মামা কানে ধরছি, অপরিচিত কারো লগে আর কুনোদিন রিক্সায় চড়তাম না, মাইয়ার লগেতো চড়তামই না !!!
কথাটা বলেই বীথি একটু হাসল ।
আমি এতোক্ষন ঠিক এই কথাটাই ভাবছিলাম । মেয়ে বলে বলতে সংকোচ হচ্ছিল । না জানি কি ভেবে বসে । কিন্তু কথাটা যখন ও ই বলল তখন আর ভাবা ভাবির কোন অবকাশ নাই ।
বাটা সিগনাল থেকে মোহাম্মাদপুর পর্যন্ত একসাথে একই রিক্সায় যেতে পারবো এটা ভাবতেই মনটা আনন্দে ভরে উঠল । পনের মিনিটের পরিচয় হওয়া মেয়েটাকে কেন জানি বড় আপন মনে হল । মনে হল এই মুখটা কত দিনের চেনা আমার !
মোহাম্মাদপুরে একটা বিশেষ কাজে যাওয়া দরকার । টিউশনি থেকে বের হয়ে যখন কাটা বন এলাম ততক্ষনে দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে গেছে । তবে দেখলাম কাটাবন সিগনালে অনেক লোক দাড়িয়ে ।
বাসের অপেক্ষায় ।
এতো রাত তবুও এতো লোক দাড়িয়ে আছে ! ঠিক কারন বুঝলাম না ।
একজনের কাছে জানতে চাইলাম কারন টা । বলল যে কাউন্টার বাস সব বন্ধ আজ । লোকাল বাসই ভরসা ।
কিন্তু লোকাল বাসের যা অবস্থা দেখলাম তাতে আমার পক্ষ্যে ওগুলো ওঠা একে বারে অসম্ভব । ২০-২৫ মিনিট পরপর একটা করে বাস আসছে পুরো লোড হয়ে । এর মধ্যে ওঠা আমার পক্ষে অসম্ভব ।
ভিড় আমার ভাল লাগে না । আর গরম কালের বাসে ভীড় ! ওফ ! আমার দম বন্ধ হয়ে আসে ।
লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম আর কোন বিকল্প পথ আছে নাকি ?
লোকটা যা বলল তার সারমর্ম হল এখান থেকে বাটা সিগনাল পর্যন্ত হেটে গেলেই রিক্সা পাওয়া যাবে ।
আমি এই করবো ! এতো কষ্ট করে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না ।
হাটা শুরু করবো ঠিক এমন সময় পেছন থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ বলে উঠল
-এক্সকিউজ মি ভাইয়া ?
প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো আমি না । কিন্তু একটু পরে বুঝলাম না আমাকেই বলছে মেয়েটা ।
-আমাকে বলছেন ?
-জি ।
খানিকটা লজ্জা মিশ্রিত হাসি নিয়ে বলল মেয়েটা ।
-বলুন ।
-আপনি কি বাটা সিগনাল পর্যন্ত হেটে যাচ্ছেন ?
-হুম । আর তো কোন উপায় নাই । এই ভীড়ের মধ্যে বাসে ওঠা আমার পক্ষে সম্ভব নয় । ওখানে গিয়ে রিক্সা নেবো ।
-ভাইয়া ...
কিছু বলতে গিয়ে থেকে গেল মেয়েটা । খানিক যেন সংকোচ ।
-বলুন ।
-আমি কি আপনার সাথে বাটা সিগনাল পর্যন্ত আসতে পারি ? আসলে আমিও এই রকম ভীড় একদম পছন্দ করি করি । আর দোকানপাট গুলো সব বন্ধ হয়ে গেছেতো একা একা যেতে ভয় করছে । আসবো আপনার সাথে ?
মেয়েটা যেন খুব লজ্জা পাচ্ছে ! আশ্চর্য এমন মেয়েও আছে আজকাল । তাও আবার ঢাকা শহরে!!
মনে মনে খানিক হাসলাম । বললাম
-কোন সমস্যা নাই আসুন ।
মেয়েটা একটু আস্তে আস্তে হাটছিল । মেয়েটার হাটার মধ্যে কেমন একটা ছন্দ আছে । দেখতে ভাল লাগছে । আমি হাটার গতি কমিয়ে দিলাম ।
মেয়েটার নাম জানতে ইচ্ছা করছে । একবার মনে হল জিজ্ঞেস করি । তারপর মনে হল থাক । কি মনে করে বসবে কে জানে ।
-াইয়া কিছু মনে না করলে আপনার নামটা জানতে পারি ?
আমি হাসলাম ।
-মার নাম অপু ।
মেয়েটাও হাসল ।
-অপু । সুন্দর নাম । আমি বীথি । আপনি কোথায় থাকেন ?
-সলে আমি মালিবাগের দিকে থাকি ।
-তা এইদিকে ?
-ই তো মোহাম্মাদপুরে একটা কাজ আছে ।
-আপনি মোহাম্মাদপুর যাচ্ছেন ?
-হুম । আমিও ঐ দিকটাতে থাকি ।
-ও আচ্ছা ।
কথা বলতে বলতে বাটা সিগনালে চলে এলাম । বড় তাড়াতাড়ি যেন পথ শেষ হয়ে গেল । আর একটু দুরে হলে হলে হত । আরো কিছু কথা বলা যেত ! একবার মনে হল বলি আসুন একসাথে রিক্সা করে যাই । পরক্ষনেই চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলাম ।
একসাথে হাটা এক কথা আর একসাথে রিক্সায় ওঠা অন্য কথা । ঠিক তখনই বীথি কথাটা বলে উঠল ।
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল
-সমস্যা থাকলে থাক । আসলে একসাথে গেলে ভাড়াটাও শেয়ার কথা যাবে আর গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে ।
-না না সমস্যা কিছু নাই । কোন সমস্যা নাই । চলুন এক সাথে যাই ।
বীথি একটু হাসল । দেখলাম একটা রিক্সা এগিয়ে আসতে ।
-কই যাইবেন আফা ?
রিক্সা ওয়ালাকে বীথি বলল
-মোঃপুর যাবেন মামা ?
-যামু ।
-কত নিবেন ?
-যা ভাড়া তাই দিয়েন ।
আমরা রিক্সায় উঠে পড়লাম । সত্যি বলতে কি এতো ভাল লাগছিল বীথির পাশে বসতে পেরে । আজকের এই পুরো দিনটা খুব সুন্দর মনে হচ্ছে । টিউশনির টাকা দেওয়ার কথা ছিল আজ । যখন দিল না মেজাজটা খানিকটা খারাপ হয়েছিল কিন্তু এখন মন মেজাজ খুব ফুরফুরে ।
এই মিষ্টি মেয়েটার পাশে বসতে পেরে সত্যিই খুব ভাল লাগছিল । আমরা টুকটাক কথা বলছিলাম ।
এই যেমন বাসা কোথায় ?
কে কে আছে সেখানে ?
কি পড়ি ?
পড়াশুনা ছাড়া আর কি কি করি !
ইত্যাদি ইত্যাদি ।
একসময় বীথি বলল
-আমার বাসা এখানে থেকে একটু দুরে । এখানেই নেমে খানিকটা হাটতে হবে । আমি এখানে নেমে যাই আপনি রিক্সা নিয়ে চলে যান ।
-আরে না না কি বলেন ? হেটে যাওয়ার দরকার নাই । আপনি বরং রিক্সা নিয়ে যান । আমি হেটে যাচ্ছি ।
-এসবের দরকার নাই । পনি রিক্সা নিয়ে যান ।
-আরে আপনি যান ।
আমার কথা শুনে বীথি হেসে ফেলল । একটু ভেবে বলল
-আচ্ছা কাউকে হাটতে হবে না । রিক্সা নিয়ে প্রথমে আমার বাসায় যাই আমাকে নামিয়ে দিয়ে আপনি রিক্সা নিয়ে চলে যাবেন । ইটস দ্যাট ওকে ?
-আচ্ছা ।
আমি খুশি হই । বীথিকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দেবো । ওয়াও ! মনটা সত্যি ভাল হয়ে গেল ।
রিক্সাটা মেইন রাস্তা থেকে একটা গলির মধ্যে ঢুকে গেল । এই খানে একটু খটকা লাগল । বীথি রিক্সায়ালাকে কিছুই বলল না কিন্তু রিক্সায়ালা ঠিকই এগিয়ে চলল ।
এবং আমার স্পষ্ট মনে আছে রিক্সা ওঠার সময় বীথি কোন নির্দিষ্ট জায়গার নাম বলে নি । তাহলে রিক্সায়ালা এই গলি চিনলো কিভাবে ? আর বীথিও তো কিছু বলল না ।
এসবই ভাবছি এমন সময় রিক্সা একটা অন্ধকার গলির মধ্যে থেমে গেল । এবং তিনটে ছায়া মুর্তি আমাদেরকে ঘিরে ধরলো ।
রিক্সায়ালাও দেখলাম ওদের দিকে যোগ দিল । শালার রিক্সায়ালাই মেইন কার্লপ্রিট । বীথির হাত চেপে ধরে বললাম
-ভয় পাবেন না ।
যদিও চারিদিকে অন্ধকার তবুও বীথির চেহারাটা বোঝা যাচ্ছিল ভালই । ভেবেছিলাম ওখানে ভয়ের ছাপ দেখবো কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখলাম বীথির চেহারা একদম স্বাভাফিক । ওখানে ভয়ের বদলে কেমন অদ্ভুদ একটা হাসির রেখা দেখতে পেলাম ।
প্রথমে ভাবলাম হয়তো আমার চোখের ভুল কিন্তু ও যখন নিজের হাতটা সরিয়ে রিক্সা থেকে নেমে পড়ল এবং ঐ ছায়া মুর্তিগুলোর মাঝে গিয়ে দাড়াল, তখন আমার টনক নড়ল , তখন আমি বুঝতে পারলাম কেন বীথি আমার কাছে সাহায্য চাইল কেন একটা অপরিচিত মানুষের সাথে রিক্সায় উঠবে !
এবার আমি ভয় পেলাম । তবে দেখলাম ওরা আমার সাথে বেশ ভাল ব্যবহারই করল । ভদ্রভাবেই আমার মোবাইলটা নিয়ে নিল । বীথি তো ভদ্রতার চুরান্ত করল । আমার সিম আর মেমরী কার্ডটা খুলে আমাকে দিয়ে দিল । এমন কি মানি ব্যাগ থেকে সব গুলো টাকা নেবার পরও খুচরা কিছু টাকা আমার হাতে দিয়ে বলল
-আপনার রিক্সা ভাড়া ।
আমি হাত বাড়িয়ে রিক্সা ভাড়া নিলাম । বীথি আবার বলল
-এবার থেকে একটু সাবধানে চলাফেরা করবেন । আর এরকম বেকুবের মত যারতার সাথে রিক্সায় উঠবেন না । কেমন ? আসি ।
ছায়া মুর্তির সাথে বীথি গলির মধ্যে মিলিয়ে গেশ ।
আমি বেকুবের মত দাড়িয়েই রইলাম ।

ভূমিকম্প নিয়ে যত মিথ
১. সমতল এই পৃথিবীর একপাশে আছে বিশাল বিশাল সব পর্বত, অন্যপাশে আছে একজন বিশাল দৈত্য। সেই দৈত্যের স্ত্রী আকাশ ধরে ঝুলে আছে। দৈত্যের যখন স্ত্রীর সাথে আলিঙ্গন করার ইচ্ছে হতো,... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভুমিকম্পের পর আমার শনিবার। (ছবি ব্লগ)
ভুমিকম্প সবসময় আমার একটা স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। তিন বন্ধু তিনটি ভূমিকম্পে একই ছাদের নিচে ছিলাম। এইবার একজন কল দিয়েছে। আমি ঠিক আছি কিনা। আর আমি তখন নদীর ধারে। ঠিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
"ভুমিকম্পের জন্য গায়িকারা দায়ী"
আজ সকালে ৫.৬ মাত্রায় ভুমিকম্প হয়েছে। ভোর বেলা তখনও ঘুম থেকে ওঠিনি। অনুভব করলাম খাট সহ পুরা বিল্ডিং কাঁপছে। শুয়েই থাকলাম। ভুমিকম্পে মৃত্যু লেখা থাকলে কেউ বাঁচাতে পারবেনা। দৌড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার জীবনের সবচাইতে রোমান্টিক ঘটনা
আমার জীবনটা রোমান্টিকতায় পরিপূর্ণ না। প্রেম যে জীবনে আসে নি, তা না, কিন্তু আমার কবিতা লেখালেখি থেকেই আপনারা আন্দাজ করে সত্যটা বুঝতে পেরেছেন যে, এ বাংলার ব্যর্থ প্রেমিকদের মতো আমিও... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঈশ্বরী
সে একজন আছেন, উন্মাদিনী
ক্ষমতার মসনদে বসে চালান খেয়াল খুশী
ইচ্ছে হলেই নিয়ে নিতে পারেন প্রাণ
ইচ্ছে হলেই করতে পারেন জীবন দান।
তিনিই এক এবং অদ্বিতীয়
বিকল্প নেই তাঁর কোথাও,
সুতরাং আনুগত্য হও।
তাঁর শক্তির... ...বাকিটুকু পড়ুন