
মৃত্যুর মত চিরন্তন আর শ্বাশত বুঝি আর কিছু নেই । মানুষের সাথে ভাল মন্দ আর যাই কিছু হোক না কেন সে যে মারা যাবে এটা সব থেকে বড় সত্য । তবুও যখন কেউ মারা যায়, বিশেষ করে যখন কাছের কিংবা পছন্দের কেউ আমাদের ছেড়ে চলে যায় তখন সেটা কেন জানি আমাদের মন কিছুইতেই ঠিক মত গ্রহন করতে পারে না ! মানুষজনকে আমার পছন্দ হয় কম । আমার খুব কম লেখকের বই পছন্দ, খুব কম অভিনেতাদের অভিনয় পছন্দ, আবার খুব শিল্পীদের গান পছন্দ । তাই এই পছন্দের মানুষ গুলো যখন চলে যায় তখন বুকের ভেতরে কেমন যেন করে । বারবার মনে হয় যে নতুন করে তারা গান গাইবেন না, আর নতুন কিছু লিখবেন না।
নব্বই দশক কিংবা এর আশে পাশে যে ছেলে মেয়ে গুলো জন্মেছে এবং যারা গান পছন্দ করে তাদের কাছে কেকের নামটা একটা আলাদা অর্থ বহন করে । আমাদের সময়ে এতো আধুনিক সব ইন্টানেট ছিল না । আমরা কেকের গান যখন পছন্দ করি তখন তার নাম পর্যন্ত আমরা জানতাম না । অনেক পরে জেনেছি যে এই শিল্পীর নাম কেকে । তাও কেকের ফুল ফর্ম কে কী সেটা জানতেও আরও সময় কেলেছে । আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছে যারা গানের লিরিক্স পর্যন্ত বুঝতে না পেরে কেবল তার কন্ঠে গানটাকে ভালো বেসেছি !
কেকের প্রথম যে গানটা আমার গানে বেজেছিলো সেটা আমি ঠিক নিশ্চিত করে বলতে পারি না ! তবে গানটা ''ইয়ারো'' আর ''পাল'' । প্রথম শোনাতেই গানটা মনের ভেতরে একটা আলাদা আবেদন সৃষ্টি করেছিলো । আমাদের সময়ে তো এতো এতো আধুনিক জিনিস পত্র ছিল না । আমরা গান শুনতাম ফিতা ক্যাসেটের । একটা ক্যাসেটে সর্বোচ্চ ১২টা গান ধরতো । কোন গান পছন্দ হলে সেটা টেনে টেনে আবার আগের স্থানে নিয়ে যেতে হত । এখনকার মত কেবল এক সুইচ টিপ দিলেই রিপ্লে হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না !
ইংরেজি গান এখন যা টুকটাক শোনা হয় ইউটিউবের কল্যানে কিন্তু তখন গান বলতে কেবল বাংলা আর হিন্দি আর হিন্দি । আর হিন্দি গানের একটা বড় অংশ ছিল এই কেকের গান । মুভির গানে কেকে তখন এক উজ্জল নক্ষত্র ! প্রতিটা গান যেন আলাদা সুরে বুকে এসে বিধে । বিষাদের সুর যে তার কন্ঠে এতো তীক্ষ আর মধুর ভাবে ফুটে উঠতো সেটা তার গান যারা শুনেছে কেবল তারাই বুঝতে পারবে। ইণ্ডিয়ার গানের জগতে কত কত হিট আর জনপ্রিয় গান যে কেকে উপহার দিয়েছে সেটার কোন হিসাব নেই । সেই ৯৯ সালে সম্ভবত তার প্রথম এলবাম বের হয় । তারপর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সে গান গেয়ে গিয়েছে । শ্রোতাদের মাতিয়ে রেখেছে ।
কলকাতায় পরপর দুইদিন গান করেছে সে । কলকাতার নজরুল মঞ্চে গান গাওয়ার সময় সে স্ট্রোক করে বলে খবর প্রকাশ পেয়েছে । তারপর হাতপাতালে নিয়ে যেতে সব শেষ । শেষ গানের ভিডিও টা বারবার দেখছিলাম । কেবলই মনে হচ্ছে সে কি জানতো এটাই হবে তার জীবনের শেষ গাওয়া গান ?
মানুষের জীবনের জীবন কতটা অনিশ্চিত ! আর কোনদিন সে গান গাইবে না ! নতুন কোন গান দিয়ে আমাদের আর মুগ্ধ করবে না ! মাত্র ৫৩ বছর বয়সে চলে গেল ! কাল রাতে নিউজটা শোনার পর থেকে মনের ভেতরে কেমন একটা গুমট ভাব আটকে রয়েছে !
ইয়ারো গানটা শুনতে পারেন ইউটিউব থেকে ।
পাল গানটা বেশি পছন্দ আমার
পিক সোর্স
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০২২ সকাল ১১:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



