somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষন্ন বিকেলের মেয়ে !!

১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খাদটা বেশ গভীর । তবে একদম খাড়া না ।
পৃথিশা এক দৃষ্টিতে খাদতার দিকে তাকিয়ে আছে । মাঝে মাঝে ও এমনটা করে । গভীর এই খাদগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে । নিচে কি যেন খোজে ! কি খোজে তা ও নিজেই জানে না !

-আপনি কি লাফ দেওয়ার কথা ভাবছেন ?
পৃথিশা বেশ চমকালো ।
খাদের এই দিকটা সাধারনত কেউ আসে । পৃথিশা একা একাই ঘুড়ে বেড়ায় । আজও একা একা ঘুড়ছিল । তারপর এই খাদটার কাছে এসে তাকিয়ে ছিল নিচে ।
এমন সময় লোকটা এসে কথাটা বলল ।
পৃথিশা একটু ভয়ও পেল । কে এই লোকটা ? আগে তো কখনও দেখি নি ।
লোকটা না বলে ছেলেটা বলতে ভাল হয় । পঁচিশ তিরিশের বেশি বয়স হবে বলে মনে হয় না । ছেলেটা আবার বলল

-আপনি কি নিচে লাফিয়ে পড়ার কথা চিন্তা করছেন ?

পৃথিশা সত্যিই নিচে লাফিয়ে পড়ার কথা চিন্তা করছিল । অবশ্য প্রতিদিনই করে । কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে । তবে ওর বিশ্বাস একদিন ও আর সিদ্ধান্তটা বদলাবে না । ঠিকই লাফিয়ে পড়বে নিচে ।

-আপনার কেন মনে হল যে আমি নিচে লাফিয়ে পড়বো ?

ছেলেটা হাসল ।ছেলেটার হাসি সুন্দর । কিন্তু চোখ দুটো বড় তীক্ষ । এই চোখের সামনে মিথ্যা বলাটা বেশ কষ্টের ।

-না এমনি বললাম আর কি ! আপনি যেভাবে নিচে তাকিয়ে ছিলেন তাতে যে কারো এই কথাই মনে হবে ।

পৃথিশা এবার একটু বিরক্ত হল । কিন্তু কিছু বলল না । ছেলেটা আবার বলল

-তবে একটা কথা । এখান থেকে লাফ দিলে মরার সম্ভাবনা কিন্তু অনেক কম ।

পৃথিশা এবারও কোন কথা না বলে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকলো । খানিকটা বোঝার চেষ্টা করল যে ছেলেটা কি ওর সাথে ফান করছে কিনা !

-দেখুন যদি আপনি এখান থেকে লাফিয়ে পড়েন তাহলে কিন্তু গড়িয়ে পড়বেন । কারন খাদ টা কিন্তু খুব বেশি খাড়া না । ঢালু । বড় জোড় আপনার হাত পা ভাঙ্গতে পারে ।

পৃথিশা নিজেও জানে এটা । ছেলেটা সত্যি কথাই বলছে । খাদ টা অতটা খাড়া না ।

-তবে আপনি চাইলে আমি একটা খাড়া আর গভীর খাদের সন্ধান দিতে পারি । যেখান থেকে লাফ দিলে একেবারে সোজাসুজি উপরে যাবেন । দিবো সন্ধান ?

পৃথিশার এবার মনে হল যে ছেলেটা ফান করছে ।

-আপনি কি আমার সাথে ফান করছেন ?

-আশ্চর্য আমি ফান করবো কেন ? আমি তো আপনার উপকার করছি ।

-আমি কি বলেছি উপকার করতে ? আমার চাই না আপনার উপকার ।

ছেলেটা হাসল । বলল

-পৃথিশা, জীবনের সব কিছু কি আপনার চাওয়ার মত হবে ? আপনি যা চান তাই যদি হত তাহলে আপনার জীবনটা এমন হত ? তাহলে কি আপনি এভাবে জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াতেন ?

পৃথিশা ছোটখাটো ধাক্কার মত খেল । এই দুই লাইনই বলে দিচ্ছে ছেলেটা ওকে চেনে । ওর সম্মন্ধে জানে । এমন কি ওর নাম টাও জানে । কিন্তু পৃথিশা তো ছেলেটাকে চিনতে পারছে না ।

-আপনি আমার নাম কিভাবে জানেন ?

ছেলেটা হাসল । বলল

-ঐ সামনে একটা গাছের গুড়ির আছে । আসুন ওখানে বসে কথা বলি । আর ভয় নেই আমি আপনার উপকার করতে এসেছি ক্ষতি করতে না ।

সত্যি সামনে একটা গাছের গুড়ির মত আছে । পৃথিশা ওখানটাতে গিয়ে বসল । ছেলেটা ওর পিছন পিছন গিয়ে বসল ।

-এবার বলুন আমার নাম কিভাবে জানেন ?

ছেলেটা বলল

-অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের জবাবের চেয়ে কিছু প্রয়োজনীয় কথা শুনুন ।

-যেমন ?

-আচ্ছা আপনি যে প্রায়ই এখানে আসেন, সুইসাইড করার জন্য, কেন আসেন ?

-আপনি যখন প্রশ্নটা জানেন আমার মনে হয় উত্তরটাও আপনার জানা ।

-হুম জানি । তবুও আপনার মুখে শুনতে চাই । একজন মানুষের জন্য কি আপনার আশেপাশের মানুষ গুলোকে কষ্ট দেওয়া কি ঠিক ? আপনি যদি এখান লাফ মারেন তাহলে তাদের কি হবে একবার ভেবেছেন ? আপনার বাবার কি হবে ?

বাবার কথা উঠতেই পৃথিশার মুখটা কেমন যেন বদলে উঠলো । বিষন্নতার ভাব থেকে সেখানে কেমন একটা রাগ ফুটে উঠল ।

-আপনি কি জানেন বা জানেন আমি জানি না কিন্তু আমার এই অবস্থার জন্য আমার বাবাই দায়ী । কেবল উনি দায়ী ।

পৃথিশার খুব রাগ উঠে যায় । ও আবার বলল

-আপনার সাথে যথেষ্ট কথা হয়ে । আমি এখন উঠবো । আপনার সাথে কথা বলতে আর ভাল লাগছে না ।

-আরে আরে রাগছেন কেন ? আপনার রাগ হয় এমন কোন কিছুতো আমি করছি না । আমি কেবল আপনার সাথে কথা বলছি । আপনি আপনার কথা গুলো শেয়ার করুন দেখবেন ভাল লাগবে । সত্যি ভাল লাগবে । এমনও হতে পারে আপনার সব কষ্ট গুলো আজ শেষ হয়ে যেতে পারে । যদি আপনি চান !

পৃথিশা ঠিক বুঝতে পারল না ছেলেটা কি বলতে চাইছে । তবে উঠল না । ছেলেটা বলল

-মৃত্যু খুব সহজ একটা সমাধান । সব কিছু থেকে পালিয়ে যাওয়া । কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন যারা আপনাকে ভালবাসে তাদের কি হবে ? আপনার এই চলে যাওয়া তারা কিভাবে নিবে । আপনার বাবা কিভাবে নিবে ?

পৃথিশা বলল

-আপনি আমার বাবাকে কিভাবে চিনেন ?

ছেলেটা আবার হাসল । বলল

-আমি অনেক কিছু জানি ।

-ওয়েল, তাহলে নিশ্চই এটাও জানেন যে আজ আমার এই অবস্থার জন্য আমার বাবা দায়ী ।

-কথাটা ঠিক বললেন না আপনি ।

-ঠিক বলি নি ?

পৃথিশা কেন যেন রেগে ওঠে ।

-আপনি আমার থেকে বেশি জানেন ? বাবা যদি জোর করে ঐ জানোয়ারটার সাথে আমার বিয়ে না দিত তাহলে আজ এমনটা কোন দিন হত না ।

ছেলেটা বলল

-আপনার কি মনে হয় যে প্রিতমের সাথে আপনার বিয়ে হলে আপনি খুব সুখি হতেন ? মিস পৃথিশা সুখ বড় দুর্লভ জিনিস । সবাই তার পিছনে দৌড়ায় কিন্তু নাগাল পায় না ।

পৃথিশা কোন কথা বলল না । আরো একবার অবাক হল । ষেলেটা প্রিতমের কথাও জানে ! কিন্তু কিভাবে ? বাবার পরিচিত কেউ ? এতো কিছু কিভাবে জানে ?
ছেলেটার কথা ভুল বলা যাচ্ছে না । আসলেই ওর কপালে বোধহয় সুখ নামক জিনিসটা নেই । ছেলেটা হঠাত্‍ বলল

-প্রিতম কিন্তু করতো না যখন আপনার বিয়ে হয় । কেবল কবিতা লিখতো । এমন একটা ভ্যাগাবন্ডের সাথে কোন বাবাই তার মেয়ে বিয়ে দেবে না । আপনি আপনার বাবার জায়গায় হলে ঠিক একই কাজটা করতেন ।

-তাইতো একটা জানোয়ারের হাতে আমাকে তুলে দিয়েছিল । কোর্ট টাই পরা জানোয়ার ।

-মানুষের বাইরে থেকে কি ভেতরের দিকটা বোঝা যায় ? মোমেন সব দিক দিয়ে আপনার যোগ্য ছিল । শিক্ষিত । ভাল জব । ভাল স্যালারী । ভাল বাড়ি । এমন ছেলে কে হাত ছাড়া করবে বলুন ?

ছেলেটা কিছুক্ষন চুপ করে থাকল । এবার পৃথিশা আর অবাক হল না । প্রিতমের কথা যখন জানে মোমেনের কথাও জানবে, এমন ধারনা ও করেছিল । ছেলেটা বলল

-কিন্তু মোমেন যে এমন করবে সেটা আপনার বাবা বুঝতে পারেন নি । পারলে কখনই সে এমন কাজ কখনই করতো না । আপনি কি জানা আপনার বাবা কি আপনার এই অবস্থার জন্য সব সময় নিজেকে দোষারোপ করেন ! কি পরিমান কষ্ট তিনি পান নিজে নিজে !

পৃথিশা এবারও কোন কথা বলল না । ভাবতে লাগল এই ছেলেটা এতো কিছু জানে কিভাবে ?

-পৃথিশা বাবা মা ছেলেমেয়েদের সব ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেন নির্দ্বিধায় । আপনার কি উচিত্‍ না আপনার বাবার এই সামান্য ভুল টুকা ক্ষমা করে দেওয়া । আপনি তাকে এমন একটা ভুলের জন্য তার উপর রেগে আছেন যেটা সে ইচ্ছা করে নি । যার জন্য তাকে কিছুতেই দোষারোপ করা যাবে না ।

পৃথিশা ছেলেটার দিকে তাকিয়েই থাকল । ছেলেটার প্রতিটা কথাই ঠিক । কি চমৎ‍কার যুক্তি দিয়ে ওকে বুঝিয়ে দিল যে ও যা করছে ঠিক করছে না ।

-চলুন যাওয়া যাক । সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে ।

বাড়ির কাছাকাছি আসতে ছেলেটা বলল

-আমার কথা গুলো আজ একটু ভেবে দেখবেন । যদি মনে হয় আমি ভুল বলেছি তাহলে কালকে আমি ঐ খাড়া খাঁদ টার কাছে আমি আপনাকে নিয়ে যাবো । যদি চান পেছন থেকে ধাক্কাও দিতে পারি ।

ছেলেটা হাসল ।

-আজ যাই ?

এমন ভাবে যাই বলল যেন অনুমুতি না দিলে যাবে না ।

-আপনার নামটা বললেন না !

ছেলেটা আবার হাসল । ছেলেটার হাসি আসলেই সুন্দর ।

কাল তো দেখা হচ্ছে ! কাল না হয় বলি ।

এই বলে ছেলেটা পেছন ঘুরে হাটা দিল । পৃথিশা চুপচাপ ছেলেটার চলে যাওয়া টা দেখলো ।

(হয়তো চলবে)


এখানে আছে গল্পটা
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×