হুমায়ূন আহমেদের বৃষ্টি বিলাস নামে উপন্যাস আছে । অনেকেই পড়ে থাকবেন । সেই গল্পে আতাউরের একটা মানসিক রোগ থাকে । বৃষ্টির সময়ে সে উন্মাদ হয়ে যায়। রীতিমত তাকে শিকল দিয়ে ঘরে আটকে রাখতে হয় ! ছোট বেলাতে এই বৃষ্টির ভেতরে তার চোখের সামনে তার বাবাকে কয়েকজন মানুষ জবাই করে খুন করেছিলো । শামার সাথে যখন তার বিয়েটা ভেঙ্গে যায় এই রোগের কথা জানাজানি হয়ে যাওয়ার কারণে তখন আতাউর তাকে একটা চিঠি লেখে । সেখানে সে শামাকে জানায় যে প্রবল ভালোবেসে কেউ তার হাত ধরে বৃষ্টি ভেতরে নিয়ে গেলে তার বিশ্বাস ছিল যে এই রোগটা তার সেরে যাবে ! আসলেই কি রোগটা সেরে যেত? ভালোবাসার কি এতো ক্ষমতা আছে ?
আমরা গল্প উপন্যাস কিংবা মুভিতে দেখি ভালোবাসার অনেক ক্ষমতা । কিন্তু আসলেই বাস্তবে এমন কি আছে? এমন কিছু হয় ? ছোটবেলা থেকে আমার বৃষ্টি বিশেষ পছন্দ । বৃষ্টি হয়েছে মানে আমিও বৃষ্টিতে ভিজবোই । সেটা যখনই হোক । সকাল বিকেল রাত কোন মানা নেই । আমার ঘরে আলাদা একটা দরজা দিল বাইরে যাওয়ার । আমি এই দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলে কেউ টের পেত না । এমন কত দিন হয়েছে রাতের বেলা বৃষ্টি হয়েছে, আমি বৃষ্টিতে ভিজে আমার ফেরৎ চলে এসেছি । সকালে ভেজা কাপড় দেখে পরে টের পেয়েছে যে আমি রাতে ভিজেছিলাম ।
ঢাকার আসার পর থেকে আমার এই বৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা কেমন যেন কমে গেল । আর আগের মত আমি ভিজতাম না । বৃষ্টি হলেই নিজেকে সেই বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতাম । আজকে অনেক দিন পরে বৃষ্টিতে ভিজলাম । দুপুরে খেতে গিয়েছিলাম নিচে । তখনই মেঘ করেছিল বেশ । যদিও এই বছরে এমন মেঘ অনেক কয়বারই করছে কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না । তবে আজকে কেন জানি মনেই হচ্ছিলো যে বৃষ্টি আজকে হবে । ফেরার পথেই শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি । অন্য সময় হলে আমি হয়তো কোন ছাউনির ভেতরে ঢুকে বৃষ্টির পানি হতে নিজেকে বাঁচাতে চাইতাম কিন্তু আজকে কেন জানি সেটা ইচ্ছে হল না । সাথে করে মোবাইল আনি নি, তাই মোবাইল রক্ষা করার কোন তোড়জোড় দেখা গেল না আমার ভেতরে । আস্তে ধীরে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে গেলাম বাড়ির দিকে । যখন বাসায় পৌছালাম তখন একেবারে ভিজে গেছি । দারোয়ানের কাছে মানিব্যাগ আর চাবিটা রেখে আবারও বের হয়ে এলাম গেট দিয়ে । তারপর আবারও ঠান্ডা বৃষ্টির পানি মাখতে লাগলাম শরীরে । পুরোটা সময় বাড়ির সামনের রা্স্তায় বসে রইলাম কেবল । মনের ভেতরে কেবল বৃষ্টি বিলাসের গল্পটার কথা মনে হতে লাগলো।
আমার পুরো এক জীবনের ইচ্ছে ছিল প্রিয় মানুষটির সাথে বৃষ্টিতে ভেজার । প্রবল বৃষ্টি হবে তার হাত ধরে হেটে যাবো । কোন শহুরে রাস্তা হবে না । গ্রামের কোন রাস্তা চারি দিকে গাছ পালা থাকবে । তবে রাস্তাটা থাকবে ফাঁকা, নয়তো ভালো করে বৃষ্টির পানি আসবে না । দেখা যাবে গ্রামে একটা মাঠে বাচ্চারা ফুটবল খেলছে । আমি হঠাৎ করে সেখানে নেমে যাবো । প্রিয় সেই মানুষ হাসি মুখে আমার পাগলামো দেখবে । একটা সময় হয়তো সেও মাঠে নেমে আসবে আমার সাথেই । যত সময় না আমাদের শীতে কাঁপন ধরিয়ে না দেয় তত সময় আমরা বৃষ্টিতে ভিজবো ।
আজও একেবারে ঠান্ডা লাগার আগপর্যন্ত ভিজলাম বসে বসে । বসে বসে কল্পনা করলাম হয়তো এমন একদিন আসবে যে বৃষ্টিতে সত্যিই কারো পাশে বসে আছি । প্রিয় কোন মানুষটির পাশে । কত কথা বলতো তখন তার সাথে । তবে মনের যে বাস্তব অংশটি সব সময় জেগে থাকে সে মনে করিয়ে দিল যে এই আশাটি সম্ভবত আর কোন দিন পূরণ হওয়ার নয় ! তাকে পাশে নিয়ে আর কোন দিন বৃষ্টিতে ভেজা হবে না !
ছবিটি মিডজার্নি এআই দিয়ে আঁকা
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৫৬