somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনটি অনুগল্প

১১ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

-আপনি কি বুঝতে পারছেন আমার কথা ?

আমি অন্য কিছু ভাবছিলাম । নিশির কথা শুনে আবার ওর দিকে ফিরে তাকালাম ! চুপচাপ শান্ত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
আমার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে আসলেই সামনে বসা মেয়েটি আমার ছোট্ট বেলার পরিচিত সেই নিশি । এর সাথে কত খেলা করেছি মারামারি করেছি কত ! সেই ছোট্ট মেয়েটি আজকে এক সুদর্শনা তরুনী হয়ে আমার সামনে বসে আছে !

আগে সম্ভবত আমাকে ও তুই কিংবা তুমি করে বলতো আজকে বলছে তুমি করে ! আসলেই সময় বড় অদ্ভুদ একটা জিনিস । কত দিন ওর সাথে দেখা নেই । তুই বলাটা সহজে আসার কথা না ।
আমি বললাম
-হ্যা !
-কোন আপত্তি নেই তো ?
-নাহ ! আপত্তি কেন থাকবে ?

যদিও আমার কেন জানি নিশি এটা চাচ্ছে না । অন্তত ওর মুখের ভাব টা দেখে মনে হল ও যেন চাইছিলো আমি ব্যাপার টা আরেক টু ভেবে দেখি । যদিও এতো কিছু ভাবাভাবির কিছু নেই । কিন্তু আমার নিজেরও কেন জানি মনে হচ্ছিল যেন ব্যাপার টা না হলেই মনে হয় ভাল ছিল । আমার সামনে আমার সেই ছোট্ট বেলার বউ বসে আছে এটা ভাবতেই মনের ভেতরে কেমন যেন একটা অনুভুতি হচ্ছিলো !
আমি আবার বললাম
-আসলে তুমি যা বলছো তা তো ঠিকই ! আমাদের এখন সেই সব মনে রাখলে চলে নাকি !
-তা তো ঠিকই !

নিশি আমাকে আপনি করে বললেও আমি কেন জানি ওকে তুমি করেই বলে ফেললাম ! খানিকটা অবশ্য ভয় ছিল ও আবার কিছু মনে করে কি না কে জানে ! একে তো সুন্দরী তার উপর কানাডা থাকে সেখানে পড়ালেখা করেছে ! এমন মেয়েদের আত্মসম্মান বোধ অনেক থাকে । হুট হাট করে কেউ আপনি না বলে তুমি করে বললে চোখ কঠিন করে বলল
কি ব্যাপার আপনি আমাকে তুমি করে কেন বলছেন ?
কিন্তু ওর চেহারা দেখে তেমন কিছুই মনে হল না ! কে জানে ছোট্ট বেলার পরিচিত বলেই মনে হয় ও কিছু বলল না !
নিশি একটু সময় চুপ করে থেকে বলল
-তাহলে কাগজ পত্র রেডি করে ফেলি ?
আমি বললাম
-এসেবের কি দরকার আছে ? ছোট্ট বেলায় আমাদের আব্বারা কি ছেলে মানুষী করেছে সেটার জন্য আইনী প্রকিয়ার ভেতরে যাওয়ার কোন দরকার নেই ! আমি যতদুর জানি তখনও কোন আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়া হয় নি !
-তা অবশ্য ঠিক । কিন্তু আমার কাছে ব্যাপার লিগ্যাল ওয়েতে নিস্পত্তি না হলে শান্তি আসবে না !
গত কয়েকটা দিনে নিশিকে নিয়ে বেশ ভেবেছি আমি । বিশেষ করে ওর ফোন টা আসার পর থেকেই । কেমন কাপা কাপা কন্ঠে যখন ফোনের ওপাশ থেকে বলল
-হ্যালো, নাগিম মাহমুদ বলছেন ?
-জি ! বলছি !
-আমি আরিসা আহমেদ ! ডাক নাম নিশি !

নিশি নাম টা শুনতেই স্মৃতির পাতায় কারো মুখ যেন একটু ভেসে উঠেই চলে গেল আবার । ৫/৬ বছরের একটা মেয়ের মুখ আসতে না আসতে আবার মিলিয়ে গেল । আর এল ভাসা ভাসা কিছু কথা !
আমি বললাম
-জি বলুন !
-আপনার ডাক নাম সম্ভবত অপু !
-জি ! আমি মনে হয় আপনাকে চিনতে পারছি !
-আপনার সাথে আমার দেখা হওয়া দরকার ।
-আচ্ছা !
-সম্ভব ?
-হ্যা ! কোথায় দেখা করবেন বলেন ?

বাসায় এসে খাবার টেবিলে নিশির কথা বলতেই দেখলাম বাবা মা দুজনেই কেমন গম্ভীর হয়ে উঠলেন ! বাবা তো বলেই উঠলো যে দেখা করার কোন দরকার নেই ! আমি কোন মানে বুঝলাম না !
আমার যতদুর মনে পরে এক সময় নিশিরা আমাদের আসেপাশেই থাকতো ! নিত্য দিনের খেলার সঙ্গি ছিল সে আমার । আমাদের পরিবারের ভেতরেও খুব ভাল সম্পর্ক ছিল । তারপর কিছু একটা হল । নিশি কিংবা ওর বাবা আমাদের বাসায় আসা বন্ধ হয়ে গেল । আমাদেরও ওদের বাসায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল । কিন্তু কি সেই কারন আজও আমি জানি নি । অবশ্য খুব একটা জানতে চাই ও নি তখন ছোট ছিলাম বেশ । নিশির কথা ভুলে যেতে খুব বেশি দিন সময় লাগে নি !
রাতের বেলা মা আমার ঘরে এসে হাজির হলেন হাতে একটা ছবির এলবাম নিয়ে ! আমাকে দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন

-এই তোর আর নিশির কিছু ছবি আছে এখানে ! তোর বাবা আগেই সব নস্ট করে ফেলতে বলেছিলেন । আমি কটা লুকিয়ে রেখেছিলাম !
-মানে কি ? নষ্ট করে ফেলতে কেন বলবেন ? কি হয়েছিল ?
-লম্বা ইতিহাস ! সেটা জেনে তোর কাজ নেই । আমি গেলাম । তোর বাাব ঘুম থেকে জেগে আমাকে না দেখলে রাগ করবে ! মা আর দাড়ালো না !

আমি এলবাম উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলাম ! পুরোনো কিছু কিছু কথা যেন আমার মনে পড়তে লাগলো !
কিন্তু যে কথাটা আমার মনে পড়ে নি সেটা নিশির কাছ থেকে শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম । নিশির দেখার করার প্রধান কারনও সেইটাই ! আমার নিজের কাছেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না ! আসলেই কি ব্যাপার টা হয়েছিল এমন করে !
আর কিছু বলছে না দেখে আমি নিশিকে বললাম
-তাহলে তাই হোক ! তোমার যা ইচ্ছে ! কবে আবার আসতে হবে ?
-যতদ্রুত সম্ভব ! আমি আসলে কেবল এই কাজের জন্যই দেশে এসেছি !
-ও আঙ্কেল আন্টি কেউ আসে নি !
এই কথাটা জানতে চাইতেই দেখলাম নিশির মুখ টা কেমন মলিন হয়েগেল ! নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় ! আমার তখনই মনে হল উনারা সম্ভবত আর বেঁচে নেই । তা না হলে নিশির এমন আচরন করার কোন কারন নেই !
আমি বললাম
-আই এম সরি ! তাহলে আপনি কিভাবে জানলেন ?

উত্তর দিতে হবে না দেখে নিশি যেন কিছুটা প্রসন্ন হল । অপ্রিয় কথা বলতে অনেকের ই ভাল লাগে না । নিশি বলল
-আম্মুর একটা ডায়েরি পড়ে জেনেছি ! জেনে এতো অবাক হয়েছিলাম ! আমার আপনার ব্যাপারে অনেক কিছুই মনে আছে কিন্তু এটার কিছুই মনে নেই ! আশ্চর্য !
-আমারও মনেই নেই ! তখন এসবের কিছু বুঝতাম নাকি !
-তা ঠিক !
আমার মনে সেই কখন থেকে একটা কথা বারবার ঘুর পাক খাচ্ছিল ! কিন্তু জিজ্ঞেস করতে কেমন যেন সংকোচ হচ্ছিল । শেষে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম !
-ইয়ে মানে ওখানে কাউকে পছন্দের নেই ?
-না ! তেমন কেউ নেই ! আসলে বাবা মা মারা যাওয়ার পরে ওখানে আমি হোমে বড় হয়েছি । নিজের জীবিকার চিন্তায় অস্থির থাকতাম তো তাই এসব আর চিন্তা করি নি কিছু ! আসে নি !
-ও !

আর কি বলবো কিছুই খুজে পেলাম না ! দুজনেই খানিকটা সময় চুপ করে রইলাম ! একটা সময় ওঠার সময় হল । নিশি বলল ও এখানে একটা হোটেলে উঠেছে । দেশে কিংবা বিদেশে ওর কোন আত্মীয় নেই যে সেখানে উঠবে !
নিশি কথাটা বলে কিছু টা সময় চুপ করে রইলো । কি বলবে আর যেন খুজে পাচ্ছে না ! আমি ওকে দেখতে লাগলাম ! আসলেই নিশি অনেক বেশি সুন্দরী হয়ে উঠেছে । সেই ছোট বেলাতেই ও অবশ্য বেশ কিউট ছিল । চেহারা টা একটু চাইনিজ ভাব ছিল তবে সেটাই যেন ওকে আরও বেশি সুন্দরী লাগছো । আমরা আমাদের বাসার উঠানে , বাড়ির পেছনে পুকুর পাড়ে সব জায়গায় খেলা করতাম । ঘরঘর খেলায় নিশি সব সময় আমার বউ হত, কি চমৎকারই না দিন ছিল আমাদের !
বাবা মায়ের কথা মনে আসতেই ওর মনটা একটু যেন খারাপই হয়ে গিয়েছিল ! আমি বলল
-আচ্ছা যদিও কাজ গুলো শেষ করতে এখন তো তুমি আমার বউ নাকি ?
নিশি কিছু টা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর বলল
-হিসেব মত তো তাই ই !
-ভাবতেই কেমন লাগছে । কয়েক ঘন্টা আগেও আমি ব্যাচেলর ছিলাম আর এখন জানতে পারলাম আমি আসলে সেই কবে বিবাহিত ! হাহাহা !
নিশিও হাসলো আমার সাথে ! আমি বললাম
-চল আর মনে হয় সুযোগ নাও পেতে পারি, তোমাকে ফুসকা খাওয়াই ! নিজের বউকে নিয়ে ঘুরতে বেড়ানোর মজাই আলাদা !

নিশি কিছুটা সময় অসস্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! তবে ওর চেহারা দেখে মনে হল অসস্তি বোধকলেও ও বেশ খুশি হয়েছে ! তারপর ওকে বেশ খানিক্ষন ঘুরাঘুরি করলাম ! এসেবের কোন কারন ছিল না তবুও কিছু হিসেব ছাড়া কাজ করতে খারাপ লাগলো ! ওকে হোটেলে রেখে আসার সময় হঠাৎই আমার মনে হল যে নিশি আসলে যে কাজ টা করতে এসেছে সেটা না করলেই মনে হয় ভাল হত ! কেন এই চিন্তাটা মাথায় এল আমি ঠিক জানি না, তবে মনে এল !


বাসায় এসেই মায়ের মুখোমুখি হলাম । মা আমার চেহারা দেখেি বুঝে গেল যে আমার নিশরি সাথে দেখা হয়েছে ! কিন্তু আশে পাশে বাবা থাকায় তেমন কিছু জানতে চাইলেন না । এমন কি খাওয়ার সময়ও মা চুপ করে করে রইলো । বাবাকেও দেখলাম অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ খানিকটা গম্ভীর ! এক প্রকার কোন কথা বার্তা ছাড়াই খাওয়া শেষ করলাম !
গত দিনের মত রাতের বেলা মা এসে নিশির কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন । দেখতে কেমন হয়েছে । ফর্সা হয়েছে নাকি কালো হয়ে গেছে আরও কত রকম প্রশ্ন ! কিন্তু যখন ওর বাবা মার কথা বললাম মা কেন যেন একদম চুপ হয়ে গেল ! একটা কথাও বললেন না ! চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন !


নিশ্চয়ই মায়ের সাথে তাদের অনেক ভাল সম্পর্ক ছিল । তাই তো খবর টা এতো শক দিলো তাকে । আমি চুপচাপ শুয়ে পড়লাম !
পরদিন টা কাটলো অফিসের বেশ ব্যস্ততায় কাটলো ! নিশির কথা মনে করার সময়ই পেলাম না ! ক্লান্ত হয়ে যখন বাসায় এসেছে তখনই একটা ধাক্কার মত খেলাম !

বাসায় এসে দেখি নিশি আমাদের ঘরের সোফার উপর বসে আছে মাথা নিচু করে । বাবা তাকে কি যেন বলেই চলেছে ! আমি প্রথমে বাবার কোন কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না ! যে কয়েকটা শব্দ কানে এল তার কিছুই মাথায় ঘুকলো না !
আমি মায়ের কাছে গিয়ে বলল
-কি ব্যাপার নিশির কিভাবে এল ?
-তোর বাবা নিয়ে এসছে !
-মানে কি ? বাবাই না বলল যে দেখা না করতে তাহলে ?
-নিশির বাবার মারা যাওয়ার কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারে নি ! কিভাবে কিভাবে জানি খোজ বের করেছে নিশি কোন হোটেলে আছে । জানিসই তো বাবা পারে না এমন কোন কাজনেই । সেই হোটেলে গিয়ে নিশিকে নিয়ে এসেছে । আমি তোকে কয়েকবার ফোন দিয়ে ছিলাম ! তুই ধরিস নি ।
-ব্যস্ত ছিলাম !
এই কথা বলতে বলতে বাবা ডাক দিলেন ! আমি তার সামনে গিয়ে দালাম !
-তোরা নাকি কি ডিভোর্সের কথা বলছিস ?
-হ্যা ! বাবা ! ও এই জন্যই এসেছে !
-তোদের তখন বিয়েটা কে দিয়েছিল ? আমি আর সাফায়েত মিলে দিয়েছিলাম !
-বাবা, তখন আমরা কত ছোট ছিলাম ! ঐ.....
-চুপ ! থাপড়ায়ে দাঁত খুলবো ! বেশি বুঝিস তুই ?
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে গেলাম । দেখলাম নিশিও কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো !
আব্বা বললেন
-সাফায়েতের বেশি ইচ্ছে ছিল তোকে ওর জামাই বানাবে ! ও আজ নেই তাই বলে কি ওর ইচ্ছার কোন দাম নেই !
-কিন্তু কোন কিন্তু না ! তোদের বিয়ের কাবিন আছে আমার কাছে ! প্রমান নেই কে বলল ! কোন কথা শুনতে চাই না !
তারপর নিশির দিকে তাকিয়ে বলল
-শুনো আজ থেকে তুমি এখানে থাকবে ! এটা তোমার বাসা আজকে থেকে । তোমার বাবা মায়ের পর আমি তোমার অভিভাবক !

নিশি কোন কথা না বলে কেবল কিছু সময় চুপ করে বাবার চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলো । আমিও কম অবাক হই নি ।
বাবা ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার পর মা নিশিকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগলো !
-মিলির মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে । তুমি কি জানো মিলি আর আমি কত ভাল বন্ধু ছিলাম ?
নিশির চেহারায় কেমন যেন একটু আনন্দের আভা দেখতে পাচ্ছিলাম । কেন জানি মনে হল এতো দিন পর কারো আদর পেয়ে নিশি নিজেও একটু আবেগে সিক্ত হয়ে পরেছে ।
-আমার আসলে সেব কথা কিছু মনে নেই তবে মায়ের ডায়রী আপনার কথা অনেক শুনেছি !
-ও খুব কষ্ট পেয়েছিল তোমার বাবা আর অপুর বাবার ঝগড়া নিয়ে ! আসলে আমিও কম কষ্ট পাই নি ওর কাছ থেকে দুরে থাকাতে । তোমরা চলে যাওয়ার পরেও আমাদের যোগাযোগ হত ! তবে খুব গোপনে ! তোমার বাবারা যে কি শুরু করেছিল । তবে তোমরা বাইরে চলে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ রাখাটা সম্ভব হয় নি । তখনও আর এখন কার মত যোগাযোগ ব্যবস্থা এমন ছিল না !
তারপর আরও পুরানো দিনের আরও কত কথা বলতে বলতে চোখ মুছলো !

তারপর ঘটনা খুব দ্রুত ঘটতে লাগলো । রাতের বেলা বাবা কোথা থেকে যেন আবার একটা কাজি নিয়ে ডেকে নিয়ে এল । আবারও আমাদের বিয়ে হল । বাবা বললেন যেন আমাদের মনে কোন রকম অস্বস্তি না থাকে । রাতের বেলা নিশি যখন লাল শাড়ি পরে আমার ঘরে এল আমি তখনও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না !
নিশিকে হঠাৎ দেখলাম ও যেন ঠিক মানিয়ে নিয়েছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি এটা এক্সপেক্ট করি নি ।
-আমিও না ! তবে.....
-তবে...?
-আসলে জোড়া সেই উপর থেকে লেখা থাকে । তবে তুমি যখন প্রথম বার যখন আমাকে বললে না আমার তখন কেন জানি মনে হচ্ছিলো কাজ টা না করলেই মনে হয় ভাল হত !
-তাই ?
-হুম ! পুরানো দিন গুলোর কথা বেশ মনে পড়ছিল । তোমার মনে পরছিল । তোমার মনে আছে আমাদের পাশের বাসায় রিমন রিমু নামের আরেক টা মেয়ে ছিল । বর বউ খেলার সময় তাকে তুমি কোন দিন আমার বউ হতে দিতে না !
নিশি হেসে ফেলল !
-মনে আছে !

ঐ দিন রাতের বেলা বলতে গেলে আমরা কথা বলেই কাটিয়ে দিলাম ! ঠিক আগের মত যখন আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা একসাথে খেলা করে কাটিয়ে দিতাম ! হঠাৎ করেই পুরানো কিছু খুজে পেয়ে আবার যেন আমার নতুন একটা জীবন শুরু হয়ে গেল !


দুই

-এইটা আমার মোবাইল !
-তাই নাকি !
সেতু যদিও ফোনের অন্য পাশে থাকা মানুষটার চেহারা দেখতে পাচ্ছে না তবুও ওর মনে হল যেন মানুষ টা খুব মজা পেয়েছে ওর কথা শুনে । সেতু আবার বলল
-এটা আমার মোবাইল !
-প্রমান কি ? আমার কাছে রয়েছে, সুতরাং এটা আমার !
-না আমার !

ওর এতো পছন্দের একটা ফোন । এক মাসও হয় নি ফোন টা কিনেছে আর এরই মধ্যে ফোন টা হারিয়ে গেল । সেতুর কান্না আসতে লাগলো । সেই সাথে ওপাশে থাকা মানুষটার উপর প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো !
এখনও বাসায় জানে না যে সেতু ওর নতুন মোবাইল টা হারিয়ে ফেলেছে । জানলে কি করবে কে জানে !
অনেক সখ করে সেতু আর তার কয়েকজন বান্ধবী মিলে গিয়েছিল ঢাকা ভার্সিটি এলাকায় ঘুরতে । যদিও সেটা ওদের বাসা থেকে অনেক দুরে । উত্তরা থেকে টিএসসি আসাটা খুব বেশি সহজ কাজ নয় তবুও ওর আর ওর বন্ধুদের কাছে এটা কোন ব্যাপার নয় । সব কিছু ঠিকই চলছিল, সারাটা দিঐ ওরা অনেক জায়গায় ঘুরে বেরালো । অনেক আড্ডা দিল । কিন্তু যখনই বাসায় এসে হাজির হল সেতু লক্ষ্য করলো যে ওর কাছে ওর নতুন ফোন টা নেই ।

কোথায় গেল কিছুই মনে করতে পারলো না । তক্ষুনি ফোন দিল কিন্তু ফোন টা বন্ধ ছিল । এসব গতকালকের ঘটনা । আজকে সকালে ফোনে আরেকবার ফোন দিতেই সেটা রিং হতে শুরু করলো । সেতুর বুকের ভেতরে কেমন একটা টিপটিপ অনুভুতি হতে লাগলো । ফোন ধরেই বাচ্চাদের মত করে বলল যে ওটা ওর ফোন ।
ওপর পাশ থেকে আবার বলল
-এটা এখন আমার ফোন !
-আপনি একটা খারাপ মানুষ !
-সবাই যে ভাল হতে হবে এমন কোন কারন নেই ।
-আপনি বদ ! চোর !
-এই তো ভুল বললে ! ফোন টা আমি চুরি করি নি কুড়িয়ে পেয়েছি ! এতো চমৎকার একটা ফোন যে ঠিক মত সামলাতে পারে না তার এটা ব্যবহার করার কোন অধিকার নেই ।

সেতু কি বলবে খুজে পেল না । অবশ্য বলে কোন লাভও নেই । ওর আসলে কিছুই করার নেই । যে লোকটা ফোনের সিম খুলে ফেলে তাহলে আর কোন দিন যোগাযোগ করতে পারবে না । কোন খোজও পাবে না ! সেতু রাগ করে ফোন রেখে দিল । এভাবে কথা বলার কোন মানে নেই । সেতু নিজের ফোনের আশা ছেড়েই দিল । ঠিক ১৫ মিনিট পরে আবারও ওর আগের নাম্বার থেকে ফোন এল ওর মোবাইলে !
-কি চাই আপনার ?
-কোথায় থাকো তুমি ?
-কেন ?
-আরে বলই না !
-উত্তরা !
-অনেক দুর ! কিচ্ছু করার নেই । এক কাজ কর নিউমার্কেট আসো ! এসে তোমার ফোন নিয়ে যাও !
সেতুর প্রথমে মনে হল ও মনে হয় ভুল শুনছে । শিওর হওয়ার জন্য বলল
-কি বললেন ?
-বললাম যে এখন রওনা দাও । নিউমার্কেট আসো ! আমি ঘন্টা খানেক পরে সেখানে যাবো ! এসে তোমার ফোন নিয়ে যাও !
-সত্যি বলছেন ?
-সত্যি কেন বলবো না ?
সেতু কি বলবে বুঝতে পারলো না !
ওপাশ থেকে মানুষ টা আবার বলল
-শুনো মানুষটা আমি খুব ভাল না হলে খুব খারাপ নই । অন্তত বাচ্চা একটা মেয়ের মোবাইল ফোন মেরে দেওয়ার মত এতো খারাপ নই ! এখন বাজে ১০টা ! আমি ২টার বেশি থাকবো না ! এর পরে আসলে কিন্তু আমার বাসা থেকে তোমার ফোন নিয়ে যেতে হবে !
সেতু আর দেরী করলো না ! যদিও ওর এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে লোকটা আসলেই ওর ফোন ফেরৎ দিবে কি না ! নাকি অন্য কোন মতলব আছে নাকি ! যদিও নিউমার্কেটতে মানুষটা কিছু করার সাহস পাবে না ! যখন বাসে উঠে পরেছে তখন মনে হল মিমিকে একবার ফোন করে জানায় !

সব শোনার পরে মিমি ওকে এক ঝাক বকুনী দিল এভাবে একা একা বের হওয়ার জন্য । তারপর বলল যে খবরদার যাতে সে কিছুতেই অন্য কোথাও না যায় । কোন চিপাচাপার ভেতরে না ঢুকে ।

যখন নিউমার্কেটে পৌছালো তখন প্রায় একটা বেজে গেছে । লোকটার সাথে এরই মাঝে আরও একবার কথা হয়েছে । ওকে চার নাম্বার গেটের কাছে দাড়াতে বলেছে । সেখানে দাড়িয়ে সেতু এদিক ওদিক দেখতে লাগল । এই এলাকার দিকে ওর আসা হয় না বললেই চলে । সব কিছুই বলতে গেলে এখানে অপরিচিত । আসলে এতো দ্রুত চলে এসেছে মোবাইলের কথা শুনে এখন ওর একটু ভয় ভয়ই করতে লাগলো । না জানি সামনে ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে । বাসায় এখনও জানে না যে ওর ফোন হারিয়ে গেছে তাই বাসায় ঠিক মত বলতে পারে নি ও কোথায় যাচ্ছে । কেবল বলেছে মিমির কাছে যাচ্ছে । এখন যদি ওর কোন বিপদ হয় যদি ঐ লোকটা ওকে কিডন্যাপ করে তখন ?
ওর মনে হল এভাবে চলে আসাটা একদম ভুল হয়েছে । চলে যাবে ?
এতো কাছে এসে চলে যাবে ? তবে একটা আফসোস থেকেই যাবে ! কি করবে না করবে ভাবতে ভাবতে কাধে মৃদু টোকা পেল ! চমকে গিয়ে ফিরে দেখলো ২৪/২৫ বছরের একটা ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । মুখে একটু দুষ্টামির হাসি !
-সেতু !
-হ্যা ! আপনি ! আমিই সেই অধম যার কাছে তোমার ফোন !
তখনই সেতুর মনে হল যে লোকটা ওর নাম জানলো কিভাবে আর চিনলোই বা কিভাবে ! নিশ্চই এর ভেতরে কোন সমস্যা আছে ! সেতুর মনে হল এখান থেকে পালানো দরকার । যদিও আশেপাশে অনেক মানুষ আছে । তবে ছেলেটা নিশ্চয়ই সে রকম প্লান করেই এসেছে । আল্লাহ না জানি কি করবে !
ছেলেটা যেন ওর মনের কথাটাই পরে ফেলল চট করে । মুখে হাসি নিয়ে বলল
-ভাবছো যে তোমার নাম আর তোমাকে কিভাবে চিনলাম ?
-হু !
-হাহাহাহহা ! আরে বোকা মেয়ে বুঝতছো না কেন তোমার ফোন আমার কাছে ছিল । সেখানে গ্যালারী আছে সেখানে তোনার সেলফি আছে আর কত কিছু !
-কি ! আপনি আমার গ্যালারী দেখেছেন ? আপনি তো মানুষ ভাল না ! এটা কেউ করে !
বলেই মনে হল কি বলছে এসব ! এসব বলা মানায় ওর ? ওর দোষ ও নিজের ফোন হারিয়েছে !
ছেলেটা বলল
-হ্যা ! একটু অন্যায় হয়েছে অবশ্য ! তবে কৌতুহল রাখতে পারি নি ! যাই হোক সরি ! আর এই নাও তোমার ফোন ।
ফোন টা হাতে পাওয়ার পরেও সেতুর ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না ! সামনে দাড়ানো মানুষটাক এখন আর খারাপ মানুষ বলে মনে হচ্ছে না ! মনে হচ্ছে তার মত যেন আর মানুষই হয় না ! এমন মানুষই হয় নাকি !
ছেলেটা বলল
-আমি এই যে তোমার মোবাইল টা ফেরৎ দিলাম বিনিময়ে এক প্লেট ফুচকা কি পেতে পারি আমি !
সেতু হেসে ফেলল !
-পারেন ! আর কি খাবেন বলেন ? আসলে আমি ভাবতেই পারছি না যে মোবাইল টা ফেরৎ পেয়েছি !
-আপাতত ফুচকা ! পরে দেখা যাবে !
-আমিতো এদিক টার তেমন কোন কিছু চিনি না । আপনি নিয়ে চলেন !

ছেলেটাকে আসলেই এখন আর খারাপ ছেলে মনে হচ্ছে না । তার উপর হাসিটাতে কেমন একটা মায়ামায়া ভাব আছে ।
ছেলেটার অনেক কথা বলল । বলল কেন সে ফোন টা ফেরৎ দিয়েছে যদিও খুব ইচ্ছে করছিল ফোন টা মেরে দেওয়ার জন্য কিন্তু মনে শান্তি পেত না বলে পারে নি । সেতুর ব্যাপারেও অনেক কথা জানতে চাইলো । কোথায় পড়ে কোথায় থাকে, বাবা মা কি করে ! এই সব ! খাওয়া শেষে এমন কি বিলটাও সেতুকে দিতে দিল না ! সেতুতো কিছুতেই বিল দিতে দিবে না কিন্তু শেষে হার মানলো !
ছেলেটা একেবারে ওকে উত্তরার গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে তারপর গেল । যখন গাড়ি ছেড়ে দিল তখনই সেতুর মনে হল এতো কথাভল অথচ সে এখনও ছেলেটার নাম পর্যন্ত জানে না ! একটা বারও জানতে চায় নি ! জানলা দিয়ে বার কয়েক খোজার চেষ্টা করলো । কিন্তু কোথায় পেল তাকে । ভিড়ের ভেতরেই হারিয়ে গেছে কোথায় !


হঠাৎ করেই মন খারাপ হয়ে গেল । বাসায় এসেও মন খারাপই রইলো !
ছেলেটার সাথে মনে হয় আর কোন দিন দেখা হবে না । ছেলেটা ওকে ওর হারানো মোবাইল দিয়েই কল করেছিল তাই ছেলেটার নাম্বারও সে জানে না ! মনটা খারাপ হয়েই রইলো !

রাতের বেলা শুয়েশুয়ে ফেসবুকে চালাচ্ছিলো তখনই অবাক হয়ে দেখলো শাফাত রাফি নামে একজন অপরিচিত মানুষের স্টাটাস ওর ওয়ােল ঘুরে বেড়াচ্ছে । নামের উপর ক্লিক করেই দেখলো সে ওর ফ্রেন্ড লিস্টে আছে । কিন্তু ওকে ঠিক মত চিনে না ! আনফ্রেন্ড করে দিতে যাবে তখনই ছবিটা আরও একটু ভাল করে লক্ষ্য করতেই ওর হার্ট বিট বেড়ে গেল !
আরে এই ছেলেটা ওর ফ্রেন্ড লিস্টে এলো কিভাবে ?
সঙ্গে সঙ্গেই নক করলো তাকে !
-আপনি আমার ফ্রেন্ড লিস্টে ঢুকলেন কিভাবে ?
রিপ্লে এলো সাথে সাথেই !
-মেয়ে ভুলে যাচ্ছো কেন ? তোমার ফোন টা আমার কাছেই ছিল ! পুরো একদিন !

সেতু কি বলবে ঠিক খুজে পেলনা ! কেবল অনুভব করলো যে ছেলেটাকে আবার খুজে পেয়ে তার মনে অসম্ভব আনন্দ হচ্ছে ! হয়তো নতুন গল্প শুরু এখান থেকেই.......


তিন

মিমির ইন্ট্রাগ্রামে একাউন্টে ঢুকেই পড়লাম । আমি যতদুর জানি আমাদের ক্লাসের অনেকেই ওর একাউন্ট ফলো করার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল কিন্তু ওর কারো রিকোয়েস্ট গ্রহন করে নি ! আমার টা কেন করলো আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ।

তবে যা হয় ভালর জন্যই হয় ! আমি প্রতিদিন নিয়ম করে ওর একাউন্টে ঢুকি । যত গুলো ছবি আপলোড সেগুলেতে লাইক দিয়ে বের হয়ে আসি ! আর ছবিও কি একখান । মাশাল্লাহ ! এই জন্যই আমি বলি কেন সে ক্লাসে কাউকে এড করে না !
মিমি হল আমাদএর ক্লাসে সবার ড্রিম গার্ল ! কালো রংয়ের একটা পাজেরো করে প্রতিদিন ক্লাসে আসতো, ক্যাম্পাসে পা দেওয়ার সাথে সাথেই সব কিছুই যেন ওকে ঘিরে ঘটতে থাকতো ! ওকে দেখে মনে হত ও মনে হয় এসব উপভোগ করছে !

অন্য সবার মত আমার মনেও সে ছিল, আসলে মিমি এমন একটা মেয়ে ছিল যে তাকে মন থেকে বের করে অন্য কারো কথা ভাবা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না ! আমার কাছে মিমির সব থেকে আকর্ষনের জায়গা ছিল ওর ঠোঁট । একাবারে গোলাপী জেলির মত । কেন জানি চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে মন চাইতো ! জীবনে তখন কেবল একটা লক্ষ্যই ছিল যে ওর ঠোটে চুমো খাওয়া !
একদিন মিমি এমন একটা ছবি আপলোড দিলো যে আমি কমেন্ট না করে পারলাম না ! সেই ছবি ! দেখলাম সেই কমেন্টের রিপ্লাইতে সে কেবল একটা হাসির ইমোটিন দিল । তাপর থেকেই টুকটাক কমেন্ট করতাম । কিন্তু ক্লাসে কোন দিন কথা মিমি আমার সাথে কথা বলতো না ! তবে ওর চোখ যে আমার দিকে নিবদ্ধ থাকতো মাঝে মাঝে সেইটা বুঝতে কষ্ট হত না !

খাওয়া দাওয়ার ছবি আপলোড করলে আমি নিচে লিখতাম যে খেতে ইচ্ছে করছে পরদিন কিভাবে যেন আমার ব্যাগের ভেতরে কিছু চলে আসতো ! প্যাকেটে করে একটা টুকরো কেক, চকলেট আরও কত কিছু । এই ভাবে আমাদের সম্পর্কটা আস্তে আস্তে এগুতে লাগলো ! যদিও ওর ফেসবুক একাউন্টে এড ছিলাম তবুও ওখানে খুব বেশি একটিভ দেখতাম না ! কোন স্টাটাস কিংবা ছবি আপলোড করতো না । কালে ভাদ্রে দু একটা ছবি পোস্ট করতো ! আমার কেন জানি মনে হত যে এটা ওর আসল একাউন্ট না ! সত্যি তাই হল । একদিন ওর
আসল একাউন্টের খোজ পেয়ে গেলাম । এডও হয়ে গেলাম !
একদিন তারপর সাহস করে ওকে ইণবক্স করেই ফেললাম !
সাথে সাথেই রিপ্লাই এলো । এরপর চলল ইনবক্সে কথা চালাচালী !

একদিন মিমি আমার কাছে জানতে চাইলো
-তুমি ইনবক্সে এতো কথা বল তাহলে সরাসরি বল না কেন ?
-কারন বাস্তব জীবন টা খুব সহজ না !
-কেন ?
-্তোমার জন্য সহজ কিন্তু আমার জন্য না ! এখানে হয়তো কোন সমস্যা নেই কিন্তু বাস্তবে তোমার আর আমার ক্লাস আলাদা তুমি জানো না ?
-কি রকম ? মানে কি ?
-মানে হল তুমি চল পাজেরোতে আর আমি চলি ৬ নাম্বার বাসে ! এটাই হল পার্থক্য !
-ক্লাস কিন্তু চাইলেই পার করা যায় !
-নাহ ! অত স হজ না ! আমি চাইলেও তোমার লেভেলে উঠতে পারবো না ! তবে তুমি অবশ্য চাইলে আমার লেভেলে নেমে আসতে পারবে ! কিন্তু কতক্ষন থাকতে পারবে সেটাই প্রশ্ন !
তারপরই একদিন প্রথম ওর সাথে কথা হল । আমি বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম । স্যার ছিল না ক্লাসে ! মিমি খুব সহজ ভাবে আমার কাছে এসে একটা বই এগিয়ে বলল
-এই নাও ! কালকে যেটা পড়তে চেয়েছিলে !

আমি একটু অবাক হল এই দেখে যে মিমি নিজ হাতে বইটা আমার কাছে পৌছে দিতে এসেছে ! অন্যান্য দিনে ও কোন এক ফাকে আমার ব্যাগের ভেতরে রেখে দিত ! আজকে সবার সামনেই এল ! আমি কেবল একটু হাসলাম ! আমার হাসি দেখে ও হাসলো !
এদিকে পুরো ক্লাস আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে । কেউ আসলে ভাবতেই পারছে না মিমি আমার সাথে কথা বলছে তাও আবার কেবল কথা না আমার জন্য কিছু নিয়ে এসেছে !

আরেক দিন ইনবক্সে ওর সাথে এটা ওটা কথা বলতে বলতে হঠাৎই সেই ওর ঠোটের কথাটা বলে ফেললাম ! বলেই মনে হল ভুল করলাম ! এইবারই মনে হয় ভুল করে ফেললাম ! এখনই মনে হয় ও আমাকে ব্লক করে দিবে । যদিও ব্লক করলো তবে আর কথাও হল না !


পরদিন বৃষ্টির ভেতরে ক্লাসে গিয়ে দেখি তেমন কেউ আসে নাই কিন্তু মিমি এসেছে । আমার দিকে কেমন চোখে তাকাতে লাগলো !
ছুটির পরে আমি বৃষ্টি হচ্ছি । আমি দাড়িয়ে রইলাম বারান্দায় ! মিমি পাশে এসে বলল
-বৃষ্টি হচ্ছে ! চল তোমাকে পৌছে দেই !
-না, সমস্যা নেই আমি যেতে পারবো !
-একদিন আমার গাড়িতে উঠলে কি হবে !
-কিছু হবে না ! প্লিজ অনুরোধ কর না !

মিমি কিছু না বলে চলে গেল ! আমি ভেবেছিলাম চলে গেছে কিন্তু যখন বৃষ্টি থামলো আমি গেটের কাছে এসে দেখি ও দাড়িয়ে আছে । আমার জন্যই যে সেটা অবশ্য বলে দিতে হল না !
মিমিকে বলল
-তোমার গাড়ি কোথায় ?
-ছেড়ে দিয়েছি !
-সেকি কেন ? এখন বাসায় যাবে কিভাবে ?
-তুমি যেভাবে যাবে !
আমি হেসে বললাম
-৬ নাম্বার বাসে চড়তে পারবে ?
-পারবো !
ওর বলার ভঙ্গি দেখেই মনে হল ও পারবে !

তবে বাসে উঠলাম না ! রিক্সায় উঠলাম ! বৃষ্টি থেমে গেলেও আকাশের অবস্থা খুব বেশি ভাল ছিল না ! আমরা রিক্সায় উঠে হুড তুলে দিলাম ! মিমির এতো কাছে আমি এর আগে কোন দিন আসি নি, মিমি কেন অন্য কোন মেয়েরও এতো কাছে আমি আসি নি ! অনুভব করলাম বুকের ভেতর কেমন একটা ঢিপঢিপ করছিলো ! একটু পরেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল । আমরা পলি নিয়ে কোন রকম বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিলাম !

মিমির কাছে এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম ! ওর মুখে দিকে তাকিয়ে দেখহি ওর ঠোঁট দুটো একটু কাঁপছে । আমার ভেতরে কি হল আমি ঠিক বলতে পারবো না ! অনেক টা ওকে অবাক করে দিয়েই ওর ঠোঁটে গভীর ভাবে চুম খেলাম ! প্রথমে ও অবাক হলেও ও সামলে নিল ! যখন ওর ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট সরালাম ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ইঙ্গিত তো দিবা !
-তোমার মনে হয় যে বলে কয়ে এটা আমার পক্ষে করা সম্ভব ছিল !
-আমি ভাবতাম তোমার পক্ষে এটা সম্ভবই ছিল না !
-কিই ই ই !

তারপর আরেক দফা চুমু পর্ব চলল ! চারিদিকে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে এর ভেতরে দুজন ছেমে-মেয়ে রিক্সার ভেতরে একে অপর কে চুম খাচ্ছে ! অন্য কোন দিকে তাদের লক্ষ্য নেই !

তারপর থেকেই আমাদের সম্পর্ক অন্য রকম হয়ে গেল । আস্তে আস্তে সবাই জেনে গেল যে মিমির সাথে আমার কিছু চলছে । ক্লাসে সব ছেলে গুলো আমার দিকে তীব্র ঈর্শার দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলো ! আমার অবশ্য এতে ভাল লাগতো ! আমাদের অবশ্য সেদিকে লক্ষ্য কম থাকতো ! আমি তখনও ওর ঠোটে চুমু খেয়েই কূল পাই না !
মাঝে মাঝে মিমি হেসে বলত
-তুমি আসলেই একদিন আমার ঠোঁট টা খেয়েই ফেলবে ! কি আছে এর ভেতর বল তো !
আমি হেসে বলতাম
-সময় থাকতে থাকতে যতটুকু পারা যায় !

আমি হাসলেও মিমি এই কথা শুনে হাসত না ! আমি জানতাম ও ঠিকই বুঝতে পারতো আমি কি বোঝাতে চাইছি ! তবে আমি মানষিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়েই রাখলাম যে কদিন পরেই আমার ব্রেক আপ হয়ে যাবে । হয়তো কদিন পরেই মিমির বাবার পছন্দের কোন আমেরিকা ফেরৎ ছেলের সাথে ওর বিয়ে হয়ে যাবে ! ওর কিছু করার থাকবে না আমারও না !

সেই মানষিক প্রস্তুতি আমি নিয়ে রেখেছিলাম । কিন্তু তেমন টা হল না ! পড়ােলখা শেষে সত্যি সত্যিই মিমির বাবার পছন্দের এক আমেরিকা ফেরৎ ছেলে ওকে দেখতে এল ! মিমি আমাকেও নিয়ে গেল তার সাথে দেখা করতে ! কেন নিয়ে গেল আমি ঠিক জানি না !
ছেলে দেখতে খুব সুদর্শন ! আমি তার কাছে কিছুই না ! ওদের থেকে একটু দুরে টেবিলে বসে ছিলাম । হঠাৎ করেই দেখলাম মিমি
আমাকে হাতের ইশারা করে ডাকছে । ততক্ষনে সুদর্শন পুলার মুখ কেমন কালো হয়ে গেছে !
আমি কাছে যেতেই মিমি আমার হাত ধরে বলল
-একে দেখছেন না ! একে আমি বিয়ে করবো ! যে কোন মূল্যে !

ঠিক তখনই আমি মিমির চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ! ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হল এতো দিন আমি ভুল জেনে এসেছি ! এই মেয়ে নিশ্চয়ই আমাকে বিয়ে করবে । যে কোন মূল্যেই ! কিন্তু ঐদিন যে ও আমাকে বিয়ে করতে চাইবে !
যখন বিয়ে করে কাজী অফিস থেকে বের হলাম তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না ! এবং অবাক করার বিষয় হচ্ছে আমাদের বিয়ের সাক্ষী হয়েছে মিস্টার সাব্বির, আমেরিকা ফেরৎ ঐ সুদর্শন পুলা !


প্রথম প্রথম মিমির মানিয়ে নিয়ে একটু কষ্ট হত আমি বুঝতাম । কিন্তু বছর খানেকের ভেতরেই আমি বেশ ভাল একটা চাকরী পেয়ে গেলাম ! তবে অবশ্য জানতাম এতে মিমির বাবার হাত ছিল । একটু খারাপ লাগছিল নিজের কাছে তবে মিমির জন্য এতটুকু মেনে নিলাম ! মেয়েটা আমার জন্য এতোকষ্ট করছে এতো ছাড় দিচ্ছে আমিও না নিজের কিছুটা ছাড় দেই ! তবে এতো কিছুর পরেই মিমি ঠোটে চুম খাওয়া বন্ধ হল না ! এমন কি বিয়ের ৫ বছর পা হয়ে গেলেই । প্রতিদিন যেমন ভাত খাই ঠিক তেমনি ভাবে মিমির ঠোঁটে আমার চুম খাওয়া আমার চাই ই চাই ! এমন কি মাঝে মাঝে ও যখন আমার উপর রাগ করে থাকতো তখনও !
রাতের বেলা গম্ভীর মুখ গিয়ে বললাত
-আপাতত যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হোক ! চুমু পর্ব শেষ হলে আবারও রাগ পর্ব শুরু হবে !
-খবরদার না ! তুমি আমার কাছে আসবে না বলে দিলাম !
-আরে মানে কি ! রাগ আছে রাগের জায়গায় ! চুম আছে চুমর জাগায় !

মিমি একটু বাধা দেওয়া চেষ্টা করতো কিন্তু কোন লাভ হত না ! ওকে আমার চুম খাওয়া চাই ই চাই ! চুম খাওয়ার পর অবশ্য ও রাগ ধরে রাখতে পারতো না !


আমি এতোটুকু বলে চুপ করলাম ! আমাকে চুপ থাকতে দেখে মৌ বলল
-তারপর কি হল বাবা ! বল ! আম্মু আর কি কি করতো !
আমি কালো চুল হাত দিয়ে এলোমেলো করে বলতাম
-তারপর তুমি এলে আমাদের জীবনে ! তোমার আম্মু আমার থেকে এখন তোমাকে বেশি আদর কে !


-কি বল এই সব !
তাকিয়ে দেখি মিমি দরজায় দাড়িয়ে আছে । আমার দিকে চোখ গরম করে বলল
-মেয়ের সামনে কি সব গল্প বল না ! লজ্জা শরম কিচ্ছু নাই !
-ইস ! লজ্জা কিসের ! জীবনের সব থেকে চমৎকার গল্পটা আমার মেয়েকে বলছি ! লজ্জা করবে কেন শুনি !

মৌ মাঝ খান দিয়ে বলল
-তাই তো আম্মু ! আব্বুর কেন লজ্জা করবে ? তুমিও তো আমাকে চুমু দাও !
মৌয়ের কথা শুনে আমরা দুজনই হেসে ফেললাম ! মিমি বলল
-হয়েছে ! এবার অনেক রাত ! বাপ বেটির কথা বন্ধ ! মৌ মামনি এসো ঘুমুতে হবে !
-না আম্মু আমি আরও গল্প শুনবো !
-আজকে না ! কালকে ! কাল ছুটির দিক তোমার বাবার থেকে সারা দিন গল্প শুনো !


মিমি মৌকে নিয়ে যায় ওর ঘরে ! আমি অপেক্ষা করতে থাকি ! একটু পরেই মিমি আসবে । আজকে এখনও চুমু পর্ব শুরু হয় নি !
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:০৯
১৮টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×