এইবার বইমেলায় ব্লগারদের বেশ কয়েকটা প্রকাশিত হয়েছে । সেই বেশ কিছু বইয়র কিছু অংশ কেনা হয়েছে । তার কিছু অংশ পড়াও হয়েছে । বইয়ের রিভিউ সামুতে খুব বেশি ব্লগাররা পড়ে না, যদি না পরিচিত মানুষের বই হয়। প্রথমে ভেবেছিলাম প্রতিটি বইয়ের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে রিভিউ পোস্ট করবো তারপর মনে হল থাকুক এতো গুলো পোস্ট করার দরকার নেই । এর থেকে বরং সব গুলো পোস্ট এক সাথে পোস্ট করা যাক । বইয়ের কথা বার্তা লেখার জন্য আমার আলাদা একটা ওয়েবসাইট আছে । যে যে বই পড়ি সেই বই গুলোর কথা সেখানে লিখে রাখার চেষ্টা করি।
বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়ায় প্রথম বইয়টার নাম লোলার জগৎ । বইয়ের লেখক মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম । সামুতে তিনি শান্তির দেবদূত নামে ব্লগিং করেন ।
মানুষ তার জ্ঞানের প্রান্তিক সীমাতে পৌছে গেছে । এর থেকে বেশি জ্ঞান অর্জন মানুষের পক্ষে আর সম্ভব না । এমনই এক সময়ে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে এক ভয়ানক বিপদ । যা পৃথিবীতে নিয়ে প্রায় দশ হাজার বছরের এক অন্ধকারের সময়ে । পৃথিবীকে ঘিরে বিরাজ করবে এক ঘন ধূলার ঝড় যা সূর্যের আলো আসতে দিবে না পৃথিবীতে । সব কিছু জমে ঠান্ডা হয়ে যাবে । মানুষের সব প্রযুক্তি অচল হয়ে যাবে । মারা যাবে প্রায় সব মানুষ । পৃথিবীতে নিশ্চিত হয়ে যাবে মানব সভ্যতা । এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য পৃথিবীবাসীর হাতে সময় মাত্র ২৬ বছর । ঠিক ২৬ বছর পরে এই অন্ধকার যুগ শুরু হবে । এই অল্প সময়ের ভেতরে পৃথিবী বাসী কি পারবে এই বিপদ হতে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় বের করতে?
পুরো পাঠ প্রতিক্রিয়া এখান থেকে পড়ুন
পরের বইটার নাম অম্যুইং । লেখক আসাদ রহমান । সামুতে অগ্নিসারথি নামে সে ব্লগিং করেন ।
ম্যুইং একটা মারমা শব্দ । যার অর্থ উত্তরাধিকার । গল্পটার কাহিনী বিস্তার করেছে কাপ্তাইয়ে অবস্থিত একটা কাল্পনিক মারমা সমাজকে কেন্দ্র করে । জমাদ্দার টিলার নিচে কিছু দিন পরপরই একটা লাশ পাওয়া যেতে শুরু করে। ঠিক লাশ বললে ভুল হবে, একটা কাঁটা মাথা পাওয়া যেতে শুরু করলো । জমাদ্দার টিলার অপর পাশের অংশের রাস্তাকে নিরাপদ রাখতে সেনাবাহিনীর তৈরি একটা দেওয়াল রয়েছে সাদা চুনকাম করা । খুনের আগে সেই সাদা দেওয়ালে আজানা ভাষায় কিছু লেখা ফুটে ওঠে । প্রতিটি লেখা ফুটে ওঠার অল্প দিনের ভেতরে একটা খুন হয় । খুন হয় খুবই ভয়ানক ভাবে । খুন হওয়া ব্যক্তির শরীর পড়ে থাকে তার বাসভবনের আশে পাশে এবং তার কাঁটা মাথা পাওয়া যায় জমাদ্দার টিলা সংলগ্ন শ্মশানে । প্রশাসন অনেক চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু কোন ভাবেই খুন গুলোকে আটকাতে পারছে না ।
পুরো পাঠ প্রতিক্রিয়া এখান থেকে পড়ুন
নজরবন্দী আসাদ রহমানের লেখা আরেকটি বই । দুই বছর আগের বইমেলাতে বইটা প্রকাশিত হয়েছিলো ।
গল্পের কথক এক বর্ষণ মুখর রাতে এসে থামে ঘুমপুরে এসে হাজির হয় । সেখানেই তার পরিচয় হয় নৈশপ্রহরী ছোরাব আলীর সাথে । মূলত গল্পের কথক একজন গবেষক । ভুত প্রেত ওঝা নিয়ে যাদের কারবার তাদেরকে নিয়ে সে গবেষণা করেন । একটা আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার হয়ে কাজ করে সে । তার গন্তব্য মূলত রূপপুরে । সেখানে একজন কবিরাজের কাছে । নাম নারায়ন গোস্বামী । প্রতি মঙ্গলবার তার উপরে নাকি দেবী ভর করে এবং সেই দেবীই তার কাছে আসা নানান মানুষের সমস্যার সমাধান করে দেন । বোবা মানুষ কথা বলে ওঠে খোড়া মানুষ হাটা শুরু করে । এই কবিরাজের ব্যাপারে খোজ খবর নেওয়ার জন্যই তাকে যেতে হবে রূপপুরে ।
ছোরাব আলী জানায় যে আজকে রাতে আর সেখানে যাওয়ার কোন উপায় নেই । যেতে হবে কাল । রাতে ছোরাব আলী বাজারের দোকান থেকে তার জন্য কিছু খাওয়ার জিনিস নিয়ে আসে । তার সাথে বসে নানান কথা বার্তা বলে । পরিবারের কথা বলে । এক সময়ে তাদের কথা বার্তা আধ্যাতিক দিকে মোড় নেয় । ছোরাব আলী মুখে গুরুবাদী মানব ধর্মের কথা শুনে কথক বেশ অবাক হয়ে যায় । সামান্য েক নাইট গার্ডের মুখে এমন কথা সে শুনতে পাবে সেটা সে মোটেও ভাবতে পারে নি ।
পুরো পাঠ প্রতিক্রিয়া এখান থেকে পড়ুন
এরপরের বইটার নাম কঙ্কাবতীর কথা । বইয়ের লেখকের নাম শায়মা হক । তাকে তো সবাই চেনেনই । আলাদা করে তার পরিচয় দেওয়ার দরকার নেই । বইটা পড়া হবে হবে করেও হয় নি এতো দিন । এইবার পড়েই ফেলেছি ।
ভালোবাসার পরাজয়ের থেকে বড় পরাজয় আর কিছু নেই । সারা পৃথিবী জয় করে আসার পরেও যখন ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে একজন প্রত্যাখ্যাত হয় তখন সব কিছুই তার কাছে মূল্যহীন মনে হয় । এই একটা কারণেই মানুষ আমূল বদলে যেতে পারে । কঙ্কাবতীর কথা বইটায়ের কাহিনীও সেই কাহিনী বর্ণনা করে? হয়তো আবার হয়তো না । কঙ্কাবতীর কথা বইটা মূলত একজন মেয়ের জবানীতে বর্ণনাকৃত তার জীবনের একটা অংশবিশেষ ।
মেয়েটির মা অসম্ভব সুন্দরী একজন মেয়ে । কিন্তু তার বাবা দেখতে মোটেও সুন্দর নয় । মেয়েটির দাদু পছন্দ করে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন এমন সুন্দরী মেয়ের সাথে কিন্তু তাদের সংসারে মোটেই সুখ ছিল না । এক সময়ে মেয়েটির বাবা তার মায়ের সাথে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় এবং আর ফিরে আসে না । এক সময় জানা যায় সে দেশ ছেড়েছে এবং তার মাকে তালাক দিয়েছে ।
পুরো পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
বইয়ের নাম আকাশ গঙ্গার তারা । লেখক খন্দকার নাইমুল ইসলাম । সামুতে তিনি মলাসইলমুইনা নামে পরিচিত । তার বইটি মূলত ছোট গল্পের সংকলন ।
ভালোবাসার গল্পের ভেতরে একটা আলাদা শক্তি রয়েছে । সেটা মুহুর্তের ভেতরে সব কিছু কেমন বদলে দিতে পারে । মনকে এই সিক্ত করে তুলতে পারে আবার এই যেন আনন্দিত করে তুলতে পারে । আকাশ গঙ্গার তারা সেই রকম একটা ভালোবাসার গল্পের বই । গল্পের বইটাতে মোট ১২টি গল্প রয়েছে যার বেশির ভাগই ভালোবাসার গল্প । আমি মূলত ছোট গল্পের পাঠক । যে কোন ধরনের ছোট গল্প পড়তে আমার ভাল লাগে । সেটা যদি ভুত কিংবা রোমান্টিক হয় তাহলে তো কথায় নেই । বইয়ের লেখক খন্দকার নাইমুল ইসলাম । আমাদের সামু ব্লগের একজন ব্লগার ।
প্রথম গল্পটার নাম আকাশ গঙ্গার তারা । কোন এক অখ্যাত স্টেশনে বসে স্বপ্নীল আর শ্বেতা গল্প শুরু । এক সাথে বসে চাও খাওয়া আর সামনের দিনের স্বপ্ন নিয়ে কথোপকথন । গল্প শেষ হয় বিশ বছর পরে সেই একই স্টেশনে । তবে তখন অনেক কিছু বদলে গেছে স্বপ্নীলের জীবনে। জ্যোতিষী গল্পটা পড়তে গিয়ে প্রথমে ভেবেছিলাম কোন সাদামাটা জীবনের গল্প হবে কিন্তু গল্পটা শেষ করে মনের ভেতরে কী অদ্ভুত এক আদ্রতা অনুভব করলাম । কী তীব্র অপেক্ষা আর ভালোবাসার গল্প এই জ্যোতিষী ।
পুরো পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়তে এখানে ক্লিক করুক
সব শেষ বইটার নাম জীবন ও জীবিকার গল্প । লেখক ব্লগার সোহানী । যদিও বইটা মেলার আগেই বের হয়েছে এবং মেলার আগেই পড়া হয়েছে তবুও পাঠ প্রতিক্রিয়াটা এখানে এড করে দিলাম ।
আমার কাছে সাহিত্যের সব থেকে পছন্দের শাখা হচ্ছে ছোট গল্প । ছোট ছোট গল্প গুলো কিভাবে যেন মনকে নাড়া দিয়ে যায়। এমন অনেকবার হয়েছে যে একেকটা গল্প পড়ে শেষ করেছি তারপর বইটা কিছু সময়ে বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে গল্পটার কথা ভেবেছি । সেই গল্পটার পরে চরিত্র গুলোর কী হবে সেটা ভেবেছি । সুখের গল্প হলে আনন্দিত হয়েছি কষ্টের গল্প হলে মন খারাপ করে থেকেছি । জীবন ও জীবিকার গল্প পড়তে গিয়েও কয়েকবার এমন হয়েছে যে আমি একটা গল্প পড়েছি তারপর বইটা বন্ধ করে বেশ কিছু সময়ে সেই গল্পের চরিত্র নিয়ে ভেবেছি । গল্প পড়ার ক্ষেত্রে অনেকেই গল্পের অনেক সাহিত্য মান নিয়ে কথা বলে আরও কত গুরু গম্ভীর আলোচনা করে ।আমার ভেতরে এসবের বালাই নাই । আমি গল্প পড়ি কেবল মাত্র নিজের মনের আনন্দের জন্য । একটা গল্প পড়ে যদি আমার মনে হয় মন আরাম পেয়েছে তাহলেই সেটা আমার কাছে ভাল লেখা । অন্য কোন কিছু চিন্তা করার সময় নেই ।
পুরো পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
এছাড়া সামুর প্রাক্তন ব্লগার নাজিম উদ দৌলার বই ব্লাডস্টোন এর পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারেন । এবং ব্লগার সান্তার রিকির অনুবাদ কৃত বই দি অ্যাপ্রেন্টিস সম্পর্কে জানতে পারেন ।
এছাড়াও আরও যত বই আমি পড়ি সেগুলোর সম্পর্কে নিজের একান্ত মতামত সেখানে লিখে রাখি । সময় করে ঢু মেরে আসতে পারেন সেখানে ।
বই পড়ুন । বই আপনার সব থেকে কাছের বন্ধু ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১২:০৫