somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ আজীবন দন্ড প্রাপ্ত আসামী

১৭ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দিবার নিজের চেহারা সম্পর্কে খুব পরিস্কার ধারণা আছে । সে জানে যে কোন ছেলে ওকে একবার দেখলে দ্বিতীয়বার ঘুরে তাকাবেই, সে যেই হোক না কেন । স্কুল-কলেজ জীবনে এই পর্যন্ত দিবা কত মানুষের কাছ থেকে প্রেম নিবেদন যে পেয়েছে সেটার কোন ঠিক নেই । আগে এক সময়ে সে হিসাব রাখতো । একটা ছোট ডায়েরি ছিল ওর । ওখানে সে নাম ঠিকানা ফোন নম্বর লিখে রাখতো কে কে ওকে ওর পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, প্রেম পত্র দিচ্ছে । ইন্টার পাশ করে যখন অনার্সে ভর্তি হল তখন কেবল প্রেম পত্র নয়, বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হল । সরকারি বেসরকারি চাকুরীজীবী থেকে শুরু করে ওদের কলেজের কয়েকটা স্যার পর্যন্ত ওর প্রেমে দেওয়ানা । ওকে বিয়ে করতে চায় । কিন্তু দিবা কাউকে পাত্তা দেয় নি । কাউকে ওর মনে ধরে নি । সেই দিবাই যে এমন ভাবে প্রেমে পড়বে সেটা কি ও ভেবেছিলো ?

ঘটনা কিছুই না । খুব স্বাভাবিক ভাবেই অপু নামের ছেলেটা ওর সামনে এসেছিলো । দিবার বাবার বাজারে বড় আড়ত । সেই আড়তে কি একটা কাজে অপুর নামের ছেলেটার বাবা আসতো নিয়মিত । ব্যবসার কাজে দুজনের ভাব হয়ে গেল বেশ । মাঝে মধ্যেই দিবাদের বাসাতে এসেছে । দিবা তাকে দেখেছে । আঙ্কেলকে সালাম দিয়েছে, সেও তাকে দোয়া করেছে ।
একদিন দুপুরে দিবার বাবা অপুর বাবাকে খাবারে নিয়ে এল । দুজন মিলে খাওয়া দাওয়া করছিলো । দিবা সামনে না গেলেও আশে পাশে ছিল । তখনই কানে গেল তাদের কথা ।
আঙ্কেল দুঃখ করে বলছে, তার দুইটা ছেলে, বড় ছেলেটা ঠিকই আছে বিয়ে শাদী করে ব্যবসার কাজে হাত দিচ্ছে কিন্তু ছোট টা যেন কেমন হয়ে গেছে । আগে ভাল ছিল । ঢাকায় পড়াশুনা করেছে । রেজাল্টও ভাল ছিল । পড়াশুনা করে চাকরিও করতো । তারপর কি হয়ে গেল সব কিছু ছেড়ে দিলো ।
দিবার বাবা বলল, কেন ?
-কোন এক মেয়ের প্রেমে পড়েছিল । সেই মেয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেছে । তারপর থেকে তার আর কিছুই নাকি ভাল লাগে না । কারো সাথে ঠিকঠাক মত কথা বলে না । কি সব কাজ করে অনলাইনে । সে সব করে টাকা আয় করে আর সারাদিন বাসায় থাকে । মানুষের সাথে কথা বলতে নাকি তার মোটেই ভাল লাগে না ।
-বিয়ে দিয়ে দেন।
-চেষ্টা করে নি ভেবেছেন ? কোন মেয়েকেই তার মনে ধরে না । বিয়ে দিলে বউ আসলে হয়তো আবার মনে বসতো, স্বাভাবিক হত ।
দিবার বাবা বলল, আমি একটা প্রস্তাব দিতে পারি ।
-বলুন ।
-আমার মেয়েকে তো দেখেছেন। নিজের মেয়ে বলে বলছি না, তবে মেয়ে আমার খুব লক্ষি আর যে একবার দেখবে অপছন্দ করতে পারবে না । আপনি এক কাজ করুন একদিন ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসুন । কাজের কথা বলেই । আমার মেয়ের সাথে দেখা হোক। কথা বার্তা হোক আমি নিশ্চিত তার মত বদলাবে !
দিবা আড়াল থেকে সব শুনলো । খুব বেশি আমলে নিলো না । কেবল তার ডায়েরিতে আরেকটা নাম যুক্ত হতে যাচ্ছে এই ভাবলো ।

কয়েকদিন পরে একটা ছেলেকে নিয়ে ঠিকই হাজির হল আঙ্কেল । দিবাই দরজা খুলে দিল । ছেলেটাকে ওর দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে অন্য দিকে তাকালো এবং দ্বিতীয়বার আর ফিরে তাকালো না ওর দিকে । দুপুরে খাওয়ার সময় দিবার বাবা নানান কথা জিজ্ঞেস করলো অপুকে । অপু চুপচাপ জবাব দিলো । দুপুরের খাওয়ার সময় দিবাই সব কিছু এগিয়ে দিচ্ছিলো ।
দিবাও একটু ভাব নিয়েই থাকলো । সে খুব ভাল করেই জানে এই ছেলেকে কদিনের ভেতরেই তার আশে পাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যাবে । কলেজ যাওয়ার আসার পথে নয়তো বাড়ির সামনে । এখনও জানালা দিয়ে উকি দিলে কয়েকজনকে দেখা যাবে ।

কিন্তু মাস পেরিয়ে গেল অপুর কোন দেখা পাওয়া গেল না । দিবার ব্যাপারটা কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগলো । এমন তো হয় না । একদিন দিবা শুনতে পেল তার বাবার কথাই । ওর মায়ের সাথে কথা বলছে । সাইদ আলী সাহেবের ছেলে নাকি দিবাকে পছন্দ করে নি । না করে দিয়েছে ।
কথাটা দিবার মোটেও হজম হল না । ওকে রিজেক্ট করে দিয়েছে !
ওকে !! দিবা হাসানকে !
কি এমন ছেলে যে ওকে রিজেক্ট করেছে বরং ঐ অপু নামের সেই ছেলেকে রিজেক্ট করে দিবে ! দিবে কি দিলো এখনই !

কিন্তু দিবার জীবন থেকে অপু নামের ঐ অখ্যাত ছেলে মোটেই দুর হল না । ঠিক দুইদিন পরে অপুকে দেখতে পেল সে । না, অপু ওর সাথে দেখা করতে আসেনি । ওদের ক্যাম্পাসের এক ছেলের সাথে বসে কথা বলছিলো । দুর থেকেই দেখতে পেয়েছে ওকে । যার সাথে কথা বলছিলো সেই ছেলেকে দিবা চিনে ভাল করে । কিছু সময় কথা বলে অপু ক্যাম্পাসে ছেড়ে চলে গেল । দিবা গিয়ে বসলো সেই ছেলের কাছে ।
-ঐ ছেলে তোমাকে চিনে কিভাবে?
কোন প্রকার ভূমিকা না করেই দিবা জানতে চাইলো।
-অপু ভাই?
-হ্যা । কিভাবে চেনে !
-আরে ভাইয়ার বন্ধু । ভাইয়ার সাথে কি যেন দরকার । নাম্বার হারিয়ে গেছে তাই নাম্বার নিতে এসেছিলো ।
-ওর নাম্বার আছে তোমার কাছে?

ছেলেটা কিছু সময় দিবার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, আছে কিন্তু তুমি এতো আগ্রহ দেখাচ্ছো কেন শুনি?
-দরকার আছে । দাও নাম্বার ।
-উহু । এভাবে দেওয়া যাবে না । বার্গার খাওয়াও । তারপর ।

দিবা কোন কথা না বলে ছেলেটাকে বার্গার খাওয়ালো । ছেলেটাও খানিকটা অবাক হয়ে গিয়েছিলো । এমন তো হওয়ার কথা না । দিবা কেন এমনটা করলো সেটা নিজেও জানে না । নম্বর হাতে পেয়ে সেভ করতেই হোয়াটস এপ একাউন্ট এসে হাজির হল । সেই নাম্বার দিয়ে ফেসবুকে সার্চ দিতে সেখানেও প্রোফাইল পাওয়া গেল । তবে প্রোফাইল লক করা । ওর ফেসবুকে রিকোয়েস্ট ফুল হয়ে আছে । আর সেই দিবা অপুকে রিকোয়েস্ট পাঠালো । কিন্তু অপু সেটা গ্রহন করলো না । রাগে দিবার ঘুম হারাম হয়ে গেল ।একদিন রাতের বেলা ফোন দিয়ে বসলো অপুকে ।
-এতো দেমাগ কেন আপনার শুনি? কিসের এতো অহংকার আপনার?

কিছু সময় চুপ করে থেকে অপু বলল, আপনি কে শুনি?
-আমাকে চিনেন না?
-চেনার কথা কি?
-অবশ্যই চেনার কথা । আমি দিবা ।
-কোন দি….
অপু একটু থাকমো । তারপর বলল, ও তুমি । বল ।
-বল মানে?
-মানে কেন ফোন দিয়েছো?
-আপনি বোঝেন না কেন ফোন দিয়েছি?
-না বুঝতে পারছি না । শোনো আমি কাজ করছি । কি দরকার বল?
-কিসের এমন কাজ করেন শুনি ! সারা দিন শুয়ে ঘুমান…


দিবা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু লক্ষ্য করলো অপু ফোন কেটে দিয়েছে । দিবার রাগে শরীরটা আবার জ্বলে গেল । সোজা সে নিজের বাবার ঘরে গিয়ে বলল, বাবা
-কি মা?
-আমি ঐ ছেলেকেই বিয়ে করবো।
-কোন ছেলে?
-তোমার ঐ বন্ধুর ছেলে । অপু । ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না । কিভাবে তাকে নিয়ে আসবে আমি জানি না । তবে যদি ওর সাথে না বিয়ে হয় তাহলে খবরদার অন্য কোন ছেলেকে কোন দিন আমার সামনে আনবে না । কোন দিন না ।

লাইণ গুলো একটানে বলে দিবা আবার নিজের ঘরের দিকে হাটা দিল । ঘরে ঢুকে দরকা বন্ধ করে দিল ।

পরের কয়েকদিন দিবা একদমই বাসা থেকে বের হল না । কলেজ গেল না । ফেসবুকে কোন পোস্ট দিল না এমন কি খাওয়ার জন্য ঠিক মত ঘরের বাইরে পর্যন্ত বের হল না । এটা নিয়ে দিবার বাবা একটু চিন্তিত হল । অপুর বাবার সাথে কথাও বলল । কিন্তু কোন লাভ হল না অপুর বাবা জানালো যে দিবাকে তার খুব পছন্দ । সে সব সময় চায় যে দিবা তার ছেলের বউ হোক কিন্তু তার ছেলেই চায় না । তাকে কোন ভাবেই বিয়ের জন্য রাজি করানো যায় নি । এমন কি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে, বলা হয়েছে যে বিয়ে না করলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে তারপরেও কোন লাভ হয় নি। তার ছেলে কোন ভাবেই রাজি হয় নি । দিবার বাবা খানিকটা হতাশ বোধ করলেন । তিনি তার মেয়ের জেদ জানেন । একবার যখন বলেছে তখন অপুকে ছাড়া সে আর কাউকেই বিয়ে করবে না ।




অপু নিজের কাজেই সব সময় ব্যস্ত থাকে । ইদানীং সব কিছু থেকেই সে নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নিয়েছে । কোন কিছুতেই যেন আর কোন মন নেই । কেবল একটা ঘটনার জন্য সে অপেক্ষা করছে । যদিও জানে সেই অপেক্ষার কোন শেষ নেই । কোন দিন শেষ হবে না । কদিন থেকে বাসার লোকজন তাকে খুব বেশি জ্বালাতন করছে । বিশেষ করে ঐ মেয়েটার জন্য । অপু ঠিক কারণ খুজে পাচ্ছে না । ঐ মেয়ে হঠাৎ করে ওর প্রতি এমন পাগল হয়ে উঠলো কেন? এমন তো হওয়ার কথা না । নিজেকে সে কোন কালেই এতোটা সুদর্শন মনে করে না । আর ঐ ঘটনার পর থেকে অপু নিজের উপর থেকে নিজের ভরশা টা হারিয়ে ফেলেছে । তার কেবল মনে হয়েছে যে সে কোন ভাবেই কারো যোগ্য নয় । মানুষ যেভাবে তার কাছ থেকে যা আশা করবে সে সেটা কোন দিন পূরণ করতে পারবে না । নয়তো মানুষ কেন তাকে ছেড়ে চলে যাবে ? যেভাবে সে চলে গিয়েছিল।
তাই নিজেকে সব কিছু থেকে সে গুটিয়ে নিয়েছে। আর কারো সাথেই সে যুক্ত হতে চায় না । কাউকে আর হতাশ করতে চায় না । সব চেয়ে বড় কথা নিজেকে আর হতাশ করতে চায় না । ফোনের আওয়াজে চিন্তার ব্যাঘাত ঘটলো । নম্বর দেখেই চিনতে পারলো । দিবা নামের মেয়েটা ফোন দিয়েছে ।

-হ্যালো !
-আপনি আমাকে কেন পছন্দ করছেন না? আমি কি দেখতে এতোই খারাপ নাকি আমি এই মফস্বলে বড় হয়েছি বলে আপনার যোগ্য না ।

অপু কথাটার জবাব দিতে গিয়েও থেকে গেল । মেয়েটা এমন উতলা হয়ে গেছে কেন ? মেয়েটার ব্যাপারে সে খোজ খবর নিয়েছে । এই শহরের হট ফেভারিট সে । বলতে গেলে সবাই তাকে পছন্দ করে, বিয়ে করতে আগ্রহী । অপু বলল, শোনো মেয়ে আমি বুঝতে পারছি তুমি আমার পেছনে কেন এভাবে উঠে পড়ে লেগেছো?
-কেন শুনি ?
-কারন হচ্ছে রিজেকশন ! ছোট বেলা থেকে তুমি দেখে এসেছো যে সবাই তোমার পিছে ঘুরছে তোমার সঙ্গ পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে ! তুমি আজ পর্যন্ত সবাইকে রিজেক্ট করে দিয়ে এসেছো । অন্য কেউ তোমাকে রিজেক্ট করেছে এটা তোমার পছন্দ হচ্ছে, আরও ভাল করে বললে সহ্য হচ্ছে না ! তুমি এটা মেনেই নিতে পারছো না ! তাই না ?
ওপাশ থেকে কোন কথা শোনা গেল না । অপু বলল, আচ্ছা একটা কথার জবাব দাও । কখন থেকে তোমার মনে হল যে তুমি আামকে পছন্দ কর ? যেদিন আমাকে প্রথম দেখেছো নাকি যেদিন জানতে পারলে আমি তোমার সাথে বিয়েতে রাজি নই ? আমি নিশ্চিত যেদিন তুমি জানতে পেরেছো আমি রাজি নই সেদিন থেকেই আমার প্রতি তোমার আগ্রহ জন্মেছে । তাই না ?
দিবা আবারও চুপ করে রইলো । কোন কথার জবাব দিলো না । অপু বলল, এখন কি হবে জানো? যদি আমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাই তখন থেকেই তোমার আগ্রহ কমতে থাকবে । তুমি আবিস্কার করতে শুরু করবে আমি মোটেই আর আগের মত আকর্ষনীয় নই । আমার থেকেও অনেক ভাল ভাল ছেলে তোমার জন্য পাগল ছিল । আমার থেকে অন্য কে যোগ্য মনে হবে । আমার প্রতি এক সময় একেবারে আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাবে !

একটু বিরতি দিল অপু । তারপর বলল, তুমি দেখতে অনেক সুন্দর । তোমাকে ভালবাসার মানুষের অভাব হবে না । সারা জীবন তোমার জন্য পাগল থাকবে । এমন কাউকে দেখে বিয়ে কর যে তোমাকে হতাশ করবে না ।
দিবা বলল, আপনি বললেন আমি দেখতে অনেক সুন্দর । তাহলে আপনি কেন রাজি হলেন না । আপনার ঐ প্রেমিকার জন্য?
-হ্যা ।
-তাকে অনেক ভালবাসেন?
-ভালবাসি কি না জানি না তবে তার মোহ থেকে তার আবহ থেকে আমি নিজেকে মুক্ত করতে পারি না । চেষ্টা যে করি নি তা না । অনেক বার চেষ্টা করেছি, অন্য মেয়ের সাথে থেকেছি, শুয়েছি পর্যন্ত কিন্তু তাকে কোন ভাবেই মন থেকে বের করতে পারি নি । সে চলে গেছে, যাওয়ার সাথে সাথে আমার ভালোবাসার ক্ষমতা নিয়ে গেছে, আমাকে একটা বদ্ধ জায়গার ভেতরে বন্দী করে গেছে । এই কারাগার থেকে আমার মুক্তি নেই । কোন মুক্তি নেই ।

কয়েক মুহুর্ত দুজনের কেউ কথা বলল না । দিবা বলল, বুঝতে পারছি ।
-বুঝলেই ভাল । এখন এই সব পাগলামী বন্ধ কর । আর মন দিয়ে পড়াশুনা কর । পড়াশুনা শেষ করে চাকরি নাও এরপর বিয়ে কর তোমার পছন্দমত । ঠিক আছে !
-জি আচ্ছা !

দিবার ফোন কেটে দিয়ে বেশ কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো । ওর মনে অদ্ভুত একটা কষ্ট অনুভব হচ্ছে । সারা জীবনই ও মানুষের ভালোবাসা পেয়ে এসেছে । সবার মধ্যমনি হয়ে এসেছে । এবং সে খুব ভাল করেই জানে যে তার চেহারার কারণেই সবাই এমনটা করছে । মানুষ ওর জন্য পাগলামী করেছে সত্য সেটা কাটিয়েও উঠেছে । তার মোহে থেকে কিছুদিন তারপর যখন দেখেছে কোন লাভ নেই তখন অন্য কোথায় গিয়েছে । কেউ কি এমন আছে সে তার জন্যও ঐ ভাবে অপেক্ষা করবে যেমনটা অপু করছে তার ভালোবাসার মানুষের জন্য ?




দিবার সাথে অপুর দেখা হল প্রায় পনের বছর পরে । দিবা তখন শিবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার । একদিন অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার সময় দেখতে পেল অপু রিক্সা করে কোথায় যেন যাচ্ছে । এতো বছর পরেও অপুর চেহারাটা এক ঝলকেই চিনে ফেললো সে । সাথে সাথেই গাড়ি থামিয়ে অপুকে ডাক দিল । ড্রাইভার খানিকটা অবাক হল দিবার এই আচরনে ।

রিক্সা থেমেছে । অপুও চিনতে পেরেছে ওকে । রিক্সা থেকে নেমে এল । দিবার অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, আপনি এখানে?
-আমি তো এখানেই থাকি ।
-এখানে কোথায়?
-এই যে শিবগঞ্জ কলেজ আছে, ওখানে পড়াই । তুমি এখানে?
দিবা বলল, আমি এখানকার ইউএনও । নতুন পোস্টিং হয়ে এসেছি !
-ওয়াও । গ্রেইট ! শুনে খুশি হলাম ।
দিবা একটু লজ্জা পেল যেন । তারপর বলল, আসুন আপনাকে নামিয়ে দিই ।
-আরে দরকার নেই । আমার বাসা কাছেই রিক্সা করেই যেতে পারবো ।
-যেতে পারবেন বুঝলাম । আসুন আমার সাথে ।

দিবা অপুকে নিজের বাসাতেই নিয়ে এল। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে । কাজের মানুষটা চা নাস্তা দিয়ে গেল । দুজন বসলো বসার ঘরেই । হঠাৎ দিবা বলল, এখনও অপেক্ষা করছেন?
অপু হাসলো । বলল, এখন কি অপেক্ষা! আমি জানি সে আসবে না । কিন্তু আমি বন্দী যেন দন্ড প্রাপ্ত আসামি এক ।


দুজনেই চুপ করে রইলো কিছু সময় । তারপর অপু জিজ্ঞেস করলো, তুমি কেন বিয়ে করলে না ?
-কিভাবে বুঝলেন যে বিয়ে করি নি?
-মনে হল ! কেন বিয়ে করো নি?
-যদি বলি আমিও আজীবন দন্ড প্রাপ্ত আসামী হয়ে গেছি । এ থেকে আমারও মুক্তি নেই আর !
-এখনও পাগলামী যায় নি ?
-নাহ ! আপনারও যেমন যাই নি । আমারও না ! বলেছিলাম আপনাকে ছাড়া বিয়ে করবো না, করি নি । মেয়েদের জেদ খুব খারাপ জিনিস !

ঐদিন যখন অপু দিবার সরকারী বাসা থেকে বের হচ্ছে দিবা ওকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল । ড্রাইভারকে বলে দিল যাতে অপুকে বাসা পর্যন্ত পৌছে দেয় । অ্ন্ধকারে মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে রইলো সেদিকে । একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল আপনা আপনি ! এতো দিনেও অনুভূতিটা মরে নি একদম । কি তরতাজা জীবন্ত রয়েছে । এর ভেতরে কত মানুষ যে ওকে বিয়ে করতে চেয়েছে, এখনও চায় ! কত যোগ্য তারা ! একবার স্বয়ং ধর্ম মন্ত্রনালয়ের সচিবের ছেলে ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো । ছেলেটা আমেরিকাতে থাকে, এলফাবেটে চাকরি করে । দেখতে শুনতে যেমন সুদর্শন তেমনি স্মার্ট । তবুও দিবার তাকে মনে ধরে নি । তার মন এই এক স্থানে জমে আছে, এক স্থানেই বন্দী হয়ে আছে । সত্যিই সে আজীবন দন্ড প্রাপ্ত আসামী হয়েই রয়েছে । এর থেকে যেন কোন মুক্তি নেই ।







নিজেস্ব ওয়েবসাইতে পূর্বে প্রকাশিত

Photo by cottonbro from Pexels
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:৫৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×