somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাঝরাতের একা মেয়েটি

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মেয়েটিকে রাস্তার পাশে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একটু অবাকই হতে হল ! ঘড়িতে সময় দেখলাম । রাত প্রায় ১১টার কিছু বেশি বাজে । এই সময়ে একটা মেয়ে এভাবে এখানে দাড়িয়ে আছে ! একটু বেমানান দৃশ্য !
অবশ্য মিন্টু রোডের এই দিকে সব ভিআইপি দের বসবাস ! কিন্তু মেয়েটি যেখানে দাড়িয়ে আছে সেই জায়গা টা একটু নির্জন ! কোন মেয়ে যদি মিন্টু রোডের বাংলো গুলো থেকে রাতের বেলা হাটতেও আসে আমার মনে হয় না মেয়েটা একা একা এতো দুর আসবে !
তবুও আমার কাছে খটকা লাগতো না ! লাগছে কয়েকটা কারনে !
প্রথম কারনটা হল এখন বাইরে খুবই ঠান্ডা ! এই ঠান্ডার সময়ে কেউ বিশেষ করে কোন মেয়ে একা একা নৈশ ভ্রমনে বের হবে এটা ভাবতেই একটু যেন কেমন লাগে ! আমি বের হয়েছি পেটের দায়ে ! তবে আজকে সত্যিই টিউশনী থেকে বের হতে হতে একটু দেরীই হয়ে গেছে ! অন্যান্য দিন দশটার ভিতরেই বের হয়ে যাই । কিন্তু আজকে এগারোটা বেজেই গেল ! আন্টি কিছুতেই না খাইয়ে ছাড়লেন না !
দুই নাম্বার যে বিষয়টা আমাকে যেটা অবাক লাগছে সেটা হল মেয়েটার পায়ের কাছে একটা ব্যাগ রাখা ! মেয়েটি বার বার এদিক ওদিক দেখছে । কারো আসার অপেক্ষা করছে মনে হয় !
আমার সব থেকে খটকা লাগলো এই বড় সাইজের ব্যাগটা দেখে ! এই ব্যাগ নিয়ে কোন মেয়ে নিশ্চই রাতে হাওয়া খেতে বের হবে না ।
আর একটা ব্যাপার আমাকে অবাক লাগছে সেটা হল মেয়েটার পোষাক ! মেয়েটি একটা লং কামজ পরেছে ! নীল রংয়ের মনে হয় ! তার উপরে সাদা সোয়েটার আর সাদা মাফলার ! সাথে জিন্স ! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মেয়েটার লং কামিজ টা কেমন জানি বেমানান মনে হচ্ছে ! আজকাল এই রকম কামিজ দেখাই যায় না ! এখন সে লং কামিজ উঠছে সেটার থেকে এটা একবারেই ভিন্ন !
আমার মনে পরে যখন আমি স্কুলে পড়তাম আমার আন্টিরা ঠিক এই রকম কামিজ পরত ! কিন্তু এই মেয়ে এই রকম কামিজ পরে আছে কেন ?
এমন কি মেয়েটি যেই জিন্স টি পরে আসে সেই টাইপের জিন্সও মেয়েরা পরে না ! আসলেই এই মেয়েটার পোষাক পরিচ্ছেদ কেমন ওল্ড ফ্যাশান !
সব কিছু মিলিয়ে মেয়েটি আমার দৃষ্টি আকর্ষনে সমর্থ্য হয়েছে ।
এখন আমার কি করা উচিৎ ?
মেয়েটির কাছে গিয়ে কথা কি বলবো ?
বয়সে আমার সমানই মনে হয় ! কিংবা একটু বড় তবুও মেয়েটার কাছে গিয়ে কিছু জানতে চাওয় উচিৎ ! অথবা কোন কিছু না ভেবে চলে যাই নিজের রাস্তায় । কি দরকার ঝামেলা !
কিন্তু সমস্যা একটা আছে ! আজকে যদি এই ভাবে চলে যাই তাহলে রাতে বাসায় গিয়ে কিছুতেই শান্তি পাবো না ! বার বার মেয়েটির চিন্তিত মুখে কারো জন্য অপেক্ষা করা চেহারাটা মন পড়বে ! এইটা একটা অশান্তির ব্যপার !
আমি আস্তে আস্তে মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলাম ! মেয়েটি তখনও রাস্তার দিকে তাকিয়েই আছে । আমি যে পাশে গিয়ে দাড়িয়েছি মেয়েটি তা লক্ষ্যই করে নাই ! আমি একটু গলা খায়ের দিলাম ! মেয়েটির কোন ভ্রুক্ষএপ নাই !
আশ্চার্য ফাজিল মেয়ে ! আমি একটা ভালা পুলা নিজে আইছি উপকার করটে কিন্তু সে আছে নিজের ভাব নিয়ে !
কিন্তু তা হবে না !
আমি উপকার করবই !!
আমি এবার বললাম
-এখানে এতো রাতে এভাবে দাড়িয়ে থাকা ঠিক না !
আমি এবার ভেবেছিলাম মেয়েটা আমার দিকে তাকাবে ! বলবে দেখুন না একটু বিপদে পড়েছি ! সেই কতক্ষন ধরে এখানে দাড়িয়ে আছি কিন্তু কোন যানবাহনই আসছে না !
কিন্তু এবারও মেয়েটা আমার দিকে ফিরেও তাকালো না ! এমন একটা ভাব যেন আমি এখানে নেই ! আমার কথা মেয়েটার কানেই ঢুকছে না !
কি এতো বড় অপমান !!
আমি হইলাম বলকার (ব্লগার) অপু তানভীর আমাকে অপমান !!
উপকারের ক্ষ্যাতাপুরি !!
আমার মনে হল এখানে দাড়িয়ে থাকার আর কোন মানে হয় না ! আমি হাটা দিতে যাবো তখনই মেয়েটা বলে উঠলো
-রাত বিরাতে এভাবে মেয়েদের উপকার করতে যাবেন না সাহেব ! বিপদে পড়বেন !
আমি কিছুক্ষন জন্য যেন থেমে গেলাম ! প্রথমে মনে হল এইটা কি হল ?
কেউ কি কিছু বলল ?
এই মেয়েটা কি কিছু বলল ?
কোন মেয়ের গলার আওয়াজ কি এই রকম হতে পারে ? আমার তখন আর কোন কথা মনে হল না ! কেমন হল এই খানে কোনকিছু একটা যেন ঠিক নাই !
কোথাও বড় রকমের একটা গন্ডগোল আছে !
পুরা রোডটার দিকে আমি ভাল করে তাকালাম ! নিয়ন লাইট গুলোই কেবল দাড়িয়ে আছে লম্বা পথটা জুড়ে । আর দাড়িয়ে আছে মেয়েটা ! সাথে আমি ! মেয়েটার থেকে আমি প্রায় ছয় সাত হাত দুরে দাড়িয়ে ! কিন্তু মেয়েটা যখন আমাকে কথাটা বলল আমার মনে হল যেন মেয়াটা ঠিক আমার কানের কাছে দাড়িয়ে আছে !
শিরশিরে একটা অনুভুতি আমার সারা শরীর দিয়ে প্রবাহিত হল ! আমার মন বলছে এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া যায় ততই ভাল কিন্তু ব্রেন সেই অস্বস্তিকর ব্যাপারটা ধরতে চাইছে !
আমি কিছু ভাবতে যাবো ঠিক তখনই আমার একটা ব্যাপার খটকা লাগলো ! আমি আরে মেয়েটির........
আমি আমার চিন্তাটা ঠিক মত শেষও করতে পারলাম না আবারও সেই কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম !
-এখানে দাড়িয়ে থাকেবন না !
এবার মেয়েটির কন্ঠে কেমন একটা রাগের ছোয়া পেলাম ! না ভাই আমার উপকার করার দরকার নাই ! আমি এখান থেকে এখনই বিদাই নেই !

কিছুদুর যেতে আমি একটা যান বাহনের আওয়াজ পেলাম ! এদিকেই আসছে ! আমার ধারনা ঠিক করে দিয়ে সিএনজিটা আমার পাশ দিয়ে চলে গেল ! আমি আবার মেয়েটার দিকে তাকালাম ! সিএনজিটা থামলো ঠিক মেয়েটার সামনে ! মেয়েটা মাথা নিচু করে কি যেন বলল তার একটু পরেই ব্যাগ নিয়ে উঠে পড়লো সিএনজির ভিতরে ! সিএনজিটা যখন আবারও আমার পাশ দিয়ে চলে গেল ঠিক তখনই আমি আর একটা খটকা ধরতে পেলাম !
আরে এটাতো সিএনজি না !
বেবিট্যাক্সি !
আগে ঢাকায় এই জাতীয় টুস্টোক হুইলার ইঞ্জিন চলতো ! কিন্তু সেই অনেক দিন আগের কথা ! আমি যতদুর জানি বিএনপি সরকার এইটা ব্যান করে দিয়েছে ! তাহলে ?
কি ব্যপার ?
আজকে কি হচ্ছে !!
সব কিছু এমন উল্টাপাল্টা !

মিন্টু রোডের পাশে দিয়ে রমনা পার্কের দিকে যে রাস্তা টা চলে গেছে বেবিট্যাক্সিটা সেই রাস্তায় চলে গেল ! আস্তে আস্তে চোখের আড়ান চলে গেল ! আমি আবার হাটা দিলাম । গত কয়েক মিনিট ধরে যা হল তা নিয়ে একটু চিন্তা করতে লাগলাম !
আমার মব বলছে কিছু একটা ঠিক হচ্ছে না এখানে ! কিছু একটা সমস্যা তো আছেই !
কয়েক কদম এগিয়েছি ঠিক তখনই একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম ! মনে হল যেন কোথাও কোন দূর্ঘটনা ঘটেছে ! যেন কোন গাড়ি কোন কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়েছে !
যদিও আমি দেখতে পাইনি যে কি হয়েছে কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যে মেয়েটাকে বহন করা বেবিট্যাক্সিটাই দূর্ঘটনার স্বীকার হয়েছে !
আমি খানিকটা এগিয়ে গেলাম ! কিন্তু এখানে একটু অন্ধকারের মত ! মন বলতে দরকার নাই এতো উপকারী হওয়া ! কিন্তু নিজের কৌতুহল কে কিছুতেই দমিয়া রাখতে পারলাম না ! আমি একটু এগিয়েছি এমন সময় দেখি সেই মেয়েটা কেমন দৌড়ে আসছে ! আমার দিকে না এসে দৌড়ে মিন্টু রোডের দিকে চলে গেল ! আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি মেয়েটির পেছন পেছন একটা ছেলে দৌড়ে আসছে !
আস সব থেকে ভয়ের ব্যাপর হল ছেলেটার হাতে ইয়া বড় একটা রামদা টাইপের কিছু !
মেয়েটি দৌড়াচ্ছে ঠিক ছেলেটা দৌড়াচ্ছে তার পিছন পিছন !
আমি এই অন্ধকারের ভিতরেও ছেলেটার চেহারা একটু দেখতে পেয়েছিলাম । সেখানে ছিল একটা খুনে নেশা ! যে কোন ভাবেই যেন ছেলেটা মেয়েটাকে মারতে চায় ! আমি কিছু না ভেবেই ছেলেটার পিছনে দৌড়াতে শুরু করলাম ! আমার কেবল মনে হল যে কোন মূল্যেই মেয়েটিকে বাঁচাতে হবে ! কিন্তু একটু দুর যেতেই কিসে যেন হোচট খেয়ে পড়ে গেলাম ! আর একটু হলেই পাকা রাস্তার উপর মুখ থুবড়ে পরতাম কোন ভাবে নিজের মুখটা বাঁচালাম ! কিন্তু আমি যতক্ষনে উঠেছি ততক্ষনে ছেলেটি আর মেয়েটি অনেক দুরে চলে গেছে ! প্রায় আমার চোখের আড়ালে !
আমি আবারও দৌড়াতে লাগলাম ! যখন মেয়েটি দৃষ্টি গোচর হল তখন দেখি মেয়েটা রাস্তার উপর শুয়ে আছে !
আর একটু কাছে গিয়ে দেখি মেয়েটি আসলে রাস্তার উপর শুনে নাই ! মেয়েটি পরে আছে রাস্তার উপর ! মৃত !
মেয়েটির গলা বরাবর ছুড়িটা চালনো হয়েছে ! প্রায় আলাদা হয়ে গেছে ধর থেকে !
আম চোখ ফিরয়ে নিলাম ! এই দৃশ্য আমার পক্ষে দেখা সম্ভব না !
আমি উল্টা দিকে ঘুরে দৌড় দিলাম ! এখানে আর থাকা যাবে না ! কেউ দেখে ফেললে আমি বিরাট ঝামেলায় পড়ে যাবো !
একটু দুরেই ডিবি অফিস ! আমাকে আর আস্ত রাখবে না !



হয়তো চলবে ....।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৪১
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×