somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন বৃষ্টিতে ইজিবাইকে..........

২৫ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিশির শরীরটা কদিন থেকে ভাল যাচ্ছে না । এক জায়গায় বেশিক্ষন বসে থাকলেই কেমন যেন একটা দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা হয়, বুকের ভিতর কেমন একটা ব্যাথা শুরু হয় । আর ওর চাকরীটা হয়েছে বসে থাকার । একের পর এক রুগী আসে আর ওকে ঔষধ দিতে হয় । বিরক্তিকর একটা কাজ । তবুও কিছু করার নেই , করতেই হবে ।

চাকরী করছে বলেই ও এখনও নিজের বিয়েটা আটকে রেখেছে । চাকরী যদি না করতো তাহলে নিশির আব্বা কবেই ওকে বিয়ে দিতো ।
নিশি ঘড়ি দেখলো, দুটো বেজে গেছে । অপুকে ফোন করার সময় হয়ে গেছে । একটু আগে অপু ওকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল । জানিয়েছে যে ও চলে এসেছে । এখন কেবল ওর ফোনের অপেক্ষায় । নিশির ফোন ধরলো না অপু । কখনও ধরে না । সব সময় কেটে দিয়ে কল ব্যাক করে । আজও তাই করল । ফোন রিসিভ করে ও বলল
-ইজিবাইক পেয়েছ ?
-না এখনও তো পাই নি । বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তো !
-বৃষ্টি হচ্ছে ?

নিশি খানিকটা অবাক হল । কাজের মধ্যে এতোই ব্যস্ত ছিল যে টেরই পাই নি ।
-তাহলে এখন ?
-তুমি চিন্তা করো না । আর দশটা মিনিট অপেক্ষা কর । আমি ব্যাবস্থা করছি ।
-আচ্ছা ।

ফোন রাখার পর ওর একটু চিন্তাই হল । বাসায় যাবার সময় হয়েছে । যদি অপু সময় মত ইজিবাইক না ঠিক করতে পারে তাহলে হয়তো আজ ওর সাথে আর দেখাই হবে না ।
আর দেখা না হলে ........
নিশি আর ভাবতে চাইলো না ।
নিশির শরীরটা কদিন থেকেই ভাল যাচ্ছিল না , এজন্যই অপু খানিকটা অস্থির ছিল ওকে দেখার জন্য । প্রতিদিন ফোন করলে সবার আগে কেবল একই কথা শরীর কেমন আছে ?
জ্বর নেই তো ?
বুকের ভিতর ব্যাথা করছে না তো ?
নিশি প্রথম প্রথম বলত সত্য কথা, কিন্তু অপু ওর কথা শুনে খুব অস্থির হয়ে যেত !
তারপর থেকে নিশি খানিকটা মিথ্যা বলা শুরু করে যে ওর শরীর ভাল আছে । যদিও খানিকটা খারাপ লাগত অপুর কাছে মিথ্যা বলাটা কিন্তু অপুর অস্থিরতা ওর কিছুতেই ভাল লাগত না । প্রথম কদিন বিশ্বাস করলেও অপু কেমন করে যেন টের পেয়ে গেল যে ওর শরীরটা ভাল যাচ্ছে না ।

অপুর বারবার জিজ্ঞেস করতো যে তোমার শরীর ভাল যাচ্ছে তো ! যতবার ফোন করতো ততবার সেই একই কথা !
শরীর ভালতো তোমার ? বুকের ব্যাথার কি অবস্থা ?
কি আশ্চর্য !
এই ছেলেটা এতো দুরে থেকেও কেমন করে বুঝে যায় ? নিশি ভেবে পায় না । কাল দুপুরে ফোন করে বলল যে ও বাসায় আসছে ।
নিশি খানিকটা অবাক হল । একটু রাগও দেখাতে চাইল । বলল
-সামনের সপ্তাহে না তোমার ফাইনাল পরীক্ষা ? এখন বাসায় আসলে পড়ালেখার কি হবে ?
অপু বলল
-পড়া লেখা জাহান্নামে যাক ! তোমাকে না দেখলে মন কিছুতেই শান্ত হবে না ।
নিশি আর বাঁধা দিতে পারে নি । বাঁধা দিলে অপু শুনতোও না ।
কিন্তু এখন যদি ইজিবাইক না পাওয়া যায় তাহলে তো অপুর এতো কষ্ট করে আশা বৃথা যাবে । আজ যদি ওদের দেখা না হয় তাহলে আর হয়তো ভাল ভাবে দেখাই হবে না ।
একটু ভাল করে কথাও বলতে পারবে না । নিশি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে এই কথা গুলোই ভাবছিল এমন সময় ফোন বেজে উঠল ।
-কি পেয়েছ ?
অপু বলল
-এই প্রায় চলে এসেছি । তুমি বাইরে বের হও ।
যাক, মনে মনে একটা শান্তি অনুভব করলো । অন্তত এই অল্প কিছুক্ষন অপুর কাছাকাছি থাকা যাবে ।
নিশি বাইরে বেরিয়ে দেখলো বৃষ্টি বেশ ভালই পড়ছে ।

অপু সব সময় এমন বৃষ্টি দিনের কথা বলত ! বৃষ্টি শুরু হলেই অপু ফোন করে বলত জানো পাখি আমার জীবনের সব থেকে সুন্দর স্বপ্ন গুলোর মধ্য একটা হচ্ছে তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজা । তোমার হাত ধরে বৃষ্টির পানিতে লাফালাফি করা ।
আজ কি ঐ রকম কিছু হবে !
নাহ , নিশির বৃষ্টিতে ভেজার উপায় নেই । অফিস থেকে যাওয়ার পথে যদি বৃষ্টিতে ভেজে তাহলে নিশিকে ওর বাবা হাজারটা প্রশ্ন করবে ।
মোড়ের মাথায় পৌছিয়ে দেখল অপু দাড়িয়ে আছে । ইস ! কতদিন পরেই না অপুকে দেখলো ও । গত মাসের প্রথম দিকে ওকে দেখেছিল আর আজকে এই মাসের অর্ধেকটা ইতি মধ্যে পার হয়ে গেছে ।

নিশি চুপচাপ ইজিবাইকটা তে উঠে বসলো । নিশির ইজিবাইকে চড়তে ভালই লাগে , বিশেষ করে যখন অপু এরকম রিজার্ভ করে আনে । কেবল ওরা দুজন । অবশ্য একটা সমস্যা আছে । ইজিবাইক গুলো একদম খোলামেলা ।
সিএনজির মত আটকানো না । তাই নিশির মনে খানিকটা ভয়ও কাজ করে । যদি পরিচিত কারো চোখে পরে যায় বাসায় খবর পৌছাতে একটুও দেরি লাগবে না । আর বাসায় খবর পৌছালে নিশির আব্বা কি করবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।
তাই অপুর সাথে ইজি বাইকে চড়াটা একটু রিস্কি হয়ে যায় । যে কেউ দেখে ফেলতে পারে ।
অপু এতো কষ্ট করে ওর সাথে দেখা করতে এসেছে এইটুকু রিস্ক নেওয়াই যায় ।

যাত্রা শুরু হল ।
যদিও ওর পাশাপাশা বসে কিন্তু আজ অপু ওর মুখোমুখী বসছে । এরকম বসার কারনটা হল বাইরে বেশ জোরে বৃষ্টি হচ্ছে । আর বৃষ্টির ছাট আসছে বাইকের ভিতর । অপু পলিথিন পেপার দিয়ে খানিকটা বৃষ্টি আটকানোর চেষ্টা করছে । আর বাকিটা নিজের শরীর দিয়ে । নিশি বলল
-তুমি তো ভিজে যাচ্ছ ।
অপু হাসল । বলল
-সমস্যা নাই । তুমি না ভিজলেই হল ।
-আরে একটু ভিজলে সমস্যা নাই । তুমি ওভাবে ভিজো না । অপু আবার হাসল । বলল
-আমার ভিজতে ভাল লাগছে ! জানো আমার জীবনের ইচ্ছা গুলো কেমন করে জানি আস্তে আস্তে পুরন হয়ে যাচ্ছে ।
-কি রকম ?
-এই যে বাইরে কি চমত্‍কার বৃষ্টি হচ্ছে । আমরা দুজন একসাথে মুখোমুখি বসে । বৃষ্টির ফোটা এসে পড়ছে গায়ে !
কি চমৎকার এই অনুভূতি !
নিশির আসলেই খুব ভাল লাগছে । ভাল লাগছে এই পাগল ছেলেটার আনন্দ দেখে ।
-নিশিপাখি চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !

নিশি বলল
-তোমার কি মাথা খারাপ ? আমি যদি বৃষ্টিতে ভিজে বাড়িতে যাই আমার মা আমার খবর করে দেবে ।
অপু আর কিছু বলল না । বাসার কথা বললে অপু কখনই আরগু করে না । আপু আবার বলল
-কিন্তু বিয়ের পর কিন্তু বৃষ্টি হলেই ভিজতে হবে । তখন কিন্তু কোন কথা শুনবো না !

নিশি হাসে । সত্যি এই পাগল ছেলেটা সামনের দিন গুলো নিয়ে কতগুলো ভেবে রেখেছে । বৃষ্টি ধরে এল কিছুক্ষন পর । অপু আর একটু ভাল করে বসল নিশির মুখোমুখি । আপু বলল
-জানো আমার এখন কি করতে ইচ্ছা করছে ?
নিশি হাসল । বলল
-কি করতে ইচ্ছা করছে ?
-গেস কর ।
অপুর চোখ দুটো কেমন দুষ্টমিতে ভরে উঠল । নিশি খানিকটা চোখ গরম করে বলল
-শোন দুষ্টামী করবা না ।
অপু ভাল ছেলের মত বলল
-একটা মাত্র !
-শোন হবে না ।
অপু খানিকটা মন খারাপ করলো । নিশি বলল
-প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর ।
-আচ্ছা সমস্যা নাই । তুমি যা চাও তাই হবে । তবে বিয়ে আগে হোক তখন মজা দেখাবো !
এই বলে অপু নিশির হাতটা ধরল । তারপর হাতে আলতো করে একটা চুম খেল ।
-এখন এটাতেই আমি সন্তুষ্ট থাকছি কিন্তু ঈদে যখন বাড়িতে আসব তখন কিন্তু ...
নিশি খানিকটা লজ্জা পেল । এই ছেলেটা দিন দিন কেমন দুষ্ট হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু নিশি এটা নিয়ে কোন অভিযোগ করতে পারে না । আসলে অভিযোগ করতে চায় না । ওর এই আচরন গুলো নিশির খুব ভাল লাগে !

দেখতে দেখতে জার্নি শেষ হয়ে আসল । অপু বলল
-কি রকম ভাবে সময়টা শেষ হয়ে গেল । জানো তোমার সাথে সময়টা কেমন করে তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় । দেখতে দেখতে সময় পার হয়ে যায় !
অপুদের বাসাটা একদম রাস্তার পাশে ! প্রতিবার অপু এরকম ভাবেই নেমে পরে !






সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×