somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিশি যেভাবে আমার গার্লফ্রেন্ড হল এবং তারপর ...

০৪ ঠা মে, ২০১২ বিকাল ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-কি করছো ?
ছুটির অলস বিকেলে শুয়েই ছিলাম । আমার কাছে শুয়ে থাকাটাই সব থেকে আনন্দের কাজ । কোন কাজ ছাড়া এবং নিতান্তই বাধ্য না হলে বাইরে যেতে একদমই ভাল লাগে না । শুয়ে শুয়ে গান শুনছিলাম এফএমে ! এমন সময় নিশির ফোন ।
-তেমন কিছু না । শুয়ে শুয়ে গান শুনছিলাম ।
-একটু বের হব । যাবা আমার সাথে ?
আজকে ওর কন্ঠস্বর অন্যরকম । কেমন একটা মোলায়েম ভাব । খানিকটা অনুরোধের সুরে । অন্য দিনের মত না । অন্য দিন ও বলত
-এই একটু নিচে নামো তো । নিউমার্কেট যাবো ।
খানিকটা কর্তৃত্বের সুরেই বলত । আর আজ কত মোলায়েম সুর । অবশ্য এর কারনও আছে ।
কাল রাতে আমি ওর সাথে ব্রেক আপ করতে চেয়েছিলাম । এমন কি বলেও ফেলেছিলাম কথা টা ওকে ! কিন্তু ফলাফলটা যে এমন হবে সেটা ভাবি নি ।
নিশির সাথে ব্রেক আপ করার কথাটা কিছু দিন থেকেই ভাবছিলাম । আসলে নিশির সাথে ঠিক খাপ খাওয়াতে আমার কষ্ট হচ্ছিল । এমনিতে ও ঢাকার মেয়ে তার উপর যথেষ্ট আধুনিক ।
ওর কথা বার্তা চাল চলন সব কিছুই আমার থেকে আলাদা । আমি যেই পরিবেশ থেকে এসেছি সেখানটাতে এমনটা দেখে আমি অভস্ত্য নই । তার উপর কদিন ধরে আমার এই কথাটা খুব বেশি করে মনে হচ্ছে যে আমি যেন নিশির যোগ্য নই ।
আগে অল্প অল্প এই কথাটা মনে হত কিন্তু যে দিন নিশির কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেলাম সেদিনের পর থেকেই ব্যাপারটা আমার মনে আরো বেশি করে মনে হচ্ছে । সত্যি বোধহয় আমি ওর যোগ্যই না ।
নিশির বন্ধুবান্ধব গুলোর আচরনও দায়ী ছিল এর পেছনে । ওদের আচরন দেখেও আমার মনে হয়েছে ওরাও ঠিক আমাকে গ্রহন করতে পারছে না নিশির বয়ফ্রেন্ড হিসাবে ।
তাই গতকাল সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম । কথাটা বলবো আজকেই । নিশিকে ছাদে ডাক দিলাম ।
নিশি খুব তাড়াহুড়ার মধ্যে এল । বলল
-কি বলবা জলদি বল । এক জায়গায় যেতে হবে ।
আলো কম থাকায় খুব ভাল দেখা যাচ্ছিল না । তবুও এটুকু মনে হচ্ছিল যে নিশি কোন পার্টিতে যাচ্ছে এই রাতের বেলা ।
-কই বল !
নিশি আবার তাগাদা দিল । আমি ওর মুখোমুখি দাড়ালাম । বললাম
-নিশি তোমার সাথে আমি ঠিক খাপ খাওয়াতে পারছি না । আমার মনে হয় আমাদের রিলেশনটা আর কনটিনিউ করা উচিত্‍ নয় ।
-কি ?
নিশি প্রথমে হেসে ফেলল ।
-কি বলছ এসব ?
ও প্রথমে বিশ্বাসই করল না । আমি হয়তো ঠাট্টা করছি এই ভেবে উড়িয়ে দিল ।
-শোন আমার এখন খুব ...
কিন্তু আমার মুখ দেখে ও চুপ করে গেল । আমি যে সিরিয়াস আমার মুখ দেখেই ও বুঝে গেল । বলল
-তুমি কি এসব ? কেন বলছ ? আমি কি করলাম ?
-না নিশি তুমি কিছু কর নি । আসলে আমি নিজেই তোমার সাথে খাপ খাওয়াতে পারছি না । তোমার লাইফ স্টাইল আর আমার লাইফ স্টাইল এক না । আর আমরা এক লেভেলের মানুষও না । পরে আমাদের আরো সমস্যা হবে ।
আমি ওর সামনে থেকে সরে এসে ছাদের রেলিংয়ের এক পাশটাতে বসলাম । একটু পর দেখলাম নিশিও আমার পাশে এসে বসল । চুপচাপ বসে রইলাম কিছুক্ষন । কেউ কোন কথা বলছে না । যেন কারো কোন কথা বলার নেই ।
একটু পর আমি নিশির দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । ছাদে কোন লাইট জ্বলছে না । আশেপাশের বাড়ি থেকে আলো এসে কেমন একটা আলো আধার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে ।
আমি খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করতাম নিশি কাঁদছে । কেবল নিরবে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।
আর কি গভীর চোখে ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি আমার বুকের মধ্যেই কেমন একটা কাঁপন অনুভব করলাম । নিশির ঐ গভীর চোখ যেন চিৎকার করে বলছে ওর ভালবাসার কথা !
নিশির চোখের দিকে তাকিয়ে আমি এই প্রথম বারের মত অনুভব করলাম যে নিশি সত্যি আমাকে অনেক ভালবাসে ।
আমি কি বলব কি করবো এই যখন ভাবছি ঠিক এমন সময় নিশি আমাকে জড়িয়ে ধরল ।
নিশি আমার গার্লফ্রেন্ড হবার পর থেকে এই প্রথম ও আমাকে জড়িয়ে ধরল । বুকের মধ্যে আবার সেই অদ্ভুদ অনুভূতি হল । আসলে এর আগে কোন মেয়ের এতো কাছে আমি আসি নি ।
কেমন যেন একটা অস্বস্থি লাগছিল । মিথ্যা বলব না ভালও লাগছিল অনেক ।
হঠাৎ‍ নিশির শরীরটা একটু কেঁপে উঠল । বুঝতে পারলাম ও কাঁদছে । খুব মায়া লাগল ওর জন্য । সেই সাথে নিজের উপর খুব রাগ হল নিশিকে এভাবে কাঁদাবার জন্য । নিজেকে খুব অপরাধী মনে হল । ভালই তো চলছিল । একটু সমস্যা হচ্ছিল চেষ্টা করলেই মানিয়ে নেওয়া যেত !
তাহলে এমন কেন করলাম ?
বেচারীকে কেন কষ্ট দিলাম ?
নিশি তখনও কেঁদেই চলেছে আমাকে জড়িয়ে ধরে । আমি ওর মাথায় হাত রাখলাম । কিন্তু কোন কথা বলতে পারলাম না । কতক্ষন এভাবে ছিলাম ঠিক মনে নেই তবে আস্তে আস্তে ওর কান্না থেমে এল । একটা সময় ও আমার বাহু বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিল ।
আমার হাত ধরে ওর মাথার উপর ধরে বলল
-বল আর কোন দিন এই ধরনের কথা বলবা না । বল ।
কোন মতে বললাম
-আচ্ছা ।
-কি আচ্ছা ?
-আর বলব না ।
-হুমমম ! ঠিক আছে ! এখন আমি যাই । কেমন ? রাত হয়ে যাচ্ছে ।
নিশি চলে যাবার পরও অনেকক্ষন বসে থাকলাম । তারপর নিশি ফোন ফোন দিল এই । বাইরে যাবো কিনা জানতে চাইল ।

নিশি আবার জানতে চাইল
-যাবা আমার সাথে ?
-হুম । যাবো না কেন ?
-তাহলে আসো কেমন ! আমি নিচে নামছি ।
নিচে নেমে দেখলাম নিশি দাড়িয়ে আছে । আমাকে দেখেই হাসল ।
-চল ।
-তুমি আগে যাও আমি পেছনে আছি ।
এরকম করেই আমাদের বাইরে যেতে হয় । এলাকার মধ্যে তো আর পাশাপাশি হাটা যায় না । তাই নিশি একটু আগে আগে যায় আর একটু পরে আসি । নিশি আবার হাসলো । বলল
-সমস্যা নাই আজ এক সাথেই যাবো ।
ওর পাশাপাশি হাটতে শুরু করলাম । সত্যি বলতে কি একটু অস্বস্থি লাগছিল । ওর সাথে পাড়ার মধ্যে এভাবে হাটি নি । লোকজন কি ভাববে কে জানে ?
মোড়ের মাথায় এসে দেখলাম রুমেল দাড়িয়ে আছে । আর জ্বলন্ত দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে ।
আমি এখন খুব ভাল করে জানি রুমেলের এরকম তাকিয়ে ছাড়া আর কিছুই করার নাই । নিশি ঐ দিনই ওর বাবাকে বলে সব কিছু ঠিক করে ফেলেছিল ।
নিশি রিক্সা ডাকল । এবং আমাকে উঠতে বলল ।
আমি এবার খানিকটা অবাক হলাম ।
পাশাপাশি হাটলাম । ঠিক আছে ।
কিন্তু একই সাথে রিক্সায় ওঠা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে । রুমেলরা দেখছে । আরো অনেকেই দেখছে ।
নিশির বাবাকে বলে দিলে একটু সমস্যা হতেই পারে । তবুও রিক্সায় উঠে পরলাম ।
নিশি রিক্সায়ালা কে বলল মামা
-হুডটা তুলে দেন ।
রিক্সা চলতে শুরু করল । আমি বললাম
-একটু বেশি বেশি হয়ে গেল না ?
-কোন টা ?
-এই যে এলাকা থেকে একসাথে রিক্সায় ওঠাটা । এটা মানুষ কিভাবে নিবে ? আর তোমার আব্বাকে যদি বলে দেয় , তাহলে ?
নিশি হাসল । বলল
-তুমি খুব বেশি ভয় পাও । আর আব্বা জানে ।
আমি ধাক্কার মত খেলাম ।
-জানে মানে ? কি জানে ?
-এই যে তোমার আমার ব্যাপার টা ।
নিশি খুব শান্ত ভাবে জবাব দিল ।
-কি বলছ এসব ? কে বলল ? কবে থেকে জানে ?
যদিও আমার ব্লাড প্রেসার নেই তবুও মনে হল শরীরে রক্তের প্রেসার যেন বেড়ে গেছে । নিশি আবারও খুব শান্ত ভাবে বলল
-কাল রাত থেকে । আমি বলেছি ।
-তুমি বলেছ ? কেন ?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । নিশির মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে উঠল । বলল
-কাল রাতে তুমি যখন ঐ কথাটা বললে , তোমাকে বোঝাতে পারবো আমার কি মনে হচ্ছিল ! মনে হচ্ছিল যেন আমার পুরো পৃথিবী আমার কাছ থেকে এক নিমিষেই হারিয়ে গেল । আমি কালকেই ঠিক বুঝতে পারলাম তোমাকে আমি কি পরিমান ভালবাসি ! আর তুমি আমার কাছে কতটা জরুরী ।
নিশি চুপ করল একটু । আমি ঠিক বুঝলাম না এর সাথে বাবাকে বলার সম্পর্ক কি ?
নিশি আবার বলা শুরু করলো
-তাই এমন ব্যাবস্থা করেছি যেন যেন তুমি আর এমনটা না করতে পারো ।
-মানে কি ?
-মানে হল সোনা পাখি ........
নিশি আমার দিকে তাকিয়ে হাসল । তারপর আমার হাতটা ধরে বলল
-মানে হল আমি বাবাকে সোজাসুজি বলেছি তোমাকে আমি ভালবাসি । আর তোমাকেই আমি বিয়ে করবো । এবং জলদি ।
-জলদি ?
-হুম ।
-তোমার বাবা কি বলল ?
নিশি আবারও হাসল । বলল
-বাবা কি বলেছে সেটা কয়দিনের মধ্যেই টের পাবা !
আমি বড়সড় একটা ঢোক গিললাম । আল্লাহ জানে আমার কপালে কি আছে !


নিশি যে ভাবে আমার গার্লফ্রেন্ড হল !!!

গল্পটা এখানে আছে
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১২ রাত ১১:২৯
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×