somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ দ্য ব্রোকার

২৯ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নিশি ঘরে ঢুকে একটু হতাশ হল । মাহির আহমেদের ফ্ল্যাটটা যেমন হবে ভেবেছিলো, তেমনটা মোটেও নয় ! ও ভেবেই নিয়েছিল যে মাহির সাহেবের ঘরটা হবে খুব বেশি বিলাসবহুল । দামী দামী ফার্নিচার দিয়ে সাজানো থাকবে । কিন্তু ড্রয়িং রুমে ঢুকে সত্যিই একটু হতাশ হতে হল নিশিকে । দামী জিনিসের ভেতরে কেবল দেওয়ালে ঝুলানো ৪২ ইঞ্চি স্যামসাংয়ের টিভিটা রয়েছে । ঘরে সোফাসেট রয়েছে তবে সেটা খুব বেশি দামী না । এছাড়া ঘরে আর সব কিছুই সাধারণ। তবে সেগুলো রুচিশীল । নিশি ঘরের চারিদিকে চোখ বুলাতে লাগলো । তখন ওর চোখ গেল মাহির সাহেবের দিকে । তাঁর চোখে একটা কৌতুকের আভা দেখতে পেল । চোখে চোখেই যেন সে বলছে, টোল্ড ইউ !

নিশির বিরক্তিটা আরো একটু বাড়লো । তার বস সাদ্দাম হোসেনের উপর আরও একটু অসন্তুষ্ট হল এখানে এভাবে ওকে পাঠানোর জন্য! তবে বস বলে কথা ! তার আদেশ কোন ভাবেই অমান্য করার উপায় নেই ।

-মিস নিশি !
নিশি চোখ সরিয়ে নিয়েছিল। আবার মাহির আহমেদের দিকে ফিরে তাকালো । তারপর বলল, বলুন ।
-আমার ফোনটা কি একটু দিবেন?
-কেন?
-রাতের খাবার অর্ডার করতে হবে । আমি সাধারণত আসার সময় বাইরে থেকে খেয়ে আসি নয়তো খাবার নিয়ে আসি । আজকে এসেছি এমন ভাবে যে কোনটা করার সুযোগ পাই নি । সম্ভবত আপনারও অবস্থা একই রকম । রাতে কিছু খেতে তো হবে, নাকি?
নিশি আবারো বিরক্ত হল । সেটা দেখে মাহির আহমেদ চট জলদি বলল, ওকে ওকে । কোন চিন্তা নেই । আপনিই বরং খাবার অর্ডার দিন । আমি বলেছিলাম আমি এই সময় কোন রকম কমিউনিকেসন ডিভাইস ধরবো না । সো, ধরবো না । আমার হয়ে আপনিই অর্ডার দিয়ে দিন ।

নিশি আর কোন কথা বলল না । তবে ব্যাগ থেকে মাহির আহমেদের ফোনটা ঠিকই বের করলো সে । রাতের বেলা খাবার খেতে হবে এটা সত্যি কথা । মাহির সাহের নিজের ফোনটা আগেই তাদের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছে । এমন কি ফোনের পাসওয়ার্ড পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে । সে বলেছে তার ফোনের ভেতরে এমন কিছু নেই যা অন্য কেউ দেখলে কোন ক্ষতি হয়ে যাবে । ছেলেটাকে নিশি কোন ভাবেই বুঝতে পারছে না । তবে কিছু একটা রহস্য যে আছে সেটা সে জানে । থাকতে বাধ্য ।

কদিন থেকে শেয়ার মার্কেটের উপরে চোখ ছিল দুদকের একটা টিমের । তারা একটা ব্যাপার খেয়াল করতে শুরু করলো যে কোন শেয়ার দাম বৃদ্ধির আগে সেই শেয়ার গুলো কেউ কেউ বেশ ভাল পরিমানে কিনে নিচ্ছে। আর অন্য দিকে যখন কোন শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে, ঠিক তার আগে কেউ কেউ শেয়ারের বেশ কিছুটা পরিমান বিক্রি করে দিচ্ছে । ব্যাপরটা এমন যেন কেউ ঠিক ঠিক জানে যে কখন কোন শেয়ারের দাম বাড়বে, তাই সেটা বৃদ্ধির আগে সেটা কিনে রাখছে আবার ঠিক এটাও জানে যে কোন শেয়ারের দাম কমবে । তাই দাম কমার আগেই সেটা বিক্রি করে দিচ্ছে ।

এমন বেশ কয়েকজনকে দুদক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এল অফিসে । তাদের সবার কাছ থেকে কেবল একটা ব্যাপারই জানা গেল যে তাদের ট্রেডার কাজটা করতে পরামর্শ দিয়েছে। প্রথমে অবশ্য কেউ মুখ খুলতে চায় নি । তবে পরে ভয় দেখাতেই কাজ হয়েছে । এবং অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে সবারই একজন কমন ট্রেডার রয়েছে । সেই কমন ট্রেডারের নাম হচ্ছে মাহির আহমেদ । ড্রাগন সিকিউরিজের একজন ট্রেডার । কোম্পানী তাকে বেশ ভাল টাকা বেতন দেয় এবং কোম্পানীর একজন নাম করা ট্রেডার সে । কিছু নির্দিষ্ট ক্লায়েন্ট সামলায় সে । অনেকেই তার কথা জানে । তাকে দিয়ে ট্রেড করাতে চায় কিন্তু মাহির আহমেদ নির্দিষ্ট মানুষ ছাড়া আর কারো ট্রেড করে না ।

এই জন্যই তাকে আজকে দুদকের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো । তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো যে কিভাবে সে জানে যে কোন শেয়ারের দাম বাড়বে আর কোনটার দাম কমবে । সে কোন সদুত্তর দিকে পারে নি । কেবল বলেছে যে সে জানে । কিভাবে জানে সেটা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না তবে সেটা যে কোন অবৈধ উপায় নয় সেটা শতভাগ নিশ্চিত । যখন তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হল তখন মাহির আহমেদ এক অদ্ভুত কথা বলল । সে জানালো যে কেবল স্ক্রিনের দিকে তাকালেই সে বলতে পারে কোন শেয়ারের দাম সামনের দিকে যাবে আর কোনটার দাম পেছনের দিকে । এই কথা প্রমানের জন্যই সে ডিএসইর পেইজ খুলতে বলল । কথা মত তাই করা হল সবার সামনে । এবং সে বলে দিলো যে কোন কোন শেয়ারের দাম বাড়বে । কেবল কত বাড়বে সেটাই বলল না, কখন বাড়বে কত সময় আটকে থাকবে সেটাও বলে দিল !

দুদকের এডি নিশি রুমের এক পাশে বসে ছিল । যা জিজ্ঞেস করার তার বস সাদ্দাম হোসেনই করছিলো । নিশি কেবল চুপচাপ নোট নিচ্ছিলো । কৌতুহল নিয়ে সে স্ক্রিনের দিকে তাকালো । এবং অবাক হয়ে খেয়াল করলো যে মাহির আহমেদ যা যা যেমন করে বলল ঠিক তাই হল । কেমন করে হল কোন ব্যাখ্যা নেই।
সাদ্দাম হোসের চোখ বড় বড় করে কেবল তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তারপর বলল, আপনি নিশ্চিত কোন সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত ।
এই কথা শুনে মাহির আহমেদ হেসে উঠলো । তারপর বলল, হ্যা কোন নির্দিষ্ট শেয়ারের দাম শেয়ার বাজার গ্যাম্বেলাররা বাড়াতে কিংবা কমাতে পারে কিন্তু আপনার কি মনে হয় যে আমি যেভাবে টাইম দিয়ে বললাম যত বললাম এটা কারো পক্ষে করা সম্ভব নয় ?
-আপনি কিভাবে বললেন?
-কিভাবে বললাম জানি না । বললাম তাই জানি । আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো বলতে পারে !

সাদ্দাম হোসেন কিছু সময় তাকিয়ে রইলো মাহির আহমেদের দিকে । মাহির আহমেদ বলল, ওকে আপনাকে আরও একটা অপশান দিই । আপনার হয়তো মনে হচ্ছে যে আমি আগে থেকেই এসব জানি । আমাকে কেউ জানিয়েছে । কাল পরশু কি হবে সেটাও হয়তো কেউ আমাকে জানাবে । এক কাজ করুন আমার সাথে আপনার কোন লোককে দিন । সে ২৪ ঘন্টা আমার সাথে থাকবে । কাল মার্কেট ওপেন হওয়া পর্যন্ত আমি কারো সাথে যোগাযোগ করবো না, কোন ইলেক্ট্রনিক্স মেশিন ধরবো না । তারপর যদি আমি সব বলতে পারি তখন তো বিশ্বাস করবেন যে আমি কোন অবৈধ কাজ করছি না ? আর আপনারা আমাকে এখানে খুব বেশি সময় ধরেও রাখতে পারবেন না । আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ কিন্তু নেই । আমি তবুও আপনাদের সন্দেহ দুর করতে চাই যে আমি কোন অকাজের সাথে নেই ।

সাদ্দাম হোসেন কি যেন ভাবলো । তারপর ঠিক হল যে মাহির আহেমেদের কথার সত্যতা প্রমাণের জন্য একজন তার সাথে আগামী ২৪ ঘন্টা থাকবে । এবং সেই একজনটা হচ্ছে নিশি । নিশির প্রথমে খানিকটা প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলো তবে শেষে আর করে নি । বসের কথার উপরে সে কোন কথা বলতে পারবে না, সেটা সে ভাল করেই জানে । আর সাদ্দাম হোসেন নিশির উপরে বেশ ভরশা করেন । সে জানে যে সাদ্দাম হোসেন ভেবে চিন্তেই তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে ।

নিশি চুপ করে সোফার উপরে বসে আছে । একটু আগে নিচের হোটেল থেকে খাবার দিয়ে গেছে । একটু ঝাল হলেও খাবারটা বেশ ভাল ছিল । নিশি খাবে না, খাবে না করেও বেশ খানিকটা খেয়ে ফেলল । অপরিচিত মানুষের সামনে এমন ভাবে খাওয়া দাওয়া করতে একটু অস্বস্তিই লাগছিল বটে তবে মাহির সাহেব বেশ সহজ ভাবে গল্প করছিলো । এমন ভাবে কথা বলছিল যেন দুদকের লোকজন এমন ভাবে নিয়মিত তার সাথে ওঠা বসা করে । তবে নিশি এটা বুঝতে পারছে যে মাহির সাহেব মোটেও ভয় পাচ্ছে না । দুদক যখন কারো পিছনে লাগে তখন তার মনে ভয় কিংবা অস্বস্তি আসতে বাধ্য কিন্তু মাহির আহমেদেরের চোখে মুখে এই সবের কিছুই সে দেখতে পাচ্ছে না । এর কারণ দুইটা হতে পারে । এক, সে আসলেই কিছু করে নি কিংবা দুই, তার ক্ষমতা অনেক বেশি । অথবা ক্ষমতাবান মানুষের চিন পরিচয় রয়েছে । সে ভরশা করে আছে যে তাকে তারা ঠিকই রক্ষা করবে ।

তবে নিশি ব্যাপারটা নিয়ে বেশ ভেবেছে । একটা মানুষের পক্ষে কিভাবে একদম নির্ভুল ভাবে এই ভাবে শেয়ার অগ্রিম দাম বলে দেওয়া সম্ভব হল ? এটা আসলেই কেউ করতে পারে? এমন ভাবে বলল যেন মনে হচ্ছে মাহির সাহেব নিজের চোখের সামনে সব কিছু দেখতে পাচ্ছেন ! ভবিষ্যৎ এভাবে দেখা যায় নাকি?

রাতে ঘুমানোর আগে নিশি মাহির আহমেদের ঘরে একটা ক্যামেরা ফিট করলেন । সে নিজে পুরো ঘর সার্চ করে দেখেছেন । কোন প্রকার বাড়তি মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপ নেই । যা আছে তা এখন নিশির কাছে জমা দেওয়া আছে ।

নিশি ভেবেছিলো রাতে হয়তো ওর ঘুম আসবে না । কিন্তু অবাক করে দিয়ে রাতে বেশ ভাল ঘুম হল । নিশির বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙ্গলো । যখন ওর ঘুম ভাঙ্গলো তখন নিশি তাকিয়ে দেখে রোদ এসে বিছানার উপরে পরেছে । সেদিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । এতো আরাম আর নিশ্চিন্তে নিশি কবে ঘুমিয়েছে সেটা নিশি নিজেও জানে না । এতো আরাম করে ঘুম হওয়ার পেছনে কারণ কি?

আরও কিছু ভাবতে যাচ্ছিলো তখনই দরজায় টোকা পড়লো । নিশি উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই মাহিরের মুখ দেখা গেল । বলল, ঘুম ভাল হয়েছে ?
নিশি সেটার জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করলো, রাতের খাবারে কিছু মেশানো ছিল?
মাহির হেসে ফেলল । বলল, দুদকে কাজ করতে করতে আপনার মন সন্দেহ প্রবণ হয়ে গেছে । আপনি যা খেয়েছেন আমি তাই খেয়েছি । নিশ্চয়ই দেখেছেন ? আর ভিডিও রেকর্ড হয়ে আছে সব । আসুন ব্রেকফার্স্ট রেডি ।

নাস্তার পরে পুরোটা সময় নিশির সাথেই ড্রয়িং রুমেই বসে রইলো মাহির আহমেদ । টুকটাক গল্প করতে লাগলো । মার্কেট চালু হয় এগারোটার থেকে । সেটা চালু হতেই নিশি স্ক্রিনের সামনেই বসে রইলো । এর মাঝে একবার সাদ্দাম হোসেনকে ফোন দিয়ে সে রিপোর্ট করেছে । জানিয়েছে যে সব কিছু ঠিকই আছে । কোন সমস্যা এখনও হয় নি ।

ঠিক বারোটার সময় মাহির বলল, একজনকে ফোন করতে হবে?
-কাকে ?
-আমার একজন ক্লায়েন্ট কে?
-কেন ?
-কারণ একটা শেয়ার বিক্রি করতে হবে । এখন যদি না করি তাহলে তার লস হয়ে যাবে বেশ ।
-আপনি বলেছিলেন কোন ফোন নয় !
-আচ্ছা আপনিই ফোন করুন । লাউড স্পিকারে দিলেই হবে । আপনি শুনবেন কি কথা বলব । ঠিক আছে?

নিশি কি যেন ভাবলো । তারপর বলল, আচ্ছা, ঠিক আছে ।

নিশিই কল দিলো তাকে । ফোন দিয়ে লাউড স্পিকারে দিয়ে দিল । মাহির তার ক্লায়েন্টকে সেল প্রাইস বলে দিল এবং বলল সেটা ঠিক বারোটা ৪৪এর সময়ে বসাতে ।

নিশির এবার বেশ কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে । নির্দিষ্ট শেয়ারটার কমতে শুরু করলো এক লাফে । ঠিক বারোটা ৪৪ এরপর আরও দুই মিনিট সেটা বাড়লো । এবং তারপরেই আশ্চর্য জনক ভাবে সেটা কমতে শুরু করলো । নিশি অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো কেবল ! তারপর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মাহিরের দিকে । এই মানুষটা কিভাবে এসব বলে দিচ্ছে ?

ট্রেড চলা পর্যন্ত নিশি রইলো মাহিরের সাথেই । সে কেবল টিভি দেখেছিলো । কিছু সময় বই পড়েছিলো আর বাকিটা সময় রান্না ঘরে নিজেই রান্না নিয়ে ব্যস্ত । অন্য কোন কাজ সে করে নি । রান্না ঘরে যাওয়ার আগে সে খাতায় একটা কাগজে কয়েকটা শেয়ারের নাম এবং সে গুলো কত টাকাতে গিয়ে গিয়ে থামবে সেটা লিখে নিশির হাতে দিয়েছিলো । ট্রেড শেষ করে নিশি কেবল অবাক হয়ে দেখেছে যে সব কিছু একেবারে কাটায় মিলে গেছে । নিশি নিজের চোখকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । এমন আগে থেকে কোন কিছু কোন ভাবেই বলা সম্ভব না, যদি না কেউ আগে থেকে সেটা না দেখে থাকে । মাহির সাহেবের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে যেন মাহির সাহেব ভবিষ্যৎ দেখেছে । সে যেন আগে থেকেই জানতো সব !
ট্রেড শেষ করে খেতে বসলো ওরা । খাওয়ার সময়ই নিশি প্রশ্নটা আবারও করলো । মাহির খেতে খেতে বলল, বললে কি বিশ্বাস করবেন?
-বলুন শুনি আপনার ব্যাখ্যা ।

কিছুটা সময়ের জন্য যেন মাহির আহমেদ কোথায় হারিয়ে গেল । নিজের চিন্তার মাঝে কিছু সময় মগ্ন হয়ে রইলো । তারপর বলল, গ্রাজুয়েশনের পরে আমি বেশ লম্বা সময়ে বেকার ছিলাম । কি করবো না করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । একটা সময়ে এমন হল যে আমি পরের দিন কী খাবো সেটা নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে হচ্ছিলো । বাসায় যে যাবো তেমন কোন উপায়ও ছিল না । বাবা মা মারা গেছে অনেক আগেই । বড় এক বোন আর ভাই আছে তবে তারা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত । আমাকে কেবল উঠকো ঝামেলাই মনে করে তারা । কয়েকবার তাদের কাছে হাত পেতে ছিলাম বটে তবে সেই পথও তখন বন্ধ । আমি ঠিক করলাম যে আত্মহত্যা করবো । এভাবে বেঁচে থেকে কোন লাভ নেই ।

কথা গুলো এক টানে বলে থামলো মাহির আহমেদ । নিশি বলল, তারপর ? গিয়েছিলেন?
-হ্যা গিয়েছিলাম । কোথায় মরতে গিয়েছিলাম জানেন?
-কোথায়?
-সাজেকে । ঠিক করেছিলাম যে পাহাড় উঠবো তারপর সেখান থেকে ঝাঁপ দিয়ে মরে যাবো । নিজের যা কিছু ছিল সব কিছু বিক্রি করে দিলাম । এমন কি ফোনটাও । সেই টাকা নিয়ে হাজির হলাম ! দুইদিন মহা আনন্দে ছিলাম । যখন টাকা পয়সা শেষ হয়ে এল তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম যে এই বার ঝাপ দিতে হবে । আগেই আমি জায়গাটা দেখে এসেছিলাম । কোথা থেকে ঝাপ দিলে মৃত্যু একেবারে নিশ্চিত । রাতের বেলা ঝাপ দিবো এমনই প্লান । বিকেল বেলা শেষবারের মত দেখে এলাম জায়গাটা । একটু একটু মন খারাপ লাগছিলো । বারবার ইচ্ছে করলো ফিরে যাই । কিন্তু তখন যে ফিরে যাবো তার টাকাও ছিল না আমার কাছে । নিজের হোটেলের দিকে রওয়ানা দিতে যাবো তখন একজন আমার পাশে এসে দাড়ালো । অনেকেই আসে । আমি সেদিকে খেয়াল দিলাম না । লোকটা আমার দিকে তাকালো । তারপর বলল, কয়টার সময় ঝাঁপ দেওয়ার প্লান ?
আমি তীব্র অবাক হয়ে তাকালাম তার দিকে ।
লোকটা মাঝ বয়সী । মুখ ক্লিন শেভড । পরনে একটা কালো স্যুট । এইখানে কেউ এই রকম স্যুট পরে আসে না খুব একটা । আমি সত্যিই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম । কারণ আমি যে ঝাপ দিতে যাবো সেটা এই সামনে দাড়ানো লোকটার জানার কথা না কোন ভাবেই, আমাকে অবাক হতে দেখে লোকটা যেন মজা পেল । তারপর বলল, ঝাপ যে দিবে মরবে ঠিক আছে তবে খুব কষ্ট পেয়ে মরবে । এর থেকে ঘুমেরও ঔষধ খেয়ে মরলে শান্তিতে মরতে ।

আমি নিজেকে কিছুটা সমলে নিয়ে বলল, আপনি কে শুনি? আর কি সব আজে বাজে বকছেন ? মরবো মানে?
লোকটা হাসলো আবারও । তারপর বলল, আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই । আমি সব জানি । যেমন জানি যে তোমার পকেটে এখন ১৮৬ টাকা আছে । রাতে তুমি শিক আর নান রুটি খাওয়ার প্লান করছো । কিন্তু জানো এই টাকা দিয়ে সেটা হবে না । নান পাবে হয়তো তবে সেটা খেতে হবে ডাল দিয়ে । শিককাবাব দিয়ে খেতে পারবে না !

আমি সত্যিই অবাক না হয়ে পারলাম না । মরার আগে আমি সত্যিই শিক কাবাব আর নান খেতে চেয়েছিলাম ।
আমি এবার বললাম, আপনি কী চান?
-এই তো সঠিক একটা প্রশ্ন করেছো । আমি কী চাই ! আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই এবং তোমার কাছ থেকে সাহায্য চাই ।
-মানে?
-মানে হচ্ছে আমি চাই তুমি আমাকে সাহায্য করো এবং আমি তোমাকে সাহায্য করবো ।
-কিভাবে?
-তুমি আমার ব্রোকার হয়ে যাও ।
-ব্রোকার ?
-হ্যা । তুমি আমাকে ক্লায়েন্ট এনে দিবে । বিনিময়ে টাকা পাবে ।
-কিসের ক্লায়েন্ট?
-সেটা তুমি নিজেই বুঝতে পারবে । ডিল?
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে লোকটা বলল, দেখো মরে যাবে এই সিদ্ধান্ত তো নিয়েছোই । আমার হয়ে কাজ কর । যদি ভাল না লাগে তাহলে আমি নিজে তোমাকে এখানে নিয়ে আসবো । তখন ঝাপ দিও । বললে ধাক্কাও দিয়ে দিবো । চিন্তা কর না । ডিল?

আপনি হয়তো জানেন না যে যখন মানুষ মরার সিদ্ধান্ত নেয় তখন সে মনে মনে একটা কিছু ধরে ঠিকই বাঁচতে চায় । আমিও বাঁচতে চাইলাম । লোকটার সাথে ডিল করে ফেললাম । লোকটার গাড়িতে করেই ঢাকা ফিরে এলাম । লোকটা আমাকে একটা হোটেলে নিয়ে গেল । সেখানে খাওয়ালো রাতে ঘুমালাম । পরদিন সকালে উঠে দেখি সে চলে গেছে । আমার জন্য টেবিলের উপরে পোশাক আর একটা খাম রেখে গেছে । খাম খুলে দেখলাম সেটা একটা এপোয়েন্টমেন্ট লেটার । আমার একটা বোকারেজ হাউজে চাকরি হয়েছে । আজই জয়েনিং । আমার নিজের চোখে যেন বিশ্বাস হচ্ছিলো না । একবার মনে হল যে সব মনে হয় ফেইক । কিন্তু তারপর আবার মনে হল, না সত্যও হতে পারে ! অফিসে গিয়ে হাজির হলাম এবং সত্যি সত্যি চাকরি হয়ে গেল ।

নিশি মন দিয়ে শুনছিলাম । ওর পকেটে থাকা মিনি রেকর্ডার অনই ছিল । সব কথা রেকর্ড হচ্ছে । মাহির আবার বলল, প্রথম কয়েকদিন ঠিক কিছু বুঝতে পারি নি । কিন্তু একটা সময়ে আবিস্কার করতে পারলাম যে আমি যেন সব কিছু প্রাইস আগে থেকে বুঝতে পারছি । কোনটা বাড়বে কোনটা কমবে সব । প্রথম প্রথম পরীক্ষা করলাম কিছু এবং সব ঠিকই হতে লাগলো । একটা সময়ে আমার ক্লায়েন্টরাও টের পেল ব্যাপারটা । আমার ম্যানেজারও বুঝতে পারলো । তারপর থেকেই আমাকে নির্দিষ্ট কিছু ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেল করতে দেওয়া হল ।
মাহির চুপ করলো কিছু সময় । নিশি বলল, এতো কিছু হল ? কেন? আপনাকে এই স্পেশাল ক্ষমতা কেন দেওয়া হল?
-কারণ তো আছেই।
-কি কারণ?
-দেখুন প্রথম প্রথম আমি নিজেও বুঝতে পারি নি । কিন্তু পরে ব্যাপারটা ধরতে পেরেছি ।
-কি ধরতে পেরেছেন?
-আমাকে সে ব্রোকার হয়ে বলেছিল তার ।
-কিন্তু আপনি তো সত্যি সত্যি ব্রোকারেজ হাউজের ব্রোকার হয়ে গেছেন । সে কি কোম্পানীর মালিক?
-নাহ । আমি মালিকের সাথে দেখা করেছি । ঐ লোককে আমি আর খুজে পাই নি । কোম্পানীর সাথে তার কোন সম্পর্কেই নেই । আমি সব খুজে দেখেছি । এমন কি আমার কোম্পানির সব বড় ক্লায়েন্টদের ব্যাপারেও খোজ নিয়েছি । সে নেই ।
-তাহলে? কি বুঝতে পেরেছেন?
-আমি তার হয়ে ক্লায়েন্ট খুজে দিই । এটা সত্য । আমার কাছে যারা যারা ট্রেড করে যারা আমার ব্যাপারে এটা জানে যে আমি আগে থেকে বলে দিতে পারি কোন শেয়ারের দাম বাড়বে, এবং লোভে পড়ে সেই শেয়ার বেশি কিনে রাখে তাদের পরবর্তিতে ক্ষতি হয় । অনেকটা বলতে পারেন যদি কেউ লোভে পরে আমার মাধ্যমে শেয়ার থেকে টাকা আয় করে বাস্তবে তার ক্ষতি হবে ।
-তাই ?
-জি । এটা বুঝতে একটু কষ্ট হলেও বুঝতে পেরেছি । আমি সত্যিই তার জন্য ক্লায়েন্ট নিয়ে আসি । যারা লোভী তারা । তাদের পানিশমেন্ট দেওয়ার কাজ করে সে ।
-আচ্ছা বুঝলাম । আপনার গল্প শুনলাম অনেক সময় । মনে হয় আপাতত এতেই কাজ চলবে ।

নিশি উঠে দাড়ালো । তারপর বলল, আপনার সাথে আমি পুরো সময় ছিলাম । তাই স্বীকার করে নিতে হচ্ছে যে আপনি কোন অন্যায় করেন নি । কিন্তু কিভাবে কাজটা করেছেন কিংবা করছেন সেটা আমি বুঝতে পারছি না । এক সময়ে ঠিকই ধরে ফেলবো ।

মাহির আহমেদ কিছু বলতে গিয়েও বলল না । নিশি আর কিছু না বলে বেরিয়ে এল মাহির আহমেদের বাসা থেকে । আগে তাকে অফিসে রিপোর্ট করতে হবে । তবে সব টুকু বলা যাবে না । বিশেষ করে এই ক্লায়েন্ট খোজার গল্প তো বলাই যাবে না । এই কথা কেউ বিশ্বাস করবে না কোন দিন ।

পরিশিষ্টঃ

প্রায় মাস খানেক পার হয়ে গেছে । নিশি বিকেলের কাজ শেষ করে বের হয়েছে অফিস থেকে । তখনই মাহির আহমেদকে দেখতে পেল । ওকে দেখেই মাহির এগিয়ে এল ওর দিকে । নিশির মনে হল যেন ওর জন্যই অপেক্ষা করছিলো ছেলেটা । নিশিও এগিয়ে গেল সেদিকে ।
-মিস্টার মাহির ! এখানে?
-আপনার সাথে দেখা করতে এলাম ।
-হঠাৎ ?
-আসলে আপনাকে একটা খবর দিতে এলাম ।
-কী খবর?
মাহির একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিল যে আশে পাশে কেউ আছে কিনা । তারপর বলল, আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে আপনার বস এখন আমার ক্লায়েন্ট?

নিশি ব্যাপারটা জানে । নিশির রিপোর্টের পড়ে সাদ্দাম হোসেন একটু অবাক হয়েছিলো এই টা শুনে যে মাহির আসলেই বলে দিতে পারে কোন শেয়ারের দাম বাড়বে কোনটা কমবে । তখনই সাদ্দাম হোসেনের চোখে একটা ঝিলিক দেখতে পেয়েছিলো সে । সে জানতো সাদ্দাম হোসেন শেয়ার ব্যবসা শুরু করবে মাহিরের কাছেই । করেছেও সেটা ।
নিশি বলল, হ্যা আমি জানি ।
-গতকাল সে প্রায় কোটি টাকা পেয়েছে । তার উপরে খুব বড় বিপদ আসবে । লোভের শাস্তি সে পাবে । এটাই কেবল জানিয়ে গেলাম আপনাকে ।

নিশি কিছু সময় দাড়িয়ে থেকে মাহির আহমেদের চলে যাওয়া টা দেখলো । তারপর বাসার দিকে রওয়ানা দিল সে । বাসায় পৌছাবে এমন সময়ে তার এক সহকর্মীর ফোন এল তার কাছে । সহকর্মী ফোন দিয়ে জানালো যে তাদের বস সাদ্দাম হোসেন ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিলো প্লেনে । পথের মাঝে প্লেন ক্রাশ করেছে।

নিশি খবর টা শুনে কেবল স্থির হয়ে দাড়িয়ে গেল । তাহলে কি মাহির সাহেব যা বলেছিলো সব সত্য ছিল ! সত্যি হলে সে কার ব্রোকার হিসাবে কাজ করে?


(গল্পটি নিজস্ব ব্লগে পূর্বে প্রকাশিত)

pic source
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:১৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চোখের জল

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬


সুদীর্ঘ ১৭ বছরের জমে থাকা
বিনম্র চোখের এক কোণে জল!
প্রকাশে এলো এই জনসমুদ্রে-
জনসমুদ্র তুলছে আনন্দাশ্রুর
ঢেউ- দেখছে নতুন ফুলের গন্ধ;
এ নৈঃশব্দের আর্তনাদ বুঝতে
হবে শুধু তোমাকে- আমাকে
গড়ে তুলতে হবে মনুষ্যের প্রণয়ে
সূর্য ভোর- যেখানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×