somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপানর মোবাইল নাম্বার কিন্তু আমি মুছে দিয়েছি........

১১ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিনের মত নিহিন ভার্সিটিতে যাচ্ছিল । পনের নাম্বর ঝিকাতলা থেকে যখন বাসে উঠল তখন বাসের প্রায় সব সিট ভরে গেছে । কেবল দেখল বাদিকের একটা ডাবল সিটের একটা ফাকা আছে । একটা ছেলে বসে আছে ।
নিহিন ঐ ফাকা সিট টাতেই বসে পড়ল । ঢাকা শহরে থাকতে হলে এতো কিছু ভাবলে চলে না । আর পাশের ছেলেটা দেখতে শুনতে তো খারাপ না । চেহারাটা একটু শ্যামলা তবে চোখ দুটো কি মায়াময় ! ছেলেটির পাশের বসার সময় নিহিহের একবার চোখাচোখি হল । কেমন একটা চাহনী দিয়ে ছেলেটি খানিকক্ষন তাকিয়ে রইল ছেলেটির দিকে । তারপর চোখ সরিয়ে নিল ।
নিহিন যখন ছেলেটার পাশে বসল ছেলেটা কেমন একটু জড়সড় হয়ে বসেল । এটা নিহিনের বেশ ভাল লাগল । কিছু কিছু ছেলে আছে যারা মেয়েদের পাশে বসলেই কেমন ইচ্ছা করেই গায়ের সাথে গা লাগায় । নিহিনের বড় মেজাজ খারাপ হয় ।
সেই তুলনায় এই ছেলেটা কত ভদ্র । কেমন জড়সড় হয়ে বসে আছে চেষ্টা করছে যেন নিহিনের শরীরের সাথে স্পর্শ না লাগে । নিহিনের একবার খুব বলতে ইচ্ছা হল যে আপনি সহজ হয়ে বসুন । কিন্তু লজ্জার কারনে বলতে পারল না ।
চুপচাপ এভাবেই বাস এগিয়ে চলছিল । হঠাত্‍ ছেলেটা ওর ডান পকেটে হাত দিল । কিছু একটা খোজার চেষ্টা করছে যেন ! তারপর বাম পকেটে ! তার আবার একই কাজ আবার করলো ! কেমন একটা অস্থির ভাব ।
ছেলেটার অস্থিরতা দেখে নিহিনের মনের মধ্যেও যেন অস্থিরতা দেখা দিল । বারবার মনে হতে লাগল যে ছেলেটা এতো কি নিয়ে অস্থির !
কিছু কি হারিয়ে গেল ছেলেটার !
মনে তো তাই হচ্ছে !!
একবার মনে হল এতো কেন ভাবছে ছেলেটাকে নিয়ে ? কোথাকার কে না কে ?
কিন্তু মানুষের মন বড় অদ্ভুদ জিনিস । বিশেষ করে মেয়েদের মন । কখন কি যে চায় বোঝা বড় মুশকিল !
তাকাবে না তাকাবে না করেও নিহিন ছেলেটার দিকে তাকিয়েই ফেলল ।
ছেলেটার চেহারায় তখন দিশেহারা ভাব !
সত্যি কিছু একটা নিশ্চই হারিয়েছে ছেলেটা ! নিহিন বলল
-কোন সমস্যা ?
-আমার মোবাইলটা খুজে পাচ্ছি না । পকেটেই ছিল । বোধ হয় পরে গেছে অথবা কেউ নিয়ে গেছে !
ছেলেটার মুখ দেখে একটু মায়াই লাগলো ! নিশ্চই অনেক প্রিয় মোবাইল ছিল !
আসলে মোবাইল জিনিসটাই এমন । ব্যবহার করতে করতে এর উপর একটা মায়া জমে যায় ! হারিয়ে গেলে খারাপই লাগে !
নিহিন বলল
-মনে হয় কোথাও পড়ে গেছে ! ফোন দেন ! ফোন দিয়ে দেখেন !
-আমার কাছে তো আর মোবাইল নাই ।
-আচ্ছা আপনার নাম্বর টা বলেন আমি ফোন দিচ্ছি !
নিহিন মোবাইল বের করলো !
ছেলেটা নাম্বর বলল । মোবাইলে ডায়েল করার একটু পরই রিং হতে লাগলো । নিহিন ভেবেছিল যে হয়তো কেউ ফোন ধরবে না অথবা মোবাইল বন্ধ হবে । কিন্তু না । মোবাইলে রিং হচ্ছে এবং রিংয়ের আওয়াজ টা আসছে কাছ থেকে !
নিহিন দেখলো ছেলেটা ওর প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে একটু দিয়ে বলল
-আরে , মোবাইল তো এখানে !
তারপর একটু হাসলো । নিহিনের হাসিটা কেন জানি ভাল লাগলো না । কেমন একটু দুষ্টামির হাসি । নিহিনের খানিকটা সময় লাগলো ব্যাপার টা !
নিহিন প্রথমে কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারল না । ও ভাবতেই পারছেনা ছেলেটা এমন একটা কাজ করতে পারে ! অন্তত ছেলেটাকে দেখেতো এমন মনে হয়েছিল না । কি মায়াময় নিশ্পাপ একটা ছেলে ! আর এমন একটা কাজ করল !
নিহিন লক্ষ্য করলো ছেলের টার উপর ওর প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে । কোন মতে নিজের রাগ সামলে ও ছেলেটাকে বলল
-আপনি এমন কাজটা কেন করলেন ?
ছেলেটা একদম দুধের বাচ্চার মত মুখ করল, যেন কিছু বোঝেই না । বলল
-কোন কাজটা বলুনতো ?
-কোন কাজটা বোঝেন না ? ঢং করেন ?
ছেলেটা আবার বোকা বোকা একটা ভাব আনলো । তারপর মাথা দুপাশে নাড়িয়ে বলল
-আমি ঢং করছি না সত্যি ।
-তাহলে আপনি এই কাজটা কেন করলেন বলেন? বলেন কেন করলেন ?
-আরে সত্যি বলছি আমার মোবাইলটা খুজে পাচ্ছিলাম না । আমার মনে হয়েছিল মোবাইলটা বুঝি পরেই গেল ।
-আপনার পকেটে মোবাইল আর আপনি বোঝেন নি যে আপনার মোবাইলটা কোথায় ? আামকে বোকা পেয়েছেন?
এই কথা শুনে ছেলেটা একটু হাসলো ।
ছেলেটার এই হাসি দেখে মেন হলো ছেলেটা খুব মজা পাচ্ছে নিহিনের কথা শুনে ! ছেলেটা তো সত্যি ওকে বোকাই পেয়েছে ! কি চালাকি করে ওর মোবাইল নাম্বরটা নিয়ে নিল । আর ও বোকার মত মোবাইল নাম্বার টা দিয়েও দিল !
নিহিনের এতো রাগ লাগছে । ছেলেটার তো লাগছে তার থেকেও নিজের উপর বেশি লাগছে ! এমন গাধার মত কাজটা ও করলো কিভাবে ??
নিহিন রাগ সামলাতে সামলাতে বলল
-আপনি আমার মোবাইল নম্বার মুছুন । তাড়াতাড়ি মুছুন বলছি !!
ছেলেটা আমার হাসলো । বলল
-আচ্ছা । আপনি রাগ করবেন না । আমি মুছে দিচ্ছি ।
ছেলেটা ওর সামনে মোবাইল বের করে নাম্বরটা মুছে দিল । বলল
-খুশি ?
নিহিন আর কোন কথা বলল না । তবুও মেজাজটা খারাপ হয়েই রইল । কি সহজ ভাবেই না ছেলেটা ওকে বোকা বানিয়ে ফেলল । আর ও কি সহজেই না বোকা হয়ে গেল ! এই বুদ্ধ নিয়ে ঢাকা শহরে চললে কি হবে ?
তবে এটা একটা আশার কথা যে ছেলেটা ওর সামনেই মোবাইল নাম্বারটা মুছে দিয়েছে ।
এই জন্যই কিনা নিহিন জানে না যে ছেলেটার উপর রাগটা খানিকটা কমে এল । আর ছেলেটাকে ভদ্রই মনে হল । কারন যদি ভদ্র না হত তাহলে মোবাইল নাম্বার মুছতো না ।
শাহবাগে এসে নিহিন নেমে গেল । বাসটা তখনও ছেড়ে যাই নি । নিহিন রাস্তা পার হয়ে এপাড়ে আসার পরই ওর মোবাইলটা বেজে উঠল ।
বে রকরে দেখে আন নোন নাম্বার ।
-হ্যালো
-আপনি চিন্তা করবেন না । আপনার মোবাইল নাম্বারটা কিন্তু আমি মুছে দিয়েছি ।
- মানে?
নিহিনের চোখ গেল বাসটার দিকে । ছেলেটা হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে । হাত নাড়ল । তারপর আবার বলল
-আপনার নাম্বার !! আমি মুছে দিয়েছি !!
বাস তখন ছেড়ে দিয়েছে । ছেলেটা হহাত নাড়তে নাড়তে চলে গেল ।
আর নিহিন বোকার মত দাড়িয়েই রইল শহবাগ মোড়ে !!


ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:৪৭
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×