাকাল । বলল “আমি অনেকক্ষন ধরে বেল বাজাচ্ছি । কেউ আসছে না । আপনি কি একটু দেখবেন আপনার বাসা থেকে কেউ আসে কি না” !
“মনে হয় কারেন্ট নাই” ।
“তাহলে” ? রাশিনকে আবার অস্থির মনে হল ।
“আর একটা উপায় কি আছে” ? আমি বলি ।
“ কি “?
“আপনি একটু সরে আসেন আমার কাছে চাবি আছে” ।
“আপনার কাছে চাবি আছে” ? রাশিন কে আমার উপর বিরক্ত মনে হল । “চাবি ছিল তো এতোক্ষন দাড়িয়ে ছিলেন কেন ? প্রথমে ফলা যেত না” ?
“আসলে আমি সুযোগই পাই নি । আপনি যেভাবে বিরক্ত মুখে কলিংবেল টিপ ছিলেন বলতে সাহস হয় নি” ।
আমার কথা মনে হল রাশিনের পছন্দ হল না । বলল “ঠিক আছে দরজা খুলুন” । খানিকটা হুকুমের মত শোনাল ।
আচ্ছা এখন যদি গেট না খুলি । একবার মনে হল বলি যে আমার চাবি আমি খুলব না । কিন্তু বলা হল না । গেট খুলে দিলাম । রাশিন ভিতরে চলে গেল ।
আমি রিক্সা ওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে দিলাম । সিড়ি ঠেলে উপরে উঠল । দেখলাম রাশিন এখানেও ওদের ঘরের গেটের সামনে দাড়িয়ে বেল টিপছে । বিরক্ত মুখে ।
রাশিন আমাদের পাশের ফ্লাটেই থাকে । আমি দরজা খুলতে খুলতে ওর দিকে তাকালাম । দেখলাম রাশিন আমার দিকে কেমন বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে । আমি তাড়াতাড়ি বললাম “দেখুন আপনার ঘরের চাবি কিন্তু আমার কাছে নাই । আগে থেকে বলে দিলাম” ।
রাশিন মনে ঠাট্টাটা পছন্দ করল না । সুন্দরীরা খুব একটা ঠাট্টা পছন্দ করে না । কিছু বলার আগেই আমি ঘরে ঢুকে পড়লাম । কিছুক্ষন পর দরজায় কড়া নড়ল । দরজা খুলে দেখি রাশিন ।
আমার দিকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বলল “আপনি রিক্সা ভাড়াটা দিয়েছেন । এই নিন” । আমি খানিকটা অবাক হলাম । ভান করলাম আর কি । বললাম “কই না তো । আমি দেইনি” ।
“দেখুন আমি জানি ভাড়াটা আপনিই দিয়েছেন । নিন । আমি কারো কাছে ঋনি থাকতে পছন্দ করি না” ।
আমি টাকা টা নিলাম । রাশিন ঘুরে যাচ্ছিল এমন সময় আমি ডাকলাম ওকে ।
“শুনুন” ।
রাশিন ঘুরে দাড়াল । “বলেন” !
“আপনি মানুষের কাছে ঋনি থাকেন না” ?
“না” ।
“তারমানে কেউ আপনাকে কিছু দিলে তা আপনি ফেরত্ দিয়ে দেন” ?
“জি” ।
“কিন্তু আমাকে তো দেন নি” ।
“মানে ? আপনি আমাকে কি দিয়েছেন যা আমি ফেরত্ দেই নি” ?
“কিছুতো একটা অবশ্যই আমি আপনাকে দিয়েছি । তা না হলে আমি এমনি এমনি বলতাম না” ।
রাশিনকে আবার বিরক্ত মনে হল । “দেখুন আমি হেয়ালি পছন্দ করি না । কি দিয়েছেন বলেন” ।
“ দেখুন রিক্সা ভাড়াটা যে আমি দিয়েছি তা আমি কিন্তু আপনাকে বলি নি । বলেছি বলেন ? তারপরও কিন্তু ভাড়াটা দিয়ে গেলেন” ।
রাশিন কিছু বলল না । ঘরের ভিতর চলে গেল ।
ঘরের ভিতর এসে মনে হল এমন কথা কেন বললাম ?
ও কি কিছু বুঝতে পেরেছে ?
নাকি বুঝবে ?
জানি না ।
বুঝলে বুঝবে ।
কত দিন আর চুপ করে থাকবো । এটা দিয়েই না হয় এক ধাপ এগিয়ে যাবো । আমার মনে ক্ষন আশা ছিল হয়তো রাশিনের মনে আমি কৌতুহল ঢোকাতে সক্ষম হয়েছি । এবার যখন দেখা হবে ও নিশ্চই আমার সাথে কথা বলবে । একবার হলেও জানতে চাইবে আমি আসলে ওকে কি দিয়ে ছিলাম । কিন্তু সেরকম কিছুই হল না ।
পরদিন যখন দেখা হল ওর চোখ মুখে সেই চিরো চেনা বিরক্তির ছাপ । আমাকে দেখে এমন একটা ভাব করল যেন আমাকে চিনেই না । খানিকটা খারাপই লাগল । একটু চেষ্টা করেছিলাম । কাজ হল না ।
নিজের মন কে বোঝালাম এ মেয়ে তোমার জন্য না । অন্য দিকে হাটো । কিন্তু মন থেকে সাপোর্ট পেলাম না ।
থাক না হয় । হয়তো কোন রাশিনকে কাছে পাওয়া হবে না । না হোক । চোখের সামনে সে আছে । এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল । তারপর আবার একদিন রাশিনের সাথে কথা বলার সুযোগ এল ।
রাতের বেলা । সেদিন রাতের বেলা কারেন্ট চলে গেছিল । গরম কাল । কারেন্ট গেলে ঘরে টেকা দায় । তাই ছাদে এসেছিলাম হাওয়া খেতে । কিন্তু হাওয়া খেতে এসে যে হাওয়া টাইট হয়ে যাবে বুঝতে পারি নি । যখনই ছাদে পা দিলাম ছাদের একেবারে কোনায় একটা .... । এই বিজ্ঞানের যুগে বলতে লজ্জা লাগছে । কিন্তু নিজের চোখ কে কিভাবে অবিশ্বাস করি । সাদা পোশাক পরে দাড়িয়ে আছে । আমি ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম । ঘুরে পিছনে যাবো তারও পারছি না । পা টা যেন ছাদের সাথে লেগে গেছে । কি করবো ভাবছি এমন সময় লক্ষ্য করলাম সাদা আয়োবয়টা এদিকে এগিয়ে আসতেছে । আকাশে চাঁদ নেই । চারিদিকে আলোর ছিটে ফোটা নাই । তবুও বোঝা যাচ্ছে ওটা এদিকেই এগিয়ে আসছে । আর একটু এগিয়ে আসলে বুঝতে পারলাম আয়বয়টা একটা মেয়ের ।
তারমানে পেত্নী !চিৎকার করতে যাবো এমন সময় পেত্নীটা বলে উঠল “ভয় পেয়েছেন” ?
চিৎকার গলাতেই আটকে গেল । এটা তো পেত্নী না । রাশিনের গলা ।
‘’না’’ ! কোন মতে বললাম ।
‘’ভয় পায় নি” ? কিন্তু নিজের আওয়াজটা নিজের কাছেই অদ্ভুদ শোনাল ।
রাশিন খিল খিল করে হেসে উঠল । ওর হাসির শব্দে রাতেই নিরবতা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল । আশ্চর্য এই গম্ভীর মেয়েটা কে এর আগে কোন দিন এভাবে হাসতে দেখিনি ।
“ভয় পান নি’’ ? কোন মতে হাসতে হাসতে বলল ।
“আসলে সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম’’ । এবার স্বীকার করেই ফেললাম । “এভাবে আপনাকে এখানে আশা করি নি । তার উপর আবার এতো রাতে” ।
রাশিন বলল “ঘুম আসছিল না । তাই এখানে এসেছি । রাতেই এই নিরবতা আমার অনেক ভাল লাগে । তাছাড়া আমার মনটা খানিকটা অস্থির” ।
“কেন অস্থির ?
“একটা গাধার জন্য অস্থির” ।
গাধা মানে ! নিজের কাছেই প্রশ্ন করলাম । গাধা মানে নিশ্চই কোন ছেলে । কোন ছেলের জন্য রাশিনের মন অস্থির । কেন জানি মনটা খারাপ হল । মনে হল ঐ গাধা যদি আমি হতাম ! যদি আমার জন্য ওর মনটা অস্থির হত !
‘অপু সাহেব ! রাশিন হঠাৎ বলল ।
“বলুন” ।
“আপনার কি মনে আছে আমি আপনাকে একটা কথা বলেছিলাম” ?
“কি কথা” ?
“বলেছিলাম না আমি কারো কাছে ঋণি থাকি না” !
“হুম বলেছিলেন” ।
“কিন্তু আমি কয়েকদিন থেকে একজনের কাছে ঋণি” ।
“কার কাছে” ?
রাশিন কিছুটা সময় নিল । তারপর বলল “আপনার কাছে” ।
আমি কথা হারিয়ে ফেললাম । তারমানে ওর মনে আছে ! আশ্চর্য ।
“আপনার মনে আছে” ?
“হুম আছে” ।
“আপনি বুঝতে পেরেছেন’’?
“অপু আমি এতোটা স্টুপিড না” !
“সো” ?
“সো হোয়াট” ?
“ঋণমুক্ত হবেন না” ?
রাশিন আবার হেসে ফেলল । বলল “আপনি কি চান আমি ঋণ মুক্ত হই” ?
আমি কিছু বলতে পারি না ।
ও হাসতে হাসতে বলল “ আপনি আমাকে যা দেয়েছেন ঐ টা তো দিতে পারছি না । টবে ঐ রকম ই এক টা জিনিস দিলে চলবে” ? আমি কি বলব সত্যি ই বুঝতে পারছিলাম না ।
রাশিন বলল “অপু আপনার প্রোপজ করার ধরনটা আমার ভাল লেগেছে । তবে আমি খুব রগচটা টাইপের মেয়ে । এই জন্য মানুষের সাথে আমার ঠিক বনে না ঠিকমত । আপনাকে কিন্তু অনেক কিছু সহ্য করতে হবে” ?
……………………
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৩৩
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×