somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনুশেখা অথবা একটা ভূতের গল্প

০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-এই ঘুমাচ্ছ ?
- হুম ।
-ওঠো না ! কথা বলব । ওঠো ।
সারাদিন খাটাখাটনির পর যদি একটু শান্তি মত ঘুমাতে না পারি তাহলে কি ভাল লাগে ? আমি চোখ না খুলেই বললাম
-আনুশেখা তুমি কিন্তু আমাকে বিরক্ত করছো ! আমাদের মধ্যে কি ডিল হয়েছিল মনে নেই ? ঘুমানোর সময় তুমি আমাকে বিরক্ত করতে পারবে না ।
-আমি বিরক্ত করলাম কই ? একটু তো কথা বলতে চাইছি !
-এখন কথা বলতে হবে না । আমাকে ঘুমাতে দাও ।
হঠাৎ‍ আনুশেখার গলায় অভিমানের সুর টের পেলাম ।
-হ্যা , আমি তো কেবল তোমাকে বিরক্তই করি ! আমি তো বেশি কথা বলি ! সারাটা দিন আমার কিভাবে কাটে কেউ ভাবে না । নিজে তো সারা দিন মানুষের সাথে চিৎ‍কার চেচামেচি করে অস্থির আমি একটু কথা বলতে গেলেই দোষ ! বেঁচে থাকতেও আমার কথা কেউ শুনতো মরে গেছি এখনও কেউ শুনে না ।
চোখ মেলতেই হল । না হলে পেত্নীর প্যান প্যানানী সারা রাতেও থামবে না । বিছানা ছেড়ে উঠে লাইট জ্বালাম । দেখি আনুশেখা দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । ওর শরীরটা অনেকটা আবছার হয়ে গেছে ।
এখনই গায়েব হয়ে যাবে ।
-শোন ।
জোরে ডাক দিলাম । কিন্তু আনুশেখা শুনলো না । অদৃশ্য হয়ে গেল । এই মেয়েটার এই এক দোষ !
মেয়ে !
নিজেয় কাছে হাসি পেল । ও তো মেয়ে না । না মানে মেয়ে ছিল । এখন হয়েছে মেয়ে ভূত । সোজা বাংলায় যাকে বলে পেত্নী ।
কিন্তু আনুশেখাকে কেন জানি পেত্নী বলতে ইচ্ছা করে না । আমি আবার ওর নাম ধরে ডাক লাম । ও সাড়া দিল না । অভিমান করলেই মেয়েটা এমন করে ।
মানুষ তো বলে মেয়েদের বোঝা জটিল ! শুধু মেয়ে মানুষ না মেয়ে ভূত দের বোঝাও জটিল কাজ । আমি আবার ডাক দিলাম ।
-প্লিজ আনু সামনে এসো । আমি তো ঘুমের ঘোরে বলেছি । সত্যি সত্যি তো বলি নি ।
-না তুমি সত্যি সত্যিই বলেছ ।
-বলি নি বাবা । আচ্ছা ঠিক আছে আই এম সরি । এই দেখো কান ধরছি । এবার সামনে আসো ।
-আসবো না । তোমার সাথে কথা নাই ।
-ঠিক আছে আর কি করা ? আমি একা একাই বারান্দায় বসে থাকি । বসে বসে হাওয়া খাই ।
আমি জানি এতে কাজ হবে । আনুশেখার বারান্দায় বসে গল্প করতে খুব ভাল লাগে । আমি দোতলার বারান্দার দিকে এগিয়ে যাই ।

শুনতে কি অবিশ্বাষ্য লাগছে যে একটা অশরীরি আত্মার সাথে গল্প করার জন্য আমি দোতলার বারান্দার দিকে যাচ্ছি । যেখানে এমন কথা শুনেই মানুষের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসার কথা সেখানে আমার কাছে একা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা ।
কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি আনুশেখাকে দেখে আমার কখনই ভয় লাগে নি । এমন কি যখন আমি ওর সম্পর্কে সত্যিটা জানলাম তখনও না । অশরীরি ভুত অথবা পেত্নী বলতে আমি এতোদিন যেমনটা জেনে এসেছি আনুশেখা মোটেই তেমন নয় ।
কেমন আদুরে বাবার অভিমানী টিনএজ একটা মেয়ের মত ! ওকে দেখে আর যাই হোক মনের মধ্যে ভয়ের উদ্রেক ঘটায় না । আমার এখনও ঐ দিনকার কথা স্পষ্টই মনে আছে ।
নতুন চাকরী নিয়েই এই এলাকাতে এসেছি । বাড়ী খুজতে খুজতে এই দোতালা বাড়ীটা পেয়ে গেলাম । প্রথম দেখাতেই মনে ধরে গেল । আর বাড়ির ভাড়াটা ছিল নাম মাত্র । ভাড়ার পরিমান টা শুনে খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম । যা হোক আমারই ভাল ।
ঠিক ঐ দিন রাতেই আনুশেখার উপস্থিতি টের পাই ।
সবে লাইট বন্ধ করে শুয়েছি মনে হল কেউ যেন ঘরে মধ্যে হাটছে । বিশেষ করে পায়েলের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ।
আমার প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল ভাড়ার পরিমান টা শুনে । তারপর যে ছেলেটা আমার মালপত্র নামিয়ে সে যাবার সময় বলে গেল আমি যেন একটু সাবধানে থাকি ।
পায়েলের আওয়াজটা এখনও পাওয়া যাচ্ছে । মনে হয়ে আওয়াজটা ঐ দরজার দিক দিয়ে আসছে । আচ্ছা এখন যদি লাইট জ্বালি তাহলে কি হবে ? নিজের মনে মনে বললাম ।
আওয়াজ নিশ্চই বন্ধ হয়ে যাবে । আর দেখবো পুরো ঘর একদম খালি ।
ভুতের গল্পে সাধারনত এমনই হয় । আমি লাইট জ্বালালাম । এবং আমি যা ভেবেছিলাম তেমন কিছুই হল না । পায়েলের আওয়াজ বন্ধ হল ।
আওয়াজ লক্ষ্য করে তাকিয়ে তো আমি আরো অবাক হলাম । দেখলাম একটা আঠারো উনিশ বছর বয়সী একটা মেয়ে ঘরময় হেটে বেড়াচ্ছে । আর মেয়েটার পরনে কোন সাদা পোষাক নেই । এমনি নরমান মেয়েরা যেমন পোষাক পরে তেমনই রয়েছে ।
আমার দিকে চোখ পরতেই মেয়েটা হাসি মুখে বলে উঠল
-হাই ! আমি আনুশেখা । এখানে থাকি । বলতে পারো এই বাড়ির মালিক । ঠিক মালিক না , মালিকের মেয়ে । আমার বাবা এই বাড়িটা ...
প্রথম দেখা তেই আমার কেবল এই কথাটাই মনে হল কি বাচাল মেয়েরে বাবা !
এতো কথা বলে কেন ! আমার মনে তখন এই প্রশ্নটা আসেই নি যে মেয়ে কোন অশরীরি হতে পারে ।
কি স্বাভাবিক একটা মেয়ে ! কিন্তু আমার ভুল ভাঙ্গল কিছুক্ষন পরেই । আনুশেখা কথা বলতে বলতে আমার খাটের উপর এসে বসল । বলল
তোমার নাম কি ?
-অপু ।
-চাকরি কর তুমি ?
-হুম ।
-কোথায় ?
অফিসের নাম বললাম । ঠিক তখনই কোথায় যেন একটু আওয়াজ হল । মনেহল কোন জানলার কপাট বাড়ি খেল কিছুর সাথে ।
-উউহুম ।
-কি হল ?
আনুশেখা বলল
-উত্তরের জানালাটা বোধহয় আবার খুলে গেছে । তুমি একটু দাড়াও আমি এখনই আসছি ।
এই বলে আনুশেখা চোখের সামনে থেকে গায়েব হয়ে গেল । প্রথমে মনে মনে হল আমি কোন মুভি দেখছি । যেখানে চোখের সামনে থেকে মানুষ অদৃশ্য হয়ে যাওয়াটা একদমই স্বাভাবিক বিষয় । আনুশেখা ফিরে এল কিছুক্ষনের মধ্যেই ।
এসেই কথা বলা শুরু
-আমি বুঝি না উত্তরের ঐ জানালাটার সমস্যা টা কি ! আমি প্রতিদিন জানালা টা লাগাই আর প্রতিদিন জানালা খুলে যায় । আমার মনে হয় কেউ ইচ্ছে করে জানালাটা খুলে দেয় । নিশ্চই কোন পাজি ভুত ! ছোকড়া ভুত হবে হয়তো ! জানো বেঁচে থাকতে যেমন ছোকড়ারা লাইন মারতো এখনও ছোকড়া টাইপের কিছু ভুত লাইন মারার চেষ্টা করে । বাড়ির বাড়ান্দায় গেলেই উকি ঝুকি মারে ।
আনুশেখা এই বলে জোরে জোরে হাসতে লাগল । আমার সেদিন কার কথা আর কিছু মনে নেই । স্নায়ু বোধহয় একটু বেশিই গরম হয়ে গেছিল । আর সহ্য হয় নি । ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । কিংবা অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম ।
সকালবেলা যখন ঘুম ভাঙ্গল প্রথমেই রাতের ঘটনা মনে হল । মনে হল হয়তো স্বপ্নে দেখেছি । অফিস গিয়ে খানিকটা খোজ খবর করলাম ঐ বাড়ির সম্পর্কে !
যা জানতে পারলাম তার সারমর্ম হল ঐ বাড়িতে এক অভিজাত পরিবার থাকতো । আর বাড়ির বড় মেয়ে সত্যি সত্যিই আত্মহত্যা করেছিল । তারপর থেকেই বাড়িটা হনটেড । কেউ থাকতে পারে না ।

আমি সিড়ি বেয়ে দুতলার বাড়ান্দাটার দিকে এগিয়ে গেলাম । বারান্দায় গিয়ে দেখি আনুশেখা আগে থেকেই বসে আসে অন্য দিকে মুখ করে । রাগ করেছে । এখন আমার রাগ ভাঙ্গাতে হবে ।
সত্যি বলতে কি অনেকে আমাকে ভয় পায় আমি এই ভূতের বাড়িতে থাকি বলে । ভাবে হয়তো আমি তান্ত্রিক টাইপের কিছু । কিন্তু আমার ঐ পেত্নীর টার সাথে গল্প করতে ভাল লাগে ।
-খবরদার পেত্নী বলবা না ।
আনুশেখা কিভাবে যেন আমার মনে কথা বুঝে ফেলে । আমি হাসলাম । ওর পাশে বসে বললাম
-বলব । কি করবা?
-পেত্নী বললে কিন্তু ঘার মটকে দিবো ।
আমি হাসতেই থাকি । একটু পর আনুশেখাও হাসে ।
এই ভাবেই আমাদের প্রতিটা রাত কাটে । গল্প করে । হাসাহাসি করে ।
কেবল সমস্যা হয় বাড়ির পাশ দিয়ে রাতের বেলা কোন লোক হেটে গেলে ।
সেই লোকটা এই হাসি শুনে ভয়টয় পায় । গ্রামে গিয়ে কতকিছু ছড়ায় ।
আমার অবশ্য মজাই লাগে....
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৫৭
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×