somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনলাইনে মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার কারা করে এবং কেন করে?

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষ কেন কোন কারণ অন্যের প্রতি এমন মনভাব পেষণ করে? কেন এমন বাজে মন্তব্য করে? এটার পেছনে আসলে ব্যাখ্যা কী? মানুষের এই খারাপ ব্যবহার করার সাইকোলজি নিয়ে গবেষণা হয়েছে, অনেক আর্টিকেল লেখালেখি হয়েছে । একজন মানুষ কেন ক্রমাগত অন্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে? আসলে কেন এমন হবে? কেন একটা মানুষ কোন কারণ ছাড়া আশে পাশের মানুষের সাথে প্রতি নিয়ত খারাপ ব্যবহার করে যাবে?

মানুষের চরিত্রের অন্যতম বড় দিক কোনটা? ধরুন আপনার কাছে এই ক্ষমতা আছে যে আপনি চাইলেই একজনকে চড় মারতে পারেন, চাইলেই তার সাথে খারাপ আচরন করতে পারে এবং এও জানেন যে সে তার প্রতিবাদ করতে পারবে না কিংবা করলেও আপনার সাথে পেরে উঠবে না । এমনটা আপনি জানা সত্ত্বেও তার সাথে আপনি ভাল ব্যবহার করলেন, নিজের হাতে ক্ষমতা থাকা স্বত্ত্বেও আপনি নমনীয়, বিনম্র আচরন করার পথ বেঁছে নিলেন । এটা হচ্ছে আপনার চরিত্রের অন্যতম বড় গুণ । জ্ঞান আর প্রজ্ঞা মানুষকে বিনয়ী করে তোলে ! যার ভেতরে এই বিনয়ী ভাব নেই স্পষ্টই যে তার ভেতড়ে জ্ঞানের বড় অভাব আছে । হয়তো তারা শিক্ষিত হয়েছে কিন্তু শিক্ষার যে আসল উদ্দেশ্য সেটা তারা নিজেদের ভেতরে আনতে ব্যর্থ হয়েছে ।

অনলাইনে মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করে কারা? সাইকোলজিস্ট Jo Hemmings বলেন যে অফলাইনে একটা ভাল স্টেবল সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ মানুষ গুলো সাধারণত এমন কাজ করে থাকে । এটা একটা প্রসিদ্ধ সত্য যে বাস্তব জীবনে যে মানুষ গুলো কখনও পাত্তা পায় নি কারো কাছে, চোখের সামনে যারা দেখেছে মানুষজন তাকে অবহেলা করে এসেছে আজীবন, তারা অন্যকে কোন কারণ ছাড়াই খারাপ কথা বলে । নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা কেবল অবহেলা পেয়ে এসেছে । অনালইনে এসে সেটারই প্রতিফলন ঘটে । এদের জন্য করূণা ছাড়া আর কী বা আসতে পারে মনে !

একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখবেন যে ভাল মন্তব্যের চেয়ে নেগেটিভ মন্তব্য গুলো নিয়ে আলোচনা বেশি হয় । অন্যের কাছে পাত্তা পাওয়ার জন্য অন্যের নজরে আসার জন্য এই বিরূপ মন্তব্য গুলো তারা করে থাকে সব সময় ।

সমাজে উচুতে ওঠার একটা প্রবণতা সবার মাঝেই আছে । এই উচুতে উঠতে দরকার হয় পরিশ্রম । নিজের কাজ । যে মানুষ গুলো নিজের কাজ দিয়ে উপরে উঠতে পারে না সেই মানুষ গুলো তখন অন্যকে টেনে নিচে নামাতে ব্যস্ত থাকে । তাদের কাছে একজনকে নিচু দেখানোর উপর হচ্ছে তাকে কটু কথা বলা । যেমন ধরুন যে নিজে লিখতে জানে না, দুই তিন প্যারার বেশি লিখতে পারে না, নিজের লেখা উন্নতি না করে তখন সে অন্যদের লেখা নিয়ে মন্তব্য করতে থাকে ।

এদের ভেতরে আত্মসম্মানের সমস্যা থাকে । মূলত ফ্যামিলি এবং তার বেড়ে ওঠার চারিপাশের কারণে এমন হয় । আর যার নিজের কোন আত্মসম্মান নেই, সে অন্যকে সম্মান দিতে জানে না । যার আত্ম সম্মান আছে সে অন্য মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে । কারণ সে জানে যে সম্মানের একটা মূল্য আছে । আত্মসম্মানহীন মানুষ সেটা জানে না । মুখ দিয়ে গালী সবাই দিতে পারে । একটা শব্দ বলতে আর কষ্ট কি ? যে সম্মানের মূল্য জানে সে বুঝবে যে যদি সে কাউকে খারাপ কথা বলে তাহলে তার নিজের সম্মান টা আর থাকবে না ।

মানুষ মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করবে, উপকার করবে, অন্তত উপকার না করতে পারলেও অপকার করবে না । যদি কখনও কোন কারনে খারাপ ব্যবহার করেও ফেলে তাতে তার মন ব্যাথিত হবে । কিন্তু কিছু মানুষ অন্য মানুষকে কষ্ট দিয়ে আরাম পায় । সাইকোলজিস্ট Dr Linda Kaye এর মতে এই বিরূপ মন্তব্যটা এক ধরণের স্পেসিফিক বিহেবিয়ার । এই রকম আচরনের পেছনে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে । যেমন বিনোদন, স্যাজিজম এবং সাইকোপ্যাথি । অর্থ্যাৎ এই বিরূপ মন্তব্য করে অপমান করে তারা আসলে বিনোদন পায় । অন্য দিকে যারা স্যাডিস্ট, সাইকোপ্যাথ, তারা অন্যের কষ্টে আরামবোধ করে ।

অনলাইনে খারাপ মন্তব্য নিয়ে আমার নিজের ব্যক্তিগত কিছু মত রয়েছে । জগতে মানুষ বলতে দুই প্রকার । এক হচ্ছে ভাল মানুষ আর খারাপ মানুষ । ভাল মানুষ সব সময় ভাল কাজ করার চেষ্টা করে । তাদের জন্য আইন কানুনের খুব একটা দরকার হয় না । কারণ তারা সব সময় সঠিক কাজই করে । অন্য দিকে খারাপ মানুষদের জন্য আইণ বানানো যাদে তারা খারাপ কাজ গুলো না করতে পারে । এই খারাপ মানুষ গুলো সব সময় সুযোগ খুজতে থাকে যে কখন তারা খারাপ কিছু করবে । এখন ধরুন এই ব্লগে একজন বাজে মন্তব্য করলো । প্রথমে সে মন্তব্য করে একটু ভয়ে থাকবে । যদি তাকে শাস্তির আওয়ায় আনা হয় । যদি দেখে তার বাজে মন্তব্যের বিপরীতে কোন একশন না নেওয়া হয় কিংবা নিলেও সামান্য পরিমানে তখন সে আরও একটু সাহসী হয়ে উঠবে । পরে তার থেকেও বাজে এবং বেশি পরিমানে বাজে মন্তব্য করবে । খারাপ মানুষ যখন দেখবে তার অন্যায় কাজের জন্য তাকে যথাযত শাস্তি দেওয়াতো হচ্ছে না ক্ষেত্র বিশেষে সেটার প্রশংসা করা হচ্ছে সেই ক্ষেত্রে সে একই কাজ করতে আরও উৎসাহী হবে ।

আরও একটা ব্যাপার হচ্ছে কিছু মানুষ সব সময় তোষামদী পছন্দ করে । আরও ভাল করে বললে চামচামী পেতে পছন্দ করে । তাদের মনভাব হচ্চে সবাই তাকে তেল দিয়ে চলবে । সেই তেল দেওয়া মানুষদের কে সে খুব পছন্দ করে । কিন্তু যখন দেখে কিছু মানুষ তাকে তেল দিচ্ছে না তখন সে ব্যক্তিগত ভাবে তাকে শত্রু মনে করে । তাদের পাছায় সব নাক ডুবিয়ে তাা পড়ে থাকে । এটাও বিরূপ মন্তব্যবের একটা কারণ ।

এই সব মানুষ গুলো ফেসবুক কিংবা ব্লগে এই রকম মন্তব্য করতে পারে কারণ ফেসবুক ব্লগে নিজেকে খানিকটা লুকিয়ে কিংবা ধরা ছোঁয়া ধোয়ার বাইরে রেখেই মন্তব্য করা যায় ! ধরুন এমন একটা মানুষ যার সাথে আপনার প্রতিদিন দেখা হয় কিংবা একই এলাকাতে থাকেন, এমন মানুষকে কি অনলাইনে আপনি নিয়মিত কোন কারণ এই রকম বাজে মন্তব্য করতে পারবেন? যারা এমন করে বিরূপ মন্তব্য করে তারা এই ব্যাপারে বেশ সচেতন সাথে । যদি নিয়মিত পরিচিত মানুষকে এমন বাজে মন্তব্য এরা করে তাহলে মাইর খেয়ে সোজা হয়ে যাবে । এটা করার সাহস এদের নেই । অনেকটাই কাপুরুষ এরা !

আজকে অনেক কিছু লিখে ফেললাম । আবার কেউ যেন নিজের সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না । নিজের সাথে যদি মিলে যায় তাহলে নিজেকে সংশোধন করুন । বিবিসি বাংলার একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম গতকাল । মনে হল এটা নিয়ে কিছু লিখি ।

সবাই ভাল থাকুন । হ্যাপি ব্লগিং ।







তথ্য সুত্র
verywellmind.com
hellomagazine.com
বিবিসি বাংলা

picture source
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৮
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×