somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ স্মৃতি

১৫ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ বলতে আসলে এখন আর আলাদা ভাবে কিছু নেই । আমার ঠিক মনেও নেই আমার ঈদ গুলো কেমন ছিল । যতদুর স্মৃতি ভাল ভাবে মনে পড়ে তাতে দেখা যায় প্রতিটি ঈদেই আমি সারাদিন বাসায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখেছি, বই পড়েছি নয়তো মোবাইল টিপছি । এছাড়া ঈদে আসলে কোন পরিস্কার স্মৃতি আমার মনে পড়ে না । তবে ভাসা ভাসা কয়েকটা স্মৃতি আমার মনে আছে ।

তখন কোন ক্লাসে পড়ি সেটা আমার মনে নেই । তখন যশোরে থাকি । তখন বাবার কাছ থেকে ঈদি পেতাম বিশ টাকা । সেই বিশ টাকা তখনকার সময়ে অনেক টাকা ছিল । এই ২০ টাকাই ছিল আমার আর আমার বড় ভাইয়ের ঈদের জন্য বরাদ্দ । কিন্তু একবার আমার বড় ভাই বিদ্রোহ করে বসলো । সে ঈদের আগের দিন থেকেই দাবী করলো যে সেইবার তাকে বিশ টাকা নয় বরং ৫০ টাকা দেওয়াই লাগবে । নয়তো সে ঈদ করবে না । কিন্তু আমার বাবা তা দিবে না । দেখা গেল ঈদের দিন সত্যি সত্যিই সে ঈদ করছে না । আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেই বাসার সামনে একটা দরজা দিল যদিও সেটা সব সময় বন্ধ থাকতো । সেই দরজার সামনে একটা বড় সিড়ি টাইপের কিছু ছিল । সেখানে আমরা বসে আড্ডা দিতাম । আমার বড় ভাই পুরানো জামা পরে সেই সিড়িটার উপরে বসে রইলো । সে নতুন জামা পরবে না, ঈদও করবে না । আমি কিছু বলছি না । তার আশের পাশে নতুন জামা পরে ঘুরাফেরা করছি এই যা…. এক সময়ে আমার বাবার মন গলল । সে বড় ভাইয়াকে ৫০ টাকাই দিল । তবে আমাকে সেই ২০ টাকা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল ।

এরপরের স্মৃতিটা আরও একটু বড় বেলার । তখন চুয়াডাঙ্গাতে নানী বাড়িতে ঈদ করতে গেছি । তখন ঈদে চকলেট বোমা ফুটানোর খুব চল ছিল । আমার এক ছোট খালা আবার এই বোমার আওয়াজে খুব ভয় পেত । কানে হাত দিয়ে বসে থাকতো । এই কারণে আমার আবার বাবা বোমা ফুটালো খুব রাগ করতো আমার বড় ভাইয়ের উপরে । সে বাবার আদেশ অমান্য করে বোমা ফুটিয়েই চলেছে । আর এদিকে আমার ছোট খালা কানে হাত দিয়ে চিৎকারে চলেছে । আমার বাবা বের হয়ে এল । তারপর বড় ভাইয়ের পেছনে দৌড় শুরু করলো তাকে ধরার জন্য । আমি সিড়ি ঘরের দাড়িয়ে সেই দৌড়ানোর দৃশ্য দেখছি । ভাইয়া দৌড়াচ্ছে পেছন পেছন আমার বাবা দৌড়াচ্ছে । তবে শেস পর্যন্ত আমার বাবা তাকে ধরতে পেরেছিলো কিনা সেটা আমার মনে নেই ।

তিন নম্বর স্মৃতিটা মনে আছে একদম অল্প । ঈদে গিয়েছি বিক্রমপুর । কিন্তু গিয়ে আমাদের মন খারাপ । সারা দিন ধরে বৃষ্টি । বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই এমন কি নামাজ পড়তে পর্যন্ত যাওয়া হল না । আমি ঘরের জানালা দিয়ে সেই বৃষ্টি ভেজা মাটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে । বাড়ির পাশেই আমার দাদার কবর । তার পাসেই কয়েকটা গাছ । সেই গাছ থেকে বৃষ্টির পানি পড়ছে একমনে । এই দৃশ্য টুকুই কেবল মনে গেঁথে রয়েছে ।

ঈদের স্মৃতি বলতে আলাদা ভাবে আমার এই মনে আছে । আর কিছু মনে নেই । যা মনে আছে সব কিছু একই দৃশ্য । ঈদের সারা দিন বাসায় থাকা । বিকেল কিংবা সন্ধ্যার সময়ে বন্ধুদের ফোন আসতো । বের হতাম বাইরে । বড় বাজার কিংবা বিএডিসির ভেতরে গিয়ে বসতাম । সন্ধ্যা পেরিয়া রাত পর্যন্ত আড্ডা চলত । তারপর বাসায় চলে আসতাম । গত কয়েক বছর ধরে ঈদ বলতে এই একই দৃশ্য ।

গত বছরের ঈদ অবশ্য একটু অন্য রকম ছিল । বাসায় যাই নি । ঢাকার বাসাতেই ছিলাম । একদম একা । যাদের সাথে সাবলেট থাকি তারাও ছিল না । নিজেই রান্না করলাম নিজের খেলাম, মুভি দেখলাম বই পড়লাম টিভি দেখলাম । এই ভাবে কেটে গেল ঈদের দিন ।

আরেকটা স্মৃতির কথা বলি । যদিও এটা ঠিক ঈদের দিনের স্মৃতি না । এটা ঈদের কয়েক দিন আগের স্মৃতি । তখন ক্লাস টেনে পড়ি । জীবনের প্রথম প্রেম তখনও চলমান । সব কিছুতেই তখন আলাদা উত্তেজনা । প্রতিদিন নতুন কিছু ঘটছে । স্কুল ছুটি হয়ে গেছে । তবুও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে আসছি নিয়মিত । ঈদের আর দুয়েক দিন বাকি সম্ভবত । আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরবো তখন এক বন্ধু আমার দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিল । খুলে দেখলাম সেটা একটা পাঞ্জাবী । আমার প্রথম প্রেমিকা আমাকে ঈদের জন্য এই পাঞ্জাবীটা উপহার দিয়েছে । সেই সময়ের আনন্দটা কেন জানি আমি এখনও অনুভব করি ।

আমার ঈদের স্মৃতি বলতে এই । আর কিছু আমার মনে নেই ।


আগে এখানে প্রকাশিত

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৩৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×