গত সপ্তাহের কথা । সিড়ি দিয়ে নিচে নামছি । দো-তলার কাছে এসেই দেখি দারোয়ান একজন যুবককে নিয়ে দাড়িয়ে আছে । দো-তলার ভাড়াটিয়ার সাথে কথা বলছে । আমাকে দেখে দারোয়ান বলল, মামা আপনি তো নেট সম্পর্কে ভাল বোঝেন আপনার সাথেই কথা বলতে চাইছে !
দারোয়ান যখন বলল যে নেট তখন আমার প্রথমেই মনে হল যে হয়তো নতুন কোন ব্রডব্যান্ড প্রোভাইডার আসছে । আমাদের সাথে কথা বলতে চাইছে যেহেতু আমরা নেট ব্যবহার করি । যুবকের চেহারা সম্য এবং ভদ্র । দেখে কোন বেসরকারি ব্যাংকের প্রভেশনাল অফিসারের মত মনে হচ্ছে । কথা বলার ধরনও একই রকম । হাসিহাসি মুখ করে কথা বলা ।
আমি দাড়িয়ে পড়লাম । তারপর বললাম, জ্বী বলুন !
যুবক বলল, আপনারা যখন দুজন আছেন তাহলে এক সাথেই বলি !
দো-তলার ভাড়াটিয়াও দরজার সামনে দাড়িয়ে !
যুবক বলল, আমার নাম ..... (নামটা যে কী বলেছিলো ভুলে গেছি) আমি আর আমার ওয়াইফ মিলে একটা রেস্টুরেন্ট দিয়েছি । হোম ডেলিভারি সার্ভিস ! এই হাউজিংয়েই । রেস্টুরেন্টের নাম হচ্ছে ...... (নাম টা বললাম না, মনে আছে যদিও) আমাদের একটা ফেসবুক পেইজ আছে ।
আমি মোবাইল বের করে নামটা আরেকবার জানতে চাইলাম । দেখলাম যে পেইজটা আসলেই আছে । এবং পেইজে একটা লাইকও দিয়ে দিলাম ।
যুবক আবারও বলা শুরু করলো, আমরা আসলে রেস্টুরেন্টের পরিচিতির জন্য ঠিক করেছি যে সামনের শুক্রবার কিছু খাবার রান্না করে আমাদের প্রতিবেশি মানে আপনাদের ঘরে ঘরে পৌছে দিবো । আপনারা সেই খাবার খেয়ে টেস্ট করবেন তারপর যদি ভাল লাগে আমার কাছ থেকে অর্ডার করবেন আর পেইজে একটা রিভিউ দিয়ে দিয়েন। এখন আগামী শুক্রবার কি আপনাদের বাসায় খাবার পৌছে দিবো?
বাঙালি ফ্রি পাইলে আলকাতরাও খেয়ে ফেলে আর এতো রেস্টুরেন্টের খাবার ! আমি এক গাল হেসে বললাম, হ্যা হ্যা অবশ্যই । আমি এই যে সাত তলাতে থাকে । শুক্রবারেই নিয়ে আসবেন । আর আপনাদের পেইজে আমি লাইকও দিয়ে দিয়েছি !
যুবক খুশি হল । তারপর বলল, অনেক ধন্যবাদ ।
তাকে দেখলাম হাতের ডায়েরি বের করে কী যেন টুকে নিল । সম্ভবত বিল্ডিংয়ের কোন কোন ফ্লাটে খাবার পৌছে দিবে তার একটা লিস্ট তৈরি করছে । আমি খুশি মনে নিচে নেমে গেলাম । মনের ভেতরে একটা আনন্দ এসে জড় হল এই ভেবে যে শুক্রবারে রেস্টুরেন্টের খাবার এসে হাজির হবে এবং ফ্রিতে । ফ্রির খাবারের মজাই আলাদা !
যথারীতি শুক্রবার এল । শুক্রবারটা আমার একেবারেই আরাম আয়েশে কাটে যদি ট্যুরে না যাই । সকালে কফি, টোস্ট আর আপেল দিয়ে নাস্তা করার পর পিসির সামনে বসলাম । তবে মাথার ভেতরে একটা চিন্তা কাজ করছিলো সব সময় যে আজকে দুপুরে খাবার আসবে ।
বাসায় অন্য কেউ থাকলে আমি কখনই দরজা খুলতে বের হই না । আজকে যখনই কলিংবেল বাজছে তখনই আমি নিজে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতে যাচ্ছি ! একবার আসলো বুয়া, একবার আসলো নেট বিলওয়ালা আর আরেকবার এল বাসারই আরেক সদস্য । সে বাইরে গিয়েছিলো ।
দুপুরের খাবার শেষ করলাম । দুপুর গড়িয়ে বিকাল হল । আমার মনে হল যে হয়তো তারা আস্তে আস্তে সবার বাসায় দিয়ে আসছে, তাই দেরী হচ্ছে । আমাদের খাবার আসতে আসতে বিকেল হয়ে যাবে । ওমা দুপুর গড়িয়ে বিকেল তারপর রাত হয়ে গেল । তার আসার কোন নাম নেই । শেষে মনে মনে ভাবলাম যে রাতের ডিনারের পরে নিশ্চিত আসবে । রাত ১২ বেজে গেল তখনও ওরা এল না !
কথা হচ্ছে খাবার যদি নাই দিবে তাহলে বাসায় এসে এই ভাবে লোভ দেখানোর মানে কী ? এটা অনেকটা দাওয়াত দিয়ে খেতে না দেওয়ার মতই তো হয়ে গেল !
যাক গে ! না দিয়েছে না দিক ! আমার আবার এতো খাওয়ার লোভ নেই ।

ভেবেছিলাম খাবার খেয়ে খুব প্রশংসা করলো । আমার নিজের ফেসবুক পেইজে একটা রিভিউ দিয়ে দিবো । ওদের পেইজে গিয়ে একটা ৫ স্টার দিয়ে আসবো ! একটা ব্লগ পোস্ট করবো ওদের ফুড নিয়ে !
না দিলো, না দিক ! ওদের লস !
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:১৭