somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জয়িতা যে কারনে আবার এসেছিল

০৩ রা মে, ২০১২ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম খন্ড


তারপর থেকে জয়িতা যেন কেমন বদলে গিয়েছিল । আমার দিকে যখন তাকাত কেমন যেন একটা বিষন্নতা ওর চেহারায় ফুটে ওঠত । মনে হত ওর কাছ থেকে কি যেন একটা হারিয়ে যাচ্ছে । আর ও সেই জিনিসটাকে ধরে রাখার জন্য কিছুই করতে পারছে না । আমি কত কথা বলতাম । ও কিছু বলত না । আমি আর থাকতে পেরে ওকে বললাম
-তুই এমন কেন করছিস ?
-কেমন করছি ?
-এমন মন খারাপ করে কেন থাকিস ?
জয়িতা কোন জবাব দিল না । আমি বললাম
-আমি তোকেই বিয়ে করবো ! কে রাজি হোক বা না হোক ! তুই বুজলি আমার কথা ?
জয়িতা হাসল । বিষন্নতার হাসি !
-আবীর ! আমি তোকে বিয়ে করবো না । তুই কি জানিস মানুষের জীবনে মা বাবা কতটা ইম্পর্টেন্ট ! তাদের কাছে থাকাটা কত বেশি জরুরী ! অনেক বেশি জরুরী ।
-কিন্তু ..
-কোন কিন্তু না । তোর মা তোকে ২৪ বছর ধরে ভালবাসে । বুকের একটু একটু ভালবাসা দিয়ে তোকে বড় করেছে । আমার ২৪ মাসের ভালবাসা ঐ ২৪ বছরের ভালবাসার কাছে কিছুই না । তোর মাকে কিছুতেই কষ্ট দিস না । আমি হলে দিতাম না । তোরও দেওয়া উচিৎ না ।
তারপর থেকে জয়িতা আমার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিল । আমি যোগাযোগ করতে চাইলেও ও করতো না ।

আবার বললাম
-তোমার মেয়েটা এতো মিষ্টি হয়েছে ! একদম তোমার মত । দেখতেও হয়েছে একদম তোমার মত ।
জয়িতা হাসল । এর চোখ দুটোতে কেমন যেন একটা রহস্য দেখলাম । ও বলল
-সবকিছু কিন্তু আমার মত না । চোখ দুটো হয়েছে একদম ওর বাবার মত ।
আমি শশীর চোখের দিকে তাকালাম । আসলেই শশীর চোখ দুটো জয়িতার মত না । কেন জানি চোখ দুটো আমার বড় পরিচিত মনে হল । কার মত এই চোখ দুটো ! তবে যার মতই হোক বড় পরিচিত মনে হল ।
শশী এখনও আমার কোল থেকে নামে নি । আমাকে কেমন জড়িয়ে ধরে রেখেছে । হঠাৎ জয়িতা ওর মোবাইল দিয়ে আমাদের ছবি তুলল । বেশ কয়েকটা । আমি বললাম
-কি করছো ?
-আমার মেয়ের জন্য ছবি তুলছি ? তুমি যখন থাকবে না এই ছবি ওকে তোমার কথা মনে করাবে ।
আমি ঠিক মানে বুঝলাম না । কেবল হাসলাম । জয়ি শশীকে বলল
-মামনি তুমি একটু ভিতরে যাও ! আমি একটু আবীরের সাথে কথা বলি !
-আমি থাকি না আম্মু ! বাবার সাথেতো আর থাকতে পারবো না ।

কথাটা শুনে আমি ধাক্কার মত খেলাম । শশী কি বলল ! বাবা !!
আমার ঠিক তখনই মনে পরে গেল শশীর চোখ দুটো কেন এতো পরিচিত মনে হচ্ছিল । আয়নার দিকে চোখ পড়লে যে ঐ দুচোখ প্রতিদিন আমি দেখি ।
আমার বুকের মধ্যে কেমন একটা অনুভুতি শুরু হল । আমি জয়িতার দিকে তাকালাম । জয়িতার চোখ দুটো কেমন যেন অস্বস্থির । এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে ।

জয়িতার খোজ পাচ্ছিলাম না কিছুদিন থেকেই । কোথায় যেন ডুব মেরেছে । ওর ফোনও বন্ধ । একদিন হঠাত্ করেই আমার বাসায় এসে হাজির । ঐ দিন বাসায় একলা ছিলাম । মা গ্রামের বাসায় গেছিল । রাত তখন প্রায় এগারটা বাজে । এমন সময় জয়িতা এসে হাজির । ওকে এতো রাতে আসতে দেখে খানিকটা অবাক না হয়ে পারলাম না ।
-এতো রাতে ? এতো দিন কোথায় ছিলি ? আর তোর এই অবস্থা কেন ?
জয়িতাকে কেমন জানি এবনরমাল মনে হচ্চিল । একটু যেন টলছিল । জয়িতা বলল
-ড্রিংক করেছি ।
-মানে ? কেন?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । কি বলে এই মেয়ে ? খানিকটা ধরেই ওকে ঘরের ভেতরে নিয়ে এলাম । ওর কেমন জানি হুস নাই মনে হল । আমাকে বিড় বিড় করে বলল
-খুব ঘুম আসরে আবীর । একটু ঘুম পাড়িয়ে দিবি ?
-আয় ।
ওকে নিয়ে শোবার ঘরের দিকে গেলাম । যাওয়ার পথেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরলে । যখন ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম জয়ি তখনও আমাকে ছেড়ে দিলো না । ঘোলা চোখ নিয়ে আমাকে বলল
-একটু আদর করবি আবীর ?
আমার প্রথমে মনে হল ওর হয়তো হুস নেই তাই কি করছে না করছে তার ঠিক নেই । কিন্তু ওর চোখের দিকে যখন ভাল করে তাকালাম আমার পুরো শরীরটা কেমন যেন কেঁপে উঠল । আমি নিজেকে আর সংবরন করতে পারলাম না ।
সেদিন আমার কি হয়েছিল জানি না কিন্তু মনে হয়েছিল জয়িতাকে এর আগে কথনও এতো আপন করে ভালবাসি নি । রাতে ঘুমানোর আগে কেবল এই কথাটা মনে হল এই জয়িতাকে ছাড়া আমার চলবে না কিছুতেই ।
কিন্তু সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে জয়িতাকে আর দেখতে পেলাম না । কেবল আমার মোবাইলের নিচে চাপা দেওয়া এক টুকরো কাগজ পেলাম ওর । এলোমেলো হাতে লেখা অল্প কয়েকটা লাইন
আর কয়েক ঘন্টা পরেই আমার ফ্লাইট । বাবা কাছে যাচ্ছি । তোকে ছেড়ে যাচ্ছি । কাল এ কথাটাই বলতে এসেছিলাম । যেন বলতে পারি তাই খানিকটা ড্রিংক করে এসেছিলাম । তবুও বলতে পারি নি । তারবদলে কি হয়ে গেল দেখ ! যাগ গে তুই টেনশন নিস না । যা হয়েছে ভালই হয়েছে । তুই ভাল থাকিস । আর আমার কথা মনে রাখিস । তোকে অনেক ভালবাসি ।

আমি কোন মতে বললাম
-শশী কি বলল আমাকে ?
জয়ি চুপ করে থাকলো অনেকক্ষন ।
- কি ব্যাপার কথা বলছো না কেন?
তারপর হঠাৎ করেই জয়ি কথা বলা শুরু করলো ।
-যখন বাবার কাছে পৌছালাম তখনও আমি ভেবে পাই নি আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো । কিন্তু ওখানে যাবার কিছুদিনের মধ্যেই আমি টের পেলাম আমার মধ্যে কিছু একটা হয়েছে । যখন সিওর হলাম কি যে আনন্দ লাগছি আমার কাছে ! তুমি নেই তবুও তোমার অস্তিত্ব আমার কাছে আছে । আমার বাঁচার অবলম্বন ।
-আমাকে তুমি একবার জানাতে পারতা না ?
জয়িতা হাসলো !
-তাহলে তোমাকে আটকানো বড় কঠিন হয়ে যেত ।
অনেক কিছু বলতে চাইলাম । কিন্তু তারপর মনে হল কি দরকার ? কি লাভ এখন এসব জিজ্ঞেস করে !
আমি কেবল শশীকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম । আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম । জয়িতা বলল
-শশী জন্মাবার পর থেকে আমার পুরো জীবনটাই যেন বদলে গেল । আমার পুরোটা সময়ই কাটতো ওকে নিয়ে । জানে ওকে যখন জয়িয়ে ধরতাম মনে হত যেন তোমার গন্ধ আমি পাচ্ছি ওর গা থেকে ।
আমি বললাম
-কোন অসুবিধা হয় নি তোমার ? না মানে তুমি একা একটা মেয়ে হয়ে .... !
জয়িতা হাসল ।
-নাহ ! তেমন কোন সমস্যায় পরতে হয় নি । বোঝই তো ওখানকার কালচারটা মোটামুটি এরকম । অবশ্য বাবা প্রথম প্রথম একটু নাখোস ছিল । কিন্তু পরে আর কিছু বলে নি ।
আমি বললাম সব
-তো ভালই চলছিল । তাহলে দেশে কেন এলে ?
-গত বছর শশী ওর বাবাকে দেখার জন্য খুব চিত্কার চেচামিচি শুরু করে দিল । স্কুলে সবার বাবা আসে ওর বাবা কেন আসে না । বাবা কই ? বাবা কই ? এই নিয়েই সারাদিন কান্নাকাটি চলত । তাই ওকে প্রমিজ করেছিলাম যে সামনের জন্মদিনে তোমার বাবাকে এনে দিবো ।
আমি কিছু বললাম না । শশীর দিকে তাকিয়ে রইলাম । কি শান্ত ভঙ্গিতেই না ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে । জয়িতা আবার বলল
-আমি ভেবেছিলাম ওর হয়তো মনে থাকবে না । কিন্তু শশী ওর বাবার কথা ভুলে যাই নি । এই বার আর কিছুতেই ওকে সামলাতে পারছিল না । তোমার মেয়ে না ? তোমার মতই হয়েছে । একবার কিছুতে হ্যা বললে আর না বলার উপায় নাই ।
আমি শশীকে কোলে নিয়েই বসে রইলাম অনেকক্ষন । কোন কথা বললাম না । কেবল বসেই রইলাম । খুব ইচ্ছা করছিল শশীর সাথে কথা বলি কিন্তু কোথা থেকে যেন একটা বাঁধা আসছিল বারেবার ।
যখন আমার ফেরার সময় হল শশীকে কোল থেকে নামালাম । শশী বলল
-তুমি কি এখন চলে যাবে ?
আমি কথাটার জবাব দিতে পারলাম না । কেন জানি মনে হচ্ছিল এখনই আমার চোখে পানি চলে আসবে । পকেটে যা টাকা ছিল প্রায় সবটুকু শশীর হাতে তুলে দিলাম । ওকে বললাম
-মামনি তোমার যা ইচ্ছে কিনে নিও ।
জয়িতা বলল
-কেউ কিছু দিলে থ্যাঙ্কিউ দিতে হয় !
-থ্যাঙ্কিউ ।

মা মেয়ে দুজনেই একদম নীচ পর্যন্ত এল আমাকে এগিয়ে দিতে । যাবার আগে জয়িতা আমাকে বলল
-আবীর তুমি মনে কখনও যেন কোন অপরাধ বোধ রেখো না । কেমন ! হয়তো তোমার সাথে থাকলে আমি আরো একটু ভাল থাকতাম । তবে এখন কিন্তু আমি খারাপ নেই । বরং অনেক ভাল আছি । তুমিও ভাল থেকো কেমন ।
আমি রিক্সায় উঠে পড়লাম । শশীকে বললাম
-ভাল থেকো মামনি ।
-তুমিও ।
মিষ্টি একটু হাসল । শশীর ঐ হাসিটুকু দেখে সত্যি বুকের মধ্যে কেমন যেন এক অজানা শূন্যতার সৃষ্টি হল । জয়িতা যখন আমাকে ছেড়ে গেছিল তখন যেমন ওর প্রয়োজনীতা অনুভব করতাম । আজও ওর অভাব অনুভুত হচ্ছে । ওদের দুজনের অভাব !
-ছার আপনে কানছেন ক্যান ?
-হুম কি বললে ?
রিক্সায়ালার কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম । চোখে হাত দিয়ে দেখলাম সত্যিই আমার পানি পরছে ।
-না ঠিক কাঁদছি না । চোখের মধ্যে কি যেন এসে পরেছে তাই পানি পরছে ।

রিক্সা এগিয়ে চলছে টুংটাং শব্দ করে । আমিও এগিয়ে চলেছি এক জীবনকে পিছনে ফেলে অন্য এক জীবনের কাছে ।



(যদি প্রথম খন্ডটার লিংক কাজ না করে তবে একটু কষ্ট করে আমার প্রোফাইলে গিয়ে প্রথম অংশ টুকু পড়ে আসুন)
গল্পটা এখানে আছে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১২ রাত ১২:১৪
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×