আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । আমার হাসি দেখে ভদ্রলোক মনে হয় প্রশ্রয় পেলেন । গলা কাঁপিয়ে হেসে উঠল । এতো জোরে যে আমার কোথায় যেন এক পিচ্চি জোরে কেঁদে উঠল । ভদ্রলোক আমার দিকে বড় রসিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-আরে এটা কোন ব্যাপারই না ।
এমন ভাবে এটা কোন ব্যাপার না বলল আমার কাছে মনে হল এই ভদ্রলোক দিনে দুতিনটা বিয়ে করে আর দুতিনবার বাসর ঘরে ঢুকে ।
ভদ্রলোক আবার বলল
-শুন । একদম চিন্তা করবা না । আর বউ এর সামনে একদমই নার্ভাস হবা না ।
আমি মনে মনে বললাম বেটা জীবনের প্রথম বিয়ে করছি প্রথমবারের মত বাসর ঘরে ঢুকবো নার্ভাস হব না তো কি করবো ?
আমার পাশে বন্ধু সুমন ছিল । আমার কানে কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল
-অপু এই লোক মনে হচ্ছে বাসর রাত এক্সপার্ট । এমন ভাবে কথা বলছে যেন কত গুলো .....
আমি সুমন কে থামিয়ে দিয়ে বললাম
-চুপ থাক ।
ভদ্রলোক আবার বলল
-আমার শ্যালিকাকে তো আমি চিনি । তৃষা যদি বুঝতে পারে যে তুমি নার্ভাস হয়ে গেছ তাহলে কিন্তু সারা জীবনের জন্য তোমাকে বউয়ের সামনে নার্ভাস হয়েই থাকতে হবে ।
আমি আবার একটু হাসলাম । বললাম
-নাহ । নার্ভাস হব কেন ?
সুমন বলল
-চল অনেক রাত হয়ে গেছে । এবার বাসর ঘরের ভিতর যা । ভাবী ওয়েট করছে।
সুমনই আমাকে আমার ঘরের দরজার কাছে নিয়ে গেল । কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতে পারছিলাম ঘরের প্রতিটি চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
কি অস্বস্থিকর !
বিয়ে করার সময়ও ঠিক একই অনুভুতিটা হয়েছিল । যখন তৃষাদের বাড়িতে হাজির হলাম তখন থেকেই বাড়ির প্রতিটা চোখ কেবল আমার দিকেই তাকিয়ে আছে ।
আর যখন স্টেজের উপর বসে ছিলাম নিজেকে কেমন জানি কোরবানীর পশুর মত মনে হচ্ছিল । কেউ এদিকে আসছি । আমার দিকে তাকাচ্ছে । দেখছে আমার সব কিছু ঠিক আছে কি না ।
এইজন্য আমি এভাবে বিয়ে করতে রাজি ছিলাম না ।
বিয়ে করবো আমরা দুজন । কাজী অফিসে যাবো কবুল বলবো সই করবো ব্যাস ।
ঝামেলা শেষ ।
কিন্তু এখানে যাও । ওখানে যাও । একে সালাম কর ওকে সালাম কর ।
কি ঝামেলার কাজ ! আর এখন আবার ঝামেলা বাসর রাত ।
আল্লাহ জানে ভিতরে কি হবে !
সুমন আমার সাথে আমার ঘরের দরজা পর্যন্ত এল । তারপর বলল
-বন্ধু আমার যাত্রা এখানেই শেষ । এবার তোকে একাই যেতে হবে । আর শোন ঠিক ঠাক মত বিড়াল মারবি কিন্তু ।
-বিড়াল মারবো মানে ?
-আরে বেকুব শুনিশ নাই । বিড়াল কিন্তু বাসর রাতেই মারতে হয় তা না হলে সারা জীবন বউ এর সামনে বিড়াল হয়ে থাকতে হয় । ওকে যা বেষ্ট অব লাক ।
আমি জোরে একটা দম নিলাম । দরজা বন্ধ ছিল । ঠিক বন্ধ না ভেড়ানো ছিল । আমি নক করতে যাবো পেছন থেকে সুমন বলল
-কি করছিস ?
-নক করছি ?
-নক করবি ক্যান ?
-আশ্চর্য । একটা মেয়ে ভেতরে আছে । নক না করে কিভাবে ঢুকে পড়ি ?
-ভিতরের মাইয়া তোমার ম্যাডাম লাগে যে বলতে হবে আসতে পারি ? বেটা ঐটা তোর বউ । ভেতরে ঢুক বেটা ।
এবার সুমন আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়েই আমার ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল ।
আমি এতো দিন আমি জানতাম বাসর ঘরে মেয়েরা ঘোমটা দিয়ে থাকে । তারপর বর আসে তার ঘোমটা তুলে । নতুন বউ তবুও লজ্জায় মাথা তুলে না । বর তার হাত দিয়ে নতুন বউয়ের মুখ তুলে ধরবে ।
বাংলা সিনেমা গুলোতে তো এই ই দেখে এসেছি ।
কিন্তু তৃষা তো দেখি ঘোমটা তুলেই বসে আছে । খাটের ঠিক মাঝখানে বসে আছে । অবশ্য মাথায় কাপড় দেওয়া ।
আমার সাথে চোখাচোখি হতেই তৃষা একটু হাসলো । লজ্জা মিশ্রিত হাসি । আমিও হাসলাম । ঐ লজ্জা মিশ্রিত হাসি ।
এই মেয়েটার সাথে এখন আমার বাকীটা জীনব কাটা্যে হবে ।
অদ্ভুদ না ?
কদিন আগেও আমি তৃষাকে ঠিক মত চিনতামও না । আর আজ থেকে তৃষা আমার জীবন সঙ্গি । আমার বিয়ে করা বউ ।
আমার মনে আছে প্রথম তৃষার ছবি যে দিন দেখেছিলাম । চিকন মত একটা মেয়ে । কিন্তু চেহারায় কেমন একটা মোলায়েম আর মিষ্টি ভাবছিল । ভাবছিলাম বিয়ে যখন করতেই হবে তখন একেই নয় কেন ?
আমি বিয়ের জন্য খুব উচ্চ বাচ্চ করি নি । যা করার আমার মা আর ভাবীই করছিল । কদিন চলে যাবার পর একদিন অফিস যাচ্ছি ভাবি বলল
-আজ তৃষা তোমাকে ফোন করবে ?
আমি ততদিনে তৃষার নাম টা আসলে ভুলে গিয়েছিলাম । আমি বললাম
-তৃষা কে ?
ভাবি বলল
-হায় হায় । যে মেয়ের সাথে কয়দিন পরে তোমার বিয়ে হতে যাচ্ছে সে মেয়ের নাম ভুলে গেছ । তোমার বউ যদি জানে ।।
-ও ।
আমার মনে পড়লো । যে মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে তার নামটা ভুলে যাওয়াটা অন্যায় । মনে মনে বললাম বউ জানলে বলবে বিয়ের আগেই এই অবস্থা । বিয়ের পরেতো ....
আমি ঐদিন একটু অস্থির ছিলাম । সত্যি বলতে কি তৃষার ফোনের জন্য একটু অস্থির ছিলাম । যে মেয়েটার সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছে কদিন পরে তার সাথে আজ কথা হতে যাচ্ছে । তাও আবার প্রথম বারের মত ।
তৃষার ফোন আসলো লাঞ্চ লাইমে । কাজ কর্ম রেখে বাইরে যাবো ঠিক তখন ।
আমি ফোন রিসিভ করে বললাম
-হ্যালো ।
ওপাশ থেকে খানিক নিরবতা । তারপর মৃদু কন্ঠে বলে উঠল
-অপু.....বলছেন ?
অপুর মাঝে একটু আবার গ্যাপ ।
-জি বলছি ।
আবার খানিক ক্ষন নিরবতা । তারপর বলল
-আমি তৃষা ?
-তৃষা ? পাখি ?
ওপাশ থেকে যেন একটু হাসির শব্দ শুনতে পেলাম । নিজের ভিতরেই উপলব্ধি করছিলাম যে আমি নিজেও কেমন একটা নার্ভাস হয়ে যাচ্ছি ।
তৃষা বলল
-এখন আপনার লাঞ্চ আওয়ার না ?
-হ্যা । কেন ?
-আমি আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাচ্ছিলাম । যদি পসিবল হয় ।
-হ্যা সমস্যা নাই । বলুন কোথায় আসবো ?
কোথাও আসতে হবে না । আমি আপনার অফিসের সামনেই আছি । আপনি একট নিচে নামুন ।
আমি একটু অবাক হলাম । মেয়েটা নিচে দাড়িয়ে ।
সেদিন তৃষার সাথে বেশ খানিকক্ষনই কথা হল । বলতে আমার পছন্দও হল তৃষাকে । মনের ভিতর একটা টেনশন কাজ করছিল তৃষার আবার পছন্দ হবে তো আমাকে ।
সেদিনের তৃষা আর আজকের তৃষার ভিতর একটু পার্থক্য তো আছেই । আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে । বিয়ের সময় মুখ দেখাদেখি একটা পর্ব আছে যেখানে বর আর কনে কে একিই সাথে আয়নায় দেখতে হয় ।
আজ আয়নায় মুখ দেখার সময় দেখছিলমা তৃষা সবসময় চোখ নিচু করে রেখেছিল । একটি বারের জন্যও আমার দিকে তাকাই নি ।
এখনও অবশ্য আর আমার দিকে তাকিয়ে নাই । অন্যদিকে তাকিয়ে ।
আমি খাটের উপর বসতে বসতে বললাম
-বিয়ে তাহলে হয়েই গেল ?
-কেন আপনার সন্দেহ আছে ?
আমি এতো জলদি উত্তর আশা করি নি । আমি বললাম
-আপনি ?
-আমি তো তাও আপনি বলেছি । তুমি তো তাও বল নি ।
আশ্চর্য ফাজিল মেয়ে তো দেখতেছি । লজ্জা শরম কিছু নাই । বিয়ের রাতে মেয়েদের মুখ থেকে নাকি কথাই বের হয় না আর এই মেয়ের কথার খই ফুটতেছে । আবার অন্য দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে । ঐ ভদ্রলোক ঠিকই বলেছিল । তৃষার সাথে সাবধানে কথা বলতে হবে । আমি ভাবছি তৃষার সাথে কি নিয়ে কথা বলবো ঠিক তখনই তৃষা বলল
-তোমার টুপি কোথায় ?
-টুপি ?
-টোপর ? টোপর কোথায় ?
-বাইরে রয়েছে । আসলে টোপর পড়তে কেমন জানি লাগছিল । মনে হচ্ছিল মাথার উপর কেমন একটা তালগাছ নিয়ে ঘুরছি ।
আমার কথায় তৃষা ফিক করে হেসে দিল । তারপর বলল
-তোমাকে টোপর মাথায় কেমন লাগছিল জানো ?
-কেমন ?
-আগের দিনে বাংলা সিনেমায় কিছু কমেডি ভিলেন থাকতো না, সে রকম ?
-কি রকম ?
-এই যেমন মোল্লা টাইপের লোক । আমার এমন হাসি আসছিল না তোমাকে দেখে ।।
-আচ্ছা । বুঝলাম । আর তোমাকে কেমন লাগছিল বলবো ?
-কেমন ?
-তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছিল । এখনও সুন্দর লাগছে ।
তৃষা একটু মুখ ভেঙ্গালো আমাকে । বলল
-সুন্দর না ছাই । এসব হচ্ছে মেয়ে পটানো কথা ।
-আচ্ছা মেয়ে পটানো কথা । আচ্ছা কখন মেয়ে পটানো কথা বলে বলতো ?
-কখন?
আমি বললাম
-মানুষ তখনই মেয়ে পাটানো কথা বলে যখন একটা মেয়ে তার বাগে আসতে চায় না । তুমি তো অলরেডি আমার আয়ত্তে চলে এসেছো?
-আচ্ছা ! তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমার আয়ত্তে চলে এসেছি !
আমি হেসে বললাম
-আমার মনে হচ্ছে না । আমি জানি ।
-তুমি কচু জানো । আমাকে আয়ত্তে আনতে তোমার সারা জীবন লেগে যাবে । এই ! কাছে আসবে না বলে দিচ্ছি ।
আমি সত্যি এবার অবাক না হয়ে পারলাম না । আমি নিজের জায়গা থেকে একটুও নড়ি নি আর এই মেয়ে কয় কাছে আসবে না কিন্তু ।
মানে আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমার এখন কাছে যাওয়া দরকার । এই মেয়ের মাথায় দারুন বুদ্ধি তো । আমি হেসে ফেললাম
আমাকে হাসতে দেখে তৃষা বলল
-হাসছো কেন ?
-এমনি হাসছি । তোমার বুদ্ধি দেখে হাসছি ।
তৃষার সারা মুখে কেমন একটা দুষ্টামীর ছায়া লেগে আছে । এই মেয়ের কাছ থেকে আসলেই সাবধান থাকতে হবে ।
আমি ঘড়িতে সময় দেখলাম । একটার বেশি বাজে । একটু আগে যে বাড়ির ভিতরে যে হইচই হচ্ছিল তা অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছে ।
আমি তৃষা কে বললাম
-ঘুম আসছে তোমার এখন ? সারা দিন অবশ্য অনেক ধকল গেছে ।
তৃষা আবার কেমন দুষ্টামীর চোখে বলল
-এতো ঘুম ? ঘুমাবা ?
আবার হাসি ।
-আরে বাবা আমার ঘুম আসছে না । তোমাকে বললাম । খুব কি ঘুম আসছে ?
-কেন ?
-চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি । আমাদের বাড়ির পেছনে একটা কানা পুকুর আছে । ওখানে রাতের বেলা ভুত নামে ।
-মিথ্যা কথা ।
-চল । গেলেই টের পাবা । এখন জোছনা রাত না ? একদম পরিষ্কার দেখা যাবে । নাকি ভয় পাচ্ছ ?
তৃষা আবার আমাকে মুখ বাকিয়ে বলল
-আমি ভয় পাই না । কিন্তু বাসর রাতে কি কেউ ভুত দেখতে যায় ? বাসর রাতে তো ...।
তৃষা কথাটা শেষ করলো না । আমার দিকে তাকিয়ে থেমে গেল । ওর চোখে আবারও সেই দুষ্টামী ।
-বাসর রাতে মানুষ কি করে শুনি ?
-আমি কি করে বলবো ? আমি কি এর আগে বিয়ে করেছি নাকি ?
-তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি কয়েকবার বিয়ে করেছি । তোমার দুলাভাইয়ের কাছে জিজ্ঞেস কর নি । তার কথা শুনে তো মনে হল সে এই সব ব্যাপারে বেশ এক্সপার্ট ।
-বলেছে তোমাকে ।
আমার ঘরের সাথে গ্রিলের বারান্দা । বারান্দা দিয়ে আমি আর তৃষা বের হয়ে এলাম । প্রথম প্রথম তৃষা ভয় পাবে না বললেও গেট দিয়ে যখন বের হলাম তখন মনে হল ও একটু ভয়ই পেল ।
চারিদিকে একদম সুনশান নিরবতা । ঝিঝি ডাকাও বন্ধ হয়ে গেছে ।
তৃষা আমার সাথে সাথে হাটতে লাগলো । আমাকে বলল
-আমি তোমার হাত ধরবো একটু ?
-ভয় লাগছে ?
তৃষা কোন কথা না বলে আমার হাত ধরলো । বিয়ের পর এই প্রথম আমি তৃষার হাত ধরলাম । কি মোলায়েল একটা হাত যেন ।
তার থেকেও বড় এই অনুভুতিটা ।
আমি তৃষার হাতটা আর একটু ভাল করে ধরলাম । ও তো কেবল আমার হাতটা আলতো করে ধরেছিল আমি ধরলাম আরো ভাল করে ।
আগে রাস্তা দিয়ে হাটার সময় প্রায়ই এমন কাপল দেখতাম হাত ধরে হাটতে । আমি অবাক হয়ে তাদের মুখের দিকে তাকাতাম । দুজনের মুখেই আনন্দের একটা আভা দেখতে পেতাম । ঠিক কি কারনে তারা এতো আনন্দিত আমি বুঝতাম না । কিন্তু আজ যেন আমি কিছুটা হলেও তা উপলব্ধি করতে পারছি ।
আমি তৃষাকে নিয়ে পুকুর পারে বসলাম । আগে তো তৃষা কেবল আমার হাত ধরে ছিল । এখন বসার পর আমার আরো কাছে এসে বসলো ।
চারিদিকে জোঁছনার আলোতে একাকার । পুকুরের টলটলা পানি । এক চমৎকার এক দৃশ্য । মনে হচ্ছে যেন কোন স্বপ্ন দেখছি ।
তৃষা বলল
-এটা তো কানা পুকুর মনে হচ্ছে না । এখানে কি সত্যি কি ভুত নামে ?
আমি হেসে বললাম
-আরে বোকা নাকি ? আমি তো ফান করে বলেছি ।
তৃষা যেন একটু চুপ করে গেল । আমার কাছে মনে হল তাই ।
বললাম
-কি হল ?
-কিছু না ।
তৃষার কিছু না শুনে সত্যিই মনে হল কিছু হয়েছে । কি এমন করলাম যে তৃষার মুড অফ হয়ে গেল । আমি বললাম
-কি হল বল ? এমন চমৎকার একটা রাত এভাবে নষ্ট কেন করছো ?বল প্লিজ ।
তৃষা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-আমি না মিথ্যা একদম নিতে পারি না । বিশেষ করে প্রিয় মানুষ গুলোর কাছে থেকে ।
-আরে বাবা । আমি তো জাষ্ট ফান করেছি ।
-ফান করেও না ।
-আচ্ছা ঠিক আছে । এই দেখো তোমার হাত ধরে কথা দিচ্ছি আজকের পর তোমার কাছে আর কখনও মিথ্যা বলবো না । কখনও না ।
তৃষা কেবল আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো । যদিও খুব বেশি আলো ছিল কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল ওর চোখে পানি চলে এসেছে । আমি বললাম
-আমি তো একটা কথা দিলাম । তাহলে তুমিও একটা কথা দাও ।
-কি ?
-আজকের পর থেকে তোমার চোখে যেন আমি কোনদিন পানি না দেখি । ওকে ? ডিল ?
তৃষা একটু হেসে ফেলল । বলল
-আচ্ছা । ডিল । আর একটা কথা ।
-কি
-যখন ঝগড়া বাধবে তখন তুমি কিছু বলবে না । চুপচাপ শুনে যাবে । তা না হলে কিন্তু তুমুল ঝগড়া বেঁধে যাবে ।
আমি এখনও বিবাহিত জীবন শুরুই করতে পারলাম না এই মেয়ে আগেই ঝগড়ার কথা শুরু করে দিল । আর মেয়ে বলছে যখন ঝগড়া বাধবে, যদি ঝগড়া বাধে এমন কথা বলে নাই । তারমনে এই মেয়ে আমার সাথে ঝগড়া বাধাবেই ।
আমি বললাম
-যখন ঝগড়া বাঁধবে, মানে কি ? তুমি কি আমার সাথে ঝগড়া করবাই ?
আমার কথা শুনে তৃষা যেন আকাশ থেকে পড়লো । বলল
-আশ্চর্য ঝগড়া করবো না ? বিয়ে করলাম তোমার সাথে আর আমি ঝগড়া রাস্তার মানুষের সাথে নাকি ?
-আচ্ছা ।
-জি হ্যা । আজকে বাসর রাত বলে কিছু বলছি না । কালকে থেকে দেখো কথায় কথায় তোমার সাথে ঝগড়া বাধাবো । এটা করলে কেন ? ওটা করলে কেন ? সেইটা করলে না কেন ? এরকম হাজার টা প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে তোমার জান শেষ করে ফেলবো । বুঝেছ ?
-আচ্ছা । আমার শ্বশুর মশাই আমার কপালে এমন ঝগড়াটে বউ দিল । তোমার ছোটা বোন কেই বিয়ে করা দেখি ভাল ছিল ।
-কি বললা ? আবার বল ।
- না না । কিছু বলিই নি তো । বললাম যে আমার শ্বশুর মশাই একদম ঠিক মেয়েটাই আমাকে দিয়েছে ।
-হুম । এইটাই মনে রেখ ।
আমি মনে মনে হাসলাম । তৃষার সাথে এতো জলদি এতো সহজ হয়ে যাবো ভাবতে পারি নি । তৃষা আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমার সাথে কত চিন-পরিচয় ওর । কত দিনের ভাব ।
বিয়ের আগে কেবল অল্প কয়দিন আমাদের দেখা হয়েছে । তাও বেশির ভাগ সময়ে তৃষা চুপ করেই থাকতো লজ্জায় । আর এখন ?
মেয়েরা পারেও বটে ।
তৃষা বলল
-আর শোন । তুমি কিন্তু আমার উপর রাগ করে থাকতে পারবে না । মনে থাকবে তো । আমি কেবল তোমার উপরর অভিমান করবো । এবং তোমাকেই সেই রাগ ভাঙ্গাতে হবে কিন্তু ।
-আচ্ছা । আর কিছু ?
-আর যখন আমার রাগ ভাঙ্গাতে আসবা অনেক গুলো চকলেট নিয়ে আসবা । চকলেট দেখলে আমি কিছুতেই রাগ করে থাকতে পারবো না । মনে থাকবে তো?
আমি হাসলাম । আমার ভাবতেই ভাল লাগছে এই মিষ্টি মেয়েটা আমার বউ । এর পর থেকে আমার জীবনের সব কিছুতেই এই মেয়েটার ছোঁয়া থাকবে । সকালের ঘুম থেকে উঠে এই মেয়ে টার মিষ্টি হাসি আমি দেখতে পাবো ।
আমি তৃষার হাতটা আমার ঠোটের কাছে এনে আলতো করে একটু চুমু খেলাম ।
এই জোঁছনার আলোতেও দেখলাম তৃষা একটু যেন লজ্জা পেল । তারপর ও আমার কাধে মাথা রাখল আলতো করে ।
কি অদ্ভুদ সুন্দর একটা সময় । চারিদিকে জোঁছনার আলো । পুকুরের টলটলা আলো সেই জোঁছনা কে যেন আর সুন্দর করে দিয়েছে ।
আমি জোঁছনার জল দেখছি তৃষা আমার কাধে মাথা রেখে আছে । দুজনের চোখেই সামনের অসম্ভব সুন্দর দিনের স্বপ্ন ভাবছে ।