somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পটা এমন হলে ভাল হত !!

২৪ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“এতোক্ষন অপেক্ষা করবা” ?
“করি ! আমার না যেতে ইচ্ছা করছে না । তুমি আসে পাশে আছো এটা ভাবতেই আমার খুব ভাল লাগছে” ।
কথাটা শুনেই শ্রাবণী চোখে পানি চলে আসে । ভাগ্য ভাল যে ফোনে কথা বলছে । তা না হলে অপু চোখের জল দেখে ফেলত ।
শ্রাবণী বলল “শোন প্রোগ্রাম কথন শেষ হয় ঠিক নাই । এতোক্ষন বসে থাকার কোন মানে নাই । তুমি চলে যাও” ।
“থাকি না ? আমার তো অসুবিধা হচ্ছে না” ।
“শোন যা বলছি কর । দেখতে চেয়েছিলে দেখেছ । এখন যাও” । কথাটা নিজের কাছেই খুব কঠিন শোনাল । শ্রাবণীর খারাপ লাগল । তারপর গলা একটু নরম করে বলল “বাসায় যাও প্লিজ । তুমি সারা রাত জার্নি করে এসেছ । তোমার বিশ্রামের দরকার আছে । আর তোমাকে এভাবে অপেক্ষা করতে দেখলে আমার খারাপ লাগবে । তুমি কি চাও আমার খারাপ লাগুক” ?
“না চাই না তো” ।
“তাহলে যাও সোনাপাখি । আমি কাল দেখা করবো” ।
“করবে তো” ?
“হুম করবো” ।
“আচ্ছা যাচ্ছি তাহলে । কাল দেখা করবা কিন্তু । আই লাভ ইউ” ।
“আই লাভ ইউ টু” ।
অপু ফোন কেটে দিল ।
ফোন রাখার পর শ্রাবণীর একটু খারাপই লাগছিল । বারবার অপুর ঐ অকুতিটা কানে বাজতে ছিল ।
থাকি না ? তুমি আসেপাশে আছো ভাবতেই ভাল লাগছে ।
কিন্তু খামোখা এতোটা সময় ওকে অপেক্ষা করানোর কি কোন মানে আছে ? এমনিতেও যথেষ্ট কষ্ট করে ও এসেছে । শ্রাবণী জানতোও না যে অপু আসবে । কয়দিন ধরেই ওদের অফিস প্রোগ্রামের কথা চলছিল ।
অপু যখন শুনলো বলল “তুমি কি বোরকা পরে যাবা” ?
“না” ।
“ না কেন” ?
“এমপি আসবে । বস বলেছে আমাকে দিয়ে এমপিকে ফুল দেওয়াবে” ।
“তার মানে সেজে গুজে যেতে বলছে” ।
“ হুম” । শ্রাবণী হাসে ।
অপু মন খারাপ করে বলল “তারমানে সবাই তোমাকে দেখবে আর আমি তোমাকে দেখতে পাবো না” ?
“না সোনাপাখি তুমি দেখতে পাবে না” ।
“না এটা হবে না । তুমি যাবে না” ।
অপুর কথা শুনে শ্রাবণী হেসে ফেলল । বলল “না গেলে আমার চাকরি থাকবে না বুঝছো” ?
যদিও চেহারা দেখা যাচ্ছে না তবুও শ্রাবণী খুব ভাল করে বুঝতে পারছে অপুর মন খারাপ হয়ে গেছে । অন্য কোন মানুষ ওর দিকে তাকাক এটা ও সহ্যই করতে পারে না । তার উপর সাজলে তো কথাই নাই ।
আজ সকালে যখন ও তৈরি হচ্ছিল আয়নায় নিজেকে দেখে ওর একটু মন খারাপই হল । অপু যদি ওকে এখন দেখতো কত খুশিই না হত ! বেচারা কত মত খারাপ করে । দুতিন মাস পর একবার আসে । একবার দেখা হয় তবুও তখন ও বোরকা পরে থাকে । বেচারা ঠিক মত দেখতেও পারে না ।
অবশ্য শ্রাবণীর কিছু করারও নাই । বোরকা ছাড়া বের হবার উপায়ও নাই । বাসায় হাজারটা কৈফত দিতে হয় । আজ একটা সুযোগ এসেছে কিন্তু অপু নেই ।
কাল রাতেও অপু ফোন দিয়ে সব কিছু জিঞ্জেস করছে । কখন প্রোগাম ! কখন পৌছাবা ! কার সাথে যাবা ইত্যাদি ইত্যাদি । তখন শ্রাবণীর মনে হয়েছিল অপু আসতে পারছে না এই জন্য এই সব কিছুর মাঝে একটু শান্তনা খুজতে চাচ্ছে ।
ও যখন প্রোগ্রামে পৌছেসে । বারান্দায় থেকে রুমে ঢুকতে যাবে তখন ফোন বেজে উঠল ।
অপুর ফোল । “বল” ।
“চলে এসেছ” ?
“হুম” ।
“বারান্দায়” ?
“হুম” ।
“রুমে ঢুকবে” ?
“হুম” । এই উত্তর দিয়ে শ্রাবণী একটু চমকালো । “মানে ? তুমি কোথায়” ?
অপু হাসল । বলল “পিছনে ঘুরো” ।
শ্রাবণী পিছনে ঘুরে তাকাল । অল্প কয়েক হাত দুরে অপু দাড়িয়ে আছে । মুখে একচিলতে হাসি । শ্রাবণী কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারল না । এই ছেলেটাকি পাগল নাকি !
শ্রাবণী হঠাৎ লক্ষ্য করল অদ্ভুদ এক ভাল লাগা ওর ছাড়া দেহ মনে ছড়িয়ে পড়েছে । ওকে দেখে কি যে ভাল লাগছে ! অনেক ক্ষন পর শ্রাবণী বলল “তুমি” ?
“কি করবো বল ? তুমি বোরকা ছাড়া বাইরে আসবে সবাই তোমাকে দেখবে তোমার হাসি দেখবে আর আমি তোমাকে দেখবো না তা তো হয় না , তা তো হবে না” ।
“তাই বলে এই টুকু দেখার জন্য তুমি এতো দুর থেকে এতো কষ্ট করে আসবে” ?
“টিয়াপাখি তোমাকে এক পলক দেখার জন্য আমি কি করতে পারি তুমি ভাবতেও পারবে না” ।
শ্রাবণী কিছু বলতে পারে না । কেবল এই পাগল ছেলেটার দিকে তাকিয় থাকল । শ্রাবণীর মনে হল এখন যদি অপুর সরাসরি কথা বলা যেত !
কিন্তু উপায় নেই । চারিপাশে সব পরিচিত লোকজনে ভর্তি । ওর সাথে সরাসরি কথা বলার কোন উপায়ই নাই । যে কেউ দেখে ফেলতে পারে । ফোনেই কথা বলতে হবে ।
অবশ্য অপুকে এতেই খুশি মনে হচ্ছে । ও কি মুগ্ধ চোখেই না তাকিয়ে আছে ।
মাঝে মাঝে শ্রাবণীর মনে হয় ও তো এতোটা সুন্দর না কিন্তু তবুও অপু ওকে এভাবে কেন দেখে ! অপুর চাহনী দেখলে বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা কাঁপুনীর সৃষ্টি হয় ! কি দেখে ও অমন করে !!
“কি দেখছো ওমন করে ? আমার লজ্জা লাগছে” । শ্রাবণীর সত্যি সত্যি লজ্জা লাগছিল ।
“তোমাকে দেখছি । মনে হচ্ছে স্বর্গের কোন দেবী পৃথিবীতে নেমে এসেছে” ।
শ্রাবণীর গালটা যেন আরো একটু লাল হয়ে উঠল । বলল “আচ্ছা ঠিক আছে অনেক দেখেছ এখন যাও । আমার প্রোগ্রাম এখনই আরাম্ভ হয়ে যাবে । তুমি বাসায় যাও । বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নাও গিয়ে” ।
“আর একটু থাকো না । তোমাকে আর একটু দেখি” ।
কিন্তু আর থাকা সম্ভব হল না । শ্রাবণীর এক কলিক এসে ওকে নিয়ে গেল । যাওয়ার পথে বারবার ও ফিরে তাকাচ্ছিল । অপু ওখানেই দাড়িয়ে আছে । এক ভাবে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ।
শ্রাবণী ফোন করে আবার ওকে । “অপু তুমি বাসায় যাও আমায় অনেক দেরি হবে” ।
“হোক । আমি অপেক্ষা করি । এতোক্ষন অপেক্ষা করবা” ?
“করি । তুমি আসেপাশে আছো এটা ভাবতেই আমার ভাল লাগছে” ।
প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেল । শ্রাবণী বেশ ক্লান্ত হয়ে বের হল অফিস থেকে । এখন একটু ফোন দেওয়া যাক অপু কে ।
“প্রোগ্রাম শেষ” ?
“হুম” ।
“খুব ক্লান্ত” ?
“হুম” ।
“ আমিও খানিকটা । আমিতো ভেবেছিলাম তোমার প্রোগ্রাম হয়তো আর শেষই হবে না । আর হয়তো দেখাও হবে না” ।
“মানে ? তুমি যাও নি” ?
অবাক বিশ্ময়ে শ্রাবণী অপুকে দেখল । ঠিক ওর সামনেই দাড়িয়ে আছে ।
“তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? সেই সকাল থেকে তুমি এখানে আমার জন্য দাড়িয়ে আছে” ?
অপু বোকার মত হাসল ।
“কি করবো তোমাকে আরো একবার দেখতে ইচ্ছা করল যে” ।
“তোমাকে না থাপড়ানো দরকার । একবার না দেখলে তখন । এভাবে চার পাঁচ ঘন্টা এখানে বসে থাকার কোন মানে আছে” ? শ্রাবণী খুব রাগ করতে চাইল অপুর উপর । কিন্তু পারল না । এরকম একটা পাগলের উপর কি রাগ করা যায় ?
শ্রাবণী লক্ষ্য করল ওর চোখ দুটো সিক্ত হয়ে উঠেছে । যেকোন সময় জল গড়িয়ে পড়বে ।
ও আবার বলল “বল!! সকালবেলাই না দেখলে ? আবার দেখার কি আছে । এতোক্ষন অপেক্ষা করার কি কোন মানে আছে” ?
অপু আবার হাসল । বলল “তোমাকে বলিনি টিয়াপাখি যে তোমাকে একটা বার দেখার জন্য আমি কি যে করতে পারি তা তুমি ভাবতেও পারবে না । এইটুকু অপেক্ষা তো কোন ব্যপারই না” ।
অপু একভাবে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে । সেই মুগ্ধ চোখে ।
টুপ করে শ্রাবণীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল ।
ও আর আটকানোর চেষ্টা করল না ।
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×