somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছাগলে ভোট দেওয়ার গল্প

০৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-কি রে তোর প্রমির সাথে কি চলছে ?
আমি ছাদে বসে হাওয়া খাচ্ছিলাম । আর সত্যি বলতে গেলে প্রমির জন্যই অপেক্ষা করছিলাম । মেয়েটা নতুন এসেছে আমাদের এলাকায় । আমাদের ঠিক পাশের বাসায় ভাড়ায় উঠেছে ! প্রতিদিন বিকেল বেলা ছাদে উঠে ।
আমিও উঠি ! আজও উঠেছিলাম কিন্তু আজ নিশি এসে হাজির !!
নিশি আবার জিজ্ঞেস করলো
-কিরে বলছিস না, কি চলছে ?
আমি বিরক্ত হয়ে পিছনে ফিরলাম
-যা বিরক্ত করিস না । সামনে থেকে ভাগ !
অন্য সময় হলে নিশি আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ত । চুলোচুলি টানাটানি শুরু হয়ে যেত কিন্তু আজ এমন কিছু হল না । নিশির চোখে রাগের বদলে কেমন একটা বিষন্নতা দেখলাম !
নিশি বলল
-তুই আমার সাথে এমন কেন ব্যবহার করছিস ?
-শোন তোর প্যান প্যান ভাল লাগছে না ! দুর হ সামনে থেকে !
নিশি তবুও আমার সামনে থেকে গেল না ।
-তুই আমার সাথে ঐ দিনের শোধ তুলছিস না ?
আচ্ছা ঝামেলায় পড়া গেল । এই মেয়েগুলা এমন প্যান প্যান কেন করে ??
আমি নিশির দিকে ফিরলাম
-হ্যা তোর ধারনা ঠিক ! আমি ঐদিনের শোধ তুলছি ! মনে আছে তোর আমার সাথে তুই কেমন আচরন করেছিলি?
নিশি কোন কথা না বলে থাকলো !! আামর দিকে কেমন একটা ভেজা চোখে তাকিয়ে রইল !! আমি আমার বাম গালটা দেখিয়ে বললাম
-ঠিক এই জায়গাটায় তুই চড় মেড়েছিলি , মনে আছে তোর ?
-তোর সাথে তো এর আগেও কত মারামারি করেছি, পরে তো তুই কখনও আমার সাথে এমন করিস নি ? আমি মেরেছি তুই মেরেছিস ......।
নিশি কথা শেষ করলো না ।
আমার মাথাটা খানিকটা গরম হয়ে গেল !
-দেখ নিশি আামকে রাগাস না ! ঐ দিন তুই আমাকে কিসের জন্য আমাকে চড় মেরেছিলি তোর মনে আছে?? অন্য দিনের সাথে ঐদিনের তুলনা করবি না । আর ঐদিন আমি তোকে মেরেছিলাম ??
-এখন মার ! এখন মেরে শোধ তুলে নে !
-শোন তোর সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না ।
-আমি বুঝতে পারি নি । আমি সত্যি বুঝতে, পারি নি ।
নিশি আমার সামনে দাড়িয়েই রইল ।
-বুঝতে পারিস নি ?
আমি হাসলাম । সিম্পল ভাবে একটা কথা বলেছিলাম । তুই খুব সিম্পল ভাবে তার জবাব দিয়েছিস ? আমার মনে আছে ! আর মনে থাকবে ।
আমি বুঝলাম আজ এখানে থাকা চলবে না ! নিশি পিছে লেগে থাকবে !
নিশিকে তো সেই ছোট বেলা থেকে চিনি !!

আসলেই নিশিকে আমি সেই ছোট বেলা থেকেই চিনি । যখন কিছু বুঝতে শিখি নি নি তখন থেকেই নিশির সাথে বড় হয়েছি । কত খেলা খেলেছি, মারামারি করেছি ! পাশাপাশি বাসা হওায়র সুবাধে ওর সাথে বড় হয়েছি একসাথে !! ওর এমন কোন জিনিস ছিল নাযার উপর হামলা চালাতাম না ! ছোট বেলা থেকেই ওর সব খেলনা যেন ছিল আমারই । আমার চেয়ে কয়েক মাসে বড় হলেও আমার সাথে মারামারিতে কেবল মারই খেত ! মার খাওয়ার পর কাঁদতে কাঁদতে আমার মার কাছে এসে নালিশ করতো !
একদুদিন আমার সাথে কথা বলতো না । তারপর নিজেই আসতো আবার খেলার জন্য । আবার মার পিট হত আবার মিলমিশ হত !!
এভাবেই আমাদের বড় হওয়া ! প্রাইমারি থেকে হাইস্কুল, হাইস্কুল থেকে কলেজ এভাবেই আমরা মারামারি করেই বড় হয়েছি !
একটা সময় আমার কেবল মনে হল যে যেমন করে ওর সব খেলনার উপর আমার সারাজীবন অধিকার ফলিয়ে এসেছি তেমন করে ওর সব কিছুর উপর আমার অধিকার । তাই সেদিন যখন নিশিকে কলেজের এক বড় ভাইয়ের সাথে হেসে কথা বলতে দেখলাম কেন জানি খুব রাগ রাগলো !!
কেন রাগ রাগলো বুঝলাম না ।
কেবল মনে হচ্ছিল আমার কিছু যেন আামর কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে !! আমর জিনিসটা যে আর আমার নাই !
ঐদিন রাতেই নিশিকে ছাদে ডেকে নিয়ে আসলাম । নিশি তখনও জানে না আমার মনের ভীতর কি চলছে !
আমি ওকে ঐ বড়ভাইয়ের সাথে মিশতে বলতে মানা করলাম । নিশি খানিকটা অবাক হল । বলল
-কেন? কেন মিশবো না !
-মিশতে মানা করেছি তাই মিশবি না !
-দেহ অপু ফালতু কথা বলবি না । আর আমি তোর কথা শুনতে বাধ্য না ।
-না তোকে শুনতে হবে !
-তুই আমার বয়ফ্রেন্ড না যে তোর কথা আমি শুনবো !
আমার কেন জানি খুব রাগ হল । নিশিকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলাম । বললাম
-হ্যা আমি তোর বয়ফ্রেন্ড । আমি তোকে ভালবাসি ! তুই ভালবাসিস না আমাকে ?
কিছুক্ষন নিশি কোন কথা বলল না । নিজেকে আামর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমাকে কষে একটা চড় মাড়লো ।
-লজ্জা লাগলো না তোর এই কথাটা বলতে ! ছিঃ
আমি কিছু সময় যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম । চিরো চেনা এই মানুষ টা কেন যেন বড় অচেনা লাগলো !
নিশি চলে আমি দাড়িয়েই রইলাম !

আমি সিড়ির দিকে পা বাড়ালাম !
-অপু জাস না, দাড়া ! প্লিজ দাড়া একটু !
আমি কোন কথা শুনলাম না ।
নিশির সাথে তারপর দুদিন আর কোন কথা বললাম না । বলতে গেলে ওর সাথে কোন দেখাই করলাম না । ও বেশ কয়েকবার আসলো আামর সাথে দেখা করতে কিন্তু আমি দরজা খুললাম না ।
৩য় দিন রাতের বেলা খাবার খাওয়ার পর মা আমার ঘরে এসে বলল
-তোর সাথে কিছু কথা বলার ছিল ।
-বল মা !
- নিশির সাথে তোর কি হয়েছে ?
-কেন ও তোমাকে কি বলেছে ?
-ও কিছু বলেনি ।
-তাহলে?
মা কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো । তারপর বলল
-নিশি দুদিন ধরে কিছু খাইনি ! একটু আগে ওর মা বাবা এসেছিল !
আমি কিছু না বলে মার দিকে তাকিয়ে রইলাম । মা আবার বলল
-জানতে চাসনা কেন খাই নি?
আমি কি জানতে চাইবো ! আমি তো জানি ! এখন আমাকে যেতে হবে ওকে খাওায়তে হবে ! এই মেয়েগুলা এমন ঢং জানে না !!
তবুও বললাম
-কেন?
-আসলে নিশি..........
দেখলাম মা নিজেও খানিকটা অস্বস্তি বোধ করছে !
-মা বল , নিশি ...
-নিশি বাবা মা এসেছিল তোর সাথে নিশির বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে !
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । মানে কি ! কি বলছে এসব !১
আমি মা কে বললাম
-কি বলছো এসব? বিয়ে মানে ?
-নিশি এটা নিয়েই জেদ ধরে আছে যে তোকে বিয়ে করবে ! না হলে কিছু খাবে না । ওর বাবা মা ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে । কিন্তু তুই তো নিশিকে চিনিস ভাল করে !! শেষ না পেরে আমাদএর কাছে এসেছে ।
আমি কি বলবো ঠিক বুঝতেই পারলাম না । আসলে নিশি যে আমন একাট কাজ করে ফেলবে আমি ভাবতেই পারি নি !
আমি মার দিকে আবার তাকালাম । মা বলল
-দেখ নিশিকে তোর বাবারও পছন্দ আমারও পছন্দ । আমরা মোটামুটি ঠিক করেই রেখেছিলাম যে তোর সাথে নিশির বিয়ে দিবো ! কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি ভাবি নি ! দেখ তুই ভেবে !!

আমি আর কিছু ভাবতেই পারছি না !! আামর পুরো ব্রেন যেন ফাকা হয়ে যাচ্ছে !! এই মেয়েটা কি পাগল নাকি !!
তবে একটা কথা সত্যি যে নিশি পরে বুঝড়ে পেরেছে ও নিজেও আমাকে ভালবাসে ! আমি যেমন ঐ বড় ভাইয়ের সাঠে নিশিকে দেখে নিশকে হারানোর ভয় পেয়েছিলাম , বুঝেছিলাম ওকে ভালবাসি তেমনি প্রমির সাথে আমাকে টাংকি মারতে দেখে নিশির মনে ও একই অনুভুটি জেগে উঠেছিল !!

বুঝলাম ও বুঝতে পেরেছে । এই কথাটা আমাকে এসে বললেই হত !! তাই বলে একেবারে সোজাসুজি বিয়ে ! এখন মাত্র কলেজে পড়ি ! এখন বিয়ে করা কি ঠিক হবে? ছাত্র বয়সে বিয়ে মানে ছাগলে ভোট দেওয়া !
এতো সকালে ছাগলে ভোট দেওয়া কি ঠিক হবে !!

কিন্তু ছাগলে ভোট দিতেই হল ! ঐ রাতেই কাজী ডেকে ছাগলে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল.............
আর আমিও দিয়েদিলাম ভোট একখান.........
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:৩৯
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×