
গতকাল প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটা ইন্টারেস্টিং খবর চোখে পড়লো । খবরের শিরোনাম দশকের পর দশক প্রতারণার হাতিয়ার ম্যাগনেটিক পিলার আসলে কী । কিভাবে এই ম্যাগনেটিক পিলার কথা বলে মানুষজনকে বোকা বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে । এরকম নানান প্রতারনার খবর আমরা নানান সময়ে শুনে থাকি । কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং মনে হওয়ার কারণ হচ্ছে আমি যখন স্কুলে পড়ি, সিক্স কিংবা সেভেনের দিকে তখন এই পিলার কেন্দ্র করে আমাদের গ্রামে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছিলো ।
গ্রামে তখন এই গুজব চলছে বেশ ভাল ভাবে । কে বা কারা এই গুজব শুরু করেছিলো সেটা বলতে পারবো না তবে তখন এই ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে খুব আলোচনা হচ্চে । আমাদের এলাকার আশে পাশে নাকি এই পিলার আছে । কে বা কারা এই খোজ নিয়ে এসেছে । এই পিলার খুব শক্তিশালী ! এই পিলার নাকি বজ্রপাত নিজের দিকে টেনে আনতে পারে । তাই বৃষ্টির সময়ে যদি কেউ এই পিলারের আশে পাশে থাকে তাহলে সে বজ্রের আঘাতে মারা যাবে । এছাড়া এই পিলার অনেক দিন মাটির নিচে থাকার ফলে এর ধাতু বদলে গেছে । এই ধাতুর মূল্য অনেক । কয়েকশ কোটি টাকা । ইউরোপ আমেরিকাতে এর অনেক চাহিদা ! এছাড়া এই পিলার নাকি খালি হাত দিয়ে ধরা যাবে না । যে ধরবে তার পুরো শরীর নাকি ঝলছে যাবে । এই রকম আরও কত কত গল্প যে তখন প্রচলিত হয়েছিলো তার কোন ঠিক নেই ।
সত্যি বলতে কী তখন আমি সহ আমাদের বন্ধুদের বেশ কয়েকজন এই পিলার খোজে বের হয়ে পড়েছিলাম । হাতে শাবল নিয়ে আমরা এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলাম । যে কোন স্থানে সন্দেহ হলেই সেখানে মাটি খুড়ে দেখার চেষ্টা করতাম ! তবে আরেকটা যে সমস্যা হয়েছিলো সেটা হচ্ছে বৃষ্টি শুরু হলেই আমার মা আমাকে কোন ভাবেই বাইরে বের হতে দিতো না । বৃষ্টি হলেই তখন আমি ভিজতাম । কিন্তু এই গুজবের ফলে মায়ের মনে এটা বসে গিয়েছিলো যে পিলার বজ্রপাত কাছে টানবে আর আমি যদি তখন সেই পিলারের উপরে কিংবা কাছাকাছি দাড়িয়ে থাকি তাহলে আমি মারা যাবো !
তারপর একদিন সত্যি সত্যিই শোনা গেল যে গ্রামের একজন পিলারের সন্ধান পেয়েছে । আমাদের বাসা থেকে কয়েক বাড়ি পরেই তার বাড়ি ছিল । গ্রামে রটে গেল যে সত্যিই যে পিলারের খোজ পেয়েছিল তবে সেটা ধরে রাখতে পারে নি । বিডিআর নিয়ে গেছে । তখন বিডিআর মানে বর্তমানের বিজিবি। আমাদের বাড়ির পাশেই তখন বিডিআর ক্যাম্প ছিল । আমার বাবা বিডিআর ক্যাম্পে ফুড সাপ্লাইয়ের কন্ট্রকটর । তাই ক্যাম্পে আমরা ঢুকতে পারতাম । তবে সেদিন কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হল । কেবল আমার বাবা ক্যাম্পে গেল তার নিত্য দিনের কাজ করতে ।
পরদিন সেই খবর বের হল স্থানীয় পত্রিকাতে । সেখান থেকে জানা গেল যে আমাদের গ্রামের একজনের কাছ থেকে বিডিআরের সদস্যরা পিলারের টুকরো উদ্ধার করেছে । তবে তাকে ধরতে পারে নি । সে পালিয়ে গেছে । আমার বাবা বাসায় এসে জানালো যে সে নিজে দেখে নি তবে কয়েকজন বিডিআর সদস্যদের সাথে তার কথা হয়েছে যারা দেখেছে সেই টুকরো গুলো ! গ্রামে তখন উত্তেজনা কাজ করছে ।
তবে সেই উত্তেজনায় দুদিন পরেই ভাটা পরলো । জানা গেল যে যে টুকরো পিলারের ভাবা হচ্ছেিলো সেগুলো আসলে নরমাল লোহা । কয়েক বছর কেবল মাটির নিচে ছিল এই যা !
তারপর আস্তে আস্তে ম্যাগনেটিক পিলারের আগ্রহ কমে এল । এক সময়ে সেটা আর কারো মনেই রইলো না । গতকাল প্রথম আলোতে সংবাদটা পড়ে পুরোনো সেই দিনের কথা মনে হল । এখনও মানুষজন এই সব বিশ্বাস করে ! অবশ্য আমরা যখন করেছি এখনও মানুষ বিশ্বাস করতেই পারে ! এবং এটার জন্য মানুষ পেছনে টাকা ঢালছে । বেশ কিছু চক্র এই পিলার নিয়ে গুজব এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে অনেকেই এটা বিশ্বাস করেছে । বিশেষ করে যাদের সর্টকাটে টাকা আয় করার লোভ বেশি তারা এই সব গুজবে কান দেয় আর টাকা দিয়ে ধরা খায় !
উপরে দেওয়া প্রথম আলোর লিংকটাতে গিয়ে পিলার সম্পর্কে পুরো খবরটা পড়ে আসতে পারেন । ওখানেই বেশ চমৎকার ভাবে লিখেছে তাই আর নতুন করে লিখলাম ! এছাড়া অলৌকিক মুদ্রার খোঁজে মি. এন একা নন, দেড় কোটি টাকা খুইয়েছেন মি. বি এই সংবাদটিও পড়তে পারেন ।
pic source
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২২ বিকাল ৪:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



