somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ খাওয়ার টেবিল এবং পাকিস্তানী সেলোয়ার কামিজ

২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিশির সাথে কথা বলা বন্ধ । কাল রাতের খাবারের পর ওর সাথে বিপুল কথা কাটাকাটি হয়েছে । তখন থেকে কথা বলা বন্ধ । আমিও বলছি না সেও বলছে না ।
না বলুক !
মেয়েদের বেশি লাই দিলেই মাথায় উঠে । এখন সময় এসেছে লাই দেওয়া বন্ধ করার !

সকলা বেলা ঘুম থেকে উঠেই অফিসে চলে গেছি । সারা দিনে বাসায় যাওয়ার দরকার পরে নাই ।
অবশ্য অন্য দিন নিশি দিনের মধ্যে বেশ কয়েক বার ফোন দেয় ! আজকে দেয় নাই একবারও । আমিও দেয় নি । দেখা যাকে কে রাগ করে থাকতে পারে বেশি !

কিন্তু সমস্যা হল বাসায় এসেই । বাইরে থাকলে তো বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকা যায় কিন্তু বাসায় আসলে তো আর কিছু করা যায় না । তাছাড়া নিশি রয়েছে আমার চোখের সামনে ! ওর সাথে কথা বলতে পারছি না আাবর না বলে থাকতেও পারছি না !
এখন কি করি !
কিছুক্ষন নেট ব্রাউজিং করলাম । কিন্তু মন বসলো না ঠিক মত । বই পড়ার চেষ্টা করলাম তাতেও কাজ হল না !
না এভাবে আর সময় কাটানো যাবে না । টিভি দেখতে যাবো কিন্তু সেখানে নিশি বসে আছে গম্ভীর মুখে ।
আমি গড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় ১১ টা বেজে গেছে ।
নাহ ! আর সময় নষ্ট করে লাভ নাই । রাতের খারার খেয়ে ঘুমিয়ে পরা যাক ।
ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখি নিশি এখনও টিভির দিকে তাকিয়ে আছে এক ভাবে । কিছু দেখছে বলে মনে হয় না । আমি রান্না ঘরের দিকে রওনা দিলাম । যদিও আমি নিজে কোন দিন ভাত বেড়ে খাই নি । প্রতি বেলায় নিশি নিজেই আমাকে ভাত বেড়ে দেয় !

কোন ব্যাপার না । আগে তো এক সময় নিজে নিজেই করেছি । আমি রান্না ঘরে হাজির হলাম !
ওকে !
ভাতের প্লেট কই ? এদিক ওদিক খুজেও ভাতের প্লেট খুজে পেলাম না ।
আরে এটাতো ভাতে রপ্লেট নাকি গহনার বাক্স ! এতো লুকিয়ে রাখার কি আছে ?
নিশিকে কে কি জিজ্ঞেস করলবো যে ভাতের প্লেট কোথাট রেখেছে ?
নাকি বাইরে গিয়ে খেয়ে আসবো ?

আমি আবার ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে দেখি টেবিলে নিশি ভাতের প্লেট সাজাচ্ছে ! আমি আসতেই আমাকে গম্ভীর মুখে বলল
-ভাত বেড়েছি ! ভাত খেয়ে নাও !
একবার ভাবলাম বলি যে আমার ভাত আমি নিজেই খেয়ে নিতে পারব কিন্তু তারপর মনে হয় দরকার কি !
রাগের জায়গায় রাগ আর খাওয়ার জায়গায় খাওয়া ! আর নিশি তো নিজেই ভাত বেড়ে দিচ্ছে সুতরাং খাওয়াই যায় !

আমি ভাত খেতে বসে গেলাম। নিশি আস্তে আস্তে খাবার টেবিলে । টেবিলে খাবার সাজানো শেষ হলে আমি ভেবেছিলাম নিশি হয়তো আবার টিভির সামনে গিয়ে বসবে কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার সামনেই বসে পড়লো ! গম্ভীর মুখে আমার প্লেটে ভাত তুলে দিতে শুরু করলো !

এটা একটা ভাল কথা । আসলে ওর সাথে বিয়ের পর থেকেই নিশি সব সময় আমার খাওয়ার সামনে বসে থাকে । এমন না যে আমার সাথেই খেতে বসে । আমি খাওয়ার পরে সে খেতে বসবে । আমি কখন কি খাই কি লাগে নিশির এই দিকে খুব খিয়াল । ও কিভাবে যেন বুঝে যায় আমার কখনও কি লাগবে । আমার মুখ দিয়ে বলাও লাগে না । ও নিজ থেকেই আমার প্লেটে ভাত তুলে দিবে তরকারী তুলে দিবে ও ঠিক মতই জানে আমার কখন তরাকরী খাই, কখন ডাল খাই !

আমার মাঝে মাঝে মনে হয় নিশি যদি কোন দিন যদি কোন কিছু আমার পাতে তুলে না দেয় আমি হয়তো সেদিন সেই তরকারীর কথা মনেই করবো না ।

যখন অফিসে কাজের জন্য মাঝে মাঝে বাইরেই খেতে হয় তখন ওর প্রয়োজনীয়তাটা খুব ভাল করেই অনুভব করি ! আজকে যেমন করে ছিলাম । দুপুরে গরুর মাংস ডাল আর আলু ভর্তার অর্ডার দিয়ে ছিলাম । যখন খাওয়া শেষ করলাম দেখলাম যে আমি মাংস খেতে প্রায় ভুলেই গেছি ! কেবল আলু ভর্তা আর ডাল দিয়েই খাওয়া শেষ করে ফেলেছি । নিশি থাকলে ঠিক সময়েই আমার প্লেটে মাংস তুলে দিতো !

আমি খাওয়া শেষ করলাম ! আমার আর একট বাজে অভ্যাস আছে ! আমি ভাত খাওয়া শেষ করলেও এক মুঠো পরিমান ভাত সব সময় রয়ে যায় আমার প্লেটে । নিশি এইটা নিয়ে প্রতিদিনই আমার সাথে রাগারাগি করে তারপর নিজেই আমার প্লেটে ভাত নিয়ে খাওয়া শুরু করে ।

আজকে আমি যখন এক মুঠো পরিমান ভাত রেখেই উঠে গেলাম নিশি আজকে কিছু বলল না । হাত ধুয়ে এসে দেখি নিশি খেতে বসেছে ।

কি মনে হল আমি ওর পাশে বসলাম । নিশি আমার দিকে না তাকিয়েই গম্ভীর মুখে ভাত খেতে লাগলো ! আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি !
তখনই কেন জানি মনে হল নিশির উপর রাগ করাটা ঠিক হয় নাই ! কিছু কিছু মানুষের উপর রাগারাগি করা ঠিক না একদমই !

আমি ডালের বাটিটা ওর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললাম
-ডাল নাও ! আজকে ডালটা ভাল হয়েছে !
-জি ! আমি জানি ! আমিই তো রেধেছি ! আমি জানি !
-নাও !
নিশি গম্ভীর মুখেই বলল
-সময় হলে নিবো ! তুমি তোমার কাজে যাও !
-আরে আমি আমার কাজই তো করছি ! তোমার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছি । জানো না স্ত্রীর রাগ ভাঙ্গানোই হল সকল স্বামীর একান্ত এবং প্রধান কর্তব্য !
-তাই ! তা পুরো দিনের ভিতর এই কথা এখন মনে পড়লো !
আমি বললাম
-আচ্ছা ধর আজকে তোমার রাগ ভাঙ্গলো না তাহলে কি আমাকে আজ রাতে তোমার সাথে ঘুমাতে দিবে না ? মানে আমাকে কি সোফার উপরে ঘুমাতে হবে !
নিশি এই বার কোন কথা বলল না !
-আচ্ছা বাবা আমিই সরি বলছি ! ঠিক আছে !
তবুও নিশি চুপ !
-ওকে ! কালকে তোমাকে দুইটা পাকিস্তানী সেলোয়ার কামিজ কিনে দিবো ! ঠিক আছে ?
এবার নিশি খাওয়া বন্ধ করে বলল
-তুমি মেয়েদের কি মনে কর ? পাকিস্তানী সেলোয়ার কামিজ দিয়েই সব কাজ হয়ে যাবে !
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম
-তাই তো হবার কথা ! সুত্র তো তাই বলে !
-ওকে তুমি থাকো তোমার সুত্র নিয়ে !
নিশির খাওয়া শেষ হয়েছে । ও প্লেট নিয়ে উঠে চলে গেল ! আমি বসে রইলাম টেবিলের উপর ! তবে একটা আশার কথা হচ্ছে নিশির মুখের গাম্ভীর্য খানিকটা কমেছে !
রাগও নিশ্চই কমে যাবে । আর কথা যখন বলা শুরু করেছে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে !

রাতে যখন ঘুমাতে গেলাম ভেবছিলাম হয়তো সোফার উপরেই আজকে ঘুমাতে হবে কিন্তু তেমন কিছুই হল না । আমি শান্তিতেই বিছানায় শুয়ে পড়লাম ! নিশি নিজের চুল বাঁধছিল । ঘুমানোর প্রস্তুতি !
হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-শুনো কালকে যখন সেলোয়ার কামিজ কিনবে খবরদার কালো আর সাদা রংয়ের কিনবে না ! তোমার আবার তো এই দুই রং ছাড়া আর একটাও পছন্দ হয় না !

আমি হেসে ফেললাম । নিশিও হাসলো ! কে বলেছে পাকিস্তানী সেলোয়ার কামিজে কাজ হয় না ! অবশ্যই হয় !


শান্তি চুক্তি এবং পাকিস্তানী সেলোয়ার কামিজ !

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×