somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি বৃষ্টি দেখেছি

১১ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নীলুর বৃষ্টি অনেক পছন্দ ছিল । বৃষ্টি হলে আর কোন কথা নাই । ওর মাথায় কি এক অদ্ভূদ চিন্তা ছিল যে বৃষ্টি হলে ওকে ভিজতেই হবে । কোন সময় জ্ঞান নাই । বৃষ্টি মানে ভিজতেই হবে ।
ইনফ্যাক্ট ওকে আমি প্রথম লক্ষ্য করি এই বৃষ্টিতে ভেজা নিয়েই । একদিন ক্লাস করছিলাম । ও আমার পরেই বসে ছিলাম । হঠাৎ আমার নাম ধরে ডাকল ।
-এই অপু ? এই ?
এমনি চিনতাম ওকে । কিন্তু এর আগে কখনও কথা হয়নি ওর সাথে ।
-এই শোন না !
আমি একটু অবাক হলাম । একটু বিরক্তও । কোন দিন কথা বলি নি । প্রথম কথাতেই তুই ।
-কি ?
-আমার বই আর খাতাটা একটু রাখতো !
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীলু বের হয়ে গেল । আমি সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না ! বাইরে ততক্ষনে ঝুম বৃষ্টি আরাম্ভ হয়েছে । একটু পর লক্ষ্য করলাম নীলু বাচ্চা কয়টা ছেলে মেয়েদের সাথে বৃষ্টির ভিজছে । বলতে গেলে নাচা নাচি করছে ।
এতো বড় একটা ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে যে এমন করে বৃষ্টিতে ভিজতে পারে আমার ধারনার বাইরে ছিল ।

উহু ! নিজের মনকে আবারও একটা ধমক দিলাম । আমি আবারও নীলুর কথা ভাবতে শুরু করেছি । সকালবেলাই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে ওর কথা আর ভাববো না । কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই ওর কথা আবার ভাবতে শুরু করেছি । আসলে সব দোষ এই হতচ্ছাড়া বৃষ্টিটার । সেই দুপুর বেলা থেকে একভাবে ঝড়েই যাচ্ছে ।
আর আমার কেবল মনে হতে লাগল ঐ বৃষ্টিটা আমাকে মুখ ভেঙ্গিয়ে বলছে আমি তোমার খুব প্রিয় একজনের খুব প্রিয় ছিলাম ।
আমি চোখ ফিরিয়ে নেই । ঘরের সব জানালা বন্ধ করে দেই । আমি বৃষ্টি দেখবো না । ফুল ভলিউমে টিভি ছেড়ে দেই । বৃষ্টির শব্দও আমি শুনতে চাই না । আমি এমন কিছু করতে চাই না যা আমাকে নীলুকে মনে করিয়ে দেয় । আমি ওকে মনে করতে চাই না ।
কেন মনে করবো ওকে ? যে আমাকে একা রেখে চলে গেছে তার কথা আমি কেন মনে করবো ? আমি মনে করবো না । সোফার উপর বসতে ইচ্ছা হয় না । সবুজ কার্পেটার উপর শুয়ে পড়ি ।
নীলু খুব শখ করে এই কার্পেটটা কিনেছিল । নষ্ট হয়ে যাবে বলে বসার ঘরে এটা বিছায় নি । সোবার ঘরটাতে বিছিয়েছিল । প্রথম যেদিন কার্পেটটা পাড়ে নীলুর আনন্দ দেখে কে !!
বাচ্চা মেয়ে দের মত খুশিতে ওর চোখমুখ আনন্দে ভরে ছিল । আমার হাত চেপে ধরে বলল
-দেখো না কি সুন্দর লাগছে ! মনে হচ্ছে সবুজ একটা মাঠে চলে এসেছি ।
আমি এখন ভাবছি অন্য কথা । আমি তখন আসসোস করছি এতোগুলো টাকা বেড়িয়ে গেল বলে ! অবশ্য আফসোসের খুব বেশি কারন ছিল না । আমার নিজের টাকা না বাপের টাকা । তবুও নতুন সংসারে এখনও কতকিছু কেনা বাকি ! আগে ব্যাচেলার ছিলাম তাই কোন ব্যাপার ছিল না ।
-কই বল না কেমন ?
-ভাল কিন্তু একটু বেশি বিলাশিতা হয়ে গেল না ?
নীলু মুখ একটু মলিন হল ।

আরে দুর ! যত চাচ্ছি ওকে ভাববো না তত ওর ভাবনা চলে আসছে । আমি সবুজ কার্পেট থেকে বিছানায় উঠে এলাম । ওর কথা কিছুতেই ভাববো না । আমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি । ঘুমালে হয়তো ওর ভাবনা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবো ।

-কি করছ ?
নীলুর কণ্ঠ । কিন্তু ওর কন্ঠ কিভাবে আসবে ? নিশ্চই আমার কল্পনা ।
-কিছু করছি না ।
নীলুর হাসির শব্দ শুনতে পেলাম ।
-সত্যি কিছু করছো না ?
-না । তোমার সাথে কোন কথা নাই । তুমি চলে যাও ।
-বাব্ব বাহ আমার উপর রাগ করছ ?
-হুম । রাগ করেছি ।
নীলু আবার হেসে উঠল ।
-হাসছো কেন ?
হাসি মিশ্রিত কণ্ঠ নীলু বলল
-তুমি আমার উপর রাগ করতেই পারবে না । সেই ক্ষমতা তোমার নেই ।
কোন জুটসই জবাব না পেয়ে বলল
-তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেল ?
-কই গেলাম ? এই তো আমি তোমার কাছে । তোমার সাথে কথা বলছি ।
-না তুমি বলছ না । তুমি আমার কল্পনা ।
-আচ্ছ ? তাই ?
নীলু আবার হেসে উঠল । বলল
-আচ্ছা তুমি যা বল তাই । এখন চল বাইরে খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে । চল না একটু ভিজি ! চল না !
বৃষ্টির কথা উঠতেই আমি ভিজতে গেলাম । কিন্তু নীলুকে কোথাও দেখতে পেলাম । নাম ধরে ডাক দিলাম । কিন্তু ও কোন জবাব দিল না ।
ওর নাম নিতে নিতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল । পুরো ঘর কেমন অন্ধকারে ছেয়ে আছে । টিভি চলছিল । এখন বন্ধ । বাইরে এখনও বৃষ্টি পড়ছে তুমুল বেগে । আওয়াজ আসছে । কারেন্ট চলে গেছে বোধহয় ।
বাধ্য হয়েই জানালা খুলে দিলাম । বাইরে এখনও বৃষ্টি পড়ছে ।
আমার নীলুর পছন্দের বৃষ্টি !

ঐ দিন পর নীলু পরপর দুদিন ক্লাসে আসল না । তৃতীয় দিন একটা টিউটিরিয়াল ছিল । ঐ দিন নীলুকে আবার দেখলাম । কিন্তু চেহারার একি অবস্থা ? ও কাছে এসে ওর খাতা পত্র চাইল । দিতে গিয়ে বললাম
- চেহারার একি অবস্থা ? শরীর খারাপ নাকি ?
নীলু শুকনো মুখে বলল
-একটু জ্বর ।
বই গুলো নিয়ে ও ঘুরতে যাবে ঠিক এমন সময় ও কেমন জানি দুলে উঠল । আমি না ধরলে হয়তো মাথা ঘুরে পরে যেত । ওর গায়ে তখন আকাশ পাতাল জ্বর ।
-একি তোমার গায়ে তো খুব জ্বর !
নীলু আবার শুকনো মুখে বলল
-একটু জ্বর । আমাকে একটু বেঞ্চে বসিয়ে দিবে প্লিজ ।
-তোমার গায়ে খুব জ্বর । এখন বসতে হবে না । ডাক্তারের কাছে চল আগে ।
-এখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে । আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে না । তুমি পরীক্ষা দাও ।
-আরে এরকম টিউটিরিয়াল আরো হাজারটা আসবে । আগে ডাক্তারের কাছে চল ।

ওকে একপ্রকার জোর করেই ক্যাম্পাসের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম । টিউটিরিয়াল দেওয়া হল না । ডাক্তারের কাছ থেকে যখন বের হয়েছি এখন ওর অবস্থা আরো খারাপ । কেমন যেন লাগছিল । ওকে এই অবস্থা ছেড়ে আসতে কেন জানি মনে চাচ্ছিল না । ও বলল
-আমাকে একটু হলে রেখে আসবে ?
-হুম । কোন হলে থাকো ?
ও হলের নাম বলল ।
-তোমার রুম মেইট আছে এখন রুমে ?
নীলু একটু হাসল ।
-আছে । অন্তত ১০০ আছে ।
-মানে কি ?
-আমি গন রুমে থাকি ।
-ও মাই গড ! এ অবস্থায় তো তোমাকে গনরুমে রাখা যাবে না । ঢাকায় কোন আত্মীয় আছে তোমার ?
-নাহ ।
-তাহলে ?
-তাহলে কিছু না । আমাকে হলেই রেখে আসো ।
-না । তুমি আমার সাথে চল ।
-কোথায় ?
-আমার বাসায় চল ।
নীলু আমার দিকে তাকাল । কি যেন ভাবল ? তারপর বলল
-তোমার বাসায় সমস্যায় হবে না ? মানে আমি একটা মেয়ে !
-কোন সমস্যা নাই । আমি ফ্লাট ভাড়া করে থাকি ।
ও আর কথা বলল না । অবশ্য ওর সে অবস্থা ছিলও না । নীলুকে বাসায় নিয়ে আসলাম ।
মোটামুটি পাঁচ দিন ওর অবস্থা বেশ খারাপ ছিল । একবার ভাবলাম হাসপাতালে নিয়ে যাই । আবারও ডাক্তার ডেকে আনলাম । পাঁচদিন পর ওর জ্বর ছেড়ে গেল ।
ঐ দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি নীলু রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছে । আমি অবাক হয়ে বললাম
-কি করছ তুমি ?
নীলু খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-রুটি বানাচ্ছি । দেখছ না ?
-দেখতে তো পাচ্ছি । কিন্তু কেন করছ ?
-আশ্চর্য মানুষ রুটি কেন বানায় ? খাওয়ার জন্য !
-আরে বাবা তুমি কেন করছ ? তোমার শরীর খারাপ । তোমার বিশ্রাম নেওয়ার দরকার । আর কাজ করার জন্য বুয়া তো আছে । একটু পরই চলে আসবে ।
নীলু হাসল ।
-অনেক বিশ্রাম করেছি । আর কত ? তাছাড়া জ্বর নেই ।
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে ওর কপালে হাত দিলাম জ্বর দেখার জন্য । আসলেই জ্বর নেই ।
ওর কপাল থেকে হাত সরিয়ে নেবার সময় ওর চোখে চোখ পড়ল । ঠিক তখনই আমার মনের মধ্যে কেমন জানি একটা অস্বস্তি হল ।
আমি কিভাবে এতো সহজে ওর গায়ে হাত দিয়ে ফেল্লাম ? এই পাঁচ দিনে তো কতবার ওর জ্বর মেপেছি, একবারও এই অস্বস্তিটাতো আসে নি ! তাহলে এমন কেন অস্বস্তি লাগছিল ?
আমার জানা নেই । ওকে ওভাবে রুটি বানানো অবস্থায় দেখে আমার মনে আরো অদ্ভুদ একটা অনুভূতি হল ।
নাস্তা খাওয়ার সময় অনেক কথা হল ওর সাথে । বলা চলে ওখান থেকে আমাদের মেলামেশা শুরু হল । তারপর থেকে ওর সাথে অনেক সময় কাটাতে লাগলাম । আমরা সবকিছু শেয়ার করতাম ।


বৃষ্টির বেগ মনে হচ্ছে বেড়েছে । এরকম বৃষ্টি হলে তো কথাই নাই । ওকে কিছুতেই ধরে রাখার উপায় ছিল না । বৃষ্টিতে ও ভিজবেই । আমি জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেই । বৃষ্টির ফোটা আমার হাতে পড়তে লাগল ।
-এভাবে ভিজলে কি হয় ?
নীলুর কথা যেন আবার শুনতে পেলাম ।
-কিভাবে ভিজবো ?
-তুমি মনে হচ্ছে জানো না ? মনে নেই এই ছাদটাতে আমরা একবার বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম !

আমার এই বাসাটা একে বারে ফ্লাট বললে ভুল হবে । তিন ইউনিটের বাড়িতে বাড়িওয়ালা কেবল এক ইউনিট কোন রকম করে ফেলে রেখেছে । পুরো ছাদটাই বলতে গেলে ফাকা পরে আছে । নীলুর এই ফাকা ছাদটাও অনেক পছন্দ ছিল । ও প্রায়ই আসতো ।
বাচ্চা মেয়েদের মত ছাদে উপর লাফালাফি করতো । একা একা এক্কা দোক্কা খেলতো । আমি হাসতাম কেবল ।
ঐ দিন সকালবেলা আমার বাসায় এসে হাজির । কাঁদে ছোট একটা ব্যাগ । আমি জিজ্ঞেস করলাম
-ব্যাগে কি ?
ও বলল
-শাড়ি । আজ খুব বৃষ্টি হবে । শাড়ি পরে বৃষ্টিতে ভিজবো আজ ।
কেমন যেন একটু অন্য রকম লাগছিল ওকে । বুয়া আসলেও ওকে বিদায় করে দিল । দুপুরের রান্না ও নিজেই করল । দুপুরের দিকেই বৃষ্টি আরাম্ভ হল । আমি জানালার পাশে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি এমন সময় নীলু এসে হাজির । ওকে দেখে একটু অবাক হলাম । এর আগে কখনও ওকে শাড়িতে দেখি নি ।
কালো ব্লাউজের সাথে কালো শাড়ি আর কপালে কালো বড় একটা টিপ । আমি খানিকটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম এক ভাবেই । নীলু একটা কালো পাঞ্জাবী আমার দিকে এগিয়ে বলল
-নাও এটা পর ।
-কার এটা ?
-তোমার জন্য কিনেছি । নাও জলদি পরো এখন । আজ তোমার সাথে আমি বৃষ্টিতে ভিজবো ।
কালো পাঞ্জাবী পরে বৃষ্টি নেমে পড়লাম । বৃষ্টির ফোটা গুলো কেমন সিরসরে অনুভূতি জাগাচ্ছিল মনে । কালো শাড়ি পরা নীলু আমার আগে আগে হাটছিল । একটা সময় আমার কাছে এসে আমার হাতটা ধরল । আমার দিকে তাকাল গভীর ভাবে ! নীলুর ঐ গভীর দৃষ্টিতে কি ছিল জানি না আমার পুরো পৃথিবীটা যেন এলো মেলো হয়ে গেল ।
সেদিন ঠিক কি করেছিলাম আমার আজও ঠিক মনে পড়ে না । কি এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম ।
কেবল এই টুকু মনে আছে ওকে খুব গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরেছিলাম । আর পাগলের চুম খেয়েছিল ওকে ! বৃষ্টির জলে যেন দুজন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলাম ।

-কি হল ভিজবে না বৃষ্টিতে ?
-না ভিজবো না ।
-কেন ? চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !
-তুমি ভিজো ।
-তুমি না ভিজলে আমি কিভাবে ভিজি ?
-সেদিন কিভাবে ভিজেছিলে ?
হঠাৎ আমার কন্ঠস্বর তীব্র হয়ে ওঠে ।
-কেন সেদিন ভিজেছিলে ?
আমি আবার জানতে চাই চিৎকার করে ।
কোন জবাব আসে না ।

নীলুকে তার কিছুদিন পরেই বিয়ে করে ফেলি । ওকে আর কিছু ভাল লাগতো না তখন । একটা পলক না দেখলে কেমন জানি অস্থির লাগতো । বিয়ের পর আমাদের জীবনটা আরো সুন্দর হয়ে ওঠে । দুজন দুজনকে একটা পলকের জন্য চোখের আড়াল করতাম না ।
একসাথে ভার্সিটি যেতাম একসাথে আসতাম । একসাথে খেতাম , একই প্লেটে খেতাম , গোসল করতাম একসাথে বিকেল হলে ওর সাথে ছাদে ছোটা ছুটি করতাম ।
ওর ছেলেমানুষী যেন আরো বেড়ে গেল । আগে বৃষ্টি হলেতো কেবল ও একা ভেজার জন্য লাফাতো তখন আমাকেও ভিজতে হত ওর সাথে ।
বৃষ্টির প্রতি এমন পাগলামো দেখে মাঝে মাঝে বিরক্ত হতাম । বিরক্ত হওয়ার প্রধান কারন টা হল প্রত্যেকবার বৃষ্টি ভেজার পরই ওর জ্বর আসতো । মাঝে মাঝে তো জ্বর গায়ে নিয়েও বৃষ্টিতে নেমে পড়ত । তখন খুব চিৎকার চেচামেচি করতাম । কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হত না ।
ঐ দিন ঠিক একই কাজটা করেছিল । নীলুর গায়ে আগে থেকেই দুদিনের জ্বর ছিল । রাত তখন বারটা কি সাড়ে বারটা হবে । সারাদিন ক্লাস নিয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলাম । বিকেল বেলা আবার নীলুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ছিলাম । ডাক্তার বৃষ্টিতে ভিজতে সাফ মানা করে দিয়েছে ।
তবুও নীলু আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলল
-এই বাইরে না খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে । চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !
ওকে ধমক দিলাম । ডাক্তার কি বলেছে মনে করিয়ে দিলাম । চুপচাপ ঘুমাতে বলে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লাম ।
সকাল বেলা বাথরুমে ভেজা কাপড় দেখে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । তারমানে রাতের বেলা ও আমাকে না জানিয়েই বৃষ্টিতে ভিজেছে । মেজাজটা খারাপ হল ।
নীলুকে বকার জন্য শোবার ঘরে গিয়ে দেখি নীলু প্রায় অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পরে আছে । ওর গায়ে আকাশ পাতাল জ্বর ।
কি করবো কিছুই বুজতে পারছিলাম না । জ্বল পট্টি দিয়েও কাজ হচ্ছিল না ।
জ্বর কমছিল না কিছুতেই । উপায় না দেখে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম । স্ট্রাচারে যখন ওকে আইসিইউতে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন অল্প ক্ষনের জন্য ওর হুস ফিরেছিল । আমি তখন ওর হাত ধরা । ও ফিসফিস করে বলল
-আমার উপর রাগ রেখো না কেমন ! তোমার কথা শুনিনি বলে আমার উপর রাগ রেখো না ।
-তোমার উপর কখনও রাগ করেছি আমি বল ?
-তুমি ভাল থেকো ।
আমি আর কথা বলতে পারলাম না । নার্সরা ওকে আইসিইউ এর মধ্যে নিয়ে গেল । আমি শেষ বারের মত ওর চোখে জল দেখতে পেলাম ।

- কই চল । বৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে তো ?
-আমি ভিজবো না ।
-প্লিজ চল না !
আমি চুপ করে থাকি । কেন জানি আমার কান্না আসে !
-কই চুপ করে আছো কেন ? চল ! ঐ কালো পাঞ্জাবীটা পরো । কাবাডের বাম পাশের ড্রায়ারে আছে ।
ওকে কথা দিয়েছিলাম ওর উপর রাগ করে থাকতে পারি না । ও ভাল থাকতে বলেছিল কিন্তু আমি ভালও থাকতে পারছি না ওকে ছাড়া ।
আমি কালো পাঞ্জাবীটা পরে নিই । বৃষ্টির ফোটা আমার মনে আজও কেমন একটা শিহরন জাগায় ! যেন ও এখনও আমার পাশে বৃষ্টিতে ভিজছে । ওর খুব পছন্দের বৃষ্টি ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:০৫
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×