somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার জগিং প্রেম ....

০২ রা জুন, ২০২১ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জগিং শব্দটা আসলে শব্দটা বিত্তবানদের বেলাতে খাটে ভাল । আমার কাছে সেটা হচ্ছে সকাল/বিকালের হাটাহাটি । এখন শিরোনামে তো আর হাটাহাটি প্রেম লেখা যায় না । তাই লিখলাম জগিং । ঘটনার সুত্রপাত গত বছর লকডাউনের সময় । সকাল কিংবা বিকাল, হাটাহাটি আমার কোন কালেই পছন্দ ছিল না । কিন্তু বাধ্য হয়ে এই কাজ শুরু করতে হয়েছে । গত বছর যখন লক ডাউন দিল তখন থেকে শারীরিক পরিশ্রম একেবারে বাদ হয়ে গেল । সারা দিন বাসার ভেতরে থাকতে হত, বাইরে বের হওয়ার উপায় ছিল না । কাজের ভেতরে ছিল সারাদিন খাওয়া ঘুমানো আর বই পড়া । ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কারণে বিছানাতে বসেই ল্যাপটপ দিয়েই কাজ হয়ে যেত । ঘর থেকে বের হওয়া লাগতো না একদম । এমনিতে তো সুখেই ছিলাম কিন্তু কয়েক মাস পার হওয়ার পরে একদিন খেয়াল হল যে পেট টা কেমন যেন অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে গেছে । আমি কেবল আশ্চর্যজনক চোখ নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম । হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতে শুরু করলাম । তারপর বুঝতে পারলাম যে ঘটনা সত্য । আমার খানিকটা ভুড়ি দেখা দিয়েছে । বুঝলাম যে এই কয়মাস কেবল খাওয়া আর ঘুমানোর কারণে এই জিনিসের উদয় হয়েছে ।

যারা স্বাস্থ্যবান মানুষ, তাদের একটু আধটু ভুড়ি কোন ব্যাপার না । বরং সেটা ভালই লাগে । কিন্তু আমার মত চিকন মানুষের জন্য ভুড়ি ব্যাপারটা বড় জঘন্য । যে কোন ভাবেই এই জিনিস কমাতে হবেই । সেই জন্য শারীরিক পরিশ্রম করা শুরু । সকালে তো ঘুমের কারণে যাওয়া হয় না । বিকেলে হাটাহাটি শুরু করলাম । প্রতিদিন বাসা থেকে সন্ধ্যার আগ দিয়ে বের হই । হেটে হেসে ধানমণ্ডি ৩২ এর পাশের যে ছোট পার্কটা আছে সেখানে যাই । কয়েক চক্কর মারি । তারপর আবার একই ভাবে ফিরে আসি । এভাবে প্রতিদিন হাটাহাটি চলতে লাগলো । একটা সময়ে আমি আবিস্কার কারলাম যে এই প্রতিদিন পার্কে হাটতে আসি, আমার কয়েকজন চেনা মুখ হয়ে গেছে যারা নিয়মিত এই পার্কে আসে একই সময়ে ।

প্রথমে কথা বলি এক জনের । লোকটা আমার থেকে বয়সে ৭/৮ বছরের বড় হবে । শরীর স্বাস্থ বেশ ভাল । মাথায় চুলের পরিমান খবই কম । একেবারে টাকই বলা চলে । প্রতিদিন সে হাফ প্যান্ট পরে আসে । সাথে পরে হাটাকাটা বড় গলা সেন্ডো টিশার্ট । হাতে তার মোবাইল থাকে । কানে থাকে হেড ফোন । প্রতিদিন আমি যখন হাটি আমাদের প্রতিবার মুখোমুখি দেখা হয় । আমি নিশ্চিত আমাকেও সে খেয়াল করেছে ।

এরপর একজন বৃদ্ধ মানুষের কথা বলি । বয়স অনেক হবে । মাথা ভর্তি সাদা চুল । দাড়িও সাদা । প্রায় প্রতিদিন আসেন তিনি । তবে তার পায়ে সম্ভবত কোন একটা সমস্যা আছে । একটু খুড়িয়ে খড়িয়ে হাটেন । তবে হাটা বন্ধ করেন না । আমি যেখানে দুই চক্কর মারি সেখানে তার এক চক্কর মারা হয় । তারপরেও তিনি থামেন না । হাটতে থাকেন ।

আরেক ভদ্রলোককে আসতে দেখি নিয়মিত । তবে তিনি আসেন আমার যাওয়ার সময় হল । অনেক লম্বা । অন্তত ছয়ফুট এক দুই তো হবেনই। মাথা ভর্তি কালো চুল । মুখে দাড়ি ভর্তি । তবে এই চুল আর দাড়ির বিশেষত্ব হচ্ছে এগুলো কেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে । ফুটবল প্লেয়ার মার্সেলোকে চিনেন না? তার চুল যেমন খাড়া খাড়া ছড়ানো এই ভদ্রলোকের চুলও তাই । একেবারে ছড়িয়ে রয়েছে । দুর থেকে দেখলেই তাকে চেনা যায় । ইনি হাটেন বেশ দ্রুত । শরীরে বাড়তি মেদ নেই । মাঝে মাঝে তার সাথে এক পিচ্চি মেয়ে আসে । সম্ভবত তার নিজের মেয়ে হবে ।

এক বৃদ্ধ দম্পতি আসেন । তারা গুটুর করে গল্প করেন আর হাটেন । মাঝে মাঝে একে অন্যের হাত ধরে হাটেন । মাঝে মাঝে বসে বসে বিশ্রাম নেন । আবার হাটেন ।

এরপর আসে এক মেয়ে । মেয়েটা আমার থেকে ছোট হবে । একটু হেভি শরীরের গঠন । মেয়েটা খুব সিরিয়াসলি হাটে । নিজের ওজন কমাতে খুব চেষ্টা করে দেখেই বোঝা যায় । আমাকে যতবার ক্রস করে ততবারই দেখি বেচারির জোড়ে জোড়ে দম নিচ্ছে । হাটতে তার একটু কষ্ট হচ্ছে তবুও তার ওজন কমানো চাই ই চাই ।

একদল ছেলে আছে প্রায়ই । তবে তারা নিয়মিত না । এদের বয়স কম । এরা হাটে না । এরা দৌড়ায় । পুরো পার্ক এরা দৌড়ে কাটায় ।

দুইজন কলিগ আসে হাটতে । কলিগ বললাম কারণ এরা একে অন্যকে আপনি বলে সম্মোধন করে সব সময় । যতবার এদেরকে ক্রস করে গেছি ততবার এরা অফিসের গল্পই করে । দুইজন হাটে আর গল্প করে । সেই ধারণা থেকে বললাম ।

রোজার আগে আরও কয়েকজন কে নিয়মিত আসতে দেখতাম । তবে রোজার পরে তাদের আর দেখি না । এক ইয়াং দম্পত্তিকে ইদানীং আসতে দেখছি । স্বামীর বয়সটা আমার থেকে একটু বড় হবে তবে স্ত্রীর বয়স আমার মত । এরা পাশাপাশি হাটে বটে তবে এরা খুব একটা কথা বলে না একে অন্যের সাথে ।
আরেকজন আসে পার্কে । লোকটা মাঝ বয়সী । বেশ লম্বা। তবে তার সাথে আসা মেয়েটার বয়স কম । বলা যায় লোকটার বয়সের অর্ধেক । লোকটা সম্ভত কোন সরকারী বড় অফিসার । অফিসার না হলেও তার যে অনেক টাকা সেটা তার আচরন দেখে বোঝা যায় । এরা স্বামী স্ত্রী হতে পারে আবার নাও পারে । এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত না । মেয়েটার বয়স আরেকটু বেশি হলে হয়তো অনুমান করা সম্ভব হত । এই দুজনের সাথে একজন কাজের লোক থাকে । সে এদের পেছন পেছন হাটে ।

এবার আসি আমার ক্রাশ কন্যার কথায় । মেয়েটাও প্রায় নিয়মিত আসে । প্রথম যেদিন মেয়েটাকে দেখেছিলাম সেদিন মেয়েটা একটা নীল আকাশি রংয়ের টিশার্ট পরে ছিল আর সাথে কালো প্যান্ট । চুল গুলো ছিল পনি টেইল করে শক্ত ভাবে বাঁধা। কানে ইয়া বড় একটা হেড ফোন ছিল । মোবাইলটা হাতে নিয়ে হাটছিল । যতবার আমি চক্কর মারতি একে অন্যকে ক্রস করে যাচ্ছি । মেয়েটার সাথে প্রতিবার দেকখা হচ্ছে, চোখাচোখি হচ্ছে । এরপর প্রতিদিন মেয়েটার সাথে দেখা হচ্ছে । মেয়েটার গোলগাল চেহারা । মুখে একটা স্নিগ্ধ ভাব রয়েছে । মেয়েটা যেদিন হাটতে আসে সেদিন আমার হাটার আগ্রহ অনেক গুনে বেড়ে যায় কিন্তু যেদিন আসে না সেদিন কেন জানি আর হাটতে ইচ্ছে করে না । এই যেমন মেয়েটার সাথে যতবার চোখচোখি হয় মনে হয় আরও একটা চক্কর বেশি মারবো আজকে । এভাবে একদিন হাটতে গিয়ে আমি ৫টা চক্কর মেয়ে ফেলেছিলাম পার্কের । যেখানে গতদিন মেয়েটা আসে নি । দুই চক্কর মেরে বাসায় ফিরে এসেছি । এই জন্য জনৈক ভদ্রলোক বলেছে, একজন মেয়ে নিয়মিত জগিং করলে অন্তত ১০ জন ছেলের স্বাস্থ্য ভাল করতে পারে । এখানে ১০ জন না হোক একজনের কথা তো নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় ।

পার্কে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে । আমি হাটতে থাকি আর তাদের কে দেখি । মাঝে মাঝে তাদের কথা বার্তা কানে আসে । তবে সব চেয়ে যেটা চোখে সেটা হচ্ছে সবাইকে কেমন যেন সুখী মনে হয় । কেউ পার্কে আসছে বন্ধুকে নিয়ে, কেউ বা ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে, কেউ বউকে আর কেউ পরিবারকে নিয়ে । কেউ বসে বসে গল্প করছে কেউবা হাটতে হাটতে গল্প করছে । পার্কে প্রতিদিন দুইদল আসে প্রতিদিন গিটার নিয়ে । তারা গান করে । তাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেই গান শোনা হয় । গত পরশু দিন একটা ভাল দল এসেছিলো । ওরা জলের গান করছিলো । এতো চমৎকার ওদের গলা । আমি হাটা থামিয়ে কিছু সময়ে শুনলাম । মন ভাল হয়ে গেল ।
পার্কে বেশ কয়েকটা ব্যাডমিন্টন কোর্ট কাটা আছে । এখানে নিয়মিত খেলা হয় । এই গরমের ভেতরেও যে এটা ব্যাডমিন্টন খেলে এটা দেখে আমি অবাকই হই । আরেকদল আসে যারা খেলে ক্রিকেট । শর্ট পিচে প্রতিদিনই এদের খেলতে দেখি । মাঝে মধ্যে বল চলে আসে আমাদের কাছে । আমি সেটা তুলে তাদের দিকে ছুড়ে দেই ।
বিয়ের সিজনে আরেকটা ব্যাপার হত । শীত কালে দেখলাম প্রায়ই জামাই বউ সেজে গুজে পার্কে এসে হাজির হচ্ছে । সাথে থাকতো তাদের ফটোগ্রাফার । এরপর পার্কের স্থানে বিভিন্ন পোজে তারা ছবি তুলতো ।


বিকেল থেকে সন্ধ্যা এখন এদের নিয়েই কাটে । এই মানুষ গুলোর আমার সব যেন পরিচিত । প্রতিদিন তাদের সাথে দেখা হয় । আমি যেমন এদের দেখি । এরাও আমাকে দেখে । যদিও আমরা একে অন্যকে চিনি না, জানি না কোথায় থাকি তারপরেও যেন আমরা একে অন্যকে চিনি । দিনের একটা সময়ে আমরা এক সাথে হই । এক জায়গাতে হাটাহাটি করে । একদিন দেখা যাবে আমার ক্রাশ কন্যার সাথে আমার কথা হচ্ছে । সে আমাকে ডেকে বলছেন শুনুন আপনি প্রতিদিন আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না । নয়তো পুলিশে ধরিয়ে দেব বললাম ।

Photo by Gemilang Sinuyudhan on Unsplash


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:৫০
২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×