somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শবে-বরাতের স্মৃতি

১৯ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকালকে রাতে খেতে গেলাম নিচে । এলাকার অধিকাংশ দোকান-পাঠ বন্ধ । এমন কি যে হোটেলে আমি নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করি সেটাও বন্ধ । বাধ্য হয়ে দুরের একটা হোটেলে যেতে হল খাওয়ার জন্য । হাটতে হাটতে আমি আশে পাশের মানুষ জনকে দেখছিলাম ! দেখতে পাচ্ছিলাম যে কিছু কিছু গ্রুপে মানুষ ঘোরাফেরা করছে । তাদের মাথায় টুপি আর পরণে পাঞ্জাবি ! গতকাল শবেবরাত ছিল ! সবাই নামাজ পড়তে বের হয়েছে ! অনেক আগের কিছু ঘটনা মনে পড়ে গেল আমার নিজের । যখন স্কুলে পড়তাম ঠিক একই ভাবে আমিও নামাজ পড়তে বের হতাম বন্ধুদের সাথে । একই ভাবে নামাজের পর বের হতাম মসজিদ থেকে । দলবেধে ঘুরতাম !

আমাদের ধর্মীয় রীতি নীতির সাথে আমার জীবনের অংশগুলো জড়িয়ে আছে খুব ভাল ভাবে ! ছোট বেলা থেকেই আমি দেখে এসেছি যে রমজানের কিছুদিন আগে একটা দিন আসে তখন সারা দিন ধরে আমাদের বাসায় চালের আটার রুটি বানানো হয় ! আমার চালের আটার রুটি ঠিক পছন্দ না । তবে দেখতাম আমার আব্বা বড় ভাই সবাই এই চালের আটার রুটি খুব পছন্দ করে । এই রুটির সাথে আরও বানানো হতো হালুয়া । কয়েক ধরনের হালুয়া । একটা ছিল সুজির হালুয়া আর আরেকটা বানানো হত ছোলার হালুয়া । দেখতে খানিটা হলদেটে । এই ছোলার হালুয়া আমার সব সময় খুব পছন্দ ছিল । এখনও এটা খুবই পছন্দের একটা খাবার । একটা বড় সমান বড় প্লেটে রাখা হত হালুয়া গুলো । তারপর সামান্তরিকের আকৃতির কাটা হত । আমি সারা দিনে এদিক ওদিক হেটে বেড়াম আর সুযোগ পেলেই একটা একটা করে কাটা পিচ তুলে নিয়ে মুখে পুরতাম ! এভাবেই দিন কাটতো । দুপুরের অবশ্যই গরুর কিংবা মুরগির মাংস রান্না করা হত । রাতের জন্য হত হালুয়া আর রুটি !

সন্ধ্যা হলেই বাবা চলে যেতেন মসজিদে । মা বসতো নামাজের জায়নামাজে । আমি কোন সময় যেতাম বাবার সাথে, কোন সময়ে বড় ভাইয়ের সাথে । একবার আমার মনে আছে আমি নামাজ পড়তে গেছি বড় ভাইয়ের সাথে । তখন কিভাবে নামাজ পড়তে হয় সেটা আসলে জানিই না । সবাই যা করে আমিও তাই করি । নামাজ শেষ করে যখন বাইরে বের হলাম তখন দেখি বড় ভাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে । কারণ আমি নাকি অনেক বার সিজদা দিয়েছি এক রাকাতেই । খুব ছোট বেলার এই স্মৃতি টুকুই মনে আছে ।

এরপর একটু বড় হলে আর বড় ভাইয়ের সাথে নামাজে যেতাম না । তখন পরিবারের তিন পুরুষ সদস্য নামাজে যেত ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ! তখন শবে বরাত হত শীত কালে ! আমাদের এলাকাতে একটা ফতেয়া চালু ছিল যে সন্ধ্যা বেলা নামাজের আগে নামাজের জন্য যদি গোসল করা হয় তাহলে শরীর থেকে গোসলের যত ফোটা পানি পড়বে তত নেকি যোগ হবে ! তাই নামাজে যাওয়ার আগে শীতের ভেতরে গোসল করে নিতাম । কেউ কেউ বেশি নেকির আশায় পুকুর থেকে গোসল করতো ! পুকুর থেকে বাসায় আসতে অনেক কয়ফোটা পানি পড়তো নেকি হাসিল হত অনেক বেশি !



আমাদের মাঝে তখন বিভিন্ন মসজিদে নামাজ পড়ার রেওয়াজ ছিল । এমনিতে বাসায় সন্ধ্যার পরপরই ফিরে আসার নিয়ম থাকলেও শবে বরাতের দিন এমন কোন বিধি নিষেধ ছিল না । আমরা সারা রাত বাসার বাইরে থাকতাম । গ্রামের এবং আশে পাশের যত মসজিদ আছে সব মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তাম । একবারে ফিরে আসতাম ফজরের নামাজ পরে । মাঝে অবশ্য একবার বাসায় এসে রাতের খাবার খেয়ে যেতাম !

ক্লাস টেনে পড়ার সময় একটা স্মৃতি মনে আছে । তখন নতুন প্রেম করেছি । আমি তখন নিজের এলাকা থেকে প্রেমিকার এলাকাতেই বেশি থাকি । স্কুলের পাশেই ছিল বাসা তাদের । অবশ্য আমার সব বন্ধুদের বাসাও ছিল আশে পাশেই । তাই খুব একটা সমস্যা হত না । সেই শবে বরাতে সাইকেল নিয়ে হাজির হলাম বন্ধুর বাসায় । সাইকেলটা তাদের বাসায় রেখে এরপর মসজিদে নামাজ পরে আড্ডা চলল । আরও অনেকেই এসেছিলো সেবার । কয়েকজন মিলে ঠিক করলাম যে একবার প্রেমিকার সাথে দেখা করে আসি । আমি যাবো ওরা বাইরে দাড়াবে !

বুকে দুরু দুরু ভয় নিয়ে সত্যিই হাজির হলাম তার বাসার সামনে । গেটে নক দিলাম । এবং সেই দরজার এলো । ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকা । স্পষ্টই বুঝতে পারছিলাম যে নামাজে ছিল সে ! আমাকে দেখে তীব্র বিস্ময় নিয়ে কিছু সময় তাকিয়ে ছিল । পরে জানতে চাইলো এতো রাতে কেন এসেছি । বললাম আমার একটা বই ছিল তোমার কাছে । সেটা নিতে এসেছি !

সে বুঝলো যা বোঝার । গেটে দাড়িয়েই আরও কয়েকটা কথা বলে বিদায় নিলাম । পরে অবশ্য বকা শুনতে হয়েছিলো অতো রাতে যাওয়ার জন্য ! তবে এটাও জানিয়েছিলো যে মোনাজাতে সে পুরোটা সময় আমাকেই চেয়েছিলো । একই কাজ আমিও করেছিলাম । তবে উপরওয়ালা আমার কিংবা তার, কারো দোয়াই শোনেন নি !

কলেজে ওঠার পরে আর এমন ভাবে সারা রাত ভর নামাজ পরা হয় নি ! তখন কেবল মাত্র এশার পরে ১০/১২ রাকাত নফল নামাজ পড়েই বাসায় চলে আসতাম । ঢাকায় আসার পরে সেটা কমে গেল আরও ।

ঢাকাতে আমি প্রায় ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে আছি । বলতে গেলে এই সময়ের সব শবে বরাতই ঢাকাতে একাই কাটিয়েছি. ঢাকা শহরে একা থাকতে আমার মোটেই খারাপ লাগে না । বরং এই একা থাকাটা আমি বেশি উপভোগ করি সব সময় । কিন্তু কিছু বিশেষ বিশেষ দিন, এই রকম দিন গুলোতে মনে হয় বাসায় থাকলে হয়তো ভাল হত । সময় ভাল যেত ! কিন্তু পেট বড় ভয়ানক জিনিস ! এরজন্য কত কিছু আমাদের ছেড়ে দিতে হয় ! রুজি রুটির জন্য কত কিছু আমাদের ত্যাগ করতে হয় !

আশা করি সবার শবে বরাত প্রিয় জন পরিবারের মানুষের সাথেই কেটেছে । উপরওয়ালা আপনার মনে আশা কবুল করুক ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৫২
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

×