somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিহিন আর আমার গল্প ....।

১৮ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিহিনের মুখ টা কেমন বিষন্ন মনে হল । অন্যান্য দিনে ওর চেহারায় যে উজ্জলতা থাকে আজ তার ছিটে ফোটাও নাই । কেমন মুখ অন্ধকার করে বসে আছে ।
নিহিনকে হাসিখুশি অবস্থায়ই ভাল লাগে খুব । এমন একটা প্রানবন্ত মেয়ে যদি মুখ অন্ধকার করে বসে থাকে তাহলে কি ভাল লাগে ? কিন্তু আমি কারনটা জিজ্ঞেস করতে পারছি না । কারন আমার জানা । আমার কারনেই ও এমন ভাবে বসে আছে । বললাম
-কোন কথা বলবে নাকি এরকম চুপ করেই থাকবে ?
-কেন আমার পাশে বসে থাকতে ভাল লাগছে না ? এখন তো ভাল লাগবেই না । আমিতো পুরানো হয়ে গেছি ।
-আরে এটা কি ধরনের হল ?
নিহিন আমার দিকে তীব্র চোখে তাকিয়ে বলল
-তাহলে কাল রাতে তুমি ঐ কথা কেন বললা ? কেন বললা বল ?
আমি কি জবাব ? আমিই কেবল জানি আমি কেন বলেছি !
আমি বললাম
-চল বাইরে যাই । এখানে অনেক ভীড় ! চল মিন্টু রোডে যাই । চা খেয়ে আসি ।
নিহিনের চোখের তীব্রতা খানিকটা কমল । চুপচাপ উঠে দাড়াল ।
-চল ।
নিহিন কে ভাল করে দেখলাম এতোক্ষনে । আমার আগেই এসে বসে ছিলতো তাই ভাল করে দেখতে পারি নি !
নিহিনের পছন্দের পোষাক । কালো জিন্সের সাথে কালো টিশার্ট ! সাথে ধবধবে সাদা স্কার্ফ !

প্রথমদিন ঠিক পোষাকটাতেই দেখেছিলাম ওকে ! সেদিন টিউশনীতে গিয়েছিলাম । আমার ছাত্রের বাসা ছতলায় । আমি লিফটের মধ্যে ঢুকে ছয় বাটনে চাপ দিলাম । লিফটের দরজা বন্ধ হবে ঠিক এমন সময় কালো টিশার্ট আর কালো জিন্স পরা একটা মেয়ে লিফটের দিকে স্টপ স্টপ বলতে বলতে দৌড়ে আসছে ।
আমি লিফটের দরজা বন্ধ হওয়া থেকে আটকালাম । মেয়েটা কেমন উড়তে উড়তে লিফটের মধ্যে ঢুকে পরল । দরজা বন্ধ হতেই মেয়েটা চার নম্বর বাটন চাপল । বুঝলাম মেয়েটা বাড়িয়ালার মেয়ে ।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-থ্যাঙ্কিউ ।
আমি কোন মতে একটু হাসার চেষ্টা করলাম । ভেবেছিলাম আর কোন কথা হবে না কিন্তু মেয়েটা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করল
-ছয় তলায় যাবেন ?
-জি !
আমার গলার স্বর আমার কাছেই যেন কেমন মনে হল । ঠিক বুঝলাম না এমন কেন হচ্ছে । আসলে মেয়েদের সাথে ঠিক মত কথা বলার অভ্যাস নাই তো তাই হয়তো এমন হচ্ছে ।
-ছতলায় থাকেন আপনি ?
-জি না । টিউশনী ।
-ও !
মেয়েটা হয়তো আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ততক্ষনে চারতলায় পৌছে গেছে লিফট । মেয়েটা একটু হেসে লিফট থেকে বের হয়ে গেল ।

নিহিন আস্তে আস্তে হাটছিল । আমি বললাম
-রিক্সা নেবো?
-কেন আমার পাশে হাটতে ভাল লাগছে না ?
নাহ । আজকে এই মেয়েটার কি হয়েছে ? এমন ভাবে কথা কেন বলছে ! আক্রমনের মনভাব প্রতিটা কথায় !! বললাম
-মিন্টুরোড এখান থেকে বেশ খানিকটা দুরে । তোমার হাটতে কষ্ট হবে ।
-আচ্ছা আমার হাটতে কষ্ট হবে এটা তুমি দেখতে পাচ্ছো আর কাল যে তুমি আমাকে কষ্ট দিলে সেটার কিছুর হবে না ।
আমি কি বলবো ? নিহিন বার বার ঐ একই কথা বলছে । বললাম
-নিহিন প্লিজ ঐ কথাটা আর বল না । তোমার কি মনে হচ্ছে আমি কথাটা ইচ্ছে করে বলেছি ?
-তাহলে কেন বলেছো ? বল ।

আমি ভেবেছিলাম ঐ দিনের পর মেয়েটার সাথে আমার আর দেখা হবে না কিন্তু দেখা হল ঐ দিনই আবার দেখা হল । টিউশনী থেকে বের হয়ে লিফট ঢুকতে যাবো মেয়েটাকে আবার দেখতে পেলাম । ছাদ থেকে নামছে ।
বাসাটা ছয়তালায় । আর লিফটটা এই ছয়তলা পর্যন্ত আছে , ছাদ পর্যন্ত যায় নি । মেয়েটা নিশ্চই ছাদে গিয়েছিল হাওয়া খেতে !
আমি আগে মেয়েটাকে ঢুকতে দিলাম লিফটে ।
-আপনার সাথে আবার দেখা হয়ে গেল !
এই বলে মেয়েটা হাসল ।
আমিও একটু হাসার চেষ্টা করলাম । আমি ভেবেছিলাম মেয়েটা চার তলা নেমে যাবে , কিন্তু নামল না । আমার সাথে নিচ তলা পর্যন্ত নেমে এল । আমি যখন লিফট থেকে বের হতে যাবো তখন মেয়েটা বলল
-আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার সাথে আমার আবার দেখা হবে !
আশ্চর্যের বিষয় ! ঠিক একই কথা যেন আমার মনে হচ্ছিল । মেয়েটার সাথে আমার আবার দেখা হবে ! কিন্তু মেয়েটাকে তো আর এই কথা বলতে পারলাম না ।
লিফট থেকে বের হয়ে মেয়েটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-আমি নিহিন !
হাত ধরবো ? মনে মনে বললাম ! মনের ভিতর কেমন একটা অনুভূতি হল ! একটা মেয়ের হাত ধরবো ?

নিহিন মিন্টু রোড়ের ফুট পাট ধরে ! আমি ওর পাশাপাশি হাটছি । নিহিনের মুখটা যেমন গম্ভীর ছিল তেমনটা আর নাই । ওখান কেমন একটা আনন্দের আভা দেখা যাচ্ছে ওর চেহারায় ! আসলে এই মিন্টু রোডটা আমার যেমন প্রিয় ওর ও তেমন প্রিয় । আমরা প্রায় দিনে এই রাস্তায় হেটে বেড়াতাম । গল্প করতাম । বিশেষ করে ডিবি অফিসের সামনে যে চায়ের দোকানটা আছে, ওখানকার চায়ের দোকানের চা ওর খুব পছন্দ ।
আমার মনে প্রথম যেদিন ওর সাথে এখানে চা খেতে এসেছিলাম । একে বারে হঠাৎ‍ করেই । আমি টিউশনী থেকে বের হচ্ছিলাম । গেট দিয়ে বের হতে যাবো ঠিক তখনই দেখলাম নিহিনের গাড়ী গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছে ।
আমার দিকে চোখ পড়তেই নিহিন মিষ্টি করে হাসল । আমি হাসলাম । ঐদিন লিফটের ভিতরে দেখা হবার পর প্রায় দিনই আমাদের দেখা হয়ে যেত ! টিউশনীতে ঢোকার অথবা বের হবার সময় ।
একদিন তো আলবেইকের মধ্যে দেখা হয়ে গেছিল ।
প্রতিবারই একটু হাসি দুএকটা কথা হত । ভেবেছিলাম নিহিন হযতো গাড়ি থেকে নামবে না । কিন্তু নিহিন গাড়ি থেকে চট করে নেমে পড়ল । আমাকে বলল
-বাসায় যাচ্ছেন বুঝি ?
-জি ।
-আমি মনে মনে আপনাকেই খুজতেছিলাম ।
আমি অবাক হলাম ওর কথায় ! নিহিনের মত একটা মেয়ে আমাকে খুজছে ! এটা খানিকটা অবিশ্বাস্য ! হয়তো বলেছে কেবল কথার কথা ! নিহিন বলল
-এখনই কি বাসায় চলে যাবেন ?
না সমস্যা নাই !
-তাহলে চলুন চা খেয়ে আসি !
-চা ??
নাহ এই মেয়েটার আচরন খানিকটা অদ্ভুদই !! সাধারনত মেয়েরা এমন আচরন করে না ! কিন্তু এই মেয়েটা করছে ! আর আমার প্রতি বেশ ভালই আগ্রহ দেখাচ্ছে !
কিন্তু কেন ??
নিহিন যখন আমাকে এই মিন্টু রোডে নিয়ে এল আমি ঠি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না ঢাকার মত শহরে এমন একটা জায়গা আছে !! নিহিন বলল যে এখানে সব ভিআইপি লোকরা থাকে ! তাই এমন সুন্দর জায়গাটা !!
ঐদিনই নিহিন আমার মোবাইল নাম্বার নিলো ! দুজনের মাঝে অনেক কথা হল !!
সত্যি বলতে কি ওমন সুন্দর একটা রাস্তায় নিহিনের মট মেয়ের পাশাপাশি বসতে কি পরিমান ভাল যে লাগছিল !! মনে হচ্ছি যেন আমি স্বপ্নের মধ্যে আছি !
যখন আমি বাসায় আসলাম বুঝলাম যে আমি নিহিনের প্রেমে পরেছি!
এবং খুব ভাল ভাবেই উপলব্ধি করলাম বিষয় টা । নিহিন মেয়েটা এই কয়দিনে আমার মনের মাঝে একটা দৃঢ় আসন নিয়ে বসেছে ! আমি আমার মন থেকে কিছু তেই ওকে দুর করতে পারছি না ।

(চলবে, হয়তো..............)


আজ কেন জানি মনে হল বাসায় যেতে !! কতদিন টিয়াপাখি কে দেখি না !! যাই একটু দেখেই আসি আমার টিয়া পাখিটাকে..........
সামনে পরীক্ষা ??? তো কি হয়েছে..।
জাহান্নামে যাক সব কিছু .........
একবার যখন মনে হয়েছে দেখা করা লাগবে তখন লাগবেই.... :) :) :) :)

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:২১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×