সকাল বেলা ক্যান্টিনে ঢুকেছি । একদম কর্ণারে চোখ পরতেই একটু অবাক হলাম ।
সাইরা বসে আছে ! তাও আবার একা !!
মেয়েটা এতো সকালে ক্যাম্পাসে কেন এসেছে ?
আমি অন্য একটা টেবিলে বসতে যাবো ঠিক তখনই সাইরার সাথে চোখাচোখি হল ।
হায় আল্লাহ !
মানুষকে এতো সুন্দর কেন বানিয়েছ !!
বুকের ভিতর কেমন একটা চিনচিন ব্যাথা অনুভব হয় !
আমি নিজেকে আর কত দিন ধরে রাখবো ?
আচ্ছা আজকে কি সাইরাকে একটা শক দেওয়া দেওয়া যায় ? একা আছে ! ওকে তো একা পাওয়াই যায় না ।
দেখি এক ঝাটকা দেওয়াই যায় !
আমি সাইরার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায় । ও আমার দিকে তাকিয়েই আছে । একটু অবাক হয়ে ।
আসলে একটু অবাক হবারই কথা । যে ছেলেটা পুরো বছর জুরে তার সাথে কথা বলে নি সেই ছেলেটাই যদি নিজ থেকে কথা বলতে এগিয়ে আছে তাহলে তো একটু অবাক হবারই কথা । আমি যখন ওর টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ালাম সাইরা তখন আমার দিকে তাকিয়ে ।
আমি নিজের মনে মনে একটু উত্তেজিত কিন্তু বাইরে নিজেকে একদম শান্ত রাখলাম । সাইরার সাথে এমন ভাবে কথা বলতে যেন ওর সাথে আমার প্রতিদিন কথা হয় । আমি চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললাম
-হেই কি খবর ? এতো সকালে কেন ?
সাইরা কেবল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েই রইল । আমি বললাম
-কি হল ?
-কিছু না ।
-নাস্তা করবা না ?
সাইরা মাথা নাড়াল ।
-হুম !
নাস্তার অর্দার দিলাম । সাইরা অল্প অল্প করে পরোটা মুখে দিচ্ছিল আর আমার দিকে তাকাচ্ছিল । হঠাত্ সাইরা বলল
-আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আমার সাথে বসে নাস্তা করছো !
আমি একটু অবাক হওয়ার ভান করলাম । বললাম
-কেন ? আমি তোমার সাথে বসে নাস্তা করতে পারি না ?
না, পারো । পারবে না কেন ? কিন্তু যে ছেলেটা আমাকে কোন দিন ঠিক মত লক্ষ্যই করে নি সেই ছেলেটা আমার সামনে বসে নাস্তা করছে !
আমি এতোক্ষন এই রকম একটা সুযোগের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম । এবার সুযোগ এসেছে আর একটা ঝাটকা দেওয়ার । আমি একটু হেসে বললাম
-লক্ষ্য করি না ??
একটু চুপ করলাম । তারপর বললাম
-তুমি ঠিক এক সপ্তাহ আগে এই দিনে নীল রংয়ের একটা সালোয়ার কামিজ পরেছিলে । তোমার কানের দুল ছিল সাদা ষ্টোনের । চুল গুল বাধা ছিল । কিছুটা চুল সামনে আসছিল বারেবার । আর গত পরশুদিন যেই ব্রেসলেট টা পরেছিলে ঐ দিনও ঐটা পরা ছিল । কাঁধে ছিল নীল রংয়ের ব্যাগ যেটা তুমি তারও তিন দিন আগে নিয়ে এসেছিল এবং গতকালও নিয়ে এসেছিলে । তোমার পছন্দের রং মনে হয় নীল । যাই কিছু পর না কেন তাতে একটা নীলের ছোঁয়া থাকে । আর তোমার একটা নীল রংয়ের ডায়রী আছে । ওটা তুমি সব সময় কাছে রাখো !
আমি সাইরা কিছুটা অবাক হওয়ার সময় দিলাম । নাস্তা খাওয়া হয়ে গেছিল । আমি বললাম
-ক্লাসে দেখা হবে । আসো ।
আমি উঠে চলে এলাম ।
সাইরার পেছনে পুরো ডিপার্টমেনট ঘুরে । একেবারে ফাস্ট ইয়ার থেকে মাস্টার্সের ভাইয়ারা পর্যন্ত । আর ঘুরবেই না কেন ? সাইরার মত মেয়ে তো আর সচারচার দেখা যায় না ।
প্রতিদিন সাইরার লাল রংয়ের এলিয়নটা যখন ক্যাম্পাসে ঢুকে মোটামুটি একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে যায় । আর আমাদের ক্লাসের প্রত্যেকটা ছেলে সাইরার সাথে এমন ভাবে কথা বলে সাইরা তাদের বাপের ঘরের গার্লফ্রেন্ড ।
একবার আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম কি রে সাইরার সাথে এমন ঢলাঢলি কেন করিস ?
আমার বন্ধু চোখ উল্টে বলল
-আরে ও তো আমাদের ক্লাসের মেয়ে । এটা তো আমাদের লাক । এটা আমাদের সুযোগ না ? আমাদের এই সুযোগের সদব্যবহার করা কি আমাদের উচিত্ না ।
আমি বললাম
-তা তো অবশ্যই ।
আর এই ফাজিল মেয়েটাও সব গুলার সাথে এমন ঢং করে বেড়ায় ! ক্লাসের সবাই যখন সাইরা নামের সোনার পাখির পেছন দৌড়াদৌড়ি করছে আমি তখন একা ।
আমি কোন দিনও সাইরার পেছনে যাই নি । এমন কি ওর সাথে কোনদিন কথাও বলি নি ।
গত বার ওর জন্মদিনের সময় । সাইরা ক্লাসের সবাই দাওয়াত করলো । পুরো ক্লাসের জন্য বসুন্ধরার ক্রাপ্রিকর্ন ভাড়া করা হল । সবাই হাজির কেবল আমি বাদে ।
আর একটা গ্রুপ অবশ্য গেল না । আমাদের ক্লাসের কোন মেয়েও গেল না ।
এটা একটা চিরায়িত সত্য যে একটা মেয়ে কখনই অন্য একটা মেয়ের সৌন্দর্য সহ্য করতে পারে না ।
আর একটা মেয়ে একটা ছেলেকে পছন্দ করে কিন্তু সেই ছেলেটা যদি অন্য অন্য একটা মেয়েকে পছন্দ করে বা পেছনে ঘুরে তাহলে ঐ প্রথম মেয়ে দ্বিতীয় মেয়েকে মনে প্রানে ঘৃনা করে ।
এবং করবেই । এই ক্ষেত্রেই ঠিক তাই হয়েছে । ক্লাসের সব মেয়েরা যখন দেখল যে সব ছেলেগুলো ঐ একটা মেয়ের পেছনেই ঘুরছে তাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না তখন সাভাবিক ভাবেই সাইরা তাদের বিষ নজরে এল ।
অবশ্য এই দিক দিয়ে আমার খুব একটা উপকার হল । ক্লাসের অন্য সব মেয়েরা যখন লক্ষ্য করলো যে আমি সাইরার পেছনে যাই না তখন সব মেয়ে গুলো আমার প্রতি খুব আগ্রহী হয়ে উঠল ।
সত্যি খুব বেশি আগ্রহী ।
সাইরা নিজেও আমার প্রতি আগ্রহী উঠল ।
প্রথম প্রথম খ্যাল করতো না কিন্তু একটা সময় ও ঠিকই লক্ষ্য করলে একটা ছেলে ওর দিকে আসছে না !
যদি এমন হত যে আমি কোন মেয়েয় সাথে কথা বলছি না, তাহলে হয়তো ওর কিছু মনে করতো না ।
কিন্তু সাইরা যখন দেখলে যে আমি সব মেয়ের সাথে কথা, বলি আড্ডা মারি কিন্তু তার সাথে কথা বলছি না, তাকে ইগনোর করে চলছি । তখন আমাকে একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখাই স্বাভাবিক !
আর এটা যে কোন মেয়ের জন্যই সহ্য করা কঠিন । বিশেষ করে সুন্দরী মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা তো খুবই সত্য । সুন্দরী মেয়েয়া মনে করে সৌন্দর্য হল তাদের সব থেকে বড় সম্পদ । সব থেকে বড় গর্বে বিষয় । কিন্তু কোন ছেলে যখন তার এই সৌন্দর্যকে মূল্য দেয় না তার মানে হল সেই ছেলে তার সৌন্দর্যকে অপমান করলো, তাকে অপমান করলো !!
তখন মেয়েটা প্রথম প্রথম ছেলেটার উপর খুব বিরক্ত হবে । তার খুব রাগ হবে কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে মেয়েটার মনে কৌতুহল জাগবে । মনে মনে বলবে সবাই আমার পেছনে আসে ঐ ছেলেটা আসে না কেন ?
কেন আসে না ?
এক সময় এই কৌতুহল এমন একটা পর্যায়ে পৌছাবে মেয়েটা তখন ঐ ছেলেটার দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করবে । সাইরা ইদানিং তাই করতেছে । আমার দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা ।
আমি মনে মনে হাসি । ভাবি এতো দিন অপেক্ষার ফল পাওয়া শুরু করেছে ।
সাইরার এমন একজন মেয়ে যার কাছে থেকে নিজেকে দুরে রাখা সত্যিই খানিকটা কষ্টকর ।
ক্লাস শুরুর প্রথম যেদিন ওকে দেখলাম বুকের ভিতর কেমন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি এসে হাজির হল । কিছুতেই সেই অনুভূতির কোন ব্যাখ্যা আমি করতে পারছিলাম না ।
কদিন পরেই বুঝতে পারলাম যে আমি সাইরার প্রেমে পরেছি । কিন্তু ততদিনে সাইরার পেছনে অনেক লম্বা লাইন লেগে গেছে । আমিও যদি সেই লাইনের পেছনে গিয়ে দাড়াতাম তাহলে ওর কাছে পৌছাতে পৌছাতে কত দিন লেগে যেত ।
তাই এই সর্টকাট মেথড । এখন হঠাত্ করেই আজকে যে সুযোগ টা এসে গেছে আমার তো মনে এই বার কিছু এটা হবেই !
পুরে ক্লাস চুপচাপ থাকলাম ! কিন্তু লক্ষ্য ঠিক ছিল সাইরার দিকে ! ক্লাস শেষে এমন ভাবে বের হলাম যেন আমি সাইরা কে চিনিই না !
আমি জানতাম ও ফোন দেবে !
ফোন ও দেবেই !!
ওর মনে যেই কৌতূহলে সৃষ্টি আমি করেছি সেটা ওকে ফোন দিতে বাধ্য করবে !
ফোন আসলো দুপুরের কিছু পরে ।
যদিও সাইরা আমাকে ওর নাম্বার দেই নি তবুও এর নাম্বার আমাকে ছিল । এবং আমি খুব ভাল করেই জানি আমার ফোন নাম্বারও ওর কাছে আছে !
মোবাইল স্ক্রিনে সাইরার নামটা দেখে বুকের ভিতর একটু চাপ অনুভব করলাম ।
-হ্যালো !
-অপু ! আমি সাইরা !
-আমি জানি তুমি সাইরা !
-কিভাবে ? আমার নাম্বার তোমার কাছে ছিল ।
-হুম । ছিল !
-তাহলে ফোন দেও নি কেন এতো দিন ?
আমি বললাম
-আমার নাম্বারতো তো তোমার কাছে ছিল । তুমিও তো আমাকে ফোন দেও নি ! দিয়েছ ?
ওপাশ থেকে খানিকক্ষন নিরবতা !
-তোমার নাম্বার আমার কাছে ছিল না । আমি আজকে জাহিদের কাছ থেকে নিয়েছি !
-সত্যি বলছ ?
ওপাশে আবারও নিরবতা নামে !
-সরি ! মিথ্যা বলেছি । তোমার নাম্বার আমার কাছে ছিল । আমি ফোন দেই নি ! আমি মনে করতাম তুমি ঠিক আমাকে পছন্দ কর না । তাই তোমাকে ফোন দেই নি ।
-আচ্ছা ! তোমার কি এখনও তাই মনে হয় ?
ওপাশে আবারও কিছুক্ষন নিরবতা ! আমি আবার বললাম
- কি? তাই মনে হয় ?
-কিন্তু তুমি তো কখনও বল নি !
-আমি কিন্তু এখনও বলছি না ! সব কিছু বলার কি দরকার !
সাইরা চুপ করে রইলো !
আচ্ছা সাইরা কে কি নিজ থেকে কিছু বলবো ?
কিন্তু নিজ থেকে কিছু বললে যদি এতো দিনের সব প্রচেষ্টা নষ্ট হয়ে যায় ?
তাহলে ?
থাক । সাইরা বলার সুযোগ দেই !
সাইরা বলল
-তুমি আমার সব কিছু এতো ভাল করে কিভাবে লক্ষ্য করতে ! আমি তো কোনদিন বুঝতেও পারি নি !
-কিন্তু আমি সব কিছুই বুঝেছি !
-কি বুঝেছ ?
-এই যে আমি যখন মলির সাথে অথবা লাবনীর সাথে আড্ডা দিতাম তখন তুমি মনে মনে খুব রাগ হতে !
-কখনই না ! আমি কোন দিন রাগ হতাম না । আমি কেন রাগ হব ?
-সত্যি বলছ?
সাইরা আবার চুপ করে রইলো ! আমি বললাম
-তোমার রুমের বারান্দা দিয়ে একটা বড় জারুল গাছের একটা অংশ দেখা যায় না ? আমি ঐ গাছটার নিচে বসে আছি ! যদি সত্যি বলে থাকো তাহলে তোমার আসার দরকার নাই । আর যদি মিথ্যা বলে থাকো তাহলে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি ।
এই বলে আমি ফোন রেখে দিলাম !
আমি জানি সইরা আসবে ! ওকে আসতেই হবে !
আমি সাইরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি !!
বিশেষ ভাবে লক্ষ্যনীয়ঃ দয়া করে আমার মেয়ে পটানোর পদ্ধতি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে যাবেন না । তাহলে কিন্তু মাঠে মারা পরবেন ! বাস্তব জীবনের সাইরারা এরকম হয় না কখনই !
যদি কাউকে ভাল লাগে যদি কাউকে ভালবাসে তাকে সোজা সুজি বলে ফেলাটাই ভাল !!

আলোচিত ব্লগ
শেয়াল ও মুরগি প্রসঙ্গে
নারীদের মুরগি আর পুরুষদের শেয়ালের সাথে তুলনা করা কোন সমাধান নয়। এটা সত্য যে, শিশু ও নারীরা কিছু ব্যক্তির কাছে সত্যি নিরাপদ নয়। এই যে , এত ধর্ষণ হয়, শিশুরা... ...বাকিটুকু পড়ুন
গদির উপর যদির মা
চাইছি আমি নাও বিদায় চাইছো তুমি থাকতে
আমারতো আর সাধ্য নেই তোমায় ধরে রাখতে।
চালগুলো সব খাওয়া হল চুলোটাই কেবল বাকি
তবুও তোমার টালবাহানা আর কিছুদিন থাকি।
ধারকর্যে চলতে গিয়ে খাচ্ছি হোঁচট... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিনয়াবনত চিত্ত আপনার জীবনকে উর্ধ্বমুখী করবে
বর্তমান প্রজন্মের একটা নিয়মিত অভ্যাস নিজেকে একটু ফোকাস করতে পারা। অথচ এ কাজটা করতে গিয়ে সে নিজেকে প্রতিনিয়ত কলুষিত করছে নিজের অজান্তেই। একটু ভেবে দেখুন। আজকালকার ছেলেদের “বডি ল্যাংগুয়েজ” একটু... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিজে ভুক্তভোগী না হলে অন্যের দুঃখ অনুধাবন করা যায় না
রাজধানীর রামপুরায় একটা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ফুড আউটলেটে কিছুদিন কাজ করতে হয়েছিল। ঝাড়পোছ থেকে শুরু করে পণ্য বিক্রি, যাকে বলে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ- সব কাজই করতে হতো। যেহেতু অন্য কোনো... ...বাকিটুকু পড়ুন