somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হতচ্ছাড়া ! বদমাইশ ! ইতর ! ঝগড়া করার আর টাইম পেলি না !!

০৩ রা মে, ২০১২ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-হতচ্ছাড়া ! বদমাইশ ! ইতর ! ঝগড়া করার আর টাইম পেলি না !!
নিশি আপন মনেই বিড় বিড় করতে থাকে । ওর এখন খুব কান্না আসছে ।
ইস ! এমন একটা দিনের জন্য কতটা সময় ধরে ও অপেক্ষা করছে আর আজ যখন সময় এসেছে ফাজিল ছোড়াটা ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে রেখেছে । কি এমন করেছিল ও ! একটু না হয় রাগই দেখিয়েছিল তাই বলে মোবাইল বন্ধ করে রাখতে হবে ?
ও তো একটু এরকমই । সব সময়ই ওর একটু রাগ বেশি । নিশি আরো একবার ফোন দিল অপুর মোবাইলে
দুঃখিত এই মুহুর্তে ....
নিশির ইচ্ছা হল মোবাইলটা একটা আছাড় মেরে ফেলে দেয় । সামান্য একটা ফোনে লাইন ঢুকাতে পারে না ।
নিশি ঘর ছেড়ে আবারও বারান্দায় চলে এল । আকাশটার দিকে তাকিয়ে ওর মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল ।
ইস ! কি সুন্দর মেঘ করেছে । ঠান্ডা বাতাস শুরু হয়ে গেছে । এখনই বৃষ্টি নামবে । এমন একটা বৃষ্টি দিনের জন্য নিশি কত দিন ধরে অপেক্ষা করেছে ।
নিশির কত দিনের শখ এমন ঝুম বৃষ্টির দিনে ও অপুর হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজবে ! ওর ইচ্ছেটা বুঝি ইচ্ছেই রয়ে যাবে !

অপুটা এমনিতে খুব শান্ত শিষ্ট ছেলে । সব সময় ওর জ্বালাতন সহ্য করে মুখ বুজে । কিন্তু হঠাৎ এমন রাগ করে বসল কেন ?
অবশ্য নিশির নিজেরও একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেছিল গতদিন ।
প্রতিদিন বিকালবেলা অপুর সাথে ওর দেখা হয় । একটা নির্দিষ্ট সময়ে দুজন ছাদে ওঠে । এমনিতে তো মোবাইলে কথা হয়ই তবুও বিকেল বেলার এই দেখাটা না হলে দুজনের কারোরই ভাল লাগে না ।
গত কাল বিকাল বেলা ছাদে উঠে দেখে অপু পাশের বাড়ির নাদিয়ার সাথে গল্প করছে ।
পাশাপাশি ছাদ হওয়াতে পাশের বাসার ছাদটা একেবারে এই বাড়ির লাগোয়া আর রেলিং দুইটাও খুব কাছাকাছি । নাদিয়ার সাথে কি হেসেই না কথা বলছে ।
আর ঐ শাক চুন্নী নাদিয়াটাও হাসতে হাসতে ঢলে পরছে । নিশি রাগে শরীরটা জ্বলে উঠল । ওর রাগটা আরো বেড়ে গেল যখন অপু ওকে দেখেও না দেখার ভান করল । নাদিয়ার সাথেই কথা বলতে থাকল ।
আরো দশ মিনিট পর অপু এল ওর কাছে । নিশি ততক্ষনে রেগে আগুন হয়ে গেছে ।
-কি খবর পাখি ?
-আমার খবর নেবার টাইম আছে তোমার ?
-কি বলছ এসব ? টাইম থাকবে না কেন ?
-ঐ পেত্নীটার সাথে তুমি কেন কথা বলছিলে ?
-পেত্নী ? অপু বেশ অবাক হল ।
-কার কথা বলছ !
-বোঝ না , না ? নাদিয়ার ।
অপু হাসল । বলল
- ছিঃ এসব বলতে নেই । ও শুনলে কষ্ট পাবে ।
-আহা ! দরদ একেবারে উতলে পড়ছে । ও ক্ষ্ট পাবে সে দিকে লক্ষ্য আছে আর আমি কষ্ট পাচ্ছি সে দিকে খ্যাল নাই ।
অপু বলল
- কি বলছ এসব ? খ্যাল থকবে না কেন ? আর আমি তোমাকে কষ্ট দিলাম কিভাবে ?
-তুমি ঐ পেত্নীটার সাথে কথা বলছিলে কেন ?
-আশ্চর্য ! এটা কেমন কথা হল ?ওর সাথে কথা বলায় দোষ হল কোথায় ? আর তুমি ওকে বারবার পেত্নী বলছ কেন ?
-আমার ইচ্ছা আমি বলবো ।
অপু দেখলো যে কথা বাড়িয়ে লাভ নাই । বলল
-আচ্ছা বল । তোমার যা ইচ্ছা বল ।
হটাৎ নিশির কি হল । ও বলল
-তুমিও ওকে পেত্নী বলবে । এখনই বলবে ।
-এসবের মানে কি নিশি ?
-আমি জানি না । এখন ওকে ডাক দিবা । তারপর ওর মুখের উপর বলবা যে তুই একটা পেত্নী ।
-অসম্ভব ! এ কাজ আমি করতে পারবো না ।
-তুমি আমাকে ভালবাস না? তাহলে তোমাকে বলতে হবে ! হবে ! হবে !
অপু খানিকক্ষন অবাক হয়ে ওর দিকে । বলল
-তুমি বাচ্চা নও । কলেজে পড় । ঠিক আছে । বাচ্চাদের মত কথা কথা বলবা না ।
এ কথা শুনে নিশির যেন আরো বেশি জেদ চেপে গেল । ওর বারে বার মনে হচ্ছে অপু যেন ওকে ইগনোর করছে । ঐ নাদিয়ার জন্য ওকে ইগনোর করছে । নিশি বলল
-আমি জানি না । তোমাকে বলতে হবে । বলতে হবে ।
-নিশি , একটা কথা শোন ! তোমাকে ভালবাসি তার মানে এই না যে তোমার সব অন্যায় আবদার আমি শুনবো ! ঠিক আছে ।
-তুমি বলবে না ?
নিশির মাথায় তখন কেবল একই কথা । আসলে ছোট বেলা থেকে নিশিটা একটু এমনই । একবার কিছু মাথায় চেপে গেলে আর নামে না । নিশি আবার বলল
-তুমি বলবে না ?
-তোমার কথা শুনতে গিয়ে আমি অন্য কারো মনে কষ্ট দিবো না । অন্য কিছু থাকলে বল ।

নিশির তখন মাথায় আগুন জ্বলছে । ওর বার বার মনে হচ্ছে অপু ওকে ভালবাসে না । ওর কথা না শুনে অপু ওকে অপমান করলো । নিশি হঠাৎ অপুকে ধক্কা মারল । আর একটু হলে অপু পড়েই যেত । কোন মতে তাল সামলালো ।
-কি করছো নিশি ?
-চুপ । একদম চুপ । তুই আর কখনও আমার সাথে কথা বলবি না । তোর মত বয়ফ্রেন্ডের আমার দরকার নাই । তুই যা তোর পাত্নীর কাছে ।

এই বলে ওখান থেকে চলে আসে । রাতের বেলা যখন মাথা ঠান্ডা হয় তখন ভেবে দেখে আসলে ভূলটা ওরই ছিল । তবুও ও আশা করছিল হয়তো অপু ওকে ফোন দিবে । কিন্তু সারাটাত ফোন দিল না । একটু অভিমান হয়েছিল । কিন্তু সকাল বেলা আর থাকতে না পেরে নিশি নিজেই ফোন দিল । কিন্তু দেখে অপুর ফোন বন্ধ ।

বৃষ্টির ফোটা পড়তে আরাম্ভ করেছে । এর মনটা আরো অস্থির হয়ে উঠল । একবার মনে হল ওদের বাসায় চলে যাই । অপুরা দুতলায় থাকে ।একবার টুক করে গেলেই কিন্তু হয় । সরাসরি দেখা করলে ও নিশ্চই রাগ করে থাকতে পারবে না । কিন্তু ওর মা আবার কি ভাববে ?
যদি কিছু বলে বসে !!
নিশি কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না । কিন্তু বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আর থাকতে পারল না ।
না ওদের বাসায়ই যাবে ! যা থাকে কপালে !!
এমন সুযোগ আর আসবে না ! ও মা যা বলে বলুক !!

নিশি জামা পালটে কালো রংয়ের সেলোয়ার কামিজটা পরে নিল । কালো শাড়ি পরতে পারলে ভাল হত ! কিন্তু ও ঠিক মত শাড়ি পরতে পারে না । আর এখন শাড়ি পড়ার সময়ও নাই । আয়নার সামনে গিয়ে কালো একটা টিপ পড়ল । বেশ বড় টিপ । শেষ বারের মত নিজেকে দেহে নিল । অপুর পছন্দ হবেই । অপুই বলেছিল যেদিন একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবো তুমি কালো শাড়ি আর আর কালো টিপ পরো । কিন্তু আল্লাহই জানে অপুর মা যখন দেখবে কি বলবে !! ভদ্রমহিলা এমনিতেই যা কড়া । অপুকে আবার বাইরে বের হতে দিবে তো ?
নিশি আরো একবার ভাবলো । অপুর বাসায় যাওয়া ঠিক হবে তো ! পরে না আবার কোন সমস্যা হয় !
ধুর!! যা হয় হবে !
ঠিক যখন ও ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনই ওর সেলফোনের মেসেজ টোনটা বেজে উঠল ।
এই সময় আবার কে মেসেজ পাঠাল । একবার ভাবলো পরে দেখবে । কিন্তু আবার মনে হল না দেখেই যাই ।
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো অপু মেসেজ পাঠিয়েছে । নিশিকয়েক মুহুর্ত তাকিয়েই থাকলো মেসেজের লাইন গুলো দিকে ।
আমি কালো পাঞ্জাবী পরেছি । তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো বলে ।

নিশি আর একটুও দাড়াল না । সিড়ি ঘরের দিকে দৌড় মাড়ল । আজ যে ওর বৃষ্টিতে ভেজার দিন !!!


গল্পটা এখানে আছে
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৭
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×